সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৬ ২০:২১ Asia/Dhaka

সুরা বনি ইসরাইলের ২ থেকে ৮ নম্বর আয়াতে বনি ইসরাইলের ঘটনাবহুল ইতিহাসের কিছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। ৪ নম্বর আয়াতের পর থেকে ইহুদিদের দু'টি দুর্নীতি ও বিদ্রোহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে:

'(৪) এবং আমরা বনী ইসরাইলকে (তাওরাত) গ্রন্থে এ সংবাদ দিয়েছিলাম, ‘তোমরা ভূপৃষ্ঠে অবশ্যই দু’বার অরাজকতা সৃষ্টি করবে  এবং অতিশয় উদ্ধত অহংকারমত্ত হবে।'  

 ইহুদিদের প্রথমবারের অরাজকতা হল নবী আরমীযার আদেশ অমান্য করা এবং নবী আশয়ীয়াকে হত্যা করা এবং দ্বিতীয়বারের অরাজকতা হল হযরত যাকারিয়া ও ইয়াহ্ইয়া (আ.)-কে হত্যা করা এবং হযরত ঈসা (আ.)-কে হত্যার  সঙ্কল্প করা। অবশ্য ইহুদিদের দুই দফা অরাজকতা কী ছিল তা নিয়ে গবেষকদের মধ্যে  বিতর্ক বা মতভেদ রয়েছে।

এরপরের আয়াতে ইহুদিদের উত্থান-পতনের দুই পর্যায়ের কথা তুলে ধরে বলা হয়েছে: 

'(৫) এরপর যখন দুই প্রতিশ্রুতির মধ্যে প্রথমটির সময় আসন্ন হবে তখন আমরা তোমাদের বিরুদ্ধে আমাদের কতক কঠোর শক্তিশালী (রণনিপুণ) বান্দাদের পাঠাব এবং তারা তোমাদের ঘরগুলোতে তোমাদের (দমনের উদ্দেশ্যে) তন্ন তন্ন করে খুঁজবে এবং এ প্রতিশ্রুতি পূর্ণ হওয়া অবশ্যম্ভাবী। (৬) এরপর তোমাদের জন্য পুনরায় তাদের ওপর আক্রমণ করার ক্ষমতা ফিরিয়ে দেব এবং ধন-সম্পদ দিয়ে ও পুত্রসন্তান দিয়ে তোমাদের সহায়তা দেব এবং জনসংখ্যায় তোমাদেরকে শত্রুদের চেয়ে বাড়িয়ে দেব (৭) তোমরা সৎকর্ম করলে তা তোমাদেরই জন্য এবং অসৎকর্ম করলে তাও তোমাদেরই জন্য। এরপর যখন দ্বিতীয় প্রতিশ্রুতির সময় সমাগত হবে তখন আমরা অপর এক জাতিকে পাঠাব যাতে তারা তোমাদের চেহারাকে বিমর্ষ করে দেয় এবং মসজিদে তথা বায়তুল মোকাদ্দাসে সেভাবেই প্রবেশ করবে যেভাবে তারা প্রথমবার প্রবেশ করেছিল এবং যা কিছুর ওপর তারা আধিপত্য লাভ করবে তাকে সম্পূর্ণরূপে ধ্বংস করে। (৮) আশা করা যায়, তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের করুণা প্রদর্শন করবেন, কিন্তু তোমরা যদি আগের আচরণের পুনরাবৃত্তি কর, তবে তিনিও তাঁর আচরণের পুনরাবৃত্তি করবেন; এবং আমরা জাহান্নামকে অবিশ্বাসীদের জন্য সংকীর্ণ (কারাগার) করে রেখেছি।'

ইহুদিদের একটি গোষ্ঠী এখনও চরম বিভ্রান্ত যারা তথা ইহুদিবাদীরা বর্তমানে ফিলিস্তিন দখল করে রেখেছে। এরা ফিলিস্তিনি নারী, শিশু ও পুরুষদের ওপর গণহত্যা চালানোসহ নানা ধরনের অরাজকতা ও আগ্রাসনে লিপ্ত এবং কোনো নিয়ম-নীতির ধার ধারে না। পবিত্র কুরআনের এই আয়াতের আলোকে আশা করা যায় জালিম ইহুদিবাদীরা আবারও মহাশাস্তি পাবে।

ইহুদিদের নানা অনাচার ও তাদের ওপর খোদায়ী শাস্তি মানব সমাজের সব জাতির জন্যই এ শিক্ষা বহন করছে যে জালিম যারাই হোন না কেন তাদেরকে আল্লাহ শাস্তি দেবেন। যারাই সৎ পথে চলবে ও সৎকাজ করবে তারাই হবে সফল ও গৌরবের অধিকারী। আর খোদাদ্রোহীতার পরিণাম হবে খুবই মন্দ। অন্য কথায় ভালো ও মন্দ আচরণ জাতিগুলোর পরিণতি নির্ধারণে ভূমিকা রাখে।

সুরা বনি ইসরাইলের নয় ও দশ নম্বর আয়াতে বলা হচ্ছে যে কুরআন সঠিক পথের দিশা দেয়ার সবচেয়ে জোরালো ও স্থায়ী মাধ্যম। যারা সৎকাজ করে তাদের  মহাপুরস্কারের সুসংবাদ দেয়া হয়েছে। এখানে আরও বলা হচ্ছে, যারা পরকালে বিশ্বাসী নয় তারা শাস্তি পাবে।

সুরা বনি ইসরাইলের ১১ নম্বর আয়াতে মানুষের তাড়াহুড়া-প্রবণতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন, মানুষ যেভাবে ভালো কিছু অর্জনের জন্য তাড়াহুড়া করে ঠিক তেমনি অজ্ঞতার কারণে অকল্যাণকেও পেতে তাড়াহুড়া করে। মানুষকে প্রকৃতিগতভাবেই তাড়াহুড়াপ্রিয় বলে উল্লেখ করেছেন মহান আল্লাহ। তাড়াহুড়া করা বা খুব দ্রুত কিছু পেতে চাওয়া মানুষের জন্য এক মহাবিপদ। আর এটা করতে গিয়ে মানুষ কোনো কিছুর সব দিক যাচাই-বাছাই করে দেখে না। ফলে অনেক সময় মানুষ প্রকৃত কল্যাণকে চিহ্নিত করতে পারে না, বরং অনেক সময় আবেগপ্রবণতা ও খেয়ালীপনার কারণে বাস্তবতাকে ভিন্নরূপে দেখে এবং বাহ্যিক চাকচিক্যে মোহিত হয়ে কল্যাণের পরিবর্তে অকল্যাণ চেয়ে বসে। মানুষের ঈমানহীনতার অন্যতম কারণ হল ধীর-স্থিরভাবে চিন্তাভাবনা না করে দ্রুত সিদ্ধান্ত নেয়া। পরবর্তী আয়াতে দিন ও রাতের সময়ের পরিমাণ বৃদ্ধির উপকারিতা এবং বিশ্বজগতের হিসাব-কিতাব থাকার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে বলা হচ্ছে, এসব বিষয় আল্লাহকে চেনার মাধ্যম। তাই মানুষের উচিত তার কাজকর্মের পরিণতি সম্পর্কে ভেবে দেখা ও সতর্ক থাকা।

সুরা বনি ইসরাইলের ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'(১২) এবং আমরা রাত ও দিনকে দু’টি নিদর্শন করেছি। পরে আমরা রাতের নিদর্শনকে মুছে ফেলি এবং দিনের নিদর্শনকে করি সমুজ্জ্বল যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহ অন্বেষণ করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ-সংখ্যা ও হিসাব নির্ণয় করতে পার। এবং আমরা প্রত্যেক জিনিসকে বিশদভাবে বর্ণনা করেছি।'

দিন ও রাত হচ্ছে প্রাকৃতিক ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকা। এর মাধ্যমে মানুষ নানা হিসাব-নিকাশ ও পরিকল্পনা যথাযথভাবে প্রণয়ন করতে পারে। পুরো অস্তিত্বের জগতই চলছে সংখ্যা ও গণনার ভিত্তিতে। বিশ্বের কোনো কিছুই হিসাবের আওতামুক্ত নয়। তাই মানুষেরও উচিত বুঝে-শুনে ও পরিণতির কথা ভেবে জীবন পরিচালনা করা।

সুরা আসরার ২৩ ও ২৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

(২৩) তোমার প্রতিপালক নিশ্চিত বিধান দিয়েছেন যে, তাঁকে ছাড়া অন্য কারও উপাসনা করবে না এবং বাবা-মায়ের সাথে সদাচার করবে; যদি তাঁদের মধ্যে একজন বা উভয়েই তোমার সামনে বার্ধক্যে উপনীত হন, তবে তাঁদেরকে ‘উফ’ পর্যন্ত বলবে না, আর তাদের ধমক দিয়ে বা তিরস্কার করে তাড়িয়ে দিও না এবং তাদের সাথে সম্মানসূচক বা মমতাপূর্ণ কথা বলবে । (২৪) এবং তাঁদের সামনে বিনয়-নম্র হয়ে নিজের কাঁধ নত করে দেবে এবং তাঁদের জন্য এ প্রার্থনা করবে, ‘হে আমার প্রতিপালক! তাঁদের উভয়ের ওপর করুণা কর, যেরূপে আমার শিশুকালে তাঁরা আমাকে প্রতিপালন করেছিলেন।’#