জুলাই ২৮, ২০১৬ ১৮:৩৩ Asia/Dhaka

গত পর্বে আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীর ছেলে শাহজাদিকে দেখে কীভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে গেছে। ইব্রাহিমের বাবাও এরইমধ্যে মারা গেছে। সংসারে এখন মা আর সে। মামারা তাকে অনেক বুঝিয়ে সুজিয়ে এক শ তুমান হাতে দিয়ে বললো: কাজকর্ম,ব্যবসা বাণিজ্য শুরু করো। ইব্রাহিম পরদিন সকালে টাকাগুলো দিয়ে একটা সাপ কিনে নিয়ে বাড়ি গেল। তারপরও মামারা আবার তাকে এক শ তুমান দিলো। ওই টাকা দিয়ে সে একটা কুকুরের বাচ্চা কিনলো। তারপর যা ঘটলো তা শুনবো আজকের আসরে। 

বলেছিলাম মামাদের দেওয়া আরও এক শ তুমান দিয়ে ইব্রাহিম এবারও কিনে আনলো হলুদ এক কুকুরের বাচ্চা। ওই বাচ্চা নিয়ে বাড়ি ফিরতেই মা চীৎকার চেঁচামেচি করে উঠলো: ‘তুই আবারও টাকা নষ্ট করেছিস! তোর কি কোনো আক্কেলজ্ঞান নেই! তোর মামারা তোকে টাকা দিচ্ছে কাজ কারবার শুরু করতে,আর তুই কী শুরু করেছিস এইসব..’!

ছেলেকে আর কী বকবে! রাগে দু:খে মা নিজেই নিজের চুল ছেঁড়ার উপক্রম। এর ভেতরেই ছেলে এসে মাকে বললো:

‘মা! সাপ আমাকে বলেছে এই কুকুরের বাচ্চাটা কিনে আনতে’।

ইব্রাহিমের কথা শুনে মায়ের রাগ আরও বেড়ে গেল। গায়ের জামা ঠিক করে ছেলেকে বললো:

‘তুই তোর সাপ-কুকুর নিয়েই থাক,আমি গেলাম’।

বলেই মা চলে গেল বাড়ির বাইরে। ইব্রাহিম কী করবে বুঝে উঠতে পারছিল না। তার মন শাহজাদির কাছে আর চোখ কুকুরের বাচ্চা এবং সাপের উপর। হলুদ রঙের কুকুরের বাচ্চাটা কেমন লেজ নাড়ছে আর চিঁ চিঁ করে নাক দিয়ে মাটি শুঁকছে। পাখাওয়ালা অজগর জলের বৃত্তাকার তরঙ্গের দোলার মতো রেখা এঁকে যাচ্ছে। কখনোবা নিজেই বৃত্তের মতো ঘুরছে উঠোন জুড়ে। মক্তব-শাহজাদি-বাবার মৃত্যু-সংসার-ভবিষ্যৎ সব একসাথে মাথার ভেতর ঢুকে কেমন এলোমেলো ঘোলাটে করে দিচ্ছে ভাবনার সরোবর। মায়ের কথা ভাবতেই বাড়ির দরোজায় ভয়ংকর শব্দ হলো সেইসঙ্গে আওয়াজ: ‘দরোজা খোল’!

গলাটা পরিচিত মনে হলো ইব্রাহিমের। খুলে দিতেই মা মামাদের নিয়ে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো। কিন্তু অজগর দেখতেই তাঁদের গতি থেমে গেল। ভয় মিশ্রিত ক্ষুব্ধ গলার স্বরটা কেমন যেন স্বাভাবিক মনে হয় না। মামারা সেরকম গলায় বললো:

‘তুই আবারও টাকা দিয়ে কুত্তার বাচ্চা কিনে এনেছিস! তুই আসলে কী! তোর কি কোনোদিনই বুদ্ধিজ্ঞান-ট্যান হবে না..’!

ভাগিনার ওপর রাগ দেখালেও মামাদের দৃষ্টি কিন্তু অজগরের দিকে। সেজন্য ভাগিনার প্রতিক্রিয়াটা চোখে পড়লো না মামাদের। পড়লে দেখতো ইব্রাহিম নির্বিকার। কুকুরের বাচ্চার মাথায় নীরবে হাত বুলিয়ে আদর করছে সে।

নির্বিকার ইব্রাহিম কুকুরের বাচ্চার মাথায় নীরবে হাত বুলিয়ে আদর করছে আর মামারা উপদেশ দিয়েই যাচ্ছে। সমুদ্রের বিশাল ঢেউ যেমন তীরে এসে ছলাৎ শব্দ তুলেই মিলে যায় নিমেষে মামাদের রাগ অজগর দেখে তেমনি মিলে গেল। দ্রুত আরও এক শ তুমান ভাগিনার হাতে দিয়ে তারা বললো: ‘পাগলামি করো না বাবা! আমরা তো তোমার মঙ্গলের জন্যই সব করছি। তোমার মা’কে কষ্ট দিয়ো না। এই টাকা দিয়ে একটা কাজটাজ শুরু করো’।

সাপের ভয়ে মামাদের নসিহত খুব দীর্ঘ হতে পারলো না। চলে গেল মামারা। মা গেলেন ঘরের ভেতর। খালি উঠোনে ইব্রাহিম, হলুদ কুকুরের বাচ্চা আর পাখাওয়ালা অজগর।

এঁকেবেঁকে অজগর ইব্রাহিমের কাছে গিয়ে বললো: ‘একটা কালো বেড়াল আছে আল্লাহর এক বান্দার কাছে’।

ইব্রাহিম জানতে চাইলো:‘কোথায়’।

অজগর সব ঠিকঠাক মতো বলে দেয়। সেই পথ ধরে যেতেই ইব্রাহিম দেখতে পায় ওই কালো বেড়ালকে ঘিরে মানুষের ভীড়। জীবন গড়ার জন্য দেওয়া মামাদের এক শ তুমান দিয়ে সে ওই কালো বেড়াল কিনে নিয়ে গেল বাড়িতে। মা ছেলের কোলে কালো বেড়াল দেখেই মাথাটা আলতো করে দেয়ালে ঠেকিয়ে অঝোরে কাঁদতে শুরু করলো। অ্যাতো উপদেশ, অ্যাতো টাকা-পয়সা, অ্যাতো কান্নাকাটি কিছুই তো কোনো কাজে এলো না। কী করবে এখন! এসব ভেবে মা আরও বেশি কাঁদতে লাগলো। রাতভর কান্নাকাটি করলো মা।

অজগর এবার কবুতরে পরিণত হলো। ইব্রাহিমকে বললো: ‘আর ঘরে বসে থাকা নয়। এবার কাজে বেরিয়ে পড়তে হবে’।

সূর্য উঠতেই ইব্রাহিম কবুতরকে কাঁধে বসিয়ে বেরিয়ে পড়লো। হলুদ রঙের কুকুরের বাচ্চা আর কালো বেড়াল তার পেছনে পেছনে।

অনেকটা পথ এভাবে যাবার পর কবুতর ইব্রাহিমকে বললো: ‘এ পথে তুমি আজ তিনজন দরবেশ দেখতে পাবে। আমি একটা লাঠিতে পরিণত হবো। তুমি লাঠটা হাতে নেবে। ওই দরবেশদের চোখ পড়বে লাঠির ওপর। তারা লাঠিটা কিনতে চাইবে। তুমি বিক্রি করে দেবে। তবে হ্যাঁ! সাত পা না যেতেই তুমি বলবে: ‘চগুন দুজ! দরবেশের মাথায় আঘাত করো। খবরদার! ‘দেরিও করবে না,ভুলেও যাবে না’।

ইব্রাহিম বললো: ‘ঠিক আছে’।

কবুতর পরিণত হলো লাঠিতে। চমৎকার ওই লাঠিটা হাতে নিয়ে ইব্রাহিম সামান্য পথ যেতেই এক দরবেশ এসে হাজির। ইব্রাহিমের সঙ্গে কুশল বিনিময় করতে করতে তার নজর পড়লো লাঠির ওপর। দরবেশ তার হাতের আংটি খুলে ইব্রাহিমকে দিয়ে বললো: ‘লাঠিটা আমাকে দাও আর বিনিময়ে এই আংটিটা তুমি নাও’!

ইব্রাহিম বললো: ‘আমার বৌও নাই,মেয়েও নাই। এই আংটি দিয়ে কী করবো’।* (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/২৮/টি-১০০.১/অ-১০৫