জুন ২৮, ২০১৭ ১৭:৩৯ Asia/Dhaka

সুরা মু’মিনুন পবিত্র কুরআনের ২৩ তম সুরা। তবে নাজিল হওয়ার ধারাক্রমে এটি ছিল পবিত্র কুরআনের ৭৪ তম সুরা। মাক্কি এ সুরায় রয়েছে ১১৮ আয়াত। এ সুরার প্রথম দিকের কয়েকটি আয়াতে মু’মিনদের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য উল্লেখ করা হয়েছে বলে সুরাটির নাম হয়েছে মু’মিনুন।

এ সুরার প্রথমেই ঈমানদারদের  সৌভাগ্যময় পরিণতি তুলে ধরে বলা হয়েছে:

‘মুমিনরা সফল হয়েছে।’ এ বাক্যটি মুসলমানদারদের হৃদয়ে জাগিয়ে তোলে আশার অফুরন্ত এক প্রেরণা। আর তা হল খাঁটি মু’মিন হওয়ার গভীর আগ্রহ। সাফল্য বলতে বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক -- সবক্ষেত্রেরই সাফল্যকে বোঝায়। সম্মানজনক ও মুক্ত জীবন হচ্ছে পার্থিব সাফল্যের অংশ। আর তা কেবল ঈমানের ছায়াতলেই অর্জন করা সম্ভব। পারলৌকিক সাফল্য হচ্ছে মহান আল্লাহর রহমতের আশ্রয় ও তাঁর অশেষ নেয়ামতগুলো লাভ করা এবং পরিপূর্ণ সম্মানের অধিকারী হওয়া।

 

পরের আয়াতে বলা হয়েছে, মু’মিন তারাই যারা নামাজ আদায় করেন বিনম্র চিত্তে। এই নম্রতা বলতে শরীর ও মনকে সর্বশক্তিমান আল্লাহর সামনে নতজানু করাকে বোঝায়। মহান আল্লাহকে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভেবে তাঁর প্রতি মনকে পুরোপুরি সঁপে দেয়া তথা আল্লাহ ছাড়া সব সব কিছু থেকে মনকে সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে অর্জিত হতে পার বিনম্রতা। মু’মিনের নামাজ হতে পারে না নিষ্প্রাণ কিছু শব্দ উচ্চারণ ও দৈহিক তৎপরতার সমষ্টি। মু’মিন আল্লাহর অনাদি-অসীম সত্তার সামনে নিজেকে একটি মূল্যহীন বিন্দু বলেও মনে করেন না। তাই তিনি নামাজে মহান প্রভুর চিন্তাতেই মশগুল থাকেন ও প্রতিপালকের কাছেই খুলে ধরেন তার পুরো হৃদয়। মহান আল্লাহ সব দিক থেকে এত অসীম মাত্রায় বড় এবং তাঁর মহিমা ও মহত্ত্বের ব্যাপকতা এতই অপার বা কুল-কিনারাহীন যে সৃষ্টিকুলের কেউই তা কোনোদিন পুরোপুরি বুঝতে, জানতে ও জানাতে সক্ষম হবে না। খোদা সম্পর্কে এইসব ভাবনা মানুষকে করে বিনীত। বিনায়বনত ও ভীতি-বিহ্বল নামাজ মানুষের অহংকারের দুর্গকে ভেঙ্গে চুরমার করে দেয়। ফলে এ ধরনের নামাজ মানুষের জন্য নানা গুণ ও নৈতিক পূর্ণতা অর্জনের পথ সুগম করে।

 

সুরা মু’মিনুনের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বিশ্বাসীদের তৃতীয় বৈশিষ্ট্য তুলে ধরে  বলছেন, তারা অর্থহীন কথা ও কাজে লিপ্ত হয় না।

 

এর অর্থ মু’মিন সব সময়ই কল্যাণকর ও গঠনমূলক কাজে ব্যস্ত থাকবেন। অনেক কাজ ও কথাই অর্থহীন। এমনকি অনেক চিন্তাও অর্থহীন ও ভিত্তিহীন। অর্থহীন চিন্তা, কথা ও কাজ মানুষকে ভুলিয়ে দেয় আল্লাহর কথা।  মু’মিন কখনও ভুল চিন্তাধারাকে প্রশ্রয় দেন না নিজ অন্তরে।

 

মু’মিনের চতুর্থ  বৈশিষ্ট্য হল অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকেও তিনি সচেতন। তাই তিনি জাকাত দিয়ে ও দান-খয়রাত করে সমাজের অভাবগ্রস্তদের অভাব দূর করার বা কমানোর চেষ্টা করেন। জাকাত পরিশোধ করা বাধ্যতামূলক। এটা এক ধরনের ধর্মীয় ট্যাক্স। পবিত্র কুরআনের ২৮ আয়াতে নামাজ শব্দটির পাশাপাশি জাকাত শব্দটিও ব্যবহৃত হয়েছে। আর এ থেকেই জাকাতের অশেষ গুরুত্ব ফুটে উঠছে।

 

সুরা মু’মিনুনের পঞ্চম আয়াতে পবিত্রতা ও চারিত্রিক সততাকে মু’মিনের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে। মু’মিন নৈতিক চরিত্র-বিরোধী ও অশালীন কোনো কাজ করেন না। তারা তাদের শরীরের অঙ্গ-প্রত্যঙ্গকে পবিত্র রাখেন ব্যভিচারের মত অশালীন কাজ থেকে।

 

মানুষের যৌন কামনা-বাসনাকে সংযত রাখার জন্য দরকার ঈমানের আলো। এরই আলোকে প্রবৃত্তির ওপর নিয়ন্ত্রণের চর্চা রাখাও জরুরি। মানুষকে যৌন প্রবৃত্তি দেয়া হয়েছে বংশ বিস্তারের জন্য। তাই এ প্রবৃত্তিকে বৈধ ক্ষেত্রে ব্যবহার করতে হবে। প্রকৃত মু’মিন কখনও তার চিন্তা ও শরীরকে অবৈধ কাজে ব্যবহার করতে পারেন না। স্ত্রী ও অধীনস্থ দাসীকে পুরুষের দৈহিক চাহিদা মেটানোর জন্য বৈধ করা হয়েছে।  আর এই সীমানার বাইরে যাওয়াই হচ্ছে ব্যভিচার।  

সৃষ্টি আর স্রস্টাকে দেয়া ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা মু’মিনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য। সুরা মু’মিনুনের অষ্টম আয়াতে এ সম্পর্কে বলা হয়েছে: ‘মু’মিনরা আমানত ও অঙ্গীকার সম্পর্কে হুঁশিয়ার থাকে।’

 

ওয়াদা ও আমানত রক্ষা করা ছাড়া কোনো সমাজ টিকে থাকতে পারে না। এটি সমাজ-জীবনের অন্যতম ভিত্তি। আমাদের কাছে মহান আল্লাহর দেয়া নেয়ামতগুলো আসলে আল্লাহরই দেয়া আমানত মাত্র। ধর্ম, আসমানি কিতাব, নবী-রাসুলদের শিক্ষা, সন্তান, সম্পদ ও এমনকি সামাজিক অবস্থানও খোদায়ী আমানত মাত্র। মু’মিনকে তার সাধ্য অনুযায়ী এইসব আমানতের অধিকার রক্ষা করতে হবে।

সুরা মু’মিনুনের নয় নম্বর আয়াতে মু’মিনদের বৈশিষ্ট্য প্রসঙ্গে আবারও নামাজের কথা বলা হয়েছে। মহান আল্লাহ বলছেন: ‘এবং মুমিনরা তাদের নামাযগুলোর খবর রাখেন।’

অর্থাৎ তারা নামাজের ব্যাপারে যত্নশীল। অন্য কথায় নামাজের ব্যাপারে কোনো ধরনের উদাসীনতা, অবহেলা বা আলসেয়েমিকে বিশ্বাসীরা কখনও প্রশ্রয় দেন না। লক্ষণীয় বিষয় হল মু’মিনের বৈশিষ্ট্যের বর্ণনায় প্রথমেই বিনয়াবনত নামাজের কথা বলা হয়েছে এবং নামাজের ব্যাপারে যত্নশীলতাকে মু’মিনের আরেকটি বড় বৈশিষ্ট্য হিসেবে ইঙ্গিত দিয়ে এই আলোচনা শেষ করা হয়েছে।

 

আর যারা সুরা মু’মিনুনে উল্লেখিত এইসব মহান বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হবেন তারা কি কি সুফল পাবেন তা তুলে ধরা হয়েছে পরের দুই আয়াতেই। মহান আল্লাহ বলছেন: ‘তারাই উত্তরাধিকারী। তারা ফেরদৌস তথা শীতল ছায়াময় উদ্যানের উত্তরাধিকার লাভ করবে। তারা তাতে চিরকাল থাকবে।’

ফেরদৌস হচ্ছে এমন এক উদ্যান যাতে মহান আল্লাহর সমস্ত নেয়ামত ও অনুগ্রহ পাওয়া যায়। আর তাই একে বলা হয় সবচেয়ে উন্নত বেহেশত।#

 

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/২৮