জুন ১৩, ২০২৪ ১৭:৩৬ Asia/Dhaka
  • প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতের পর ইরানে সামরিক অভ্যুত্থান কামনা করেছিল মার্কিন ম্যাগাজিন \\\'দ্যা হিল\\\'
    প্রেসিডেন্ট রায়িসির শাহাদাতের পর ইরানে সামরিক অভ্যুত্থান কামনা করেছিল মার্কিন ম্যাগাজিন \\\'দ্যা হিল\\\'

শাহারযাদ আহমাদির লেখা আমেরিকান ম্যাগাজিন হিল-এর ওয়েবসাইটে একটি নিবন্ধ প্রকাশিত হয়েছে,যেখানে তিনি দুর্ঘটনার শিকার ইরানের প্রেসিডেন্টের মৃত্যুর ঘটনায় ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে সংকটজনক হিসাবে বর্ণনা করার চেষ্টা করেছিলেন।

'ইরানের নতুন নির্বাচন অন্য একটি সামরিক অভ্যুত্থানের জন্ম দিতে পারে'-এমন শিরোনামে ওই নিবন্ধটি সাইটে প্রকাশিত হয়েছিল।

লেখক শাহারযাদ আহমাদি সেন্ট থমাস বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসের সহযোগী অধ্যাপক এবং ইরান ও ইরাক বিষয়ক বিশেষজ্ঞ। তিনি ইরানি বংশোদ্ভূত এবং ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন সরকারের পক্ষ হয়ে কাজ করেন। পার্সটুডের এ সংক্রান্ত বিশ্লেষণে এবারে আমরা মার্কিন ম্যাগাজিন 'দ্যা হিল'-এ প্রকাশিত এই নিবন্ধের কিছু দাবির দিকে নজর দিচ্ছি।

ইরানের রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে এই লেখার কাজ অদ্ভুত অনুমানের ভিত্তিতে শুরু হয়েছে এবং শেষ পর্যন্ত এটির ভিত্তিতে মনগড়া বিশ্লেষণে দাবি করা হয়েছে, "ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা অবশ্যই প্রশ্নবিদ্ধ"। এই নিবন্ধের লেখক এটা বিশ্বাস করেন যে এখানে 'অবশ্যই' শব্দটি ব্যবহার করার কারণে তার দাবি বা বক্তব্যকে সত্য বলে প্রমাণ করা যাবে। কিন্তু লেখকের এসব মনগড়া দাবির বিপরীতে বলা যায় ইরানের অতীত ঘটনাবলী থেকে প্রমাণিত হয় যে, ইরানের সংবিধান অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তর প্রক্রিয়া চলে আসছে যা বিপ্লবের শুরুতে অনুমোদিত হয়েছিল 

নিবন্ধের অন্য জায়গায় দাবি করা হয়েছে, ইসলামী প্রজাতন্ত্র ইরানের রাজনৈতিক অঙ্গনে অপ্রত্যাশিত পরিবর্তন ঘটেছে। কারণ এখন এই সরকার ব্যবস্থার সমর্থক প্রার্থীরা প্রেসিডেন্ট পদের জন্য প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

দ্যা হিলের ওয়েব সাইটে প্রকাশিত নিবন্ধের লেখক সম্ভবত এটা ভুলে গেছেন, যেকোনও দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থায় এমন সব লোকেরা নির্বাচনী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে থাকেন যারা সেই দেশের রাজনৈতিক কাঠামো বা নীতি আদর্শকে মেনে নিয়েছেন এবং সেই দেশের সংবিধানের অধীনে তারা রাজনীতি করছেন বা ক্ষমতায় যাওয়ার জন্য  প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। বিশ্বের অনেক দেশে যে রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা হয় তা অনেক ক্ষেত্রেই উত্তেজনাপূর্ণ হয় এবং রক্তাক্ত সহিংস ঘটনাও ঘটে যা কোনো দেশের সরকার ব্যবস্থার জন্য্ই এই অবস্থা কাম্য নয়। 

হিল ম্যাগাজিনের লেখক শাহারযাদ আহমাদি তার নিবন্ধের আরেকটি অংশে,মার্কিন ও ইহুদিবাদী ইসরাইলের হামলায় ইরানের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্বদের নিহত হওয়ার ঘটনাকে ইরানের ক্ষয়ক্ষতি হিসাবে ব্যাখ্যা করেছেন। কিন্তু, এসব হত্যাকাণ্ডে তিনি আমেরিকা ও ইসরাইলের জড়িত থাকার বিষয়ে কিছু উল্লেখ করেননি। তাই একটি দেশের বৈধ রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি একজন লেখকের এই ধরনের মনোভাব বা মনগড়া কথাবার্তা থেকে তার বিদ্বেষী চিন্তাভাবনা সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। 

ইরানের অষ্টম প্রেসিডেন্ট সৈয়দ ইব্রাহিম রাইসিসহ দেশটির কুদস ফোর্সের কমান্ডার মেজর জেনারেল কাসেম সোলেইমানি,সিরিয়ায় ইরানের সামরিক উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ রেজা জাহেদি এবং ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ হাদি হাজি রাহিমির মতো ব্যক্তিরা যারা শাহাদাত বরন করেছেন তাদেরকে এই লেখক পক্ষপাতদুষ্ট হিসাবে অভিহিত করেছেন। লেখক আরও দাবি করেছেন যে, শুধুমাত্র একজন সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি অবশিষ্ট রয়েছেন যিনি তার পদ ধরে রেখেছেন তিনি হচ্ছেন আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি।

এছাড়াও,লেখক একটি শিশুসুলভ ভবিষ্যদ্বাণীতে দাবি করেছেন যে, ইসলামি প্রজাতন্ত্র ইরানের বর্তমান নেতার পর তার পুত্র সাইয়্যেদ মোস্তবা খামেনি ইরানের পরবর্তী শীর্ষ নেতা হবেন। তার এ দাবি একেবারেই অবাস্তব এবং বোঝাই যায় তিনি ইরানের নেতৃত্ব, নির্বাচনি কাঠামো এবং সর্বোচ্চ নেতার পরিবারের রাজনৈতিক মর্যাদা সম্পর্কে কোনো ধারণাই রাখেন না। 

লেখক তার লেখার শেষ অংশে, সাইয়েদ ইব্রাহিম রায়িসির শেষ বিদায় অনুষ্ঠান এবং পাঁচ বছর আগে জেনারেল কাসেম সোলেইমানির শেষ বিদায় অনুষ্ঠানের তুলনা করে দাবি করেছেন যে, প্রেসিডেন্টের শোকানুষ্ঠানে কম লোক অংশগ্রহণ করেছে। এরপর তিনি দাবি করেছেন,  এ থেকে বোঝা যায় ইসলামি প্রজাতন্ত্রী শাসন ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আগ্রহ আগের মতো নেই। অথচ বাস্তবতা হচ্ছে, শহীদ প্রেসিডেন্ট রায়িসির জানাজা অনুষ্ঠানে নজিরবিহীন মানুষের সমাগম ঘটেছিল যা কাসেম সোলাইমানিকেও ছাপিয়ে গিয়েছিল। 

যাইহোক, লেখক যা কিছু বলেছেন এসবই তার নিজস্ব চিন্তা বিশ্বাসের ফসল এবং তার ব্যক্তিগত অভিমত। কেননা তিনি হচ্ছেন চরম ইরান বিদ্বেষী একজন মার্কিন লেখক। তাই এ ধরণের পক্ষপাতদুষ্ট লেখকের পক্ষে ইরানের অভ্যন্তরীণ বাস্তবতা উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। তিনি তার লেখার পিছনে কোনো দলিল প্রমাণও উপস্থান করেননি এবং মনগড়া কথাবার্তা বলেছেন। আর 'দা হিল ম্যাগাজিন এই লেখককে ইরানের বিরুদ্ধে ব্যবহার করেছেন মাত্র। 

ইরানে ১৯৫৩ সালের সামরিক অভ্যুত্থান যা ২৮ আগস্টের অভ্যুত্থান নামে পরিচিত। এই ঘটনায় নির্বাচিত প্রধানমন্ত্রী মোহাম্মদ মোসাদ্দেক সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করা হয়েছিল। এরপর মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্য ইরানের সেনাবাহিনীতে প্রভাব বিস্তার করে পশ্চিমাদের তাবেদার হিসাবে পরিচিত মোহাম্মদ রেজা শাহ পাহলভিকে সুরক্ষা দিয়েছিল। কিন্তু ইসলামি বিপ্লবের মাধ্যমে ইরানিরা একটি স্বাধীন জাতি হিসাবে আত্ম প্রকাশ করেছে। আর এটাই ইরানের শত্রুদের মাথা ব্যথার প্রধান কারণ#

পার্সটুডে/রেজওয়ান হোসেন/১৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ