মে ২৫, ২০১৯ ১৯:১১ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম পরিবারের অর্থনীতি নিয়ে। পরিবারগুলো যদি অর্থনীতি বিষয়ে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত দিক থেকে উন্নতি লাভ করে তাহলে স্বাভাবিকভাবেই সমাজেও তার প্রভাব পড়বে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ও সমাজ উন্নতি লাভ করবে।

যে-কোনো পরিবারই চায় সবচেয়ে ভালো খাবারটি খেতে, সবচেয়ে সুন্দর পোশাকটি পরিবারের সদস্যদের পরাতে, সবচেয়ে ভালো বাড়িতে বাস করতে এবং ঘন ঘন ভ্রমণে যেতে।

কিন্তু বাস্তবতা হলো প্রায় পরিবারেরই আর্থিক বাজেট সীমিত থাকে এবং চাহিদা আর সামর্থ্যের মাঝে সামঞ্জস্যহীনতা একটা সাধারণ বিষয়। তাই পরিবারগুলোকে বাধ্য হয় সামর্থ্যের সীমায় থেকেই নিজেদের চাওয়াগুলো নির্ধারণ করতে এবং এমনভাবে পরিকল্পনা গ্রহণ করতে যাতে পরিবারের সদস্যরা তুলনামূলকভাবে বেশি সন্তুষ্টি লাভ করতে পারে। অর্থনীতির পরিভাষায় একে বলা হয় উপযোগ। কী ব্যয় করবো, কতটুকু খরচ করবো, কীভাবে খরচ করবো, কে কাজ করবে, কত ঘণ্টা কাজ করবে, আয়টাকে কত বেশি কাজে লাগানো যায়, কোন কোন জিনিস ঘরে তৈরি করা হবে ইত্যাদি প্রশ্ন প্রায় প্রতিদিনই একটি পরিবারে দেখা দেয় এবং এগুলোর জবাবে বিশেষ করে অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যথার্থ ও দূরদর্শিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারের এই অর্থব্যবস্থা নিয়ে আমরা আরও কথা বলবো আজকের আসরে।

পরিবারের অর্থনীতি কেবল পরিবারগুলোর ধন-সম্পদ ও সমৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে না। এই অর্থনীতির জ্ঞান বরং স্বল্প আয়ের বিভিন্ন শ্রেণী বিশেষ করে যাদের আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের কোনো সামঞ্জস্য নেই তাদের জন্য বেশি প্রয়োজন। পরিবারের অর্থনীতি নিয়ে কথা বলতে গেলে আমাদের জানা দরকার যে একটি পরিবারের আয় বৃদ্ধির অর্থ জীবন-জীবিকার উন্নয়ন ঘটানো নয় বরং আয় বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে ব্যয়ের খাতও বৃদ্ধি পায়। সুতরাং ব্যয়ের সুষ্ঠু পরিকল্পনাই অর্থব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যারা পরিবারের অর্থের যোগানদাতা তারা কতোটা দূরদর্শিতার সঙ্গে সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করতে পারছেন, সেখানেই অর্থব্যবস্থার শিল্প ও প্রজ্ঞার বিষয়টি ফুটে ওঠে। পরিবারে বাজেট ঘাটতি দেখা দিলে সরকারের মতো সম্পূরক বাজেট সরবরাহ করার ক্ষমতা থাকে না পরিবারগুলোর। কিংবা অতিরিক্ত খরচ কমানোরও কোনোরকম সুযোগ থাকে না। সেজন্যই পরিবারের খরচগুলোর ব্যাপারে একটা সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করার সামর্থ্য থাকা দরকার।

পরিবারের অর্থনীতিকে অনন্য সাধারণ করে তোলে যে বিষয়টি তা হলো পারিবারিক এবং পেশাগত ভূমিকার মাঝে আন্ত:সংযোগ। তাই পরিবারের অর্থনৈতিক তৎপরতাকে কোনো বিনোদন বা মজার বিষয় ভাবা ঠিক না। একে অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে নিয়ে সঠিক কর্মসূচি গ্রহণ করতে হবে। তার মানে হলো পরিবারের সকল সদস্যের দায়িত্ব রয়েছে পরিবারের অর্থনৈতিক নীতিমালা গ্রহণে মেধাবি পরামর্শ দিয়ে যথাযথ পদক্ষেপ নিতে সহযোগিতা করার। পরিবারের অর্থনৈতিক পরিকল্পনা হওয়া উচিত পরিবারের প্রত্যেক সদস্যের আয়ের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে। একিট পরিবারে বিভিন্ন রকমের সিদ্ধান্ত ও পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে। কিছু কিছু পরিকল্পনা আছে সুদূরপ্রসারী যেমন বাসার ফ্রিজ, টেলিভিশন, গাড়ি, বাড়ি ইত্যাদির পাশাপাশি সাময়িক কিছু প্রয়োজনীয়তার বাজেটও দরকার হয় যেমন রেস্টুরেন্টে সবাই মিলে খেতে যাওয়া কিংবা কোথাও বেড়াতে যাওয়া ইত্যাদি। রুচি, সামর্থ্য এবং সাংস্কৃতিক সমৃদ্ধির ওপর নির্ভর করে এগুলোর জন্য বাজেট নির্ধারণ করা উচিত যেন সিদ্ধান্ত হুট করেই পাল্টে না যায়।       

পরিবারের খরচ কমাতে উপায়গুলোকে কাজে লাগানোর আগে যেসব উপায় রয়েছে সেগুলোর মাঝে তুলনামূলক একটা পর্যালোচনা করে নেয়া ভালো। তারপর যে প্রক্রিয়াটি সামর্থ্যের মধ্যেই উপভোগ্য ও উপযুক্ত বলে মনে  হবে সেটাই নির্বাচন করা উচিত। যেমন বাসার কাজে এমন একটি সরঞ্জাম কেনার প্রয়োজন পড়লো যে দামিও পাওয়া যায় আবার সস্তাও রয়েছে বাজারে। আপনার উচিত হবে সস্তা এবং প্রয়োজনীয় কাজ মেটায়-সেরকম একটা বেছে নেয়া। পরিবারের অর্থনীতিতে সময় খুব গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। কেননা সময়ের ব্যাপারে একটা সীমাবদ্ধতা আছে কারণ একে না জমিয়ে রাখা সম্ভব না ফেরৎ নেয়া যায়। এই সময়ের বিষয়টি মাথায় রেখেই যে-কোনো সিদ্ধান্ত বা পরিকল্পনা করা যুক্তিযুক্ত। সময়ের আনুকূল্যকে কাজে লাগাতে প্রথম পদক্ষেপেই পরিবারের অর্থনীতির জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা গ্রহণ করা উচিত।

পরিকল্পনাহীন একটি পরিবার লক্ষ্যহীন সংস্থার মতো। পরিবার গঠনকারীদের লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য যদি বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধাগুলোকে কাজে লাগানোর মতো যথেষ্ট অভিজ্ঞতা কিংবা দূরদর্শিতা না থাকে তাহলে উদ্দেশ্য অর্জন করা খুব কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। সুতরাং প্রথমেই পরিবারের সামগ্রিক লক্ষ্যগুলোর একটা রূপরেখা নির্ধারণ করে নিতে হবে। তারপর ধীরে ধীরে ছোট ছোট পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়ন করতে করতে বড় পরিকল্পনা বাস্তবায়নে অগ্রসর হতে হবে। তবেই ছোট বড় সকল পরিকল্পনাই বাস্তবায়িত হবে। সুতরাং পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্পমেয়াদী, মধ্যমেয়াদী এবং দীর্ঘমেয়াদি-এই তিন ভাগে ভাগ করে নিতে হবে। আপনার সন্তানকে ইউনিভার্সিটিতে পাঠাবেন-এই পরিকল্পনা থাকতে হবে বহু আগে থেকেই। এটা একটা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ছোট ছোট অনেক পরিকল্পনা গ্রহণ করার প্রয়োজন পড়ে। যেমন কী পড়াবেন, কোন স্কুলে পড়ালে ভার্সিটিতে ভর্তি হতে পারবে-ইত্যাদি বৃহৎ পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ছোট পরিকল্পনার অংশ।    

অর্থনীতি বিশেষজ্ঞদের মতে এই পর্যায়ের পর অর্থাৎ পরিকল্পনা গ্রহণ করার পর সেগুলো বাস্তবায়ন করার জন্য সুষ্ঠু প্রক্রিয়া নির্বাচন করা হলে পরিবারে নেমে আসবে সাফল্য। পরিবারের সকল সদস্যের মুখে ফুটে উঠবে অনাবিল হাসি। এজন্য যে কাটি যথেষ্ট তা হলো স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা নিজের সিদ্ধান্তই শ্রেষ্ঠ ভাবার মানসিক জং বা মরিচাকে পরিবারের সকল সদস্যের অন্তর থেকে ধুয়ে মুছে দূর করে ফেলা। সেইসাথে সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে একাত্ম হয়ে পরিবারের কল্যাণ চিন্তা করা হলে সৌভাগ্যের দ্বার খুলে যাবে ইনশাআল্লাহ। যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৫

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ