মে ২৭, ২০১৯ ১৬:০২ Asia/Dhaka

পরিবারের সকল সদস্যের মুখে ফুটে উঠবে অনাবিল হাসি। এজন্য যে কাজটি যথেষ্ট তা হলো স্বেচ্ছাচারিতা কিংবা নিজের সিদ্ধান্তই শ্রেষ্ঠ ভাবার মানসিক জং বা মরিচাকে পরিবারের সকল সদস্যের অন্তর থেকে ধুয়ে মুছে দূর করে ফেলা। সেইসাথে সততা ও আন্তরিকতা দিয়ে একাত্ম হয়ে পরিবারের কল্যাণ চিন্তা করা হলে সৌভাগ্যের দ্বার খুলে যাবে ইনশাআল্লাহ।

একটি পরিবারের সময় সর্বদা ভালো যায় না। দু:সময়, সুসময় দুটোই নেমে আসতে পারে যে-কোনো সময়। সুতরাং পরিবারে কখনো যদি দু:সময় নেমেই আসে সেরকম পরিস্থিতিতে অর্থব্যবস্থাটা কীরকম হতে পারে সে বিষয়ে আজকের আসরে আমরা কথা বলার চেষ্টা করবো। অর্থনেতিক দুরবস্থাটা বহুরকমের হতে পারে। কেউ হয়তো পেশাগত জীবনের শেষে পেনশনের সব টাকাপয়সা যে-কোনোভাবেই হোক খুইয়ে ফেলে মাথায় হাত দিয়ে বসে আছেন। আবার কেই হয়তো পরিবারের অর্থকষ্টের মধ্যে চাকুরিটাই হারিয়ে ফেলেছেন। এমন পরিবারও আছেন যাঁরা হয়তো সংসারের দৈনন্দিন খরচ মেটাতে বাজেট ঘাটতির মুখে পড়ে ঋণ গ্রহণ করেছেন। এই সব রকমের পরিস্থিতিই পরিবারের সদস্যদের গর্বকে খর্ব করে দেয়। ব্যক্তিত্বের ওপর বিরূপ প্রভাব ফেলে।

অনেক রকম সমস্যার কথা বললাম। সব ধরনের সমস্যাই কিন্তু সমাধানযোগ্য। সুতরাং ঘাবড়ে যাওয়া ঠিক নয়। অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে সমাধানের উপায়ও ভিন্ন ভিন্ন রকমের হতে পারে। অর্থনীতি বিশেষজ্ঞরা এইসব সংকট সমাধানের জন্য বেশ কিছু উপায় দেখিয়েছেন যেগুলো প্রয়োগ করলে ক্ষতির প্রভাব কম পড়তে পারে কিংবা সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাব প্রতিহত করা যেতে পারে। পরিবারের অর্থনেতিক দুরবস্থা মোকাবেলা করার একটি সহজ পথ হলো অপ্রয়োজনীয় খরচ কমিয়ে ফেলা। সবসময় যথার্থ এবং ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট তৈরি করার চেষ্টা করতে হবে। ভারসাম্যপূর্ণ বাজেট বলতে বোঝায় সব কাজই বাস্তবায়িত হয়ে যাবে তবে কিছুটা সাশ্রয়ও হবে। পরিবারের কোনো সদস্যের যদি পুরো মাসের মধ্যে অপ্রত্যাশিত কোনো আয়ের সৌভাগ্য ঘটে যায় তাহলে ওই বাড়তি আয়কে অপরিকল্পিতভাবে ব্যয় না করে সেটাকে জমিয়ে রাখতে হবে। বিনোদনের নামে অযথা ফূর্তি-উল্লাস করে খরচ করে ফেলা ঠিক হবে না।

এভাবে পুরো মাস জুড়ে যদি অপ্রয়োজনীয় বাড়তি খরচ বাঁচিয়ে কিছু টাকা জমানো সম্ভব হয় তাহলে সেই উদ্বৃত্ত টাকা জরুরি ফান্ডে রেখে দেওয়া উচিত।এই জরুরি ফান্ড পরিবারের অর্থনীতির মন্দাকালে যে কীরকম উপকারে আসবে তা কল্পনাই করা যাবে না। সুতরাং অর্থনৈতিক সচলাবস্থার সময়ও অকাল দুরবস্থার কথা মাথায় রেখে কিছু কিছু সঞ্চয় করে রাখা দূরদর্শী বুদ্ধির পরিচয় হবে।এটা হবে পরিবারের জরুরি নিরাপত্তা তহবিল।অবশ্য পরিবারের মাসিক বাজেটের জন্য জন্মদিনের উপহার,বিনোদন ইত্যাদি এ জাতীয় কাজের জন্য একটা ফান্ড রাখা উচিত।ওই ফান্ড যদি কাজে না লাগে সেটা জমিয়ে রাখলে ভবিষ্যতের কোনো বড় বাজেটে সহযোগিতা করবে।

বাচ্চাদের দৈনন্দিন খরচের জন্য তাদের পকেটে যে টাকাটা দেয়া লাগে তারও একটা বাজেট করে রাখা ভালো।একইভাবে বিভিন্ন ধরনের বিল পরিশোধের জন্যও একটা বাজেট করে রাখতে হবে। এগুলো আলাদা আলাদাভাবে রেখে দিলে প্রয়োজনের সময় আর ঝামেলায় পড়তে হবে না। বিশেষ করে বাচ্চাদের পকেট খরচ দেওয়ার ক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে দৈনন্দিন বাজেট যেন সমান অঙ্কের হয়। একদিন বেশি একদিন কম এরকম যেন না হয়।কোনো কারণে সমস্যা হলেও বাচ্চাদের পকেট খরচ কম দেওয়া যেমন ঠিক নয় তেমনি সৌভাগ্যক্রমে বাড়তি কোনো আয় হয়ে গেলেও সেই পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়া ঠিক হবে না।সমানভাবে হিসেব করে মাসিক খরচের বাজেটটা আলাদা করে রাখা ভালো।বাচ্চাদের বয়স এবং প্রয়োজনীয়তার বিষয়টি সচেতনভাবে ভেবেচিন্তে বাজেটের পরিমাণ নির্ধারণ করতে হবে।

বলেছি যে সঞ্চয় করলে দু:সময়ে তা কাজে লাগে।অর্থনৈতিক বিপদের সময় সেই সঞ্চয় দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করে। সঞ্চয়কে একটা বিনিয়োগ হিসেবে দেখা যেতে পারে।এই বিনিয়োগকে হুটহাট করে খরচ না করে জমিয়ে রাখলে এক দুই বছর পর দেখা যাবে ভালো একটা সংখ্যা জমে গেছে। ওই টাকা দিয়ে গাড়ি, বাড়ি কিংবা বাচ্চাদের বিয়ে-শাদি, পড়ালেখার খরচ ইত্যাদি জীবন ঘনিষ্ট প্রয়োজনীয় ব্যয় মেটানোর কাজে লাগানো যেতে পারে। সঞ্চয় থাকলে এরকম বড় বড় সমস্যা খুব সহজেই মোকাবেলা করা যায়। সুতরাং কোনো মাসে কোনো একটা বাজেটের টাকা বেঁচে গেলে ফুর্তি করে টাকাটা নষ্ট করে ফেলা ঠিক নয়।

কেউ তো বলতে পারে না কখন তার পরকালের ডাক আসবে। একইভাবে কেউই চায় না তার পরিবারকে অন্তত অর্থনৈতিক সংকটের মুখে ফেলে রেখে যেতে। লাইফ ইন্স্যুরেন্স কিংবা জীবন বীমা যদি ব্যক্তির নিজস্ব অর্থনৈতিক জীবনের জন্য খুব বেশি অর্থবহ নাও হয় তারপরও এটা জীবন বীমার গ্রাহকের পরিবারকে কিছুটা হলেও সুরক্ষা যে দিতে পারে তাতে সন্দেহ নেই।যিনি বীমা করেন মানে বীমার গ্রাহক যিনি, তিনি মারা গেলে তাঁর পরিবারের সদস্যরাই বীমার অর্থ পাবার নিয়ম।ওই অর্থ দিয়ে বীমাগ্রাহকের রেখে যাওয়া পরিবার পরিজন তাদের অর্থনৈতিক দুরবস্থা কাটিয়ে উঠতে পারেন সহজেই।

সুতরাং আয় রোজগারের সময় জীবন বীমা করে রাখা ভালো। মানুষের ভবিষ্যৎ তো জানা সম্ভব নয়। খোদা না করুক কখনও যদি জীবনে কোনোরকম আর্থিক দুরবস্থা নেমে আসে কিংবা কাজ করতে না পারার মতো কোনো পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হয় তখন এই বীমা অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে সহযোগিতা করতে পারে।

তো বন্ধুরা! দীর্ঘদিন ধরে আমরা "সুস্থ পরিবার" শিরোনামে ধারাবাহিক আলোচনা করেছি। এসব আলোচনা যদি আপনাদের জীবন মান উন্নয়নে বিন্দুমাত্র প্রেরণা দেয় কিংবা পথ দেখায় তাহলেই আমাদের শ্রম সার্থক বলে মনে করবো। যারা দীর্ঘদিন ধরে আমাদের সঙ্গ দিয়েছেন সবার প্রতি রইলো আন্তরিক মোবারকবাদ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো.আবুসাঈদ/ ২৭

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ