এপ্রিল ০৭, ২০১৮ ১৫:৪৪ Asia/Dhaka

সুরা নাজম্‌ পবিত্র কুরআনের ৫৩ নম্বর সুরা। পবিত্র মক্কায় অবতীর্ণ এ সুরায় রয়েছে ৬২ আয়াত। এই সুরার ৬২ নম্বর আয়াত তিলাওয়াত বা শোনার পর সিজদা করা ওয়াজিব।

সুরা নাজমের আয়াতে রয়েছে:  ওহির মর্যাদা ও মহানবীর (সা) হৃদয়ে তা নাজিল হওয়ার পদ্ধতি, মহানবী (সা)'র মেরাজ, মূর্তি ও মূর্তিপূজা সম্পর্কে মুশরিকদের বিশ্বাসের নিন্দা, পাপী ও বিচ্যুতদের জন্য তওবার পথ খোলা থাকা, কারো পাপের বোঝা অন্য কারো বহনের সুযোগ না থাকা- এইসব বিষয়ে বক্তব্য। এ ছাড়াও এ সুরায় রয়েছে পরকাল ও পুনরুত্থান দিবস এবং অতীতের খোদাদ্রোহী জাতিগুলোর পরিণতি ও মহান আল্লাহর ইবাদত আর সিজদা সম্পর্কে আলোচনা।  

সুরা নাজম্-এর আয়াতগুলো সংক্ষিপ্ত এবং এর রয়েছে বিশেষ ছন্দময় সুর। তাই এ সুরার তিলাওয়াত শুনতে বেশ ভালো লাগে। এ সুরার বিষয়বস্তু ও ভাষা মানুষের হৃদয়কে নিয়ে যায় ভাবনার জগতে এবং মৃত তথা অসচেতন আত্মাকে জাগিয়ে তোলার জন্য এ সুরার তিলাওয়াত খুবই কার্যকর।  

সুরা নাজম্‌-এর প্রথমেই অস্তমান নক্ষত্রকে শপথের মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার করেছেন মহান আল্লাহ। এই সুরার প্রথম থেকে চতুর্থ আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:

'নক্ষত্রের কসম,যখন তা অস্তমিত হয়। তোমাদের সংগী মুহাম্মাদ পথভ্রষ্ট হননি এবং বিপথগামীও হননি। প্রবৃত্তির তাড়নায় কথা বলেন না। কোরআন ওহী,যা প্রত্যাদেশ হয়।'

এখানে এটা স্পষ্ট করা হয়েছে যে বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা) সব সময়ই সত্যের ওপর অবিচল থাকেন এবং তাঁর যে কোনো কথা ও কাজে বিন্দুমাত্র ভুল ও বিচ্যুতি নেই। মহানবীর মধ্যে নেই কোনো অজ্ঞতা ও অসচেতনতা। শত্রুদের এ সংক্রান্ত সব অপবাদের উর্দ্ধে রয়েছেন তিনি। আর মহান আল্লাহই এখানে তার স্বীকৃতি দিচ্ছেন। মহানবী (সা) যা বলেন তাও মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই বলেন বলে এই আয়াতে স্পষ্টভাবে ঘোষণা দিয়েছেন রাব্বুল আলামীন। আর তিনি যে কুরআনের আয়াত বলে থাকেন তা  মহান আল্লাহর পক্ষ থেকেই তাঁর কাছে নাজিল হয়। কুরআন মহানবীর (সা) নিজস্ব কোনো রচনা নয়, বরং এ মহাগ্রন্থের পুরোটাই আল্লাহর বাণী। আর এর প্রমাণও রয়েছে খোদ কুরআনেই।

পবিত্র কুরআনের আলোকে এটা স্পষ্ট যে মানুষ যতই জ্ঞানী ও যত বড় চিন্তাবিদই হোক না কেন গভীর অর্থপূর্ণ ও নানা অলৌকিক তথ্যে সমৃদ্ধ আসমানি বাণীর অনুরূপ বাণী রচনা করা তাদের পক্ষে সম্ভব নয়। কুরআনের বাণী ১৪ 'শ বছরেরও বেশি সময় ধরে বহু মনীষী ও পণ্ডিতকে চিন্তার খোরাক যোগাচ্ছে এবং নানা বিষয়ে অনুপ্রেরণার উৎস হিসেবে কাজ করছে।  এই কুরআন একটি ন্যায়নিষ্ঠ, উন্নত ও সভ্য সমাজ গড়ে তোলার ভিত্তি হিসেবে কাজ করে। অথচ বিস্ময়ের ব্যাপার হল আসমানি মহাগ্রন্থ কুরআনের ‌উন্নত বাণীগুলো প্রকাশ করা হয়েছে এমন একজন নবীর মুখ দিয়ে যিনি পড়াশুনা জানতেন না এবং যিনি বড় হয়েছেন অজ্ঞতা ও কুসংস্কারে ভরা একটি সমাজে।

     

 

সুরা আন নাজম্‌-এর ৫ থেকে ১৮ নম্বর আয়াতে অদৃশ্যের জগতে বিশ্বনবী (সা)'র ভ্রমণ তথা মে'রাজ গমনের বিষয়ে বক্তব্য এসেছে। এটা এমন এক বিশেষ ও উন্নত আসমানি সফর যার সুযোগ মহানবী (সা) ছাড়া আর কাউকেই দেয়া হয়নি। আর এ থেকেই বিশ্বের সব সৃষ্টিকুলের ওপর বিশ্বনবীর (সা) শ্রেষ্ঠত্বের বিষয়টি সুস্পষ্ট।

মহানবী (সা)'র মেরাজ বা উর্ধ্বগমন শুরু হয়েছিল রাতের বেলায়। মুসলমানদের প্রথম কিবলার শহর ফিলিস্তিনের পবিত্র বায়তুল মুকাদ্দাস ও আলআকসা মসজিদ সফর করে তিনি আকাশমণ্ডলও সফর করেন এবং এরপর ফিরে আসেন সর্বমোট এক রাতেরও কম সময়ে। মহানবী মেরাজ শেষে সকালেই নিজের ঘরে ফিরে এসেছিলেন।  

এই সফরে মহানবীকে বেহেশত ও দোযখের দৃশ্যসহ অদৃশ্য জগতের মহাবিস্ময়কর অনেক কিছুই দেখানো হয়। এ সফরেই তিনি মহান আল্লাহর সঙ্গে সরাসরি কথপোকথন করেছেন। এই সফরের স্থান ও সময়ের হিসাব সবই অলৌকিক। খুব কম সময় এত ব্যাপক দূরত্বের বিশাল সব অঞ্চল পরিভ্রমণ সত্যিই মহা-বিস্ময়ের ব্যাপার।

ইসলামী বর্ণনায় এসেছে জিবরাইল ফেরেশতা মেরাজের রাতে মহানবী (সা)'র কাছে একটি বাহন নিয়ে আসেন। বিশ্বনবী ওই বাহনে চড়ে বায়তুল মুকাদ্দাসের দিকে রওনা হন। পথে তিনি কয়েক জায়গায় থামেন ও নামাজ আদায় করেন। এরপর মহান আল্লাহর সর্বশেষ রাসুল আল-আকসা মসজিদে প্রবেশ করেন। এই মসজিদে মহান নবী হযরত ইব্রাহিম (আ), হযরত মুসা (আ) এবং হযরত ঈসা (আ)'র মত নবীরা জামাআতে নামাজ আদায় করেন। আর এই নামাজের ইমাম ছিলেন বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)।

আল-আকসা মসজিদে ইবাদত শেষ করার পর শুরু হয় সপ্ত-আকাশের দিকে মহানবীর ভ্রমণ। একের পর এক আকাশ ভ্রমণ করছিলেন তিনি এবং প্রত্যেক আকাশেই আল্লাহর প্রিয়তম বন্ধু বিস্ময়কর অনেক কিছুই দেখেন। যেমন, তিনি দেখেছেন নবী-রাসুলদেরকে, ফেরেশতাদেরকে এবং বেহেশত-দোযখ আর সেখানকার অধিবাসীদেরকে। এসবই বিশ্বজগতে নানা রহস্যের আধার। মহানবী  মেরাজ থেকে ফিরে এসে উপযুক্ত সুযোগে মেরাজের নানা ঘটনা ও দৃশ্যগুলোর বর্ণনা তুলে ধরেন সাহাবিদের কাছে। তাদেরকে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দেয়াও ছিল এইসব বিষয় বর্ণনার অন্যতম উদ্দেশ্য।

মেরাজের সফরে বিশ্বনবী (সা) মহান আল্লাহকে আত্মিক দৃষ্টির মাধ্যমে মহান আল্লাহকে দেখেছেন। অন্য কথায় মহান আল্লাহ তাঁর প্রিয় বন্ধুর আত্মা বা হৃদয়ে নাজিল হওয়ায় তিনি তাঁকে হৃদয়ের চোখ দিয়ে দেখেছেন। #

পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/৭