সেপ্টেম্বর ২৭, ২০১৮ ১২:৪০ Asia/Dhaka
  • দেখব ঘুরে ইরান এবার: কেরমান প্রদেশে বিশ্বের সর্ববৃহৎ তামার খনি

খনিজ সম্পদের দিক থেকে কেরমান বেশ সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল।

খনিজ সম্পদের দিক থেকে কেরমান বেশ সমৃদ্ধ একটি অঞ্চল। ইরানের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তাই এই প্রদেশের গুরুত্ব এবং ভূমিকা ব্যাপক। বিশ্বের সবচেয়ে বড়ো তামার খনি এই কেরমান প্রদেশেই রয়েছে। খনিটির নাম হলো ‘মেস্‌সে সারচেশমে’। উল্লেখ করা যেতে পারে যে ফার্সি ভাষায় ‘মেস্‌’ মানে হলো তামা আর সারচেশমে শব্দের অর্থ হলো উৎস। 

ইরানের সমৃদ্ধ খনিগুলোর একটি হলো কেরমানের এই ‘মেস্‌সে সারচেশমে’। এখানকার তামা অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাবার পাশাপাশি বিদেশেও ব্যাপক পরিমাণে রপ্তানি হয়। স্বাভাবিকভাবেই এই রপ্তানি থেকে অর্জিত হয় ব্যাপক বিদেশী মুদ্রা যা ইরানের অর্থনীতির ওপর মোটামুটি ভালোই প্রভাব ফেলে। প্রাচুর্য এবং অর্থকরী উভয় দিক থেকেই তামা একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং মূল্যবান ধাতু হিসেবে পরিগণিত হচ্ছে ইরানে। তামা এমন একটি ধাতু যার ভেতর দিয়ে তাপ এবং বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়।

 তাছাড়া তামা বেশ টেকসই এবং অভঙ্গুর একটি ধাতু। সে কারণে তামার বিচিত্র ব্যবহার লক্ষ্য করা যাবে। প্রচুর চাহিদা আছে এই ধাতুটির। ইলেক্ট্রনিক এবং ইলেকট্রিকের মতো বিচিত্র শিল্প সামগ্রীতে তামার যেমন ব্যাপক ব্যবহার হচ্ছে তেমনি আমাদের ব্যবহার্য বহু সরঞ্জামেও তার ব্যবহার রয়েছে। কয়েন তৈরির ক্ষেত্রে, শৈল্পিক মেশিনারি তৈরির ক্ষেত্রে, ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে, পরিবহণ শিল্পের ক্ষেত্রে এই তামা ধাতুটির ব্যবহার প্রচুর।

 খনিজ সম্পদ তামার আন্তর্জাতিক যে বেল্ট রয়েছে বিশেষ করে খনিজ মওজুদের দিক থেকে ওই বেল্টের ওপর পড়েছে ইরান। এই খনি ইরানের দক্ষিণ পূর্বাঞ্চল থেকে ইরানের উত্তর পশ্চিমাঞ্চলের আজারবাইজান উপকণ্ঠ পর্যন্ত বিস্তৃত। তামার বেশ কয়েকটি খনি রয়েছে এই বেল্টে। এই খনিগুলো ইরানের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তামার খনির অন্তর্ভুক্ত হলেও কেরমানের সারচেশমে তামার খনিটি একেবারেই স্বতন্ত্র মর্যাদার অধিকারী।

 

সুবিস্তৃত মরু আঞ্চলিক এই তামার খনিটি কেরমান শহর থেকে ১৬০ কিলোমিটার দূরে দক্ষিণ পশ্চিমে অবস্থিত। ইরানের পশ্চিমাঞ্চলীয় যাগরোস পর্বতমালার কেন্দ্রীয় অংশে পড়েছে খনিটি।  সমগ্র বিশ্বের মধ্যে যতগুলো বড়ো বড়ো তামার খনি রয়েছে এই খনিটি সেগুলোর একটি এবং ইরানের মধ্যে তামা উৎপাদনকারী সর্ববৃহৎ খনি।

 কেরমান প্রদেশে তামার খনির এই প্রাচুর্য এবং সমৃদ্ধির দিকটি চিন্তা করে এবং তামা শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করার ফলে এই এলাকাটি একার্থে শিল্প এলাকায় পরিণত হয়েছে। এখানকার তামা শিল্প রপ্তানি করার ফলে ইরানের জাতীয় আয় তথা অর্থনীতির ওপর এই শিল্পটি গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর তাই এই শিল্পের ওপর গভীর দৃষ্টি দেওয়া হয়েছে এবং এ ক্ষেত্রে সার্বিক উন্নয়নের জন্য ব্যাপক চেষ্টা প্রচেষ্টা চালানো হয়েছে।

 সরকারের পৃষ্ঠপোষকতায় ইরানেরই সন্তানেরা বিশেষ করে এই শিল্প সম্পর্কে যারা বিশেষজ্ঞ এবং এ নিয়ে যারা ভাবেন তাদের সহযোগিতায় মৌলিক কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। তাঁদের আন্তরিক প্রচেষ্টায় ইরানে তামা উৎপাদনের অসংখ্য কারখানা চালু হয়েছে। সর্বোপরি আল্লাহর সাহায্যে এবং ইরানের নিজস্ব বিশেষজ্ঞ, শ্রমিক এবং প্রকৌশলীদের মেধা ও প্রতিভাকে কাজে লাগিয়ে অনেক দুর্গম পথ অতিক্রম করে তাঁরা সারচেশমে নামের বিশাল একটি তামার কমপ্লেক্স গড়ে তোমার স্বপ্নকে বাস্তবে রূপ দিতে পেরেছেন। এখন সেখানে তামা শিল্পের কাজ ব্যাপকভাবে চলছে। এই কমপ্লেক্সের ভেতরে তামা শিল্প সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ প্রায় সকল কাজই করা হয়।

 চারচেশমে তামা শিল্প কমপ্লেক্সের কর্মকর্তাদের বক্তব্য অনুযায়ী বছরে কয়েক হাজার টন তামা উৎপাদন ছাড়াও কিছু স্বর্ণ, রূপা, মোলিবডান সালফার, মিলিয়ন মিলিয়ন টন খনিজ মাটি এবং পাথর উৎপন্ন হয় এখানে। এই কমপ্লেক্সে উৎপাদিত তামা খুবই উন্নত মানের এবং উৎপাদনও হয় প্রচুর। এখানকার অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে দেশের বাইরেও রপ্তানি করা হয়। আগে অবশ্যই এই তামা কমপ্লেক্সের জন্য দেশের বাইরে থেকে কিছু কিছু খুচরা যন্ত্রাংশ কিনে আনতে হত যার ফলে দেশের বিদেশী মুদ্রার কিছু অংশ বিদেশে চলে যেত। কিন্তু ইসলামী বিপ্লব বিজয়ের পর শিল্প কল-কারখানার ব্যাপক উন্নয়নের ফলে সেইসব খুচরা যন্ত্রাংশ দেশের ভেতরেই তৈরি হচ্ছে। যার ফলে বিদেশী মুদ্রা দেশের বাইরে চলে যাবার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন আর ডলার খরচ করে বাইরে থেকে কোনো যন্ত্রাংশ কিনে আনতে হয় না। এটা অবশ্যই বিশাল অর্জন বৈ কি।

এই তো গেল সারচেশমে তামা কমপ্লেক্সের কথা। কেরমানে কিন্তু এই একটিমাত্র খনিই রয়েছে তেমনটি নয়। বরং এখানে রয়েছে আকরিক লোহার কমপ্লেক্সও। সিরজানের গোলগাহ্‌র আকরিক লোহার কমপ্লেক্সটিও কেরমান প্রদেশের গুরুত্বপূর্ণ এবং বৃহৎ শিল্প কমপ্লেক্সগুলোর একটি। খুযিস্তান এবং ইস্পাহানের স্টিল মিলগুলোর জন্য যে পরিমাণ আকরিক লোহার প্রয়োজন পড়ে তার প্রায় অর্ধেকটাই কেরমান থেকে আসে। গালগাহর কমপ্লেক্সে ১২০ কোটি টন লোহার মজুদ রয়েছে। তামার পাশাপাশি বিভিন্ন ধাতুর আরো বহু খনি রয়েছে এখানকার ববাক শহর এবং কাহনুযে। ইরানের গুরুত্বপূর্ণ খনিজ সম্পদময় এলাকার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত এই এলাকা দুটি। বিশেষ করে কাহনুযে যে টিটানিয়াম খনি রয়েছে ইরানের মধ্যে সেটিই একমাত্র বলে বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ।

কেরমান প্রদেশে হস্তশিল্প সামগ্রী বিচিত্র। তবে প্রাকৃতিক বিভিন্ন উপহারের মধ্যে রয়েছে পেস্তা বাদাম, জিরা, মেহেদি, কাপুর, খুরমা খেজুরসহ আরো বহু ফল ফলাদি। এসব ফলফলাদির মধ্যে পেস্তা বাদাম আর খুরমা খেজুর প্রচুর পরিমাণে দেশের বাইরে রপ্তানি করা হয়। এখানে যে দা পাট্টা তৈরি হয় সেই দোপাট্টা বেশ বিখ্যাত। কেরমানের মেয়েরাই সাধারণত এগুলো তৈরি করে থাকে। কেরমানের গালিচার কথাও উল্লেখ করতে হয়। বেশ নিপুণ হাতে অত্যন্ত শৈল্পিকভাবে বোনা হয় এখানকার কার্পেট বা গালিচাগুলো।#

 

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/  ২৭

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ