রোহিঙ্গা নির্যাতনের চিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরা হয়নি: মুর্তজা অতাশ যামযম
রোহিঙ্গা মুসলমানদের দুঃখ-বেদনাকে তুলে ধরা হয়েছে 'বিমর্ষ বুদ্ধ' ফিল্মে। বিশ্বের মুসলমানরা রোহিঙ্গাদের সহায়তায় এগিয়ে আসবেন। রেডিও তেহরানকে দেয়া সাক্ষাৎকারে এ প্রত্যাশার কথা বলেন তেহরান সিটি কাউন্সিলের প্রধান মহসিন রাফসানজানি। তিনি তার সিটি কাউন্সিলের পক্ষ থেকেও সহায়তার আশ্বাস দেন।
আর 'Buddha's shame' বা 'বিমর্ষ বুদ্ধ' ফিল্মটির নির্মাতা মুর্তজা অতাশ যামযম বলেন, মিয়ানমারে রোহিঙ্গা মুসলমানদের ওপর গণহত্যা এবং তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে বিতাড়ন এবং নির্যাতনের খবর ও তথ্যচিত্র সঠিকভাবে তুলে ধরা হয় নি। মানবিক বিষয় নিয়ে আমি সবসময় কাজ করি। গণমাধ্যমে রোহিঙ্গা নির্যাতনের খবর দেখার পর সঠিকভাবে তাদের কষ্টের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে এই কাজে হাত দিয়েছি। মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের কষ্ট আমাকে 'Buddha's shame' ছবিটি নির্মাণে উদ্বুদ্ধ করেছে।
সাক্ষাৎকারের প্রথম পর্বটি তুলে ধরা হলো। এটি গ্রহণ করেছেন সৈয়দ মূসা রেজা। আর উপস্থাপনা করেছেন গাজী আবদুর রশীদ।
রেডিও তেহরান: জনাব মুতর্জা অতাশ যামযম, আপনি রোহিঙ্গাদের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে বুদ্ধ'স শেম যার বাংলা নাম দেয়া হয়েছে বিমর্ষ বুদ্ধ। তো প্রশ্ন হচ্ছে এ ধরনের ফিল্ম তৈরির চিন্তা কিভাবে মাথায় এল?

মুর্তজা অতাশ যামযম: আমি সাধারণত যেকোনো মানবিক বিষয় নিয়ে কাজ করতে পছন্দ করি। মানুষের দুঃখ-কষ্ট আমাকে ভাবায়। রোহিঙ্গা মুসলমানদের বিরুদ্ধে গণহত্যা এবং তাদেরকে ভিটেমাটি থেকে বিতাড়নের খবর শোনার পর প্রথমেই আমার মাথায় এল- গণমাধ্যমে যেভাবে রোহিঙ্গাদের নির্যাতিত হওয়ার খবর ও তথ্যচিত্র তুলে ধরা দরকার সেভাবে হয়ত হচ্ছে না। আমি সঠিকভাবে তাদের কষ্টের কথা বিশ্ববাসীর সামনে তুলে ধরার লক্ষ্যে এ কাজে হাত দিয়েছি। মানুষ হিসেবে রোহিঙ্গাদের কষ্ট আমাকে এ কাজে হাত দিতে উদ্বুদ্ধ করেছে।
রেডিও তেহরান: মেস সিনথিয়া ওয়েব.. ইরানে এটি কী আপনার প্রথম সফর? ইরানে আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে এসে আপনার অভিজ্ঞতা সম্পর্কে কিছু বলুন।–

মেস সিনথিয়া ওয়েব: হ্যাঁ এটা আমার প্রথম ইরান সফর। আমি কেবল আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অংশ নিতে আসিনি। আমার ইরানি বন্ধুদের সঙ্গে ভিন্ন সময়ে অন্য একটি অনুষ্ঠানেও অংশ নেব। চলচিত্র উৎসবের কথা বলতে গেলে আমি বলব যে, এটি অত্যন্ত সুসংগঠিতভাবে আয়োজন করা হয়েছে। যারা উৎসবের আয়োজন করেছেন তারা অত্যন্ত ভালো এবং যেকোনো কাজে তারা সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিচ্ছেন। আমাকে কোনো ধরনের সমস্যাই মোকাবেলা করতে হচ্ছে না। উৎসবের আরেকটি খুবই ভালো দিক যেটি আমার দৃষ্টি আকর্ষন করেছে তা হলো সব কিছু একটি ভেন্যুতে পাওয়া যাচ্ছে।
রেডিও তেহরান: মেস সিনথিয়া-ইরানের এ চলচ্চিত্র উৎসব এবং অন্যান্য চলচ্চিত্র উৎসবের মধ্যে আপনি কী কোনো পার্থক্য খুঁজে পেয়েছেন?
মেস সিনথিয়া: আমি এর আগেই ব্যাখ্যা করেছি যে, অন্যান্য উৎসব যেখানে আমি অংশ নিয়েছি এবং ইরানের উৎসবের মধ্যে কি ধরনের পার্থক্য রয়েছে। মোট কথা, আমার এখানে অনেক ভালো লেগেছে। অস্ট্রেলিয়ার লিসবনের কথা বলতে গেলে সেখানেও অনেক ভালো উৎসব হয়। সেখানকার আয়োজনও ভালো। তবে একটা অসুবিধা হচ্ছে যে কেউ অনেক ফিল্ম দেখতে চাইলে তাকে ভিন্ন ভিন্ন ভেন্যুতে যেতে হয়।
রেডিও তেহরান: জনাব মোহসেন রাফসানজানি, আপনি বিমর্ষ বুদ্ধ সিনেমাটি দেখেছেন। তো দেখার পর আপনার অনুভূতি কী?-..
মোহসেন রাসফানজানি: অনেক ধন্যবাদ। আমি এই ফিল্মটি দেখার সুযোগ পেয়ে অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি। পাশাপাশি মারাত্মক ব্যথিত হয়েছি মিয়ানমার থেকে নির্যাতন নিপীড়নের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় গ্রহণকারী মুসলমানদের কষ্ট দেখে। আমি আশা করব বিশ্ববাসী এসব মুসলমানের দুঃখ-কষ্ট লাঘবের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা নেবে ইনশাআল্লাহ।
রেডিও তেহরান: মোহসেন রাফসানজানি, আপনি বিশ্বের অন্যতম সুন্দর শহর তেহরানের পরিচালনা করছেন। এ অবস্থায় এই শহরের পক্ষ থেকে আপনি তো রোহিঙ্গাদের জন্য নানাভাবে সাহায্য করতে পারেন।
মোহসেন রাফসানজানি : অবশ্যই পারি। আমি অবশ্যই সিটি কাউন্সিলে বিষয়টি নিয়ে কথা বলব এবং ইনশাআল্লাহ এ ব্যাপারে কি পদক্ষেপ নেয়া যায় তার পরিকল্পনা করব। আপনাকে অনেক ধন্যবাদ।

রেডিও তেহরান: খন্দকার মর্জিনা আক্তার লাভলি, বিমর্ষ বুদ্ধ ডকুমেন্টারিতে আপনি কণ্ঠ দিলেন-এটি কী আপনার প্রথম কণ্ঠ দেয়া এবং আপনার অনুভূতি কী?
মর্জিনা আক্তার লাভলি: হ্যাঁ এটাই আমার প্রথম কণ্ঠ দেয়া।
রোহিঙ্গা শরণার্থীদের বিষয়ে নিজের অনুভূতি তুলে ধরে তিনি বলেন, মিয়ানমার থেকে নির্যাতিত হয়ে যেসব রোহিঙ্গা মুসলমান বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছেন তাদের করুন ও মর্মান্তিক খবর বিভিন্ন গণমাধ্যম ও সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখে আমার খুব কষ্ট হয়েছে। আমি দেশের বাইরে অবস্থান করায় প্রত্যক্ষভাবে রোহিঙ্গা মুসলমানদের জন্য কোনো সহযোগিতা করতে পারছি না। তবে মনে মনে ভাবছিলাম এবং চেষ্টা করছিলাম ঘরছাড়া ও দেশছাড়া রোহিঙ্গাদের জন্য কিছু করা যায় কি না? আর তখনই 'বিমর্ষ বুদ্ধু' ডকুমেন্টারি ফিল্মটি যিনি বাংলা ভাষায় রুপান্তর করেছেন সেই মুমিত আল রশিদ ভাই আমাকে বাংলায় কণ্ঠ দেয়ার প্রস্তাব দিলেন। তিনি বললেন, প্রবাসে থাকলেও বাংলা ডাবিং এ অংশ নিয়ে তাদের কষ্টের বিষয়টি তুলে ধরতে পারেন বিশ্ববাসীর কাছে। তাৎক্ষণিক আমি মুমিত ভাইয়ের প্রস্তাবে আমি রাজি হয়ে গেলাম। রোহিঙ্গাদের জন্য এটুকু করতে পেরে আমার খুব ভালো লাগছে।#
পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/৫