জুন ০৬, ২০১৭ ১৭:১৯ Asia/Dhaka
  • ইরানি গল্প ও রূপকথা: আহমাদ ও বাদশাহ-৫

আহমাদ প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে বাদশাহর প্রাসাদে যেত রুটি রুজি আর কাজের সন্ধানে। এরকম একদিন বাদশাহকে খবর দেওয়া হলো যে প্রাসাদ তৈরি হয়ে গেছে। বাদশাহ একথা শুনে পরীকন্যাকে পয়গাম পাঠালো যে প্রাসাদ প্রস্তুত হয়ে গেছে এখন বিয়ে করতে চায়।

পরীকন্যাও জবাব দিলো যে তার চল্লিশ বোন আছে। প্রতিরাতেই তার কোনো না কোনো বোন আসে তার সাথে দেখা করতে। সবশেষ বোন এসে চলে পাবার পর সে বাদশাহকে বিয়ে করতে চায়। বাদশাহ কী আর করবে, অবশেষে রাজি হয়ে গেল। প্রথম রাতে চল্লিশ বোনের একজন কবুতর রূপে এলো। পরীকন্যা তার বোনকে বললো সে যেন এমন একটি যাদুবাক্য পড়ে যাতে বাদশাহ বেহুশ হয়ে পড়ে যায়।

বোনের কথামতো এমন যাদুবাক্যই পড়লো যে বাদশাহ ধপাস করে প্রাসাদের ফ্লোরে লুটিয়ে পড়লো। ব্যাপক চীৎকার চেঁচামেচি হৈ হুল্লুড়ের শব্দ বের হয়ে এলো বাদশাহর প্রাসাদ থেকে। দ্বিতীয় রাতে পরীকন্যার দ্বিতীয় বোন এলো। সেও কী এক যাদুবাক্য পড়লো যে বাদশাহ পাগলামি শুরু করে দিলো। এভাবে চল্লিশ রাতে চল্লিশ বোন এলো এবং প্রত্যেক বোনই কোনো না কোনো যাদুবাক্য পড়লো আর বাদশাহর মাথায় নেমে এলো যাবতীয় বিপদ। চল্লিশতম রাতে বাদশাহ পরীরাজকন্যাকে বললো এবার তো সকল বাহানা শেষ হয়েছে, এখন বিয়ের আয়োজন করি। পরীকন্যাও জবাবে বললো যে তার কোনো মন্তব্য নেই। তবে পুরো শহরকে সাজাতে হবে এবং উৎসবমুখর একটা পরিবেশ গড়ে তুলতে হবে।

বাদশাহকে শহর সাজানোর কথা বলে পরীকন্যা দ্রুত গেল আহমাদের কাছে। আহমাদের কাছে গিয়েই বললো তিন মাথাওয়ালা দৈত্য তাকে যে তলোয়ারটি দিয়েছে এবং যেটি তাকে গোপনে লুকিয়ে রাখতে বলেছিল সেই তলোয়ারটি যেন ফেরত দেয় তাকে। আহমাদ পরীকন্যার কথা শুনেই দ্রুত লুকিয়ে রাখা সেই তলোয়ারটি এনে বুঝিয়ে দিলো। রাত ঘনিয়ে এলো। বাদশাহ গেলো পরীরাজকন্যার কাছে। পরীকন্যা বাদশাহকে সুন্দরভাবে অভ্যর্থনা জানালো। আন্তরিকতার সঙ্গে পরীকন্যা বাদশাহকে বললো যেন বিছানায় বালিশের পরে তার মাথা রাখে। পরীকন্যা ঘুমপাড়ানি গাইবে। ঘুমপাড়ানি হলো ওই চল্লিশ রাতের গল্পগুলো। সেগুলো এখন সে বাদশাহকে শোনাবে যেন বাদশাহর ভালো করে ঘুম আসে।

বাদশাহ পরীকন্যার মমতা মাখানো কণ্ঠের আহ্বানে সাড়া দিয়ে বিছানায় বালিশের ওপর মাথা রাখলো। পরীকন্যা মজা করে গল্প শোনালো। শোনাতে একসময় বাদশাহর ঘুম এসে গেল, গভীর ঘুম। পরীকন্যা এবার তিন মাথাওয়ালা দৈত্যের দেওয়া উপহার তলোয়ারটি বের করলো। দুহাতে তলোয়ার উঁচিয়ে সজোরে সে বাদশাহর গলায় দিলো কোপ বসিয়ে। বাদশাহর মাথা দেহ থেকে আলাদা হয়ে গেল। সারারাত ধরে ওই বাদশাহর লাশ পড়ে থাকলো পরীকন্যার বিছানায়।

রাত পেরিয়ে ভোর হতে না হতেই পরীকন্যা আহমাদকে নিয়ে এলো। আহমাদকে বাদশাহী পোশাক আর মুকুট পরিয়ে সিংহাসনে বসিয়ে দিলো। উজির আর যত উকিল ছিল সবাই একে একে এসে সমবেত হলো রাজদরবারে। সবাই হতবাক হয়ে দেখলো আহমাদ বাদশাহ হয়ে গেছে। এবার আহমাদ আদেশ দিলো পুরো শহরকে যেন জাঁকজমকের সঙ্গে সাজানো হয়। বাদশাহর আদেশ বলে কথা। ব্যাপক সাজসজ্জা করা হলো। বহুদিন ধরে উৎসব আয়োজন হলো। বাদশাহ আহমাদের সঙ্গে পরীকন্যার বিয়ে হলো। জনগণ আনন্দের সঙ্গে সুখে শান্তিতে কাটাতে লাগলো।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-১১৩.২/ই-৩৭