ফেব্রুয়ারি ২০, ২০১৬ ২৩:১৬ Asia/Dhaka

হযরত আলি (আ) স্বপ্নের ভেতর মালেক মুহাম্মদকে বলেছিল: এর পর থেকে যখনই কোনো সমস্যায় পড়বে তখনই বলবে: ‘ইয়া আলি’! তোমার সমস্যার সমাধান হয়ে যাবে। এ বলেই আলি (আ) অদৃশ্য হয়ে গেল। মালিক মুহাম্মদের ঘুম ভেঙে গেল। সে দেখলো তার শরীরে কোনোরকম ব্যথা-বেদনা নেই। পুরোপুরি সুস্থ সে।



এদিক সেদিক তাকালো। দেখলো তার ঘোড়া এবং জিন সব কিছুই ঠিক আছে। প্রশান্ত মনে দৃঢ় বিশ্বাস বুকে নিয়ে ঘোড়ায় চড়লো এবং সতেজভাবে ঘোড়া ছুটালো।

এদিকে তার ছয় ভাই যারা তাকে মেরেছিল তারা যেতে যেতে এক শহরে গিয়ে পৌঁছলো। ওই শহরের বিভিন্ন অলিগলিতে তারা ঘুরতে লাগলো। ঘুরতে ঘুরতে তারা গিয়ে পড়লো এক জুয়ার গলিতে। ওই গলিতে জুয়া খেলা হয় বলে এরকম নাম। এমনিতেই তারা জুয়া খেলতে পছন্দ করতো। মালেককে মারার পর মাথার ভেতর যে দুশ্চিন্তা কাজ করছিল সেই দুশ্চিন্তা দূর করার জন্য তারা জুয়ার আড্ডায় বসতে চাইলো। সবাই মিলে তাই করলো। জুয়া খেলার আস্তানায় ঢুকে পড়লো তারা এবং শুরু করে দিলো জুয়া খেলা। খেলতে খেলতে সর্বস্বান্ত হয়ে গেল তারা। যা কিছুই ছিল সব হারিয়ে বসলো। এমনকি রাতের খরচটুকুও অবশিষ্ট রইলো না। পকেট শূন্য হয়ে যাবার পর উপায়ন্তর না দেখে তাদের তিন জন গেল ভিক্ষা করতে। বাকি তিনজনের একজন গেল নেহারির দোকানে কাজ করতে, আরেকজন গেল গোসলখানার কাজে আর তৃতীয়জন গেল রান্নার কাজে সহযোগিতা করতে।

অপরদিকে মালিক মুহাম্মাদ যেতে যেতে সামনে দেখলো একটা শহর। ওই শহরেই উঠলো সে। ঘটনাক্রমে তার যে তিনভাই ভিক্ষা করার জন্য এক শহরে গিয়েছিল এটা ছিল সেই শহর। তখন ছিল রাত। মালিক কিছুই চিনে উঠতে পারছিল না। সকালের অপেক্ষায় রাতটা সেখানেই কাটাতে চাইলো। কিন্তু কোথায় থাকবে! ভেবে ভেবে শেষ পর্যন্ত এক বুড়ির বাসার দরোজায় আঘাত করলো। বুড়ি ঘরের দরোজা খুলতেই মালিক বললো: ‘হে মা আমার! আমি একজন মুসাফির। অপরিচিত এই শহরে থাকার কোনো জায়গা পাচ্ছি না। অনুমতি দিলে আমি আপনার ঘরে রাতটা কাটিয়ে সকাল হলেই আমার কাজে বেরিয়ে যাবো’।

বুড়ি খুব ভালো করে মালেককে দেখলো। বুড়ির মনে হলো মালিক যে সে কোনো লোক নয়, ওকে বাদশাহ কিংবা রাজপুত্রের মতো লাগে। বুড়ি মালেককে বললো: ‘হে যুবক! তোমার যদি রুচিতে না বাধে, যদি গরিবের প্রতি তোমার সুদৃষ্টি থেকে থাকে তাহলে সুস্বাগত তোমাকে’!

মালিক ঘরে ঢুকলো। বুড়ি তার এক মেয়েকে নিয়ে ওই ঘরে বাস করতো। ঘরে ঢুকেই মালিক চারদিকে তাকিয়ে দেখলো বর্ণনা করার মতো তেমন কিছুই নেই। খোরজিন থেকে একটা মুক্তা বের করে বুড়ির হাতে দিয়ে বললো: ‘এটা বিক্রি করে রাতের জন্য খাবার দাবারের ব্যবস্থা করুন’।

 মালেকের দেওয়া মুক্তাটি বিক্রি করে বুড়ি ওই রাতের খাবারের আয়োজন করলো। খাওয়া শেষে মালিক লক্ষ্য করলো বুড়ি কাঁদছে।

মালিক বললো: মা! কাঁদছো কেন?

বুড়ি বললো: রাজকন্যার কথা ভেবে কাঁদছি। ওর জন্য আমার মনটা কাঁদে।

মালিক বললো: কেন কী হয়েছে রাজকন্যার!

বুড়ি বললো: সম্প্রতি একটা দৈত্য কোত্থেকে যেন আসে। প্রতি মাসে একবার আসে। এসে একটা মেয়ে, চুয়ান্ন কিলো ওজনের এক ঝুড়ি খুরমা এবং ত্রিশ কিলো হালুয়া প্রত্যেকের কাছ থেকে পর্যায়ক্রমে নিচ্ছে। সবার কাছ থেকেই নেয়া হয়েছে,আজ বাদশার দেওয়ার পালা। সে কারণেই বাদশার মেয়ের জন্য মনটা পুড়ছে। আমি ওর ধাইমা হই কিনা।

এসব শুনে মালিক মুহাম্মদ হযরত আলি (আ) এর কথা স্মরণ করলো। তলোয়ার কোমরে বাঁধলো। বুড়ি যখন দেখলো মালিক মুহাম্মদ যুদ্ধের জন্য তৈরি হচ্ছে,বললো: হে প্রিয় সন্তান আমার! কী করতে চাচ্ছো তুমি?

মালিক বললো: ভাবছি যাবো, দৈত্যের অত্যাচার থেকে জনগণকে মুক্তি দেওয়ার চেষ্টা করবো।

বুড়ি বললো: হে যুবক! তোমার যৌবনের কসম,রহম করো! বাদশা এ পর্যন্ত কয়েক দল সৈন্য পাঠিয়েছে ওই দৈত্যের সঙ্গে যুদ্ধ করার জন্য, কিন্তু কেউই জিততে পারেনি, মারাত্মকভাবে পরাজিত হয়েছে। এখন তুমিও যদি যাও,নির্ঘাত মারা যাবে।

মালিক বললো: হে বুড়ো মা! আমার রক্ত ওই রাজকন্যার রক্তের চেয়ে বেশি রঙিন নয়। আল্লাহ চাহে তো আমি যাবো। তুমি শুধু আমাকে ওই দৈত্যটার জায়গা দেখিয়ে দাও!

বুড়ি যখন দেখলো মালিক একেবারেই নাছোড়বান্দা, যাবেই সে, অগত্যা বললো: দরোজা দিয়ে বাইরে গেলে একটা গম্বুজ দেখতে পাবে। ওই গম্বুজের নীচে দেখবে রাজকন্যা বসে আছে খুরমার ঝুড়ি আর হালুয়া নিয়ে।

মালিক মুহাম্মদ বাসার বাইরে এসে আবারও হযরত আলী (আ) কে স্মরণ করলো। এরপর ঘোড়ার পিঠে চড়ে দরোজার বাইরে গিয়ে দেখলো সত্যিই একটা গম্বুজ দেখা যাচ্ছে। গম্বুজের দিকে গেল। রাজকন্যা দেখলো মালিক তার দিকে আসছে। কাছাকাছি যেতেই মালিক রাজকন্যাকে বললো: এই বাদশার মেয়ে! এই গম্বুজের কাছে বসে বসে কী করছো তুমি!

রাজকন্যা মালিকের দিকে তাকিয়ে ভাবলো লোকটাকে তো মন্দ বলে মনে হচ্ছে না।

মালিক মুহাম্মদ আবারো বললো: এই রাজকন্যা! আমি এসেছি তোমাকে মুক্ত করতে।

একথা শুনে রাজকন্যা অঝোরে কাঁদতে শুরু করে দিলো।# (চলবে....)