সেপ্টেম্বর ০৫, ২০১৬ ২১:১৭ Asia/Dhaka

আমরা ''তিগ তরুণ'' গল্প শুনছিলাম। গল্পিটি হলো এক বাদশার সন্তানাদি ছিল না। পরে এক দরবেশের দোয়ায় তার তিনটি মেয়ে আর একটি ছেলের জন্ম হলো। বাবার মৃত্যুর পর ছেলেটি বাদশা হলো এবং তার মা তাকে প্রাসাদের সকল রুমের চাবি দিলেও একটি রুমের চাবি দিলো না। ছেলে মায়ের কাছ থেকে একরকম জোর করেই ওই রুমের চাবি আদায় করে নিলো এবং রুমের দরোজা খুললো। দরোজা খুলতেই তার নজর পড়লো দেয়ালে ঝোলানো একটি পোট্রেটের ওপর। ওই ছবি দেখেই শাহজাদা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে পড়ে গেল। তারপর কী ঘটলো তা শুনবো আজকের পর্বে।

বলেছিলাম মায়ের কাছ থেকে চাবি নিয়ে রুশ খুলে দেয়ালে একটা পোট্রেট দেখেই শাহজাদা অজ্ঞান হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলো। কিছুক্ষণ পর হুশ ফিরে এলো। হুশ ফেরার পর সে তার মাকে জিজ্ঞেস করলো: এই পোট্রেটটা কার, কোথায় এখন সে?

মা বললো:এই ছবিটা "চেলগিসের'।সে যে কোথায় থাকে কেউ জানে না।

জাভন তিগ বললো: আমি অবশ্যই তাকে খুঁজে বের করবো।

মা বললো: বাদ দাও! ওর পেছনে সময় নষ্ট করে লাভ নেই। তোমার আগে তোমার বাবা, তোমার দাদাও ওই পোট্রেটের মালিকের খোজ নিতে গিয়েছিল কিন্তু কোনো কাজ হয় নি। খোঁজ মেলে নি।

জাভনতিগ তার সফরের প্রস্তুতি নিলো। তার সঙ্গে সহযাত্রী হলো তার দুই বন্ধু, একটি কবুতর, একটি কুকুর ও একটি বেড়াল। বন্ধুদের নাম ছিল দারিয়বোর এবং সেতারে শেনস।দারিয়বোর মানে হলো সমুদ্রকর্তনকারী আর সেতরে শেনস মানে হলো নক্ষত্রবিদ। রওনা হয়ে গেল জাভনতিগ।

সঙ্গী সাথীদের নিয়ে যেতে যেতে জাভনতিগ গিয়ে পৌঁছলো এক শহরে। গিয়ে দেখলো অদ্ভুত এক ঘটনা। শহরের লোকজনের সবার গায়ে কালো পোশাক পরা, কেমন যেন শোক শোক ভাব শহরজুড়ে। জাভনতিগ একজনকে জিজ্ঞেস করলো: এরা কীসের জন্য এভাবে শোক করছে..!

লোকটি বললো: আমাদের শহরে একটি দৈত্য এসেছে সাত মাথাওয়ালা। প্রত্যেক রাতে ওই দৈত্য সাতজনের মাথা নিয়ে খায়। এ কারণেই আমরা সবাই কালো পোশাক পরে আছি এবং শোক পালন করছি।

জাভনতিগ বললো: যাও! তোমাদের বাদশাকে গিয়ে বলো, আমি যদি ওই সাত মাথাওয়ালা দৈত্যকে হত্যা করি তাহলে কী পুরস্কার দেবে আমাকে।

দূত চলে গেল বাদশার দরবারে। ফিরে এলো শাহজাদির বিয়ের দলিল আর তার অর্ধেক সম্পদের কাগজপত্র নিয়ে। সেগুলো এনে দিলো জাভনতিগের হাতে। জাভনতিগ বললো: চলো এবার, যেখানে ওই দৈত্য আসে। আমাকে দেখিয়ে দিয়ে তুমি ফিরে এসো। লোকটি জাভনতিগকে দৈত্যের গুহা দেখিয়ে দিয়ে ফিরে এলো। এর পরের ঘটনা শুনবো খানিক মিউজিক বিরতির পর। সঙ্গেই থাকবেন আশা করি।

মিউজিক শুনলেন এবার যাওয়া যাক দৈত্যের গুহার দিকে। জাভনতিগ দৈত্যের গুহায় বসে বসে অপেক্ষা করতে লাগলো। মধ্যরাতে দৈত্য এসেই বললো: গন্ধ পাচ্ছি! মানুষের গন্ধ পাচ্ছি!

জাভনতিগ উঠে দাঁড়ালো। দৈত্যের মুখোমুখি দাঁড়িয়ে তলোয়ার কোষমুক্ত করলো দৈত্যের সঙ্গে লড়বার জন্য।

দৈত্য বললো: এই হতভাগা! কী ভাবছো তুমি! ভেবেছো আমার পথে বাধার সৃষ্টি করবে?

জাভনতিগ বললো: তুমি নিজেকে যেমন শক্তিশালী মনে করো সেরকম শক্তিশালী কিন্তু নও তুমি। এসেছি তোমার সঙ্গে যুদ্ধ করতে। এই বলেই জাভনতিগ তলোয়ার দিয়ে দৈত্যের কোমরে মেরে দিলো। দৈত্য দু টুকরো হয়ে গেল।

জাভনতিগের সঙ্গী নক্ষত্রবিদ বাদশাহকে জানিয়ে দিলো যে দৈত্যকে হত্যা করেছে তাদের বীর। বাদশাহ তো আনন্দে আত্মহারা। ঘটা করে উৎসবের আয়োজন করলো। জাভনতিগ দৈত্যকে হত্যা করে ফেরার পর তার কন্যাকে বিয়ে দিলো। জাভনতিগকে বাদশা তার কন্যাকে ছাড়াও আরো অনেককিছু দিলো,অর্ধেক সম্পদও দিলো। ওইসব সম্পদ জাভনতিগ দিয়ে দিলো নক্ষত্রবিদকে। বাদশার মেয়েকেও দিয়ে দিলো। তারপর বললো তারা যেন সেখানেই বসবাস করে। সবকিছু বুঝিয়ে দিয়ে জাভনতিগ তার সঙ্গী দারিয়বোরকে নিয়ে আবারো রওনা হলো।

যেতে যেতে তারা গিয়ে পৌঁছলো এক শহরে। সেই শহরের জনগণ ভীষণ দুর্বল ও ক্লিষ্ট, শীর্ণ।জাভনতিগ একজনকে জিজ্ঞেস করলো: তোমাদের এই অবস্থা কেন। কেন এখানকার লোকজন এরকম জীর্ণ, শীর্ণকায়? লোকটি বললো: একটা বিশাল অজগর সাপ আমাদের পানি আটকে রেখেছে। প্রতিদিন তার জন্য সাতটি কন্যা এবং সাত পাতিল স্যুপ নিয়ে যেতে হয়। তারপর সে একটু পানি আমাদেরকে দেয়। এখন সবাই দুশ্চিন্তায় আছে। পানির কোনো সংস্থান নেই। কারণ বাদশার মেয়ে ছাড়া আর কোনো মেয়ে অবশিষ্ট নেই এই শহরে।

জাভনতিগ বললো: বাদশাহকে গিয়ে বলো,আমি ওই অজগরকে মেরে ফেলবো। বাদশার যা খুশি আমাকে যেন দেয়।

এরপর যা ঘটেছে তা শুনবো পরবর্তী পর্বে। (চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি:১০৯/অ:১১৪/ ই:২৯