ফেব্রুয়ারি ২১, ২০১৭ ১৯:১৫ Asia/Dhaka
  • ইরানি গল্প ও রূপকথা: তিগ তরুণ (পর্ব-৪)

বলছিলাম জাভনতিগের বড় বোনের স্বামি একটি চিঠি লিখলো তার মায়ের উদ্দেশ্যে। একটি সোলায়মানি আংটিও জাভনতিগকে দিলো। তারপর বললো: এই চিঠিতে আমি আমার মাকে লিখেছি তোমাকে যেন চেলগিসের বাসার খোঁজ দিতে সহযোগিতা করে। এরপর মায়ের বাসার ঠিকানাও দিয়ে দিলো জাভনতিগকে। জাভনতিগ বড় বোন এবং বোনের স্বামির কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রওনা হয়ে গেল বোনের শ্বাশুড়ির বাসার উদ্দেশ্যে।

বড় বোনের স্বামির দিক-নির্দেশনায় জাভনতিগ রওনা হয়ে গেল বোনের শ্বাশুড়ির বাসার উদ্দেশ্যে। যেতে যেতে সন্ধ্যা ঘনিয়ে এলো। বোনের শ্বাশুড়ি বৃদ্ধ মহিলা বললো রাতটা যেন তাদের বাসাতেই বেড়ায়। সকালবেলা তাড়াতাড়ি উঠে তাকে নিয়ে যাবে চেলগিসের বাসায়। সকাল হলো। জাভনতিগকে সাথে নিয়ে বের হলো বৃদ্ধা। কিছুক্ষণ যাবার পর এমন একটা ঘরে গিয়ে পৌঁছলো যে ঘরে সাতটি রুম। জাভনতিগের হাতে এক গোছা চাবি দিয়ে বললো: এখানে সাতটি কামরা আছে। তুমি যখনেএক এক করে সব কটা কামরার দরোজা খুলবে সপ্তম কামরার ভেতরে দেখতে পাবে চেলগিসকে। দেখামাত্রই তার দুই বাহু শক্ত করে ধরবে। সে যদি জিজ্ঞেস করে: তুমি কে? বলবে: আমি আজাল। এসেছি তোমার জান নিতে। সে জিজ্ঞেস করবে: কেন তুমি আমাকে মারতে চাও? বলবে: কেননা সত্তর বছর হয়ে গেল তুমি বিয়ে করছো না।

বুড়ি যেভাবে যেভাবে বলেছে, ঠিক সেভাবেই সব কাজ সমাধা করেছে জাভনতিগ। কিন্তু চেলগিসের চোখ জাভনতিগের ওপর পড়তেই ওই মেয়ের ভালো লেগে গেল। জাভনতিগকে বিয়েই করলো চেলগিস এবং সেখানেই বসবাস করতে লাগলো। একদিন চেলগিস গেল গোসলে তার চল্লিশ পরিচারিকাকে সঙ্গে নিয়ে। চেলগিসের ছিল চল্লিশটি চুলের বেণী। প্রত্যেক পরিচারিকা একটি করে বেণী পরিস্কার করবে এটাই ছিল নিয়ম। কিন্তু একজন পরিচারিকার জানা ছিল না কীভাবে চুলের বেণী আঁচড়াতে হয়। আঁচড়াতে গিয়ে একটি চুল ছিঁড়ে চিরুনিতে লেগে গেল এবং সেই চুলটি চিরুণি থেকে খুলে পরিচারিকা কাঠের একটি টুকরোর সঙ্গে পেঁচিয়ে নদীর পানিতে ছুঁড়ে মারলো। ঘটনাক্রমে ওই কাঠের টুকরোটি পানিতে ভাসতে ভাসতে গিয়ে পৌঁছলো হারুত ও মারুতের শহরে।

ওই শহরের বাদশার ছেলে নদীর পাড় দিয়েই যাচ্ছিলো। তার চোখে পড়লো কাঠের টুকরোটি যার মধ্যে পেঁচানো ছিল চেলগিসের চুল। সে তার চাকরদের বললো ওই কাঠের টুকরোটি যেন নিয়ে আসে এবং চুলটাকে খুলে নেয়। কাঠের টুকরো থেকে চুলটাকে খুলে নিতেই বুঝতে পারলো যে ওটা কোনো নারীর চুল। তাড়াতাড়ি শাহজাদাকে জানানো হলো যে ওই নারীর চুলটা ১২ গজ লম্বা। বাদশার ছেলে বললো: ওই নারীর সন্ধান চাই আমি। যে করেই হোক তাকে খুঁজে বের করে এখানে নিয়ে আসতে হবে। দরবারে এক বৃদ্ধা মহিলা ছিল। ওই মহিলা তিলের তেল আর নির্যাস বা শিরা পছন্দ করতো। মহিলা শাহজাদাকে বললো: আমার এই কলসিটাকে যদি তিলের তেল আর শিরা দিয়ে ভর্তি করে দাও তাহলে আমি মেয়েকে খুঁজে তোমার কাছে নিয়ে আসতে পারি।

শাহজাদা আদেশ দিলো বুড়ির ওই কলসিটিকে যেন তেল আর শিরা দিয়ে ভর্তি করে দেয়। তাই করা হলো। বুড়ি তার ভরা কলসিটিকে কাঁখে নিয়ে রাস্তায় পা বাড়ালো। যেতে যেতে বুড়ি গিয়ে পৌঁছলো চেলগিস বা চেহেলগিসের বাসায়। দরোজার কড়া নেড়ে বললো: আমি এক বৃদ্ধা মহিলা। রাস্তা হারিয়ে ফেলেছি। কোথায় যাবো জানি না। দয়া করে রাতটা আমাকে তোমার বাসায় থাকতে দেবে? সকালেই আমি চলে যাবো। ভেতর থেকে বললো: আসো!‍ তোমার যত সময় থাকতে ইচ্ছে হয় থাকো! বুড়ি দুই তিন সপ্তাহ চেলগিসের বাসায় কাটালো। এ কয়দিনে বুড়ি চেলগিসের বিশ্বস্ততা অর্জন করলো।

বুড়ি একদিন চেলগিসের পাশে বসে তার মাথায় হাত বুলাচ্ছিল যাতে তার ঘুম আসে। এরকম অবস্থায় বুড়ি জিজ্ঞেস করলো: তোমার স্বামি কোথায় দিনের বেলায় কোথায় যায়?

চেলগিস বললো: পাহাড়ে যায় শিকার করতে।

বুড়ি বললো: এইসব সম্পদ কোত্থেকে এনেছো?

চেলগিস বললো: আমাদের কাছে একটি সোলায়মানি আংটি আছে। ওই আংটিকে যা আনতে বলি তাই নিয়ে আসে। যেখানে যেতে চাই সেখানেই নিয়ে যায়।

বুড়ি বললো: আংটিটা কোথায় এখন, একটু দেখা যাবে?

চেহেলগিস বললো: আংটি তো আমার কাছে নেই, জাভনতিগের কাছে।

বুড়ি বললো: তাই। তোমার স্বামি এখানে না থাকা অবস্থায় যদি কোনো মেহমান চলে আসে, তখন কী করবে?

বুড়ির কথায় চেলগিস খানিকটা চিন্তায় পড়ে যায়। মনে মনে বলে বুড়ি তো মন্দ বলে নি! আংটিটা আমার কাছে রেখে দেয়াই ভালো। তাই করবো।*

(চলবে)

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/টি-১১০/ই-৩১