জানুয়ারি ০৫, ২০২৪ ২১:৪১ Asia/Dhaka

মহান আল্লাহ নারী ও পুরুষ সৃষ্টি করেছেন আলাদা কিছু শারীরিক ও মানসিক বৈশিষ্ট্য দিয়ে যাতে তারা পরস্পরের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে বিয়ে করার মাধ্যমে পরিবার গঠন করেন এবং এভাবে মানব প্রজন্মের জন্মধারা অব্যাহত থাকে।

কিন্তু পশ্চিমা সমাজগুলোতে এখন পরিবার-ব্যবস্থা হুমকির মুখে। নৈতিক মূল্যবোধের অবক্ষয়ের কারণে লৈঙ্গিক সমতা, স্বাধীনতা বা লৈঙ্গিক সাম্যবাদের নামে সেখানে পারস্পরিক সম্মতিতে বিয়ে বহির্ভূত নারী ও পুরুষের কথিত পরিবার গঠন, পুরুষের সঙ্গে পুরুষের ও নারীর সঙ্গে নারীর যৌন সম্পর্ক, এমনকি তাদের কথিত বিয়ে বা পরিবার গঠনকে আইন করে বৈধ করা হচ্ছে! যৌন চাহিদা মেটানোর এইসব পদ্ধতি ইসলামের দৃষ্টিতে সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ ও মানবীয় প্রকৃতিরও বিরোধী কাজ।  মানব-প্রকৃতির বিরোধী কথিত এইসব পরিবার টিকছে না বেশি দিন। ফলে তাদের ঘরে জন্ম নেয়া অবৈধ সন্তানরা হয়ে পড়ছেন বাবা অথবা মা থেকে বিচ্ছিন্ন।  দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে ইউরোপে এই সংকট বেড়ে গেছে। বল্গাহীন ব্যক্তি স্বাধীনতার সুযোগে সেখানে ঐতিহ্যবাহী বিয়ের প্রথার মাধ্যমে পরিবার গঠনের সংখ্যা অনেক কমে গেছে। বেড়ে গেছে লিভ টুগেদার ও সমকামিতা। 

পশ্চিমা দেশগুলোর মধ্যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, সুইডেন, ব্রিটেন ও কানাডায়ও পরিবার  প্রথা ব্যাপক ভাঙ্গন বা সংকটের মুখে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পরিবার প্রথা শেষ হয়ে গেছে অথবা তা ভয়াবহ বিপর্যয়ের শিকার হয়ে বিপন্ন হওয়ার পথে। পাশ্চাত্যের অনেক বিশেষজ্ঞ ও মনস্তত্ববিদ এখন ইসলামের এ বক্তব্যেরই প্রতিধ্বনি করছেন যে স্বামী ও স্ত্রী এবং নারী ও পুরুষ পরস্পরের পরিপূরক। নারী ও পুরুষের পৃথক ভূমিকার প্রতি গুরুত্ব না দেয়ার কারণেই পাশ্চাত্যে পরিবারগুলো ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। 

উইলিয়াম গার্ডনার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শীর্ষক বইয়ে (১৯৯৭) খ্রিস্টান রক্ষণশীলের দৃষ্টিকোণ থেকে পরিবারের ক্ষয়ক্ষতির বিশ্লেষণ করেছেন। এই বইয়ের ১৩ তম এবং ১৪ তম অধ্যায়ে, তিনি সমকামী আন্দোলনের ধারা এবং একই ধরনের অধিকার পাওয়ার বিষয়ে তাদের ক্রিয়াকলাপ বর্ণনা করেছেন। "প্রকৃতির অভ্যন্তরীণ খোদা বনাম নৈতিকতার বাইরের খোদা " শীর্ষক অধ্যায়ে তিনি সমকামিতার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন এবং সমকামিতাকে মানুষের প্রকৃতিগত স্বভাবের বিরোধী বলে জোর দিয়েছেন। তিনি এটিকে উদ্ভাবিত ও পছন্দের স্বাধীনতার বিষয় বলে অভিহিত করেছেন।

উইলিয়াম গার্ডনার পরিবারের বিরুদ্ধে যুদ্ধ শীর্ষক বইয়ের ১৪ নম্বর অধ্যায় অর্থাৎ সমকামীদের প্লেগ রোগ ও এইডস-এর রাজনীতি শীর্ষক অধ্যায়ে যৌন-বাহিত রোগগুলোর ভয়াবহ নানা তথ্য উপাত্ত এবং এইডস রোগের বিষয়ে তথ্য গোপন রাখার ব্যাপক পদক্ষেপগুলোর স্বরূপ তুলে ধরেছেন। তিনি  বলেছেন, এইডস রোগের ভাইরাস নানাভাবে ছড়াতে পারে, যেমন, চোখের কান্নার পানি, থুথু বা জিহ্বার পানি, বুকের দুধ, যৌন কর্মের কারণে নিঃসরিত জলীয় পদার্থ, মূত্র, মেরুদণ্ডের মধ্যে থাকা তরল পদার্থ এবং ভ্রূণের জলীয় থলির মাধ্যমে। এভাবে এইডস তেমন কোনো বিপদ নয় ও সমকামিতার সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই বলে উদার সমকামীরা যে ধারণা ছড়িয়ে দেয়ার বা এইডসের ধ্বংসাত্মক ক্ষয়ক্ষতিগুলো গোপন রাখার যে ষড়যন্ত্র করেছিল তা বানচাল করেছেন গার্ডনার। অর্থাৎ তিনি স্পষ্ট করেছেন যে সমকামিতার কারণেই ছড়িয়ে পড়ে প্রাণঘাতী রোগ এইডস ।  

সমকামিতা মানব প্রজন্ম ও  পরিবার রক্ষার পথে বাধা 

মানুষের শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে পরিবারকে অশেষ গুরুত্ব দেয় ইসলাম ধর্ম।  পরিবার হল মানুষ গড়ার আঙ্গিনা। উন্নত সব গুণ তথা মানবীয় মূল্যবোধ এবং দয়া ও মহানুভবতার মত বৈশিষ্ট্যগুলো অর্জনের ও বিকাশের শ্রেষ্ঠ স্থান হল পরিবার। তাই উন্নত সমাজের ভিত্তিমূল হল উন্নত পরিবার। আর এই পরিবারকে স্নেহ, মায়া-মমতা, আন্তরিকতা, একনিষ্ঠতা ও প্রশান্তির ছায়া দিয়ে যিনি গড়ে তোলেন তিনি হলেন নারী বা মা। নারী একদিকে স্বামীর দেখাশোনা করেন ও অন্যদিকে মাতৃত্বের দায়িত্বগুলোও পালন করেন। আর এসব দায়িত্বই হচ্ছে নারীর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব। তার এইসব ভূমিকার ওপরই নির্ভর করে পরিবারের সুস্থতা ও প্রশান্তি। ইসলাম যে উন্নত ও শক্তিশালী সমাজ গড়ে তুলতে চায় তার প্রাথমিক শর্ত হল উন্নত ও সুস্থ পরিবার গঠন তথা সন্তানদেরকে সঠিক শিক্ষা দিয়ে যোগ্য নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার প্রাথমিক ভিত্তিগুলো গড়ে তোলা।   

ইরানের ইসলামি বিপ্লবের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ির মতে নারী পরিবারে গুরুত্বপূর্ণ ও কেন্দ্রীয় ভূমিকা পালন করেন। তিনি জোর দিয়ে বলেছেন: "পরিবারের নারী যদি জ্ঞানী, চিন্তাশীল এবং একজন গৃহিণী হন, তবে তিনি পরিবারকে রক্ষা করবেন, কিন্তু যদি নারী বা স্ত্রীকে একটি পরিবার থেকে কেড়ে নেয়া হয় তাহলে একজন মানুষ পরিবারকে টিকিয়ে রাখতে পারবেন না।'' ইরানের সর্বোচ্চ নেতা মনে করেন পারিবারিক সুশিক্ষা ও পরিকল্পিত প্রশিক্ষণের মাধ্যমেই সামাজিক অবক্ষয়গুলো দূর করা সম্ভব এবং এর ফলে গড়ে উঠবে সুস্থ সন্তান ও যোগ্য নাগরিক। এ প্রসঙ্গে তিনি পরিবারগুলোকে শক্তিশালী করার জন্য নানা ব্যবস্থা নেয়া ও তালাকের কারণগুলোর প্রতিকারের ওপর জোর দিয়েছেন। তালাকের সংখ্যা বাড়তে থাকলে আশ্রয়হীন শিশুদের সংখ্যাও বাড়তে থাকে। আসলে নারী ও পুরুষের সমান অধিকারের শ্লোগান নারীর প্রতি ধোঁকা বা জুলুম মাত্র।  ইসলাম নারীকে পুরুষের চেয়ে বেশি অধিকার দিয়েছে। তাদেরকে পুরুষের সমান অধিকার দিতে গেলে নারীর সেইসব বাড়তি অধিকারগুলোই কমে যাবে। 

ইরানের সর্বোচ্চ নেতার মতে নারী সমাজকে ঠকানোর বিরুদ্ধে সব মুসলমানকে সংগ্রামী হতে হবে। কিন্তু নারীদেরকে অধিকার দেয়ার নামে পশ্চিমারা যে নারীর মানবীয় মর্যাদা ধ্বংস করছে তা সঠিকভাবে তুলে ধরতে হবে নারী সমাজের কাছে। ইরানের সর্বোচ্চ নেতা ইরানি নারী সমাজের এক সমাবেশে বলেছেন, জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করা মহান আল্লাহর এক বিশ্বজনীন নিয়ম। পশু-পাখি ও গাছপালার মধ্যেও রয়েছে নর ও নারী তথা স্ত্রী ও পুরুষ। নারী ও পুরুষের বিয়ে তথা জোড়া গঠন সব ধর্মেই স্বীকৃত। কিন্তু এই পরিবার গঠনের ক্ষেত্রে অনিয়ম বা নৈরাজ্যের কোনো স্থান নেই। কোনো ধরনের অনিয়ম এক্ষেত্রে মহা-অপরাধ। কারণ এতে নৈরাজ্য সৃষ্টি হবে। পরিবারকে সুস্থ রাখতে হলে পারিবারিক নিয়ম রীতি মেনে চলতে হবে। আর পরিবার যদি সুস্থ থাকে তাহলে সমাজও সুস্থ থাকবে। পরিবারগুলো হচ্ছে সমাজের এক একটি কোষের মত। কোষে সমস্যা দেখা দিলে সমাজেও সমস্যা ছড়িয়ে পড়বে। আর কোষ সুস্থ থাকলে গোটা সমাজ-দেহই সুস্থ থাকবে। #

পার্সটুডে/এমএএইচ/০৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ