মার্চ ০২, ২০১৭ ১৮:০২ Asia/Dhaka

জার্মান লেখক ওসওয়াল্ড স্পেঙ্গলারের মতে, রোমান সভ্যতার মত পাশ্চাত্যের বর্তমান সভ্যতাও পতনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। 'পাশ্চাত্যের পতন' শীর্ষক বইয়ে তিনি এই মত প্রকাশ করেছেন। 'শক্তিশালী ধর্ম ইসলাম মানুষের সার্বিক সৌভাগ্যের পথ দেখায় বলে  পাশ্চাত্যে এ ধর্মে দীক্ষিতদের সংখ্যা দিকে দিনকে দিন বাড়ছে' বলে তিনি মনে করেন।

জীবনের সঠিক দর্শনের সন্ধান করতে গিয়ে পাশ্চাত্যের এইসব মানুষ দেখছেন যে,  কেবল ইসলামই তা দান করছে এবং তাদের আধ্যাত্মিক  চাহিদাগুলো মেটাচ্ছে। মিসেস এলকা স্মিথ হচ্ছেন এ ধরনের সৌভাগ্যবতীদেরই একজন। তিনি বলেছেন, "ইসলাম আমাকে পুরোপুরি বদলে দিয়েছে।  আমি এখন জানি যে আমার জীবনের লক্ষ্য কী এবং কেন আমি বেঁচে রয়েছি।"

মুসলমান হওয়ার পর নিজের জন্য ফাতিমা নামটি বেছে নিয়েছেন মিসেস এলকা স্মিথ। ইসলাম ধর্ম গ্রহণের কাহিনী তুলে ধরতে গিয়ে তিনি বলেছেন: "আমার বাবা ছিলেন একজন শিক্ষক ও মা ছিলেন একটি অফিসের কর্মকর্তা। আমাদের  মধ্যবিত্ত পরিবারটি ধার্মিক পরিবার ছিল বলে দাবি করা যায় না। মায়ের সঙ্গে মাঝে মধ্যে গির্জায় যেতাম। অবশ্য যেসব উপদেশ দেয়া হত তার কিছুই বুঝতাম না। হাইস্কুলের ধর্মীয় ক্লাসগুলোতেও অংশ নিতাম বিশেষ কোনো আগ্রহ ছাড়াই। এক বছর ধরে কেবল বাইবেলের কিছু বাক্য দেখে দেখে লেখার এবং মুখস্থ করার ক্লাসে যেতাম। এই ক্লাসগুলোতে স্রস্টার অস্তিত্ব এবং মৃত্যুর পরবর্তী জীবন নিয়ে ভাবতাম। সে সময় আমার বিশ্বাস ছিল খুবই নড়বড়ে। জীবনকে কিভাবে খোদায়ী বিধানের সঙ্গে মানানসই করা যায় সে বিষয়ে আমরা তরুণ-তরুণীরা সে সময় কোনো পরামর্শ বা ব্যাখ্যা পেতাম না। অন্য সব সমবয়সীদের মত আমিও আশপাশের পরিবেশ সম্পর্কে উতসুক ছিলাম এবং যে কোনো বিষয়ে মাথায় জাগতো অনেক প্রশ্ন। ১৬ বছর বয়সে ঘটনাক্রমে কয়েকজন পাকিস্তানির সঙ্গে পরিচয় ঘটে। যখন আমি তাদের মুখেই প্রথমবার শুনলাম যে তারা মুসলমান, ভয় আর আতঙ্ক ঘিরে ধরল আমাকে। কারণ, এ ধর্ম সম্পর্কে কেবল নেতিবাচক কথাই শুনেছি।"

 নওমুসলিম মিসেস এলকা স্মিথ আরো বলছেন: অবশ্য ওই পাকিস্তানিদের সঙ্গে আরো পরিচিত হওয়ার পর ইসলাম সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে সক্ষম হই। যেমন, মুসলমানরা হযরত ঈসা (আ.) ও হযরত মুসা (আ.)সহ সব ঐশী নবী-রাসূলকে সত্যিকারের নবী-রাসূল বলে মনে করেন। আর এইসব তথ্য জানার ফলে ইসলাম সম্পর্কে পশ্চিমা গণমাধ্যমগুলো ও পত্র-পত্রিকার তথ্য এবং খবর সম্পর্কে  ক্রমেই সন্দিহান হচ্ছিলাম।"

মিসেস এলকা স্মিথ যখন বুঝলেন যে, ইসলাম  ও মুসলমানদের সম্পর্কে পশ্চিমা প্রচার মাধ্যমগুলোর তথ্য বিদ্বেষপূর্ণ বা একপেশে তখন তিনি ইসলামের বাস্তবতাগুলো এবং বিশেষ করে হিজাব সম্পর্কে  জোরালো গবেষণা ও অনুসন্ধান  শুরু করেন। তিনি নিজেই এ প্রসঙ্গে বলেছেন:  "আমার বিভ্রান্ত আত্মা মুক্তির পথ খুঁজছিল কিন্তু তা খুঁজে পাচ্ছিল না। অবশেষে নিজেই ইসলাম সম্পর্কে গবেষণা শুরু করলাম। এরিমধ্যে একটি পত্রিকায় হিজাব সম্পর্কে একজন মুসলিম চিন্তাবিদের বক্তব্য ও মতামত জানতে পারলাম। এটা জানতে পারলাম যে কেন মুসলিম মহিলারা তাদের সৌন্দর্যকে পর্দাবৃত করেন বা ঢেকে রাখেন। খুব ভালভাবেই এটা বুঝতে পারলাম যে এ বিষয়টি নারীর মূল্য তো কমায় না বরং তার মর্যাদাকে আরো উন্নত করে।" 

মিসেস এলকা স্মিথ আরো বলেছেন, "আমার কাছে এটা ছিল খুব চমৎকার বিষয় যে ইসলাম জীবনের সব দিক সম্পর্কে লক্ষ্য রেখেছে। ইসলাম শরীর ও আত্মার মধ্যে বিচ্ছেদ ঘটায়নি, বরং এ দুইয়ের মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা করেছে। তবে তারপরও অনেক কিছুই আমার কাছে ছিল অস্পষ্ট। একদিন জার্মানির একটি ম্যাগাজিনের দপ্তরে গেলাম। ম্যাগাজিনটি ছিল নারী বিষয়ক। মুসলিম নারী ও কন্যাদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে খুবই আগ্রহী-এই মর্মে একটি বিজ্ঞাপন দিলাম ওই পত্রিকায়। এই বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হওয়ার পর চার জন মুসলিম নারী আমার কাছে চিঠি লেখেন। এভাবে মহান আল্লাহ আমার জন্য সত্যকে জানার পথ খুলে দেন। ইসলাম সম্পর্কে অধ্যয়নের পর বুঝতে পারলাম যে, কেবল এই ধর্মের মধ্যেই রয়েছে গোটা মানব জাতির জন্য সুপথ।"

নও-মুসলিম মিসেস স্মিথ ফাতিমা মহান আল্লাহ ও ইসলামে নারীর অবস্থান সম্পর্কে বলেছেন, "ইসলামী শিক্ষাগুলোর মধ্যে আল্লাহর একত্ববাদ আমাকে আকৃষ্ট করেছে গভীরভাবে। সত্যিই এই বিশাল সৃষ্টিজগত ও তার নজিরবিহীন সৌন্দর্যগুলো একজন স্রস্টা বা মহান আল্লাহরই সৃষ্টি এবং তার কোনো শরিক নেই। ইসলামের আরেকটি আকর্ষণীয় দিক হল, এ ধর্মে নারীর মর্যাদা। নারী সম্পর্কে ইসলামী দৃষ্টিভঙ্গি পশ্চিমা দৃষ্টিভঙ্গির সম্পূর্ণ বিপরীত। পাশ্চাত্য বলে ব্যক্তিগত, পারিবারিক ও সামাজিক দিক থেকে নারী তখনই সম্মান অর্জন করেন যখন তারা সব ক্ষেত্রেই সমান মাত্রায় পুরুষের অনুগামী হন। কিন্তু ইসলাম নারী ও পুরুষকে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৃষ্টিতে তুলনা করাকে এবং নারী-পুরুষের প্রতিরূপ হওয়ার ধারণাকে গ্রহণযোগ্য বলে মনে করে না।  কারণ, এ ধরনের দৃষ্টিভঙ্গিতে নারীকে পুরুষের স্ট্যান্ডার্ড বা মানদণ্ডের আলোকে তুলনা করার মাধ্যমে নারীর অবমাননা করা হয়। ইসলামে নারী এমন এক মূল্যবান সত্ত্বা যে হিজাবের মাধ্যমে তাকে রক্ষা করা জরুরি।" 

ইসলামের বেশ কিছু বিধান ও শিক্ষার সঙ্গে পরিচিত হওয়ার পর মিসেস স্মিথ নিজের বাড়ীর কাছে অবস্থিত একজন মুসলমানের বাসায় গিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে মুসলমান হন। তিনি বলেছেন, "যখন শুনলাম যে মুসলমান হওয়ার ফলে আমার অতীতের সমস্ত গোনাহ মাফ হয়ে গেছে তখন এক বিচিত্রময় প্রশান্তি অনুভব করলাম। মনে হল যেন আমি নতুন করে জন্ম নিয়েছি।"

নওমুসলিম মিসেস স্মিথ ফাতিমা মুসলমান হওয়ার কিছুকাল পর ইরানের ইসলামী বিপ্লব সম্পর্কেও জানতে পারেন। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেছেন:  "আমার বাবা-মা যখন শুনলেন যে আমি মুসলমান হয়ে গেছি তখন তারা প্রতিক্রিয়া দেখালেন। তারা আমাকে এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তনের আহ্বান জানালেন। কিন্তু আমি খুব দৃঢ়চিত্তে জানিয়ে দিলাম যে, কোনো অবস্থাতেই ইসলাম ত্যাগ করব না। এই ঘটনার কিছু দিন পর মিউনিখে জার্মান ভাষাভাষী মুসলমানদের একটি সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়। সেমিনারটির আলোচনার বিষয়বস্তু ছিল ইসলামী রাষ্ট্র ব্যবস্থা এবং ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরান। এই সেমিনারে আমার সমস্ত চিন্তাভাবনায় বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটল। কারণ, ততদিন পর্যন্ত ইরান সম্পর্কে পত্র-পত্রিকার মাধ্যমে কেবল নেতিবাচক ধারণাই জন্মেছিল আমার মধ্যে। ওই সেমিনারে ইরান থেকে আসা ব্যক্তিদের সঙ্গে কথা বলার সুযোগ হয়। একজন ইরানি বোন ও তার স্বামী আমার সব প্রশ্নের জবাব দিতে সক্ষম হন এবং ইরানের মোকাবেলায় বিশ্ব-সাম্রাজ্যবাদীদের নানা নীতির পরিচয় তুলে ধরেন। ফলে ইমাম খোমেনী (র.) ও ইসলামী বিপ্লবের লক্ষ্যগুলো আমার কাছে ভালোভাবে স্পষ্ট হয়।"

ফাতিমা স্মিথ এখন একজন সচেতন মুসলমান। তিনি এখন জানেন জীবনের লক্ষ্য কী এবং তাকে কতটা পথ পাড়ি দিতে হবে। নানা সমস্যা সত্ত্বেও দৃঢ় প্রচেষ্টার মাধ্যমে এই লক্ষ্য অর্জন করা সম্ভব বলে স্মিথ মনে করেন। তিনি কোনোক্রমেই আগের জীবনে ফিরে যেতে রাজি নন। কারণ, তিনি এটা বুঝেছেন যে, ইসলাম ছাড়া অন্য কোনো আদর্শই মানুষকে ইহকাল ও পরকালের সৌভাগ্য এনে দিতে পারে না। #

পার্সটুডে/মু. আ. হুসাইন/আশরাফুর রহমান/২