অক্টোবর ০৯, ২০১৭ ১৮:৩৬ Asia/Dhaka
  • ইরানি গল্প ও রূপকথা: রঙশিল্পী ও নাপিত (পর্ব-৩)

কাবতনের কথায় মহা খুশি হয়ে গেল আবুসাবর। সে আনন্দভরা মনে ফিরে গেল আবু গেইরের কাছে। আবু গেইর তখন ঘুমে অচেতন ছিল। তবু আবু সাবরের আগমনের শব্দে জেগে গেল। জেগেই দেখলো তার সামনে প্রচুর খাবার। দ্রুত সে উঠে বসলো এবং খাবার খেতে শুরু করে দিলো।

আবু সাবর তাকে বললো: খাবারগুলো রেখে দিলে ভালো হতো না! যখন কিছু থাকবে না,তখন খাওয়া যাবে। ও হ্যাঁ! আজরাতে আমরা এই জাহাজের এক যাত্রীর মেহমান। আবু গেইর বললো: সমুদ্রের আবহাওয়ায় আমি অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তুমি নিজে যাও অতিথি হয়ে। আমি এই খাবারগুলোই খেয়ে নেবো। আবু সাবর অগত্যা একাই গেল এবং তার বন্ধু কেন এলো না সেই কৈফিয়ত দিয়ে ক্ষমা প্রার্থনা করলো কাবতনের কাছে।

 

কাবতন আবু সাবরকে খাবার খেতে বসতে বললো এবং সে খুশি মনে বসে পড়লো। খাওয়া দাওয়া শেষ হবার পর আবু সাবর যখন ফিরে যেতে চাইলো কাবতন তখন একটি পাত্র ভর্তি করে খাবার দিয়ে দিলো। বললো: এগুলো নাও তোমার বন্ধুর জন্য। আবু সাবর খাওয়ার পাত্রটি নিয়ে আবু গেইরের কাছে ফিরে গেল। বললো: কাবতন খুবই উদার এবং মহানুভব একজন মানুষ। সে তোমার জন্যও খাবার দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু তুমি তো ভরপেট খেয়ে বসে আছো। কিছুই খেতে পারবে না।


আবু গেইর খাবার পাত্রটি আবু সাবরের হাত থেকে নিয়ে গ্রোগ্রাসে খাবারগুলো তৃপ্তি ভরে খেয়ে নিলো। আশ্চর্য! মনে হলো সে যেন কতদিন না খেয়ে আছে। খেয়েদেয়ে সে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো। মুহূর্তেই ঘুম এসে গেল তার।


বলছিলাম আবু সাবর খাবার নিয়ে এলো আর আবু গেইর সে খাবার খেয়েদেয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। এভাবে চললো বেশ কিছুদিন। বিশদিন পর জাহাজ গিয়ে ভিড়লো উপকূলে। আবু সাবর এবং আবু গেইর জাহাজ থেকে নেমে পড়লো। কিন্তু কোথায় যাবে কী করবে কিছুই ভাবতে পারছিলো না। শেষ পর্যন্ত গেল একটা সরাইখানায়। একটা রুম ভাড়া নিলো তারা। আবু গেইর রুমে ঢুকেই লম্বা হয়ে শুয়ে পড়লো। আবু সাবর গেল বাজারে। রুটি আর মাংস কিনে সরাইখানায় ফিরে গেল। মাংস কেটে তরকারি পাকালো। পাটি বিছিয়ে খাবার এনে আবু গেইরকে ডেকে তুললো। আবু গেইর ঘুম থেকে উঠে খাবার দাবার খেয়ে আবারও ঘুমিয়ে পড়লো।


এভাবে চল্লিশ দিন কাটলো তাদের। এ সময়ের মধ্যে আবু সাবর প্রতিদিন বাজারে যেত। কাজকাম করে কিছু পয়সা কামিয়ে খাবারের আয়োজন করে ফিরতো। আবু গেইর শুধু খেত আর ঘুমাতো। আবু সাবরকে বলল: জাহাজে ভ্রমণ করার কারণে অসুস্থ হয়ে পড়েছি,এখনও আমার মাথা ব্যথা করছে। এভাবে আরও চল্লিশ দিন কেটে গেল। একাশিতম দিনে কাজের চাপে আর ক্লান্তিতে আবু সাবর অসুস্থ হয়ে পড়লো। সে আর কিছুতেই বাসা থেকে বের হবার মতো সাহস করলো না। সরাইখানার দারোয়ানকে ডেকে বললো: আমি অসুস্থ! দয়া করে আমার জন্য একটু খাবারের ব্যবস্থা করো!

 

আবু গেইর তখনও ঘুমাচ্ছিল। একটু নড়াচড়াও করলো না। চার চারটি দিন ধরে আবু সাবর অসুস্থ। এ কয়টা দিন দারোয়ানরাই তার জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করেছিল। পঞ্চম দিনে আবু সাবরের অসুখ আরও বেড়ে গেল এবং বেহুশ হয়ে গেল। আবু গেইর খাওয়া দাওয়া ছাড়াই পড়ে রইলো সরাইখানায়। ক্ষুধার তাড়নায় সেও একেবারে দুর্বল হয়ে পড়লো। কোনোরকমে সে আবু সাবরের মাথার কাছে গেল। আবু সাবরের পকেটগুলো তল্লাশি করে কয়েকটা কয়েন পেল এবং সেগুলো নিয়ে সরাইখানা থেকে বাইরে গেল। যাবার সময় সরাইখানায় তাদের রুমের দরোজা বন্ধ করে দিলো এবং কাউকে কিচ্ছু না বলে চুপি চুপি সরাইখানা থেকে বেরিয়ে গেল।


সরাইখানা থেকে বেরিয়ে আবু গেইর সোজা চলে গেল বাজারে। নতুন একটা জামা কিনলো। সেই জামা পরে হাঁটতে শুরু করলো পুরো বাজারে। এদিক সেদিক ঘুরেফিরে দেখতে লাগলো। এভাবে ঘণ্টাখানেক ঘুরাফেরার পর বুঝতে পারলো এই শহরের লোকজনের জামাকাপড়ের রং হয় সাদা না হয় কালো। একটা ডাইং হাউজেও গেল। সেখানে গিয়ে দেখলো জামা কাপড় যা-ই আছে সেই দোকানে সবই কালো আর সাদা। সে তার কোমর থেকে শাল মানে কোমরে বেল্টের পরিবর্তে গামছার মতো যে কাপড়টি বাঁধে, সেটা খুলে রঙের কারিগরকে দিয়ে বললো: এই শালটা রং করতে চাই, কত লাগবে। কারিগর তার মজুরির পরিমাণটা বলে দিলো। আবু গেইর বললো: অনেক বেশি বলছো তুমি। আমাদের শহরে তো অনেক কম নেয়।

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-১১৫/৪০