‘সোনার খাঁচায় ময়না পাখি’ (৮)
পরী মালেককে সেইসব বলে ঘুরে ঘুরে পায়চারী করতে লাগল এবং হঠাৎ করেই সে একটা বড় মুরগিতে পরিবর্তিত হয়ে গেল। মুরগি তার পাখা বিস্তার করে দিল এবং মালেক মুহাম্মাদ ওই বিস্তারিত পাখার ওপর চড়ে বসলো। মুরগি উড়াল দিল। ২৪০ কিলোমিটার আকাশপথ মানে চিতাবাঘ আর সিংহদের এলাকা পেরিয়ে গেল।
শেষের ভূখণ্ডটা যেহেতু দৈত্যদের ছিল সেজন্য পরী তার আসল রূপ ধারণ করল আর মালেক মুহাম্মাদকে একটা সুঁইয়ের রূপ দিয়ে তার গলার নীচে পুঁতে রাখল। এভাবে বাকি পথও পার হলো। এক সময় তারা গিয়ে পৌঁছলো শহরে এবং তারপর প্রথম দরোজায় গিয়ে উপস্থিত হলো। পরী এবার মালেক মুহাম্মাদকে তার আসলে রূপে পরিবর্তন করে দিল এবং সে নিজেও পরিণত হলো একটা কবুতরে। পরীদের বাদশার মেয়ের প্রাসাদের একটা খাঁজে গিয়ে বসে সে এবার দেখতে চাইলো দৈত্যগুলোর সাথে কী করে মালেক মুহাম্মাদ।
মালেক যখন প্রথম দরোজায় পৌঁছলো, দেখলো সেই এক পা-ওয়ালা খোঁড়া দৈত্যটাই এই দ্বাররক্ষী। দৈত্যটার নজর মালেক মুহাম্মাদের ওপর পড়তেই সে কাঁপতে শুরু করল। মালেক দৈত্যকে বলল ভয় পেও না, তোমার সাথে আমার কোনো কাজ নেই। তুমি শুধু আমাকে ওই ছয়টি দরোজা পেরুবার ব্যবস্থা করে দাও। দৈত্য বলল: তুমি পাঁচটা দরোজা পেরুতে পারবে কিন্তু শেষ দরোজা পেরুতে হলে কিছু গিফ্ট বা নজরানা নিয়ে যেতে হবে। ওই দরোজা পাহারা দেয় আমার ভাই। মালেক মুহাম্মাদ বলল: ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি করো! যেসব খোরমা আর হালুয়া নজরানা হিসেবে পেশ করো সেরকম কয়েক ট্রে ভর্তি করে নিয়ে আসো এবং গেইটগুলো পার হবার পাস বা গেইটপাস নিয়ে আসো।
দৈত্য ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি সবকিছু আঞ্জাম দিল। দৈত্য ওই গেইটপাস দেখিয়ে দেখিয়ে পাঁচ পাঁচটি দরোজা পার হয়ে গেল। সর্বশেষ দরোজায় গিয়ে গেইটপাস দেখালেও প্রহরী দৈত্য বলল: মিষ্টি ছাড়া গেইট পার হওয়া সম্ভব না। মালেক মুহাম্মাদ দৈত্যকে বলল: মুখ খোলো। দৈত্য মুখ হা করতেই মালেক তার সঙ্গে নিয়ে আসা হালুয়া আর খোরমাহগুলো মুখের ভেতর ঢেলে দিল। দৈত্য বলল: তোমার মিষ্টিগুলো তো মন্দ না। ঠিক আছে,যাও। মালেক মুহাম্মাদ অনুমতি পেয়েই সোজা ঢুকে গেল পরীদের বাদশাহর মেয়ের রুমে।
রুমে ঢুকে মালেক এদিক ওদিক তাকালো। খাটের ওপর নজর পড়তেই দেখলো পরীরাজ কন্যা ঘুমিয়ে আছে। আর তার মাথার উপরে ঝুলানো আছে সোনার খাঁচা। আর খাঁচার ভেতর বসে আছে সুন্দর ময়না পাখিটা। চারপাশে চারটি চেরাগ মানে টেবিল ল্যাম্প জ্বালানো আছে। প্রত্যেকটা ল্যাম্পের জায়গা পাল্টিয়ে দেওয়া হলো। এরপর একটা চিঠি লিখলো মালেক মুহাম্মাদ। চিঠিটা সে পরীরাজ কন্যার মাথার ওপর রাখল। চিঠিতে লেখা ছিল: হে পরীরাজ কন্যা! আমি মালেক মুহাম্মাদ, সোনার খাঁচা আর ময়না পাখিটা নিয়ে গেলাম। তুমি যদি চাও তাহলে কষ্ট করে এসো এই ঠিকানায়। ঠিকানায় তার দেশের নাম এবং রাজ প্রাসাদের কথা লিখে দিল। এরপর মালেক মুহাম্মাদ রওনা হয়ে গেল তার গন্তব্যে।
যেতে যেতে মালেক একেবারে শহরের বাইরে পৌঁছে গেল। তার সঙ্গে আসা কবুতররূপি পরীও এলো তার সঙ্গে সঙ্গে। পরী যখন দেখলো মালেকের হাতে সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি, ভীষণ খুশি হয়ে গেল সে। এবার পরী পুনরায় বিরাট একটা পাখিতে পরিণত হলো এবং তার পাখায় চড়ে বসলো মালেক মুহাম্মাদ। পাখি আবার উড়াল দিল। উড়তে উড়তে গিয়ে পৌঁছলো পরীদের কেল্লায়। সেখানে মালেক মুহাম্মাদ রেখে এসেছিল দরবেশের দেওয়া লাঠি, দস্তরখান এবং তার ঘোড়া। সেসব নিয়ে পরীসহ ফিরে গেল সেই বাদশার শহরে যে বাদশাহর সাত কন্যাকে বিয়ে করেছিল তারা সাত ভাই। সেখানে দেখা হলো তার ছয় ভাইয়ের সঙ্গে। তাদের নিয়ে এবার মালেক মুহাম্মাদ যাত্রা শুরু করল।
যেতে যেতে গিয়ে পৌঁছলো ওই সেই শহরে যে শহরে ছিল এক পা-ওয়ালা দৈত্য, যে কিনা মানুষের কাছ থেকে চাঁদা নিত। সেই শহরের বাদশার প্রাসাদে গেল। পরদিন তার বৌসহ ছয় ভাই এবং তাদের স্ত্রীদের সঙ্গে নিয়ে ফেরার পথে পা বাড়ালো। কিন্তু ছয় ভাই যখন দেখলো মালেক মুহাম্মাদের হাতে সোনার খাঁচা আর ময়না পাখি,ভাবলো মালেক যদি এই পাখি আর খাঁচা নিয়ে প্রাসাদে ফিরে যায় এবং তার বাবার হাতে দেয় তাহলে তো সে-ই হবে বাদশা। আর মালেকের বাদশা হওয়া মানে তার অধীনেই সারা জীবন কাটাতে হবে। কী করা যায় চিন্তায় পড়ে গেল ছয় ভাই। কোনো বুদ্ধি করতে না পারলেও মোটামুটি এই সিদ্ধান্ত নিলো যে কিছু না কিছু একটা করতেই হবে। মালেকের কাছ থেকে ওই খাঁচা আর পাখি কেড়ে নিয়ে তারাই তাদের বাবার হাতে দেবে যাতে তারাই হতে পারে পরবর্তী বাদশা।
যাই হোক ছয় ভাই ভাবতে ভাবতে মালেক মুহাম্মাদের সঙ্গে চলল এবং একসময় তারা গিয়ে পৌঁছলো একটা কুপের তীরে। ভাইদের একজন বলল: কেউ একজন যাও পানি নিয়ে আসো। মালেক বলল: ঠিক আছে,আমি যেহেতু সবার ছোট,সুতরাং আমিই যাচ্ছি পানি আনতে। এই বলেই সে চলে গেল কুপের ভেতর এবং পানির বালতি পূর্ণ করে উপরে পাঠালো। মানুষেরাও পানি খেল এবং ঘোড়াগুলোকেও খাওয়ানো হলো। সবার পানি খাওয়া হলে মালেক মুহাম্মাদ বালতিতে চড়ে বসলো যাতে তাকে টেনে উপরে তোলা হয়। কিন্তু তখনই ঘটলো দুর্ঘটনা। (ক্রমশ..)