জানুয়ারি ০৫, ২০১৯ ২০:১৭ Asia/Dhaka

পরিবারে বই পড়ার অভ্যাস গড়ে তোলার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। একটি শিশু ৬ বছর বা তারও বেশি বয়সে বই পড়তে শুরু করে।

তবে বাসায় বই পড়ার চর্চা থাকলে বিশেষ করে বাবা-মা অন্তত ঘুমোনোর সময় কিংবা বিশ্রাম নেয়ার সময়ও যদি বই পড়েন তাহলে শিশুরা আরও আগে থেকেই বই পড়ার অভ্যাস করে ফেলতে পারে। আজকের আসরে আমরা একটি পরিবারে মানসিক স্বাস্থ্য ও সুস্থতার গুরুত্ব নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

আসলে একজন সুস্থ মানুষ বলতে আমরা কাকে বুঝবো? যে শারীরিকভাবে রোগ-ব্যাধি থেকে মুক্ত, মানসিকভাবেও সুস্থ হবার পাশাপাশি আত্মিকভাবেও প্রশান্ত-তাকেই বলতে পারি একজন সুস্থ মানুষ। একটি পরিবারের গুরুত্ব এখানেই যে তাদের শিশুকে একটি সুস্থ পরিবেশ দিতে হবে। এমন পরিবেশ যা মানসিক সম্পর্কের সুস্থতার পাশাপাশি সামাজিক ও বাসোপযোগী হয়।কারণ ব্যক্তির সামাজিক অবস্থান তার বয়সের প্রথম বিশ বছরেই নিশ্চিত হয়ে যায়।আর এগুলো সাধারণত শিশুরা তাদের বাবা-মা'র কাছ থেকেই উত্তরাধিকার সূত্রে পেয়ে থাকে। আর বাবা মা'ও তাদের সন্তানের মেধা ও প্রতিভাসহ তার সার্বিক বিকাশের উপযুক্ত পরিবেশ সৃষ্টি করার চেষ্টা করে।

একটি পরিবারের দায়িত্ব হলো সন্তানদের বস্তুগত ও আধ্যাত্মিক চাহিদা মেটানোর ব্যবস্থা করা। এটা করা হলে সন্তানদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষিত হবে। সন্তান যদি শৈশবে আপন পরিবার থেকে ভালোবাসা না পায়, মায়া মমতা থেকে বঞ্চিত হয় তাহলে ভয়াবহ রকমের কষ্ট অনুভব করে। জন্মের আগে থেকেই ব্যক্তির মানসিক সুস্থতার বিষয়টি শুরু হয়ে যায়। সুতরাং গর্ভাবস্থাতেই বাবা-মায়ের মধ্যকার সম্পর্কের বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সুসম্পর্ক যদি না থাকে দুজনের মধ্যে তাহলে মায়ের মানসিক চাপ তৈরি হতে পারে। ওই মানসিক চাপের প্রভাব পড়ে গর্ভের সন্তানের ওপর। ভূমিষ্ঠ হবার আগের নয় মাসই তাই গর্ভবতী মাকে মানসিকভাবে সুস্থ ও প্রফুল্ল থাকা জরুরি। কেননা এর ওপরই নির্ভর করে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্যের বিষয়টি। শিশুর মন ও মানসিকতা গঠনমূলকও হতে পারে কিংবা হতে পারে বিপজ্জনক।

শৈশবে শিশুর মানসিক স্বাস্থ্য সঠিক ও সুস্থ রাখার জন্য কিংবা এককথায় শিশুর ব্যক্তিত্ব সুন্দর সঠিক করে গড়ে ওঠার জন্য বাবা-মায়ের আদর, প্রেম, মায়া-মমতার প্রয়োজন। পরিবারের পরিবেশটাকে শিশু নিজের জন্য নিরাপদ যেন ভাবতে পারে সেভাবে তৈরি করতে হবে। শৈশবে বাবা-মায়ের সঙ্গে সন্তানের সম্পর্ক যত বেশি নিবীড় ও মায়াময় হবে ততটাই প্রভাব পড়বে শিশুর মনের ওপর। সন্তানদের মাঝে যেন কোনোভাবেই লৈঙ্গিক বৈষম্যের ধারনা গড়ে উঠতে না পারে, বাবা-মায়ের আচরণ সেরকম হতে হবে। এমনকি বাইরের কোনো ছেলেমেয়ের সঙ্গেও যেন তুলনা করা না হয় সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ এ বিষয়টি ব্যক্তির আচার আচরণ গড়ে ওঠা  বিকাশের ক্ষেত্রে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে।

প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার সময়টা সবার জীবনেরই একটি গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। এ সময় শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন আসে ছেলে-মেয়েদের মধ্যে। বাবা-মা যদি এ সময়টাতে সন্তানদের প্রতি মনোযোগ না দেন তাহলে তাদের মানসিক পরিবর্তনের কারণে পরিবারে এবং সমাজে ব্যাপক অসংলগ্নতা দেখা দিতে পারে। এমনকি তরুণ তরুণীদের মাঝে নৈতিক অবক্ষয়ও দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। প্রাপ্ত বয়স্ক হবার পরের ধাপটি হলো যৌবনকাল। এ সময় সন্তানদের সম্পর্ক পরিবারের সঙ্গে হ্রাস পেতে শুরু করে এবং তাদের সামাজিক ব্যক্তিত্ব ধীরে ধীরে প্রকাশ পেতে থাকে। এই সময় পর্বটি পড়ালেখা করা, পেশা নির্বাচন করা, কর্মক্ষেত্রে প্রবেশ করা এবং পরিবেশের সঙ্গে নিজেকে মানিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে ব্যক্তির সামাজিক পরিচয় ফুটিয়ে তোলার সময়।

মানব জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় অর্থাৎ পরিবার গঠন করার বিষয়টিও এই যৌবনে প্রবেশ করার পরই ঘটে থাকে। বিয়ে করার সময় যদি পাত্র-পাত্রী, তাদের পরিবার, চিন্তা-চেতনা ইত্যাদি বিবেচনা করার মাধ্যমে সঠিকভাবে পদক্ষেপ না নেয় তাহলে মারাত্মক বিপর্যয় দেখা দেওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। বিশেষ করে বিয়ের ক্ষেত্রে নীতি-নৈতিকতা, মূল্যবোধ ইত্যাদি উপেক্ষা করা হলে বিয়েটাই হয়ে উঠতে পারে জীবনের সবচেয়ে বিপজ্জনক একটি পদক্ষেপ যা নতুন একটি পরিবারের ভয়াবহ পতনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।

যৌবনের পর আসে বার্ধক্য। জীবনের এই পর্বে মানুষ শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ে, বিচিত্র রোগ-ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়। সুতরাং ব্যক্তি আত্মিক ও মানসিক দিক থেকে ক্রমশ দুর্বল থেকে দুর্বলতর হবার মধ্য দিয়ে ভেঙে পড়তে শুরু করে। পরিবারের এই বৃদ্ধ সদস্যদের আত্মিক প্রশান্তির প্রতি যথাযথ মনোযোগ দেওয়া না হলে তাদের মাঝে বিষন্নতা, বিস্মৃতি এমনকি আলজেইমারের মতো ভয়াবহ রোগও দেখা দিতে পারে। বার্ধক্যের কারণে সৃষ্ট এইসব রোগের জন্য বৃদ্ধ-বৃদ্ধাকে উপেক্ষা না করে তাদের প্রতি সদয় আচরণ করা উচিত। নাতি-নাতনিদের সঙ্গে দাদা-দাদীর একটা মজার সম্পর্ক গড়ে তোলা উচিত। তাহলে তারা সম্মানিত বোধ করবে। তাদের প্রতি ভালোবাসা প্রকাশের সবচেয়ে বড় নিদর্শন এটাই। এরকম সুসম্পর্ক বৃদ্ধ-বৃদ্ধার মাঝে তাদের রোগ-ব্যাধি কাটিয়ে ওঠার শক্তি জোগাবে। যথার্থ খাদ্যাভ্যাসও বড়দের বিস্মৃতি কাটিয়ে উঠেত সাহায্য করবে।

সর্বোপরি কথা হলো ধর্মীয় বিধি-বিধান চর্চা পরিবারের সকল সদস্যের মানসিক ও আত্মিক স্বাস্থ্যের ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে বলে মনোবিজ্ঞানীদের অভিমত। গর্ভবতী হবার পর থেকে জীবনের সকল পর্যায়ে আল্লাহর স্মরণ এবং আধ্যাত্মিকতার চর্চা মানুষের অন্তরাত্মায় গভীর ইতবাচক প্রভাব ফেলে। গবেষণায় দেখা গেছে যেসব পরিবারে ধর্মীয় বিধি-বিধান চর্চা হয় সেসব পরিবারে নৈতিক অবক্ষয় ও চারিত্র্যিক বিপর্যয় সর্বনিম্ন পর্যায়ে থাকে। ধর্মীয় শিক্ষা ও ইবাদত বন্দেগি চিন্তা-চেতনাগত বিচ্যুতিসহ আত্মিক ও মানসিক অবক্ষয় থেকে যেমন ব্যক্তিকে রক্ষা করে তেমনি ব্যক্তএক আচার আচরণগত অসংলগ্নতা থেকেও দূরে রাখে। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ৬

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন 

ট্যাগ