এপ্রিল ১৭, ২০১৯ ১৬:৪৫ Asia/Dhaka
  • ইসলাম ও শিশু অধিকার (পর্ব-১২): মায়ের গর্ভে থাকা সন্তানের মর্যাদা ও পরিচর্যার গুরুত্ব

সন্তান গর্ভে থাকা অবস্থায় বা প্রসবের সময় এমনকি শিশুকে দুধ দেওয়ার কারণে কোনো নারী মারা গেলে তিনি শাহাদাতের মর্যাদা লাভ করবেন। গর্ভবতী নারীকে জিহাদকারী ব্যক্তির সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। অর্থাৎ ইসলাম ধর্মে একজন গর্ভবতী নারীর মর্যাদা অনেক উঁচুতে। আজকের আসরে আমরা মায়ের গর্ভে থাকা সন্তানের মর্যাদা ও পরিচর্যার গুরুত্ব নিয়ে আরও আলোচনা করব।

গর্ভের শিশু মায়ের শরীর থেকে তার প্রয়োজনীয় আমিষ,শর্করা,স্নেহ,বিভিন্ন খনিজ লবণ ও ভিটামিন নিয়মিত সংগ্রহ করে। এ কারণে গর্ভবতী মায়ের শরীরে সব ধরণের পুষ্টি উৎপাদনের চাহিদা বেড়ে যায়। বিভিন্ন ইসলামি সূত্রে গর্ভবতী নারীর খাদ্য তালিকা নিয়ে বক্তব্য এসেছে। আহলে বাইতের ইমামদের পক্ষ থেকে নানা ধরণের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। এসব সূত্র বিশ্লেষণের পর ইরানের বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ ডা. হাসান আকবারি গর্ভবতী মায়েদের খাদ্যের বিষয়ে কিছু পরামর্শ তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, বিভিন্ন ইসলামি সূত্রে দেখা যাচ্ছে গর্ভাবস্থার প্রথম মাসে গর্ভবতীকে প্রতিদিন সকালে খালি পেটে দু'টি করে খেজুর খেতে বলা হয়েছে। এরপর অল্প আপেল খেতে বলা হয়েছে। খেয়াল রাখতে হবে আপেল যাতে মিষ্টি স্বাদের হয়। এর পাশাপাশি গর্ভাবস্থার প্রথম মাসের প্রত্যেক শুক্রবার ডালিম বা আনার খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

গর্ভাবস্থার দ্বিতীয় মাসের খাবারের বিষয়ে বলা হয়েছে,প্রতি সপ্তাহে একদিন দুম্বা বা ভেড়ার গোশত, অল্প দুধ ও আপেল খেতে হবে। এছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে সুরা ফাতিহা পড়ে দুটি জুজুবি ফল খেতে বলা হয়েছে। জুজুবি ফল দেখতে অনেকটা বরইয়ের মতো। বরইয়ের স্বাদের সঙ্গে এর স্বাদের মিল রয়েছে।

গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসের খাদ্যের বিষয়ে ইরানের বিশিষ্ট চিকিৎসাবিদ ডা. হাসান আকবারির বক্তব্য হচ্ছে, বিভিন্ন ইসলামি সূত্র মতে গর্ভাবস্থার তৃতীয় মাসে প্রতিদিন সকালে এক চামচ খাঁটি মধু খাওয়া উচিত। এছাড়া প্রতিদিন সকালে খালি পেটে আয়াতুল কুরসি পড়ে একটি করে আপেল খাওয়া ভালো। চতুর্থ মাসে আপেল, মধু ও ডালিম খেতে হবে। পাশাপাশি সূরা ত্বীন পড়ে খালি পেটে একটি করে আঞ্জির খেতে হবে।  গর্ভাবস্থার পঞ্চম মাসে প্রতিদিন সকালে অল্প খেজুর খেতে বলা হয়েছে। ষষ্ঠ মাসে প্রতিদিন সকালের নাশতা খাওয়ার পর আঞ্জির ও জয়তুন খেতে বলা হয়েছে। ষষ্ঠ মাসে গিয়ে চর্বি খাওয়ার মাত্রা কমাতে বলা হয়েছে। এ সময় প্রতিদিন সুরা ফাত্‌হ  পড়ে একটি করে ডালিম খেতে হবে।

গর্ভাবস্থার সপ্তম মাসে প্রতিদিন সুরা আনআম পড়ে বাদাম খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অন্তত ৪০ দিন ধরে নিয়মিতভাবে বাদাম খেতে বলা হয়েছে। গ্রীষ্মকালে গর্ভধারণ করলে প্রতিদিন মূল খাবারের পর খরবুজা ফল খেতে বলা হয়েছে। এছাড়া এ সময়টায় খাওয়ার অল্প আগে ও অল্প কিছু সময় পর পর্যন্ত পানি পান না করা উত্তম।  এছাড়া প্রতিদিন খালি পেটে সুরা ইয়াসিন পড়ে অন্য কোনো একটি ফল খাওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অষ্টম মাসে গিয়ে দই ও মধু খেতে হবে। এছাড়া প্রতি শুক্রবারের খাদ্য তালিকায় ডালিম রাখতে হবে। মিষ্টি স্বাদের ডালিম নির্বাচনের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। শেষ মাস অর্থাৎ নবম মাসের খাদ্য তালিকায় ভেড়ার গোশ্ত রয়েছে। গোশ্তের কাবাবে মশলা দিতে বলা হয়েছে। পাশাপাশি খেজুর ও দুধ খেতে হবে। সূরা দাহার পড়ে খালি পেটে খেজুর ও দুধ খেতে বলা হয়েছে।  ইসলামি স্বাস্থ্য বিষয়ক বিভিন্ন বইয়েও বলা হয়েছে,গর্ভবতী নারীদেরকে নাশপাতি খেতে দেওয়া উচিত। সন্তান সৎ ও সুন্দর হওয়ার ক্ষেত্রে এই ফলের প্রভাব রয়েছে। এছাড়া বলা হয়েছে, নাশপাতি খেলে শিশুর হার্ট ভালো থাকে,পেট পরিষ্কার হয় এবং সন্তান সাহসী ও সুন্দর হয়।

মাতৃগর্ভে থাকা অবস্থাতেও শিশুর যত্ম নিতে হবে মা-কে উপাদেয় খাবার দেওয়ার মাধ্যমে। ইসলামি স্বাস্থ্য বিষয়ক দিকনির্দেশনায় আরও বলা হয়েছে, স্বামী ও স্ত্রীর মধ্যে তালাক হয়ে গেলেও গর্ভের সন্তানের যত্ম ও পুষ্টি নিশ্চিত করতে হবে। ইসলাম ধর্মের নির্দেশ হচ্ছে, গর্ভবতী নারীর সঙ্গে তালাক হয়ে গেলে সেটার ভিত্তিতে নাফাকা বা ভরণপোষণ দিতে হবে। পবিত্র কুরআনের সূরা তালাকের ৬ নম্বর আয়াতে এ সম্পর্কে স্পষ্টভাবে বলা হয়েছে- ‘তোমরা তোমাদের সামর্থ্য অনুযায়ী যেমন স্থানে বাস করো তাদেরকেও সেই স্থানে বাস করতে দিও;এবং তাদেরকে সংকটে ফেলার জন্য উত্ত্যক্ত করো না এবং তারা গর্ভবতী হয়ে থাকলে সন্তান প্রসব পর্যন্ত তাদের জন্য ব্যয় করবে;(বিচ্ছেদ চূড়ান্ত হওয়ার পরও) যদি তারা তোমাদের সন্তানদেরকে দুধ খাওয়ায় তাহলে তাদেরকে পারিশ্রমিক পরিশোধ করবে;এবং সন্তানদের কল্যাণের বিষয়ে তোমরা সঙ্গতভাবে নিজেদের মধ্যে পরামর্শ করবে। তোমরা যদি নিজ নিজ দাবিতে অনমনীয় হও,তাহলে অন্য নারী তার পক্ষ থেকে দুধ খাওয়াবে।'

এই আয়াতে স্পষ্টভাবে বলা হচ্ছে,গর্ভের সন্তানের খাদ্য ও পুষ্টিতে যাতে কোনো ধরণের সমস্যা না হয় সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। এই আয়াতের শেষ অংশে স্পষ্ট নির্দেশনা হচ্ছে,তালাকের পর গর্ভের সন্তানের বাবা ও মা যদি পারিশ্রমিকসহ অন্যান্য বিষয়ে সমঝোতায় পৌঁছাতে না পারে,তাহলে অন্য কোনো দুধ দানকারিণী মহিলার সাথে চুক্তি করে নিতে হবে। চুক্তি অনুযায়ী দুধ দানকারী মহিলা ওই শিশুকে দুধ পান করাবে। মোট কথা বাবা-মায়ের বিরোধ বা তালাকের কারণে গর্ভের শিশুর যেন কোনো ধরণের কষ্ট না হয়। গর্ভে সন্তান আসার পর থেকেই সন্তানের সার্বিক ভালো-মন্দ বিবেচনায় নিতে হবে। গর্ভের সন্তানের কল্যাণ চিন্তা করে হলেও বাবা-মায়ের উচিত বিবাদ ও তালাক এড়িয়ে চলা। এরপরও যদি কোনো ভাবেই বিচ্ছেদ এড়ানো সম্ভব না হয় তাহলে শিশুর যাতে কোনো ক্ষতি না হয় তা বাবা-মায়ের পক্ষ থেকে পুরোপুরি নিশ্চিত করতে হবে।#  

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো.আবুসাঈদ/ ১৭

ট্যাগ