আগস্ট ০৭, ২০১৬ ১৭:৫২ Asia/Dhaka

আমরা ‘চগুন দুজ’ গল্পের  গত পর্বে দেখেছি ইঁদুররাজের আদেশে তার সকল সেনা দলে দলে ছুটে গেল শাহজাদির কাছ থেকে আংটিটা উদ্ধার করার জন্য। খোঁড়া আর অন্ধ ইঁদুর বহু কৌশল খাটিয়ে আংটি উদ্ধার করে তাদের রাজার হাতে দেয় এবং ইঁদুররাজ ওই আংটি তুলে দেয় বেড়াল ও কুকুরের কাছে। তারা আংটি নিয়ে দেয় ইব্রাহিমের হাতে। ইব্রাহিম আবারও দৈত্যদের ডেকে শাহজাদিকে তার প্রাসাদসুদ্দ তুলে নিয়ে আসে। বাদশা খবর পেয়ে আবারো বুড়িকে জোর করে পাঠায় শাহজাদির সন্ধানে। বুড়ি অগত্যা যায় সেই প্রাসাদে। তারপর কী হয় সে কাহিনী শুনবো আজকের পর্বে।

বুড়ি যখন প্রাসাদে গিয়েছিল ইব্রাহিম তখন গিয়েছিল বাইরে, শিকারে। বেড়াল আর কুকুর তখন নিজেদের রূপ পরিবর্তন করে প্রহরীর বেশ ধারণ করে পাহারা দিচ্ছিল প্রাসাদে। তাদের গায়ে লাল রঙের পোশাক আর হাতে খঞ্জর। প্রহরীরা ওই বুড়িকে দেখেই সামনের দিকে এগিয়ে গেল এবং সোজা ফিরে যেতে বললো। যদি ফিরে না যায় গর্দান যাবে বলে সাবধান করে দিলো। বুড়ি যতই অনুনয় বিনয় করলো তাদের কানেই ঢুকলো না। তারা বুড়িকে বললো: ‘এখানেই দাঁড়িয়ে থাকো! আমাদের মনিব ফিরে আসার পর দেখা যাবে কী করা যায়’।

বুড়ি অপেক্ষা করতে করতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে রাত নেমে এলো এবং সেইসঙ্গে তাদের মনিব ইব্রাহিমও এলো শিকার থেকে ফিরলো।

বুড়ির প্রতি চোখ পড়তেই ইব্রাহিম স্বগতোক্তি করে বললো:‘বুড়ি ভেবেছে টা কী! এবারও আমাকে ধোকা দেবে! এমন বিপদে তাকে আমি ফেলবো যে আসার কারণে অনুতাপের আর সীমা থাকবে না’।

ইব্রাহিম যে হরিণটা শিকার করেছিল সেটিকে প্রাসাদে নিয়ে গেল এবং কাবাব বানিয়ে খেলো। ক্লান্তি দূর হয়ে যাবার পর ইব্রাহিম বললো: ‘বুড়িকে নিয়ে এসো’!

একটা চিঠি লিখলো ইব্রাহিম: ‘যদি হাজার বারও তোমার কন্যাকে নেয়ার জন্য পাঠাও কিংবা নিয়েও যাও, সহস্র একবার তাকে নিয়ে আসবো। তবে যদি আমার কাছে শাহজাদির অবস্থান মেনে নাও তাহলে কোনো কথা নেই। আর মেনে না নিলে যুদ্ধের জন্য তৈরি হও। আমরা যুদ্ধের জন্য তৈরি আছি’।

চিঠি লেখা শেষ করে বুড়ির নাক আর কান কেটে দিয়ে তাকে বললো: ‘এই চিঠি নিয়ে যাও বাদশার কাছে’।

বুড়ি আগের মতোই তার কাঠের সিন্দুকে চড়ে উড়ে গেল। কিছুক্ষণের মধ্যেই সে গিয়ে পৌঁছলো বাদশার প্রাসাদে। বুড়িকে দেখেই বাদশা বললো: ‘ইব্রাহিম তো দেখছি যুদ্ধের বার্তা দিয়েছে’।

সঙ্গে সঙ্গে সৈন্যবাহিনীকে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হতে আদেশ দিলো। বাহিনী প্রস্তুত হবার পর সোজা রওনা হলো ইব্রাহিমের প্রাসাদের উদ্দেশ্যে। এদিকে ইব্রাহিম সেদিন আর শিকারে বের হয় নি। দেখতে চাইলো বাদশা কী করে তার বার্তা পাবার পর। প্রাসাদের ছাড়ে উঠে পায়চারি করতে লাগলো সে। হঠাৎ নজরে পড়লো দূরে বাদশার সেনাবাহিনী এগিয়ে আসছে তার দিকে। তাড়াতাড়ি করে কুকুর আর বেড়ালকে খবর দিলো এবং পরে পরীর দেয়া চুলে আগুন জ্বালালো। পরী সঙ্গে সঙ্গে এসে হাজির হয়ে গেল। ইব্রাহিম সকল ঘটনা পরীকে খুলে বললো। পরী ইব্রাহিমকে বললো: ‘একদম চিন্তা করো না! সব ঠিক হয়ে যাবে। দেও-পরীর এত বিশাল বাহিনী তৈরি করা হবে যে বাদশার বাহিনীকে টুকরো টুকরো করে ছাড়বে’।      

বিশাল বাহিনী গড়ার কথা বলেই পরী তার হাতের আংটিটা ঘঁষা দিল। অমনি হাজির হয়ে গেল বিশাল বিশাল পাঁচ দৈত্য। দৈত্যকে ঘটনা খুলে বলতেই মুহূর্তের মধ্যে পরী আর দৈত্যদের বিশাল বাহিনী গড়ে তুললো তারা। সেই মুহূর্তে বাদশার বাহিনী এসে হাজির হলো। তাদের মুখোমুখি হলো দৈত্যদের বিশাল বাহিনী। মরুভূমি ভর্তি তারা। যেন সুঁই রাখারও জায়গা নেই। নিমিষেই শুরু হয়ে গেল যুদ্ধ। পরী হেশাম দৈত্যকে বলে দিলো এমন কিছু একটা করো যাতে কারও এক ফোঁটা রক্তও মাটিতে না পড়ে। আরও বললো বাদশাকে যেন তার ঘোড়াসহ তুলে নিয়ে যায় আকাশে। সেখানে নিয়ে তাকে যেন বলে শাহজাদিকে ইব্রাহিমের সঙ্গে বিয়ে দিতে রাজি হতে। তা না হলে শূন্য থেকে ফেলে দিয়ে টুকরো টুকরো করে ফেলবে।

হেশাম তাই করলো। ঘোড়াসহ বাদশাকে তুলে নিয়ে গেল শূণ্যে। পরী যা যা বলেছিল বাদশার সঙ্গে ঠিক ঠিক তাই করলো হেশাম দৈত্য। বাদশা অনেক কাকুতি মিনতি করলো। কিন্তু কিছুতেই কিছু হলো না। হেশাম বাদশাকে বললো:‘এসব রাখো! আগে বলো, শাহজাদিকে ইব্রাহিমের সঙ্গে বিয়ে দেবে কি দেবে না’।

বাদশা নিরুপায় হয়ে বিয়ে দিতে রাজি হলো। হেশাম বাদশাকে নিয়ে গেল প্রাসাদের দিকে। পরী দ্রুত ড্রাগনে পরিণত হয়ে প্রাসাদের গেইটে গিয়ে ফনা তুলে দাঁড়ালো। বাদশাকে দেখেই অগ্নি নিশ্বাস ছুঁড়ে দিলো বাদশার দিকে। বাদশা কাচুমাচু হয়ে হেশামকে জড়িয়ে ধরলো। ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে গেল বাদশা। হেশামকে বললো: ‘কিছু একটা করো! জানটা যেন বাঁচে’।

হেশাম বাদশাকে নিয়ে গেল শাহজাদির প্রাসাদে। শাহজাদির সঙ্গে কথাবার্তা বলে বিয়ের আয়োজন করলো। সাতদিন সাতরাত ধরে উৎসব আনন্দ করা হলো। উৎসব শেষে বাদশা মেয়ের দিকে তাকিয়ে বললো এখানেই থাকবে সে নাকি তার সঙ্গে শহরে যাবে তার প্রাসাদে। আশ্চর্যরকমভাবে শাহজাদি বললো সে তার স্বামির সঙ্গেই থাকবে। কারণ এই মরু এলাকাটা তার ভালোই লাগে। অগত্যা বাদশা তার বাহিনী নিয়ে ফিরে গেল নিজের প্রাসাদে। ইব্রাহিম এবং শাহজাদিও বছরের পর বছর ধরে অলৌকিক সুখের পসরা মেলে পরম শান্তিতে বসবাস করতে লাগলো মরুময় সেই অনুন্নত অঞ্চলে স্বামীর সঙ্গে।* (সমাপ্ত)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/৭/টি-১০৪/অ-১০৯