"মানুষের উৎস অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন জিনিস দিয়ে"
সুরা আররাহমানের ১৪ ও ১৫ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ তাঁর অশেষ ক্ষমতার আরও দুই নিদর্শনের কথা উল্লেখ করেছেন।
এ দুই আয়াতে সর্বশক্তিমান আল্লাহ বলছেন:
তিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন পোড়া মাটির মত শুকনো মাটি থেকে। আর জিনকে সৃষ্টি করেছেন অগ্নিশিখা থেকে।
পবিত্র কুরআন ও ইসলামী বর্ণনার আলোকে মানুষ সৃষ্টির শুরুতে ছিল মাটি। এরপর ওই মাটির সঙ্গে পানি মিশিয়ে করা হয় আঠালো কাদা-মাটি। এরপর তা হয় শুস্ক কাদা-মাটি। অন্য কথায় মানুষের উৎস ছিল অতি তুচ্ছ ও মূল্যহীন জিনিস দিয়ে। আর এই তুচ্ছ জিনিস থেকেই মহান আল্লাহ বানিয়েছেন সৃষ্টির সেরা জীব তথা মানুষ। কিন্তু মানুষের প্রকৃত মূল্য হচ্ছে তার খোদায়ি আত্মা বা রুহ।

অন্যদিকে জিন সৃষ্টি করা হয়েছে বাতাস ও আগুনের মাধ্যমে। তাই মানুষ ও জিনের মধ্যে রয়েছে অনেক পার্থক্য।
সুরা আররাহমানের ১৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ সূর্যের উদয় ও অস্ত যাওয়ার কথা তুলে ধরে বলছেন: তিনি দুই উদয়াচল ও দুই অস্তাচলের মালিক।
- এটা ঠিক যে সূর্য প্রতিদিন এক নির্দিষ্ট অঞ্চল দিয়ে উদয় হয় এবং অন্য এক নির্দিষ্ট অঞ্চলে অস্ত যায়। আর তাই বছরের দিনগুলোর সংখ্যার আলোকেই রয়েছে পূর্ব ও পশ্চিম। কিন্তু আসলে উত্তর ও দক্ষিণ গোলার্ধের দিকে সূর্যের সর্বোচ্চ মাত্রায় ঝুঁকে পড়ার আলোকে কেবল দুটি পূর্ব ও দুটি পশ্চিম রয়েছে। বাদবাকি পূর্ব ও পশ্চিমগুলো এ দুইয়ের মধ্যেই অবস্থান করে। চার ঋতু এই নিয়ম বা ব্যবস্থার সঙ্গেই সম্পর্কিত যা মানুষের জন্য অজস্র কল্যাণ ও বরকতের উৎস। এ বিষয়গুলো সৃষ্টি জগতের নিখুঁত ব্যবস্থাপনা এবং চাঁদ ও সুর্যের সুশৃঙ্খল গতিরও স্পষ্ট প্রমাণ।
পূর্ব ও পশ্চিম সম্পর্কে সুরা মায়ারেজের ৪০ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন: পূর্বগুলো ও পশ্চিমগুলোর প্রভুর শপথ! -এখানে সারা বছরের পূর্ব ও পশ্চিমগুলোর কথা বলা হয়েছে। অথচ সুরা আররাহমানের ১৭ নম্বর আয়াতে সূর্যের উদয় আর অস্তের শুধু উর্ধ্বগামী ও নিম্নগামী বক্ররেখার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে।
সুরা আররাহমানের ২৬ ও ২৭ নম্বর আয়াতে মানুষের ধ্বংসশীলতার কথা স্মরণ করিয়ে দেয়া বলা হয়েছে: ভূপৃষ্টের সবকিছুই ধ্বংসশীল বা মৃত্যুর শিকার হবে, একমাত্র আপনার মহামহিম ও মহানুভব পালনকর্তার সত্তা ছাড়া।
- পবিত্র কুরআনের ব্যাখ্যা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের মতে এখানে মৃত্যু বা ধ্বংসশীলতা বলতে যা বোঝানো হয়েছে তা আপেক্ষিক, চূড়ান্ত নয়। বরং মৃত্যু হচ্ছে চিরস্থায়ী জগতে পদার্পণের একটি পথ মাত্র। এই আয়াতে এটা স্মরণ করিয়ে দেয়া হচ্ছে যে দুনিয়া স্থায়ীত্বের বা অমরত্বের স্থান নয়। তাই এর প্রতি মোহ থাকা ও মহান আল্লাহর পথ থেকে দূরে থাকা উচিত নয়।
অন্যদিকে মহান আল্লাহর মহিমা, শান-শওকত ও সৌন্দর্যের ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে সুরা আররাহমানের ২৭ নম্বর আয়াতে। মহান আল্লাহর কিছু কিছু গুণ চিরস্থায়ী। যেমন, জ্ঞান, ক্ষমতা ও আয়ু বা জীবনকাল। মহান আল্লাহ যে কোনো ধরনের ত্রুটি ও বিচ্যুতি থেকে মুক্ত।
সুরা আররাহমানের ২৯ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন:
নভোমন্ডল ও ভূমন্ডলের সবাই তাঁর কাছে প্রার্থী তথা তাঁর মুখাপেক্ষী। তিনি সর্বদাই কোনো না কোনো কাজে রত আছেন।
- কিয়ামত বা মহাপ্রলয়ের মধ্য দিয়ে ইহকালীন বিশ্ব-জগতের সব কিছুর অবসান ঘটবে ও ধ্বংস হয়ে যাবে সব কিছু, কিন্তু কেবলই টিকে থাকবে মহান আল্লাহর পবিত্র অস্তিত্ব। অন্যদের অস্তিত্ব যা এখন মহান আল্লাহর মোকাবেলায় ধ্বংসশীল সেসবের টিকে থাকাটাও মহান আল্লাহর ইচ্ছার ওপর নির্ভর করে। তাই মহান আল্লাহ যদি মুহূর্তের জন্য সৃষ্টি জগতের প্রতি তাঁর করুণার দৃষ্টি সরিয়ে নেন তাহলে সৃষ্টি জগতের সবই ধ্বংস হয়ে যাবে। তাই পরম করুণাময় আল্লাহ ছাড়া এমন কেউ কি আছে যার কাছে আকাশ ও জমিনের অধিবাসীরা কিছু কামনা করে? সব সৃষ্টি কেবল মহান আল্লাহর কাছেই নানা চাহিদা পূরণের আর্জি পেশ করে এবং সবাই একমাত্র তাঁরই মুখাপেক্ষী। আর এটাও স্পষ্ট যে সৃষ্টিকূলের স্থায়ী চাহিদাগুলো মেটানোর জন্য মহান আল্লাহর স্থায়ী দয়া ও করুণার প্রয়োগ জরুরি।

মহান আল্লাহ প্রতিদিনই ও প্রতি মুহূর্তেই মানুষের নানা চাহিদা বা দাবি-দাওয়া পূরণ করছেন এবং সৃষ্টি করছেন নানা অস্তিত্ব। অন্য কথায় মহান আল্লাহর সৃষ্টিশীলতা সব সময়ই বজায় রয়েছে। এমন নয় যে মহান আল্লাহ বিশ্ব-জগত বা সৃষ্টিকুলকে সৃষ্টি করেই সেসবকে নিজ মর্জি বা অবস্থার ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। বরং তিনি সব সময়ই অস্তিত্বের জগতকে প্রতিপালন ও পরিচালনা করছেন।
সুরা আররাহমানের ৩১ নম্বর আয়াতের পর থেকে পরকাল ও পরকালীন শাস্তি সম্পর্কিত কিছু বক্তব্য রয়েছে। এসব আয়াত পাপীদের জন্য সতর্কবাণী ও মু'মিনদের জন্য সচেতনতা, জাগরণ ও উৎসাহের মাধ্যম। কিয়ামত বা বিচার দিবসে জিন আর মানুষের সব কথা ও কাজের এবং ইচ্ছার যথাযথ তদন্ত করা হবে। আর এরই আলোকে দেয়া হবে পুরস্কার ও শাস্তি। এ বিষয়গুলোর প্রতি বিশ্বাস আমাদের পার্থিব জীবন ও আল্লাহর নেয়ামত ব্যবহারের পদ্ধতি বা ধরনের ওপর প্রভাব ফেলে। #
পার্সটুডে/মু.আমির হুসাইন/মো: আবু সাঈদ/ ২২