জুলাই ১৫, ২০১৬ ২১:২৫ Asia/Dhaka

হাইপোকনডিয়াসিস (Hypocondiasis) এ রোগের নামটি কি আপনারা শুনেছেন? বুঝতে পারছি এমন প্রশ্নের সামনে দাঁড়িয়ে আপনি হতবাক হয়ে গেছেন। সত্যি বলতে কি আমিও এমন নাম শুনে হতবাক হয়ে গিয়েছিলাম। আটপৌরে ভাষায় বলতে গেলে একে রোগভীতি বলতে হবে। আর এই রোগভীতি বিষয়ে আলোচনা করেছেন বাংলাদেশের ঢাকা ও যশোরের আলফা স্পেশালাইজড হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এবং কনসালটেন্ট সাইকোলজিস্ট মো. মোখলেসুর রহমান।

রেডিও তেহরান: জনাব মোখলেসুর রহমান হাইপোকনডিয়াসিস বা রোগভীতি নামের রোগটি সত্যিই কি কোনো অসুখ এবং এ রোগের উপসর্গ কি?

মুখলেসুর রহমান: আপনাকে অনেক ধন্যবাদ আমাকে এ ব্যাপারে প্রশ্ন করার জন্য। আপনার প্রশ্রের উত্তরে বলছি- আসলে মানসিক রোগ সম্পর্কে বাংলাদেশের মানুষের এখনও সচেনতার যথেস্ট অভাব রয়েছে।অনেক ধরনের মানসিক রোগ আছে তারমধ্যে অন্যতম একটি মানসিক রোগ হচ্ছে রোগভীতি। এই রোগভীতি নামক মানসিক রোগটি যদি কারো হয় সেক্ষেত্রে ওই রোগী অনেক ছোট ছোট বিষয় নিয়ে যেমন ধরুন- ব্লাড প্রেসার, পার্লস বিট বা শরীরের যে কোনো ধরনের পরিবর্তনকে অনেক বড় করে দেখে এবং ভয় পেয়ে যান। ওই রোগী তখন ভাবতে থাকেন তার বোধহয় অনেক বড় ধরনের রোগ হয়েছে। আর এ অবস্থায় তিনি ঘন ঘন ডাক্তারের কাছে যেতে থাকেন এবং ডাক্তারের কাছ থেকে আশ্বাস পেতে চান যেন তার বড় ধরনের কোনো রোগ হয়নি। যখন কোনো ডাক্তার তাকে কোনো মানসিক রোগের ডাক্তারের কাছে বা কোনো মানসিক হাসপাতালে সাইকোলজিস্ট, ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্ট বা কাউন্সিলরের কাছে পাঠানো হয় তখন একবারের পরামর্শে তিনি সন্তুষ্ট হতে পারেন না।ফলে তিনি এক ডাক্তার থেকে আরেক ডাক্তারের কাছে বারবার যেতে থাকেন এবং তার রোগ সম্পর্কে আশ্বস্ত হতে চান। আর এ ধরনের সিমটম যখন একজন ব্যক্তির মধ্যে খুব বেশি দেখা যায় তখন আমরা তাকে রোগভীতি বা Hypocondiasis বলে থাকি।

রেডিও তেহরান: আচ্ছা এর সাথে রোগ হওয়ার সত্যিই কি কোনো সম্ভাবনা আছে নাকি পুরোটাই মনের রোগ।

মুখলেসুর রহমান: জ্বি ব্যাপারটা আসলে সেরকম। রোগী তার মানসিক রোগকে দেহের রোগ হিসেবে মনে করে থাকেন। দেহের রোগের সঙ্গে আসলে মানসিক রোগের কোনো সম্পর্ক নেই। এটা সম্পূর্ণভাবে মানসিক একটা ব্যাপার।

রেডিও তেহরান: Hypocondiasis বা রোগভীতি হওয়ার পেছনে কোনো কারণ আছে কি?

মুখলেসুর রহমান: যে কোনো মানসিক রোগের অনেকগুলো কারণ থাকে। রোগভীতির ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় কারণ হচ্ছে- ধরুন রোগী ছোট বেলা থেকে কোনো বড় রোগে দীর্ঘদিন ভুগেছে ফলে তারমধ্যে একটা ভয় তৈরী হয়েছে। অথবা তার নিকটাত্মীয় কেউ হয়তো চোখের সামনে মারা গেছে সেটা খুব কাছ থেকে দেখে ভয় পেয়েছে। তাছাড়া এমনও হতে পারে তার মধ্যে দুশ্চিন্তা রয়েছে বা বংশগতভাবে তাদের মধ্যে এ ধরনের রোগ ছিল সেগুলো দেখে দেখেও কারো মধ্যে রোগভীত জন্ম নিতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় ধরনের যে কারণটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হয়ে থাকে সেটি হচ্ছে- গ্রামে সাধারণ যেসব চিকিতসক রয়েছেন তাদের কাছ থেকে এ রোগ সম্পর্কে সঠিক ধারণা না পাওয়ার কারণেও অনেক সময় রোগভীতি তৈরী হতে পারে।

রেডিও তেহরান: কোনো কোনো রোগ নারী বা মহিলাদের মধ্যে বেশি দেখা যায় আর কোনো কোনো রোগ প্রকোপের সঙ্গে বয়সের সম্পর্ক রয়েছে। এবার আমাদের প্রশ্ন হলো রোগভীতির সঙ্গে এধরনের কোনো কিছু আছে কি না?

মুখলেসুর রহমান: না আসলে রোগভীতির ক্ষেত্রে লিঙ্গ বা বয়সভেদে খুব একটা পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় না। তবে বাংলাদেশের ক্ষেত্রে সাধারণত ১৭ থেকে ৩৫ বছর বয়সের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ বেশি দেখা যায়। তবে যুবক বয়স থেকে যে কোনো বয়সী মানুষের এই রোগভীতি নামক মানসিক রোগ হতে পারে।

রেডিও তেহরান: রোগের কথা বলতে সাথে চিকিতসার কথাও আসবে। তো এখন আমাদের প্রশ্ন হলো বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে এজাতীয় রোগের চিকিতসা সম্ভব কি না?

মুখলেসুর রহমান: এখন বাংলাদেশে সরকারি এবং বেসরকারিভাবে মানসিক স্বাস্থ্যসেবার কাজ যথেষ্ট পরিমাণে হচ্ছে। বাংলাদেশের জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউট, পাবনায় মানসিক স্বাস্থ্য হসপিটাল,বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে মানসিক রোগের চিকিতসা হচ্ছে।

এছাড়াও বাংলাদেশের বিভিন্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালগুলোতে মানসিক স্বাস্থ্যের বিভিন্ন ইউনিট রয়েছে। সেখানে মেডিকেল প্রফেশনাল পর্যায়ের বেশ কিছু ভালো চিকিতসা করা হয়ে থাকে। তবে এটার জন্য যদি কম্বাইন্ড চিকিতসা করা যায় অর্থাত মাল্টি ডিসিপ্লিনারি চিকিতসা যেমন ধরুন প্রথমেই মেডিটেশন দেয়া হলো এরপর সাইকোলজিক্যাল চিকিতসাগুলো করা হলো তারপর রোগীকে সোশ্যাল চিকিতসা দেয়া। এভাবে যদি মাল্টি ডিসপ্লিনারি ওয়ার্ক করা যায় তাহলে এটার ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে। আর এক্ষেত্রে মানসিক রোগীদের নিরাময় হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।

রেডিও তেহরান: আলোচনার শেষ পর্যায়ে আপনি শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে কিছু বলবেন কি?

মুখলেসুর রহমান: শ্রোতাদের উদ্দেশ্যে আমি যে কথাটি বলতে চাই সেটি হচ্ছে, শুধুমাত্র মেডিকেল চিকিতসার মাধ্যমে সবরোগ সারানো সম্ভব নয়।সেখানে মেডিকেল চিকিতসার পাশাপাশি সাইকোলজিক্যাল চিকিতসারও প্রয়োজন রয়েছে। শ্রোতাদেরকে আমি বলব কোনো রোগের ক্ষেত্রে প্যাথোলজিক্যাল পরীক্ষা নিরীক্ষার পর যখন কোনো সিগনিফিক্যান্স ফাইন্ডিংস পেলেন না তখন আপনাকে কোনো সাইক্রিয়াটিস্ট অথবা ক্লিনিক্যাল সাইকোলজিস্টের কাছে কাছে যেতে হবে। এবং তাতে একটা ডিসট্রেস পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়া যেতে পারে।#

ট্যাগ