মে ৩০, ২০১৭ ১৭:২১ Asia/Dhaka

সুরা হজ পবিত্র কুরআনের ২২ তম সুরা। এতে রয়েছে ৭৮ আয়াত। পুনরুত্থান বা কিয়ামত এবং এর ভূমিকা সম্পর্কে মর্মস্পর্শী ও বিবেক-নাড়ানো দু’টি আয়াত রয়েছে এই সুরার শুরুতে।

এক কঠিন দিনের হুঁশিয়ারি রয়েছে এখানে এবং তা ক্ষণস্থায়ী পার্থিব জীবনের মোহ থেকে উদাসীন মানুষকে মুক্তি দিতে পারে ও তাকে করতে পারে সচেতন। সুরা হজের প্রথম দুই আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন: ‘হে মানুষ! তোমাদের পালনকর্তাকে ভয় কর। নিশ্চয় কেয়ামতের প্রকম্পন একটি অতি ভয়াবহ ব্যাপার। যেদিন তোমরা তা প্রত্যক্ষ করবে,সেদিন (সবাই এতটাই আতঙ্কিত হবে যে) প্রত্যেক স্তন্যধাত্রী তার দুধের শিশুকে বিস্মৃত হবে এবং প্রত্যেক গর্ভবতী তার গর্ভপাত করবে এবং মানুষকে তুমি দেখবে মাতাল; অথচ তারা মাতাল নয় বস্তুত: আল্লাহর শাস্তি অত্যন্ত কঠোর।’

কিয়ামতের দিন পাহাড়গুলোকে উপড়ে ফেলা হবে নিজ স্থান থেকে, সাগর  ও মহাসাগরগুলো তালগোল পাকিয়ে ফেলবে, পৃথিবী, গ্রহ-নক্ষত্র ও আকাশগুলো দীর্ণ-বিদীর্ণ হবে তুলা বা বালুর মত। আতঙ্কিত মানুষ নিজের হাত-পায়ের খবর রাখবে না! তারা হয়ে পড়বে উদ্ভ্রান্ত ও উম্মাদের মত!  বিশ্ব দেখা দেবে এক নতুন রূপে।

পরের আয়াতে এ বাস্তবতা স্মরণ করিয়ে দেয়া হয়েছে যে, একদল মানুষ আল্লাহ সম্পর্কে কোনো জ্ঞান ও ধারণা না রেখেই তর্ক-বিতর্ক করে। কোনো দৃঢ় যুক্তি-প্রমাণ ছাড়াই অজ্ঞদের মতই এক আল্লাহ এবং পুনরুত্থানকে অস্বীকার করে। প্রবৃত্তির খেয়ালিপনা ও শয়তানের আনুগত্যের কারণেই এ অবস্থা হয়েছে তাদের। শয়তানের অনুসারীরা তো বিভ্রান্ত হবেই। তারা কোনোদিন খুঁজে পাবে না সৌভাগ্যের রাজপথ। পরের আয়াতে পরকাল বা কিয়ামতের অনিবার্যতার যুক্তি হিসেবে মাতৃগর্ভে ভ্রূণের পরিবর্তন এবং ভূপৃষ্ঠে গাছপালার প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরা হয়েছে।

সুরা হজের ৫ নম্বর আয়াতে ভ্রূণ থেকে জন্ম লাভ পর্যন্ত মানব শিশুর প্রাথমিক অস্তিত্বের নানা পর্যায়ের রূপান্তরের কথা তুলে ধরা হয়েছে। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলছেন: ‘হে মানুষেরা! যদি তোমরা পুনরুত্থানের ব্যাপারে সন্দিহান হও, তবে (ভেবে দেখ-) আমি তোমাদেরকে মাটি থেকে সৃষ্টি করেছি। এরপর বীর্য থেকে, এরপর জমাট রক্ত থেকে, এরপর পূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট ও অপূর্ণাকৃতিবিশিষ্ট মাংসপিণ্ড থেকে,তোমাদের কাছে ব্যক্ত করার জন্যে। আর আমি এক নির্দিষ্ট সময়ের জন্যে মাতৃগর্ভে যা ইচ্ছা রেখে দেই,এরপর আমি তোমাদেরকে শিশু অবস্থায় বের করি যাতে তোমরা বালেগ হও তথা শারীরিক ও চিন্তাগত পরিপক্কতা নিয়ে যৌবনে উপনীত হতে পার। তোমাদের মধ্যে কেউ কেউ মারা যায় এবং তোমাদের মধ্যে কাউকে নিষ্কর্মা বয়স পর্যন্ত পৌঁছানো হয়, এ সময় সে তার জানা বা জ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সচেতন থাকে না।’

ভ্রূণ-বিদ্যা সম্পর্কে মানুষের জ্ঞান-বিজ্ঞান যখন ছিল খুবই অস্পষ্ট এবং সীমিত সেই যুগে  ভ্রূণের নানা পর্যায় সম্পর্কে যে নিখুঁত তথ্য দিয়েছে কুরআন তা এ মহাগ্রন্থের অন্যতম অলৌকিকতার জ্বলন্ত স্বাক্ষর। কারণ, ১৪০০ বছরেরও বেশি সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর বিজ্ঞান আজ মাতৃগর্ভে ভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে যেসব তথ্য দিচ্ছে তার সঙ্গে পবিত্র কুরআনের এ সংক্রান্ত তথ্যের কোনো সংঘাত বা অমিল নেই। আর পবিত্র কুরআনের অন্যতম এই মু’জিজা বা অলৌকিকতাও প্রমাণ করে যে  নিঃসন্দেহে এ মহাগ্রন্থ জ্ঞান-বিজ্ঞানের বৃহত্তম ও প্রকৃত উৎস তথা মহান স্রষ্টার পক্ষ থেকেই নাজিল হয়েছে।

এরপর পবিত্র কুরআনে শিশুর জন্ম-উত্তর বিকাশ ও পরিপূর্ণতার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে। অর্থাৎ মানব-শিশু বড় হতে হতে কিশোর বা তরুণ, যুবক ও মধ্য-বয়সী হয়। এ পর্যায়ে  তার মানবীয় ক্ষমতা ও যোগ্যতাগুলো চূড়ান্ত পর্যায়ে পৌঁছে। এরপর শুরু হয় দুর্বলতার পালা।  এই মানুষ বৃদ্ধ বয়সে অনেক ক্ষমতা ও শক্তি হারিয়ে ফেলে। বৃদ্ধরা নিজের জানা অনেক জ্ঞান ও বিষয় স্মরণ করতে পারে না।  সচেতনতা, চিন্তা ও বুদ্ধির ধার কমে গিয়ে ধীরে ধীরে সেসবই বিলুপ্তির দ্বার-প্রান্তে উপনীত হয়।

ফল পেকে যাবার পর যেমন তা এক সময় গাছ থেকে পড়ে যায় বা বিচ্ছিন্ন হয় তেমনি করে বৃদ্ধ মানুষও একদিন বিদায় নেন জীবন্ত মানুষদের তালিকা থেকে। এই যে শৈশব থেকে বার্ধক্য পর্যন্ত মানুষের জীবনের গতিপথ তার সবটুকুই মহান আল্লাহর অশেষ ক্ষমতা আর মহাকৌশলের নিরঙ্কুশ কর্তৃত্বের সাক্ষ্য দিচ্ছে। তাই এটা স্পষ্ট মহান আল্লাহ সব কিছুর ওপরই কর্তৃত্বশীল এবং তিনিই মৃতকে জীবিত করেন।

সুরা  আম্বিয়ার ৫ নম্বর আয়াতের পরবর্তী অংশে শীত ঋতুর পর বসন্ত ঋতুতে গাছপালার পুনরায় সজীব ও সবুজ হওয়া তথা মৃত জমিনের জীবন্ত হওয়ার কথাও বলা হয়েছে। শীতকালে গাছপালার পাতা এমনভাবে ঝরে যায় যে মনে হয় যেন সেসব মরে গেছে। কিন্তু বসন্ত ঋতুতে সেসব জীবন্ত ও সজীব হয়ে ওঠে। বৃষ্টির সুবাদে চারদিকে দেখা দেয় সবুজের সমারোহ। ফুল ফুলে ভরে যায় বাগ-বাগিচা। মহান আল্লাহ এই আয়াতে বলছেন: ‘তুমি ভূমিকে পতিত দেখতে পাও, এরপর আমি যখন তাতে বৃষ্টি বর্ষণ করি,তখন তা সতেজ ও স্ফীত হয়ে যায় এবং সব ধরনের সুদৃশ্য গাছপালা জন্ম নেয়।’   

এরপরের  দুই আয়াতে আল্লাহ বলছেন: ‘এগুলো তথা মানুষ ও গাছপালার জীবনের নানা পর্যায় এ কারণে যে,আল্লাহ সত্য এবং তিনি মৃতকে জীবিত করেন, আর তিনি সবকিছুর উপর ক্ষমতাবান ও এ কারণে যে,কেয়ামত অনিবার্য,এতে সন্দেহ নেই এবং এ কারণে যে,কবরে যারা আছে,আল্লাহ তাদের পুনরুত্থিত করবেন।’  #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো.আবু সাঈদ/৩০