ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০১৬ ১৪:৫৮ Asia/Dhaka

মালেক মুহাম্মাদ যখন বললো ‘হে রাজকন্যা! আমি এসেছি তোমাকে দৈত্যের হাত থেকে বাঁচাতে’। অমনি রাজকন্যা কাঁদতে কাঁদতে মালেককে বললো: ‘হে যুবক! তুমি তোমার নিজের জীবনের জন্য একটু ভাবো। এই দৈত্য ভয়ংকর। তোমাকে দেখামাত্রই তোমার ওপর হামলা করবে এবং তোমাকে প্রাণে মেরে ফেলবে। তোমার মাথা শরীর থেকে আলাদা করে ফেলবে।তুমি তোমার ওই যৌবনের প্রতি সদয় হও,নিজের প্রাণ রক্ষা করো!’


মালেক বললো: যার মওলা হচ্ছে হযরত আলি (আ),দৈত্য-দানবে তার আর ভয় কী! আমি কোনো পরোয়া করি না। আল্লাহর ইচ্ছায় এবং মওলা আলির সাহায্যে এসেছি তোমাকে ওই দৈত্যের হাত থেকে রক্ষা করতে। তুমি বেঁচে গেলে তোমার পিতা মাতাও খুশি হবে,আনন্দিত হবে।

রাজকন্যা মালেক মুহাম্মাদের কথা শুনে কিছুটা আশ্বস্ত হলো এবং কান্নাকাটি বন্ধ করে প্রশান্ত হলো কিছুটা। একটু পরে সে মালেক মুহাম্মাদকে বললো: ‘ঠিক আছে! তুমি যা ভালো মনে কর,করো’!


রাজকন্যার কথা আর সম্মতি পেয়ে মালেক মুহাম্মাদ তার পাশে গিয়ে বসলো। মালেককে পাশে পেয়ে রাজকন্যার একটু সাহস হলো। অন্তত মুখ ফুটে কারও সাথে কথা বলার মতো অবস্থা হলো তার। বললো: ‘হে যুবক! তুমি তো দেখছি আত্মহত্যা করতে চাচ্ছো। শোনো! এই দৈত্য আসার তিনটা লক্ষণ আছে। সে যখন ভূমি থেকে আকাশে উড়তে যায় বাতাস তখন একটু গরম হয়ে ওঠে। যখন সে উড়তে থাকে আবহাওয়া তখন ভীষণ গরম হয়ে যায়। এমন গরম যে মনে হয় গা পুড়ে যাবে। তৃতীয় লক্ষণ হলো যখন সে কাছাকাছি চলে আসে বিশ্রি গন্ধে চারদিকের পরিবেশ দুর্গন্ধময় হয়ে ওঠে। ওই গন্ধে জনগণের বেঁচে থাকা দায় হয়ে যায়।

রাজকন্যার কথা শুনে মালেক মুহাম্মাদ বললো: হে রাজকন্যা! আমার এখন ঘুম পাচ্ছে। যদি ঘুম এসেই যায় তাহলে ওই প্রথম আলামত পেয়েই তুমি আমাকে জাগিয়ে তুলবে।
রাজকন্যা বললো: ঠিক আছে।
কিন্তু মালেক ঘুমাতে না ঘুমাতেই প্রথম নিদর্শনটা উপলব্ধি করলো রাজকন্যা। সে মালেক মুহাম্মাদের ঘুমন্ত চেহারার দিকে তাকালো। কী গভীর ঘুমে সে। কী করে তাকে এই চমৎকার ঘুম থেকে উঠাবে সে,বুঝে উঠতে পারছিল না। বিস্ময় বিহ্বল হয়ে পড়ে রইলো রাজকন্যা। এমন সময় দ্বিতীয় লক্ষণও দেখা দিলো। এবারও রাজকন্যার মন চাইলো না কাঁচা ঘুম থেকে মালেক মুহাম্মাদকে জাগাতে। কিন্তু একটু পরেই বিশ্রি গন্ধটা নাকে আসতে লাগলো। বোঝা যাচ্ছিলো দৈত্যটা কাছাকাছি এসে গেছে।

কী আশ্চর্য! গন্ধ তো গেলোই না বরং আরও বেড়ে গেল। অথচ রাজকন্যা মালেক মুহাম্মাদকে এবারও ঘুম থেকে জাগাতে চাইলো না। এদিকে ভয়ে কষ্টে তার চোখ থেকে ঝরঝর করে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। ওই অশ্রুরই একটা ফোঁটা পড়লো ঘুমন্ত মালেকের চোখেমুখে। পড়তেই মালেকের ঘুম ভেঙে গেল এবং এক লাফে সে উঠে দাঁড়ালো। রাজকন্যাকে কাঁদতে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো: কী হয়েছে কাঁদছো কেন?
রাজকন্যা বললো: হে যুবক! দৈত্যের আসার সকল আলামত ফুটে উঠেছে। কিন্তু তুমি যেভাবে ঘুমুচ্ছিলে আমার মন চাচ্ছিল না তোমাকে জাগাই। এক্ষুণি কিন্তু দৈত্য এসে পড়বে।
মালেক মুহাম্মাদ দ্রুত তার গেলাফ থেকে তলোয়ারটা বের করে দাঁড়ালো। রাজকন্যা তলোয়ার দেখে ভয় পেয়ে এক কোণে জড়োসড়ো হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো।  

মালেক মুহাম্মাদ আলী (আ) কে স্মরণ করলো। দৈত্যের চীৎকার তার কানে ভেসে এলো। বিশ্রি গন্ধে পরিবেশ দূষিত হয়ে গেল। যেন মরে যাবার উপক্রম। দৈত্য এরিমাঝে এসে পড়লো। এসেই তার নজর পড়লো মালেক মুহাম্মাদের ওপর। দৈত্য বিশ্রি এক হাসি দিয়ে বললো: মানুষের জাত নাকি ভয় পায় যে সে কাজে হাত দিতে। কিন্তু এখন দেখছি রাজকন্যার পালা যখন এলো একটা যুবক আর একটা ঘোড়াও বোনাস হিসেবে এসেছে আমার জন্য হা হা হা....।
মালেক মুহাম্মাদ চীৎকার করে বললো: মুখ বন্ধ কর তুই! আমি এসেছি তোকে হত্যা করার জন্য। আল্লাহর ইচ্ছায় আমিই হবো তোর হত্যাকারী।

দৈত্য মালেকের কথা শুনে বিরক্ত হলো। তার হাতের গদা ছুঁড়ে মারলো মালেকের মাথা লক্ষ্য করে। মালেক মাথা সরিয়ে নিয়ে নিজেকে রক্ষা করলো। এরপর দৈত্যকে লক্ষ্য করে তলোয়ার চালালো। দৈত্যও সরে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করতে চাইলো কিন্তু পারলো না, তার উরুতে তলোয়ার গিয়ে আঘাত করলো। ধারালো তলোয়ারের আঘাতে দৈত্যের এক পা কেটে পড়ে গেল মাটিতে। দৈত্য মালেক মুহাম্মাদের বীরত্ব দেখে ভয় পেয়ে গেল এবং এক খণ্ড মেঘ হয়ে হাওয়ায় মিশে গেল।
রাজকন্যা আর মালেক মুহাম্মাদ একে অপরের দিকে বিস্ময়ে বিহ্বল হয়ে তাকাতে লাগলো। দৈত্যের গায়ের গন্ধ মিলে গেলে দুজনেই আল্লাহর শোকর আদায় করলো।

সকালবেলা মুয়াজ্জিন যখন মসজিদের ছাদে উঠে আজান দিতে গেল সামনের গম্বুজের নীচের দিকে তাকাতেই তার সবকিছু উল্টাপাল্টা হয়ে গেল। বিশাল কী যেন একটা তার নজরে পড়লো। ময়লার ওপর পড়ে আছে ওই বস্তুটা। ভয়ে কাঁপতে শুরু করলো মুয়াজ্জিন। কাঁপতে কাঁপতে আজান দিতে গিয়ে গোলমাল করে ফেললো সে। মুয়াজ্জিনের ভুল আজানের ধ্বনি কানে গেল বাদশার। (চলবে)