জনগণের টাকায় মন্দির সংস্কার নিয়ে প্রশ্ন
'এবার রাম রাজ্য আসছে'
সুপ্রিয় পাঠক/শ্রোতা: রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি আমি গাজী আবদুর রশীদ। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ৩ জানুয়ারি বুধবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি। পরে বিস্তারিত খবরে যাব।
বাংলাদেশের শিরোনাম:
- আট স্থানে নির্বাচনী সংঘাতে আহত ৬৩, চার ক্যাম্পে আগুন- প্রথম আলো
- বিশ্ব মিডিয়ায় ড. ইউনূসের রায়-মানবজমিন
- ৬ মাস পর মুক্তি পেল ১১ গরু, খরচ ১৩ লাখ টাকা-যুগান্তর
- আচরণবিধি লঙ্ঘন হার্ডলাইনে ইসি-ইত্তেফাক
- আজ থেকে মাঠে সশস্ত্র বাহিনী-ডেইলি স্টার বাংলা
কোলকাতার শিরোনাম:
- লোকসভা নির্বাচনের আগেই সিএএ-র ধারা তৈরি হবে, দাবি কেন্দ্রের, সব লোক দেখানো, বলছে তৃণমূল- আনন্দবাজার পত্রিকা
- সমন বেআইনি’, তৃতীয়বার ইডি’র হাজিরা এড়ালেন কেজরিওয়াল, পালটা খোঁচা বিজেপিরসংবাদ প্রতিদিন
- অভিষেকের সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত শুরু ইডির-গণশক্তি
- রাম রাজ্য আসছে, রামমন্দির উদ্বোধনের আগে দাবি প্রধান পুরোহিতের-আজকাল
শিরোনামের পর এবার বাংলাদেশের জাতীয় দৈনিকগুলোর গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত তুলে ধরছি।
ভোট চিত্র নিয়ে প্রথম আলোর খবরে লেখা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোট গ্রহণের আর কদিন বাকি। নির্বাচনে প্রচার-প্রচারণাকে ঘিরে সংঘাত-সহিংসতা, নির্বাচনী ক্যাম্পে ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগের ঘটনা থামছেই না। গত সোমবার রাত থেকে গতকাল মঙ্গলবার পর্যন্ত আটটি স্থানে নির্বাচনী সংঘাত-সহিংসতায় ৬৩ জন আহত হয়েছেন। বরিশাল-২ আসন , নেত্রকোনা-৫, লক্ষ্মীপুর-১, নাটোর-১, মাদারীপুর-৩, জয়পুরহাট-২ আসনসহ বিভিন্ন স্থানে হামলা, সংঘর্ষ ও আহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। গত ১৮ ডিসেম্বর নির্বাচনী প্রচার শুরুর পর থেকে বিভিন্ন স্থানে সংঘাতের ঘটনা ঘটছে। প্রথম আলোর হিসাব অনুযায়ী, গত ১৬ দিনে ১৪৪টি জায়গায় সংঘাত ও সহিংসতার ঘটনা ঘটল। তবে ভোট নিয়ে আইনশৃঙ্খলা ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি সম্পর্কে প্রথম আলোকে দেয়া সাক্ষাৎকারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ভোট নিয়ে উত্তেজনা আছে, সীমা ছাড়ায়নি।
অন্যদিকে ইত্তেফাকের খবরে বলা হয়েছে, আচরণবিধি লঙ্ঘন হার্ডলাইনে ইসি। আর প্রথম আলোর অপর এক খবরে লেখা হয়েছে, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান ভোট সম্পর্কে বলেছেন, নির্বাচন হয়েই গেছে, এখন ঘোষণা বাকি।

নির্বাচনে সোয়া ৩ কোটি ভোটার উপস্থিতি নিশ্চিতে রিট-যুগান্তরের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সরকারের সুবিধাভোগী সোয়া ৩ কোটি ভোটারের উপস্থিতি নিশ্চিত করার নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়েছে। রিটে সরকারের সুবিধাভোগী নাগরিকদের ভোটদান বাধ্যতামূলক করার নির্দেশনাও চাওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ড. বশির আহমেদ জনস্বার্থে এ রিট দায়ের করেছেন। বুধবার বিচারপতি মো. ইকবাল কবীরের নেতৃত্বাধীন হাইকোর্ট বেঞ্চে রিট আবেদনটি শুনানির জন্য কার্যতালিকায় রয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ সচিব, নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্টদের রিটে বিবাদী করা হয়েছে।
প্রথম আলোর যুগ্ম–সম্পাদক ও কবি সোহরাব হাসান তার মতামত কলামের শিরোনাম করেছেন,বাংলাদেশ ‘বিচ্ছিন্ন’ হওয়ার শঙ্কা কেন। বিস্তারিত মতামত কলামে তিনি লিখেছেন, সংবিধান অনুযায়ী, নির্বাচন করার জন্যই বাংলাদেশে একটি নির্বাচন কমিশন গঠিত হয়ে থাকে। আগে নির্বাচন কমিশন গঠনের জন্য কোনো আইন ছিল না। এবার আমরা আইন করে একটি নির্বাচন কমিশন গঠন করেছি। অতএব, এই নির্বাচন কমিশনকে ‘বেআইনি’ বলা যাবে না।
নির্বাচন কমিশনের কাজ হলো নির্বাচন করা। সেটি হোক রাষ্ট্রপতি নির্বাচন, জাতীয় সংসদ নির্বাচন কিংবা স্থানীয় সরকার নির্বাচন। তবে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন করার ক্ষেত্রে আবার সরকারের অনুমোদনের প্রয়োজন হয়। রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে কখনোই বড় সমস্যায় পড়তে হয়নি তাদের। বেশির ভাগ সময়ই একক প্রার্থী ছিলেন।
সংসদীয় ব্যবস্থা চালুর পর একবারই রাষ্ট্রপতি পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা হয়েছিল ১৯৯১ সালে। সেবার বিএনপির মনোনীত প্রার্থী আবদুর রহমান বিশ্বাসের বিপরীতে বিরোধী দলের প্রার্থী ছিলেন বদরুল হায়দার চৌধুরী। আবদুর রহমান বিশ্বাস ১৭২–৯২ ভোটে জয়ী হয়েছিলেন।
সবচেয়ে বেশি বিপত্তি ও বিতর্ক জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে। খুব কম নির্বাচন কমিশনই নির্বাচন করার পর ফুলের মালা পেয়েছে। বরং তাদের কপালে নিন্দামন্দই বেশি জুটেছে।
সরকারের মন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের বড় নেতারা যখন নির্বাচনের পর সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে এবং বন্ধুদেশগুলোর সঙ্গে কোনো সমস্যা হবে না বলে দেশবাসীকে আশ্বস্ত করছেন, তখন ইসি আনিছুর রহমানের কথায় এই শঙ্কা কেন?
এ বিষয়ে তাঁর কাছে কি নির্দিষ্ট কোনো তথ্য আছে? তবে সুষ্ঠু নির্বাচন বলতে কমিশনের পদাধিকারী ব্যক্তিরা যা বোঝান, বহির্বিশ্ব নিশ্চয়ই সেভাবে বুঝবে না। তাদের কাছে সুষ্ঠু নির্বাচন হলো অনেকের মধ্যে একজনকে বাছাই করার সুযোগ। যেখানে ভোটের আগেই ফল জানা যায়, সেটিকে আর যা–ই হোক, আন্তর্জাতিক মাপকাঠিতে সুষ্ঠু নির্বাচন বলা যাবে না।
বিশ্ব মিডিয়ায় ড. ইউনূসের রায়-সম্পর্কে মানবজমিনের খবরে লেখা হয়েছে, শ্রম আইন লঙ্ঘনের মামলায় গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ও নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূসসহ চার জনকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দেয়ার সংবাদ গুরুত্বের সঙ্গে প্রকাশ করেছে যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ভারতসহ অন্যান্য দেশের আন্তর্জাতিক প্রভাবশালী গণমাধ্যমগুলো। সংবাদ প্রকাশ করেছে কাতারভিত্তিক আল-জাজিরা, চীনের সাউথ চায়না মর্নিং পোস্ট, এবিসি, গালফ নিউজ, ফ্রান্স২৪, দ্য গার্ডিয়ান, ব্লুমবার্গ, এএফপি, বিবিসি, ইয়াহু নিউজ, রয়টার্স, হিন্দুস্তান টাইমস, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস ও টাইমস অব ইন্ডিয়ার মতো প্রভাবশালী গণমাধ্যম। বার্তা সংস্থা রয়টার্স লিখেছে, প্রফেসর ইউনূসকে ছয় মাসের কারাদণ্ড দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত। তবে তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তিনি অস্বীকার করেছেন। কারাদণ্ড পাওয়ার পর ইউনূসের বক্তব্য তুলে ধরেছে মার্কিন গণমাধ্যম এবিসি নিউজ। গণমাধ্যমটি জানিয়েছে, রায়ের পর ইউনূস বলেন, আমার বিরুদ্ধে এই রায় সব আইনি নজির ও যুক্তির পরিপন্থি। আমি বাংলাদেশের জনগণকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে এবং আমাদের প্রতিটি নাগরিকের জন্য গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের পক্ষে এক কণ্ঠে কথা বলার আহ্বান জানাই। ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমস শিরোনাম করেছে, ‘বাংলাদেশের আদালতের রায়ে নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ মুহাম্মদ ইউনূস কারাগারের মুখোমুখি’। এর আগে প্রফেসর ইউনূসের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের পর থেকেই উদ্বেগ জানিয়ে আসছিল বিশ্ব নেতারা।
বায়ুদূষণের তালিকায় ঢাকা ২ নম্বরে-ইত্তেফাকের শিরোনাম এটি। আর প্রথম আলো লিখেছে, আট বছরের মধ্যে ঢাকায় ২০২৩ সালে সর্বোচ্চ বায়ুদূষণ। খবরে বলা হয়েছে, ২০১৬ সালের পর ২০২৩ সালে ঢাকার বায়ুমান সবচেয়ে খারাপ ছিল। গতকাল রাতেও ঢাকা ছিল শীর্ষ দূষিত শহর। ঢাকায় বায়ুদূষণ বাড়ছেই। ঢাকায় বায়ুমানের এই অবনতির মাশুল দিতে হচ্ছে মানুষকে। রাজধানীবাসীর মধ্যে শ্বাসতন্ত্রের রোগে আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। বিশেষ করে শিশু ও প্রবীণেরা ভুগছেন বেশি। চিকিৎসার জন্য বাড়তি ব্যয় করতে হচ্ছে, যা চড়া মূল্যস্ফীতির মধ্যে সংসারের ওপর চাপ বাড়িয়ে দিচ্ছে

৬ মাস পর মুক্তি পেল ১১ গরু, খরচ ১৩ লাখ টাকা-যুগান্তরের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে, ১৯২ দিন (৬ মাস) নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়েছিল লাল-সাদা রঙের বিশাল আকৃতির ১১টি ভারতীয় গরু। মঙ্গলবার ঝিনাইদহ চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রটে আদালত চত্বরে সেগুলো নিলামে বিক্রি করা হয়। এসব গরুর খাবার বাবদ এ পর্যন্ত ১৩ লাখ ২৮ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। সর্বোচ্চ ডাকে গরুগুলো কিনে নেন শৈলকুপা উপজেলার কাচের কোল গ্রামের জাহাঙ্গীর হোসেন ও মির্জাপুরের শওকত হোসেন। প্রকৃত মূল্য ১৯ লাখ ৫ হাজার টাকা। সরকারি মূল্য ধরা হয়েছিল প্রতিটি এক লাখ ৮০ হাজার টাকা। ভ্যাট ও আইটিসহ ২১ লাখ ৪৩ হাজার ১২৫ টাকা। গরু পালন করতে যে টাকা খরচ হয়েছে, তা যাচাই-বাছাই করা হবে। এর পর খরচ বাদ দিয়ে বাকি টাকা সরকারের কোষাগারে জমা দেওয়া হবে।
এবারে কোলকাতার কয়েকটি খবরের বিস্তারিত
আনন্দবাজার পত্রিকা ও সংবাদ প্রতিদিনের খবরে লেখা হয়েছে, লোকসভা নির্বাচনের আগেই সংশোধিত নাগরিকত্ব আইন (সিএএ)-র ধারা তৈরি হয়ে যাবে বলে আজ দাবি করল নরেন্দ্র মোদী সরকার। এক বার ধারা তৈরি হয়ে গেলে ধর্মীয় উৎপীড়নের কারণে প্রতিবেশী দেশ থেকে পালিয়ে আসা ব্যক্তিদের নাগরিকত্ব দেওয়ার কাজ শুরু করে দেওয়া যাবে বলেও দাবি করছেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের কর্তারা। যদিও তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, এটা আসন্ন লোকসভা ভোটের কথা মাথায় রেখে বাংলায় মতুয়া সমাজের ভোট টানার কৌশল ছাড়া কিছু নয়। তারা বলছে, গত চার বছর ধরে ঠান্ডা ঘরেই পড়ে রয়েছে সিএএ। প্রতি ছ’মাস অন্তর ওই আইনের ধারা তৈরির জন্য অতিরিক্ত সময় চেয়ে এসেছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক।

আনন্দবাজারের খবর, অযোধ্যার রামমন্দির উদ্বোধন হবে ২২ জানুয়ারি। এর মধ্যে সেই আবহে দেশের সঙ্গে রাজ্যেও নানা কর্মসূচি নেওয়া শুরু হয়েছে। মেদিনীপুরে রামমন্দির সংস্কার করা হলো পুরসভার টাকায়। জনগণের উন্নয়নের টাকায় ধর্মস্থান সংস্কার করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। একই প্রশ্ন উঠেছে পূর্ব মেদিনীপুরের দিঘায় রাজ্যের টাকায় এবং হিডকোর তত্ত্বাবধানে জগন্নাথ মন্দির গড়া নিয়েও। আর গতকালের গণশক্তি পত্রিকার খবরে বলা হয়েছিল, ২২ জানুয়ারি অযোধ্যায় রামমন্দিরে রামলালার 'প্রাণ প্রতিষ্ঠা' অনুষ্ঠানের দিন মসজিদ, দরগা এবং মাদ্রাসায় রামনাম জপ করার নিদান দিয়েছে আরএসএস। আর আজকালের খবরে লেখা হয়েছে, রামমন্দির উদ্বোধন,রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা নানা বিষয়ে চলছে রাজনৈতিক তরজা।

তারমধ্যে রামমন্দিরের প্রধান পুরোহিত আচার্য সত্যেন্দ্র দাস দাবি করলেন, রাম রাজ্য আসছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/ ৩