জুন ০১, ২০১৭ ১৫:৪৫ Asia/Dhaka
  • খোদাপ্রেমের অনন্য মাস রমজান (পর্ব-৬)

ইসলাম জ্ঞান-চর্চাকে দিয়েছে অশেষ গুরুত্ব। ইবাদতের গভীরতা বা আন্তরিকতা নির্ভর করে জ্ঞান বা উপলব্ধির গভীরতার ওপর। তাই মুর্খ সাধকদের হাজার বছরের ইবাদত একজন জ্ঞানীর এক মুহূর্তের চিন্তার চেয়েও নগন্য।

এমনকি বলা হয় যে মহান আল্লাহর কাছে জ্ঞানীর নীরবতা বা ঘুম মুর্খের ইবাদতের চেয়েও উত্তম। তাই রমজান মাসে খোদাপ্রেমের সাগরে অবগাহন করতে হলে যত বেশি সম্ভব খোদার বিধানকে বোঝার জন্য জ্ঞানের গভীরতাকে বাড়াতে হবে। চিন্তা ও বুদ্ধির প্রয়োগ ঘটাতে হবে খোদার বাণী বোঝার জন্য। খোদাপ্রেম মানুষের চিন্তার দরজাগুলো খুলে দেয় ও বুদ্ধিকে করে প্রখর। ফলে তার কাছে দুনিয়ার চাকচিক্য ও খোদার সঙ্গে সম্পর্কহীন সব বিষয়ের গুরুত্বই তুচ্ছ হয়ে ওঠে। মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন,

“পার্থিব জীবন নিছক ক্রীড়া ও কৌতুক বৈ কিছু নয়। আর পারলৌকিক আলয়ই হলো তাদের জন্য উত্তম, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, তোমরা কি বুদ্ধি খাটাও না?” (আনআম: ৩২)

মহান আল্লাহ আরও ইরশাদ করেন: “তোমাদের যা দান করা হয়েছে তা পার্থিব জীবনের ভোগবিলাস ও এর শোভামাত্র এবং যা আল্লাহর কাছে আছে তা উৎকৃষ্ট ও স্থায়ী; তোমরা কি অনুধাবন কর না?” (কাসাস: ৬০)

মহান আল্লাহ কুরআনে বলেছেন, “অবশ্যই আমরা লোকমানকে দিয়েছি প্রজ্ঞা।” প্রজ্ঞার  অর্থ উপলব্ধি ও বিবেক তথা চিন্তাশক্তি ও অনুধাবন ক্ষমতা।

লোকমান নিজ পুত্রকে বলেছেন: সত্যের আজ্ঞাধীন হও তাহলে মানুষের মধ্যে সবচেয়ে বুদ্ধিমান হবে। পুত্র আমার! দুনিয়া হলো একটা অতল সমুদ্র, তার মধ্যে অনেক ব্যক্তি ডুবে গেছে। তার মধ্যে তোমার নৌকা হলো আল্লাহ ভীতি তথা তাকওয়া, এর দাঁড় হলো ঈমান, এর পাল হলো তাওয়াক্কুল বা আল্লাহর ওপর ভরসা, এর মাঝি হলো বিবেক, এর পথ নির্দেশক হলো জ্ঞান আর এর নোঙ্গর হলো ধৈর্য।

বিশ্বনবীর (সা) পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য হযরত ইমাম মুসা কাজিম (আ) বলেছেন,  প্রত্যেক জিনিসের একটি প্রমাণ থাকে। বুদ্ধিমানের প্রমাণ হলো চিন্তা অনুধ্যান। আর চিন্তা অনুধ্যানের প্রমাণ হলো নীরবতা। আর প্রত্যেক জিনিসের একটি বাহন থাকতে হয়। আর বুদ্ধিমানের বাহন হলো বিনয়। ..এমন কোনো বান্দা নেই যার জন্য একজন লাগামধারী ফেরেশতা নেই। আর সে ফেরেশতার কাজ হলো আল্লাহর জন্য বিনয়াবনত ব্যক্তিকে উচ্চে তুলে ধরা আর আত্মগর্বীকে নীচ ও হীন করা।

ইমাম মুসা কাজিম (আ) আরও বলেছেন, বুদ্ধিমান হলো সেই ব্যক্তি হালাল যাকে কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন থেকে বিরত করে না আর হারাম তার ধৈর্যের ওপর জয়ী হয় না। দীর্ঘ প্রত্যাশা বুদ্ধির আলোকে আঁধার করে দেয় এবং বেশি কথা বলা বিরল প্রজ্ঞাকে মুছে ফেলে আর প্রবৃত্তির কামনা শিক্ষার আলোকে নিভিয়ে ফেলে। ... একাকিত্বের ওপরে ধৈর্যধারণ বুদ্ধির শক্তির পরিচায়ক। যে ব্যক্তি মহামহিম আল্লাহর সম্পর্কে চিন্তাভাবনা করে সে দুনিয়াপন্থী ও এর প্রতি আসক্তদের থেকে দূরে থাকে এবং তাঁর প্রতিপালকের কাছে যা রয়েছে তার প্রতি আসক্ত হয়ে ওঠে। আর আল্লাহ তার ভয়ের সময় তার সঙ্গী এবং একাকিত্বে তার সহায় হন। তিনিই তার অসামর্থের সময়ে সক্ষমতার এবং বংশের সমর্থন ও পৃষ্ঠপোষকতা থেকে বঞ্চিত থাকার ক্ষেত্রে তার সম্মানের কারণ হন।

ইমাম মুসা কাজিম (আ) আরও বলেছেন, সৃষ্টিকূলকে (মানব) আল্লাহর আনুগত্যের জন্য নিয়োজিত করা হয়েছে। আনুগত্য ছাড়া কোন মুক্তি নেই। আর জ্ঞান বিনা আনুগত্য হয় না। আর জ্ঞান হয় শিক্ষা থেকে এবং শিক্ষা আসে বুদ্ধিচর্চার মাধ্যমে । একজন বিবেকবানের সামান্য আমলও গ্রহণীয় ও দ্বিগুণ হয়। আর প্রবৃত্তির অনুসারী মূর্খ ব্যক্তির অনেক আমলও প্রত্যাখ্যাত হয়। ... দুনিয়া বর্জন করা মর্যাদার কথা আর পাপ বর্জন তো ওয়াজিব। বিবেকবানরা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্ত হয়। আর পরকালের প্রতি হয় উদগ্রীব।

আমীরুল মুমীনীন (আ.) বারবার বলতেন : বুদ্ধির চেয়ে উত্তম কিছু দ্বারা আল্লাহ উপাসিত হননি। ব্যক্তির বুদ্ধি পূর্ণাঙ্গ হয় না যতক্ষণ না তার মধ্যে কয়েকটি বিচিত্র গুণবৈশিষ্ট্য থাকে : কুফরী ও মন্দ তার থেকে বিবর্জিত, উৎকর্ষতা ও কল্যাণ তার থেকে আশা করা হবে। তার প্রয়োজনের অতিরিক্ত যা কিছু, তা দান করা হবে, বেশি কথা বলা থেকে বিরত থাকবে, দুনিয়া থেকে তার অংশ হবে কেবল নিত্য জীবিকাটুকু। আর যতদিন আয়ু থাকে জ্ঞান থেকে পরিতৃপ্ত হয় না। আল্লাহকামিতা সহকারে অপমান তার কাছে অন্যের সাথে সম্মানিত হওয়ার চেয়ে প্রিয়তর হবে। বিনয় তার কাছে আভিজাত্যের চেয়ে উত্তম এবং সে নিজেকে নিজের কাছে অন্য সবার চেয়ে নিকৃষ্ট মনে করে।

মহান আল্লাহ আমাদেরকে প্রকৃত বুদ্ধিমান হওয়ার তৌফিক দান করুন।

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/২

ট্যাগ