সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা অবশেষে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার অধিকারী হবে: সুরা আম্বিয়া
সুরা আম্বিয়ার ১০৫ নম্বর আয়াতের অর্থ শুনিয়ে শুরু করব আজকের আলোচনা। এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: ‘আমি উপদেশ তথা তওরাত/ তাওরাত গ্রন্থ পাঠানোর পর জবুরে/জাবুরে লিখে দিয়েছি যে, আমার সৎকর্মপরায়ণ বান্দারা অবশেষে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার অধিকারী হবে।’
এ আয়াতটিতে মহান আল্লাহ সুস্পষ্টভাবে এ প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন যে, মুনাফিক ও কাফির-মুশরিকদের মুকাবিলায় শেষ পর্যন্ত মহান আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দা তথা খাঁটি মুসলমানরাই জয়ী হবে এবং তারাই হবে পৃথিবীর শাসন-ক্ষমতার অধিকারী। মহান আল্লাহর সৎকর্মশীল বান্দা বা খাঁটি মুসলমান হওয়ার জন্য খোদাভীতি, শৃঙ্খলা, জ্ঞান-বিজ্ঞান, দূরদর্শিতা, সমাজ-সচেতনতা ও সামরিক শক্তিসহ নানা ক্ষেত্রের যোগ্যতা অর্জন জরুরি। সাধনা ও অধ্যবসায়ের মাধ্যমে মুসলমানরা যখন এইসব যোগ্যতা অর্জন করবে তখন মহান আল্লাহও তাদের হাতে কাফির এবং দাম্ভিক শক্তিকে বিধ্বস্ত করবেন ও বিশ্বের শাসন-ক্ষমতা থেকে মিথ্যার শিবিরের সবাই বিতাড়িত হবে। আসলে দাম্ভিক ও জালিম শক্তিগুলোর শাসন-ব্যবস্থা খোদায়ী বিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক এবং তা সৃষ্টি-জগতের জন্য তা উপযুক্তও নয় যদিও অনেকের কাছেই এ ধরনের শাসন-ব্যবস্থা গা-সওয়া হয়ে গেছে। কেবল সৎ ব্যক্তিদের শাসনই সৃষ্টি-জগতের জন্য মানানসই।
সৃষ্টি জগতের সুশৃঙ্খল ও সার্বজনীন বিধি-বিধান অস্তিত্বের জগতকে দান করেছে সমতা ও পরস্পরের ঐক্য বা সমন্বয়। মহাকাশের বিষয়টি ভেবে দেখুন প্রতিটি গ্রহ-নক্ষত্র, সৌর-জগত ও ছায়াপথ নির্দিষ্ট কক্ষপথে নির্দিষ্ট গতিতে ঘুরছে। বিজ্ঞানীরা চাঁদ ও পৃথিবীর ঘুর্নন এবং আবর্তনের সময় ও গতি সম্পর্কে নিখুঁত তথ্য অর্জনের মাধ্যমে মহাকাশে সফরের পথ প্রশস্ত করার চেষ্টা চালাচ্ছেন। গ্রহ-নক্ষত্রের ঘূর্ণনের গতির মত বিষয়গুলোয় যদি মাঝে-মধ্যে সুশৃঙ্খল নিয়মের ব্যতিক্রম ঘটে বা এইসব মহাজাগতিক বস্তু বিচ্যুত হয় সুনির্দিষ্ট কক্ষপথ হতে তাহলে এ সংক্রান্ত বৈজ্ঞানিক হিসেব-নিকেশ এলোমেলো হয়ে পড়ত। ফলে মহাকাশ ভ্রমণকারীর ভাগ্যে কখন কী ঘটবে তা আঁচ করা অসম্ভব হয়ে পড়ত।
মানুষ যদি তার দেহের ব্যবস্থাপনার কথাও ভাবে তাহলে দেখতে পাবে যে সেখানেও রয়েছে নিয়মের বিস্ময়কর রাজত্ব। মগজসহ মানব দেহের নানা অংশের কোষ, রক্ত-পরিবহন ব্যবস্থা, হৃদযন্ত্র, চোখ-কান-নাক, জিহ্বা কিংবা চুল-এসবই সুনির্দিষ্ট ও গঠনতন্ত্রের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ বিধান মেনে চলে। কোনো ধরনের অনিয়ম ও ব্যতিক্রমের অস্তিত্ব নেই এইসব ব্যবস্থায়। এভাবে আমরা দেখি যে বিশ্ব জগতের সব কিছুই সুনির্দিষ্ট নিয়ম বা ধর্ম মেনে চলে। তাহলে মানব সমাজের জন্য কী কোনো সুনির্দিষ্ট ধর্ম থাকবে না? সৃষ্টি জগতের নানা অস্তিত্বের মত আমাদেরও উচিত আল্লাহর বিধান এবং বিশ্ব-ব্যবস্থাপনা তথা ইসলামী বিধান মেনে নেয়া যা ন্যায়বিচার ও শৃঙ্খলায় ভরপুর। নিঃসন্দেহে ন্যায়বিচার ও সঠিক বিধি-বিধান-ভিত্তিক ব্যবস্থার বিজয় ছাড়া মানব সমাজ এগিয়ে যেতে পারবে না। মানব-জাতি টিকে থাকতে চায়। আর এ জন্য মানব-জাতি সক্রিয় রয়েছে। কিন্তু ইসলাম ধর্মকে এড়িয়ে চলার মাধ্যমে মানব-জাতি তার ধ্বংসের পথই সুগম করবে মাত্র। মানুষ যদি সচেতন ও দূরদর্শী হয় তাহলে তারা বুঝতে পারবে যে মানুষকে অবশ্যই সার্বজনীন ব্যবস্থা বা ধর্মের দিকে ফিরে যেতে হবে। আর কেবল এই মহান ধর্মের সঙ্গে জীবনের সব দিককে সমন্বয় করেই উচ্চতর লক্ষ্যগুলো অর্জন করতে পারে মানুষ।
মোটকথা সৃষ্টি জগত পরিচালনার ক্ষেত্রে মহান আল্লাহর যে ন্যায়ভিত্তিক ব্যবস্থাপনা ও নিয়মের রাজত্ব রয়েছে তা-ই প্রমাণ করে যে মানব-জাতি তার চলার পথে অবশেষে সার্বজনীন, ন্যায়-ভিত্তিক ও সঠিক ব্যবস্থাপনা-ভিত্তিক আদর্শকেই মেনে নেবে। আর এ বিষয়টিই বলা হয়েছে সুরা আম্বিয়ার ১০৫ নম্বর আয়াতে। বিভিন্ন হাদিসেও বলা হয়েছে যে, বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)’র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হিসেবে হযরত ইমাম হুসাইন (আ)’র বংশধারায় ইসলামের ১২ তম ইমাম তথা ইমাম মাহদী (আ) জন্ম নেবেন এবং হযরত ঈসা (আ)’র মত দীর্ঘকাল অদৃশ্য থাকার পর শেষ জামানায় তিনি ফিরে আসবেন। তিনি মানবজাতির শেষ ত্রাণকর্তা হিসেবে ন্যায়বিচার-ভিত্তিক বিশ্বরাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করবেন এবং সব ধরনের জুলুম আর বৈষম্যের অবসান ঘটিয়ে মানবজাতিকে সম্পদ, জ্ঞান ও খোদাভীতির দিক থেকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নত করবেন।
এবারে সুরা আম্বিয়ার ১০৭ নম্বর আয়াতের অর্থ ও এর ব্যাখ্যা শোনা যাক। এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন:
‘আমি আপনাকে বিশ্ববাসীর জন্যে রহমত হিসেবেই পাঠিয়েছি।’
নবী-রাসুলদের জন্য মহান আল্লাহর ব্যাপক দয়া ও রহমতের কথা উল্লেখ করার পর এ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ (সা)’র পবিত্র অস্তিত্বই সমগ্র বিশ্ববাসীর জন্য রহমত বা মহাঅনুগ্রহ। এ মহাসত্য সব যুগ ও সব অঞ্চলের জন্যই প্রযোজ্য। বিশ্বের সব মানুষই- তা কাফির হোক বা মুসলমান ও মু’মিন হোক- সবাই এই মহান নবীর রহমতের কাছে ঋণী। কারণ, তাঁর প্রচারিত মহান ইসলাম ধর্ম সবার জন্যই মুক্তির মাধ্যম।#
পার্সটুডে/মু আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/২৫