মে ২৫, ২০১৯ ১৯:২৬ Asia/Dhaka

আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য।

গত আসরে আমরা ভবন নির্মাণ সামগ্রী ও সিরামিক শিল্পে ইরানের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা প্রসঙ্গে বাথরুম ও কিচেন ফিটিংস সম্পর্কেও কথা বলার চেষ্টা করেছি। আজকের আসরে আমরা কথা বলবো ভবন নির্মাণ ও সাজানোর জন্য ব্যবহৃত পাথর নিয়ে।                            

ইরানে উৎপন্ন পাথর সামগ্রী,এগুলোর ডিজাইন,গুণগত মান এবং রঙ বৈচিত্র্যের কারণে বিশ্বে প্রথম সারির মর্যাদা লাভ করেছে। ভূ-তত্ত্ব বিজ্ঞানে পাথর হলো ভূ-ত্বকের কঠিন স্তর বা শিলার অন্তর্ভুক্ত। পৃথিবী সৃষ্টির সময় যে মহাবিস্ফোরণ হয়েছিল এবং তা থেকে যে বিশাল শীলাখণ্ড পৃথিবীর বুকে আটকে পড়েছিল তা-ই পরে পাথরে পরিণত হয়। এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা তিন হাজার ধরনের খনিজ পদার্থ প্রকৃতির মধ্যে সনাক্ত করতে সক্ষম হয়েছেন। এসবের মধ্যে বিশ রকমের কঠিন শিলাও রয়েছে। এসব খনিজ পদার্থকে পাথর সৃষ্টির মূল উপাদান বলে মনে করা হয়। এই শিলা পাথরগুলোকে তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়। আগ্নেয় শিলা, পাললিক শিলা এবং পরিবর্তিত বা রূপান্তরিত শিলা।

মানব সভ্যতার ইতিহাসে দেখা গেছে সর্বপ্রথম যে জিনিসটি মানুষ ব্যবহার করেছে তাদের কাজের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম তৈরি করার জন্য কিংবা আশ্রয় নিবাস তৈরি করার জন্য অথবা নিজেদের প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটানোর জন্য, তা হলো পাথর। পাথর যথেষ্ট ভারি একটি জিনিস। এটি এক জায়গা অন্য জায়গায় স্থানান্তর করাটাও বেশ কষ্টসাধ্য একটি ব্যাপার। পাথর উত্তোলন করাও কিন্তু খুব একটা সহজ কাজ নয়। তদুপরি মানুষ নির্মাণ কাজে ইটের ব্যবহারও করছে। এসব সত্ত্বেও পাথরের গুরুত্ব একটুও কমে নি। পাথরের কোনো বিকল্পই তৈরি হয় নি। ভবন নির্মাণের জন্য তো বটেই এমনকি সেতু নির্মাণ করা, টানেল তৈরি করা, ভয়াবহ তুষার ধস রোধ করাসহ আরও বহু ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহার নির্বিকল্প এখনও।

এর বাইরেও সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিশ্বের করে ভবন বা যে-কোনো স্থাপনার সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও পাথরের ব্যবহার হয়ে থাকে। ইরানে রয়েছে এ ধরনের পাথরের বিশাল মজুদ এবং এই শ্রেণীর পাথর থেকে বার্ষিক যে আয় হয় তার পরিমাণও চোখে পড়ার মতো। ইরানে পাথর উত্তোলন করা এবং পাথর ব্যবহার করার ইতিহাস বেশ প্রাচীন। সভ্যতার সূচনা লগ্ন থেকেই অর্থাৎ প্রাচীন ইরানের লোকজন বাসাবাড়ি নির্মাণ করার ক্ষেত্রে কিংবা নির্মিত বাড়ি সাজানোর ক্ষেত্রে পাথরের ব্যবহার করে এসেছে। ইরানের উত্তরাঞ্চলে প্রাচীন বাড়িঘর থেকে প্রাপ্ত পাথরগুলোকে বিশেষজ্ঞরা সাত হাজার বছর আগের বলে মত দিয়েছেন। এ থেকেও প্রমাণ হয় ইরানিরা কত আগে থেকে পাথর ব্যবহার করেছে।

শিরাজে রয়েছে ইরানের ঐতিহাসিক একটি নিদর্শন। পার্সপোলিস কিংবা তাখতে জামশিদ নামে পরিচিত প্রাচীন ওই স্থাপনাটি। এখানে আরও একটি স্থাপনা রয়েছে বেশ প্রাচীন। এর নাম হলো পাসারগাদ। লোরেস্তান প্রদেশে রয়েছে প্রাচীন একটি পোল বা সেতু। ভাঙা সেতু বা পোলে শাপুরিও বলা হয় এই সেতুটিকে। গিলান প্রদেশে রয়েছে বান্দবোন কেল্লা। এরকম আরও অনেক ঐতিহাসিক নিদর্শন ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে সমগ্র ইরান জুড়ে। এইসব স্থাপনায় ব্যাপক পাথর ব্যবহার করা হয়েছে। এগুলোই প্রমাণ করে ইরানে পাথর ব্যবহারের ইতিহাস কতোটা প্রাচীন। শিরাজের তাখতে জামশিদ বা পার্সপোলিসে কাঠের তক্তার মতোই যেরকম বড় বড় আকারের পাথরের তক্তা বা পাটা ব্যবহার করা হয়েছে তা প্রমাণ করে ইরানে সেই প্রাচীন আমল থেকেই পাথরের ব্যবহার কতোটা শৈল্পিক ছিল।

ইরানে এখন চার শ কোটি টনেরও বেশি পরিমাণ ভবন নির্মাণ ও সাজানোর পাথরের মজুদ রয়েছে। পাথর শিল্পে বিশ্বের উন্নত ও সমৃদ্ধ দশটি দেশের অন্যতম অবস্থানে রয়েছে ইরান। বিশ্বের পর্যায়ক্রমিক শ্রেষ্ঠত্বের বিচারে ইরানের অবস্থান চার-এ রয়েছে। এই মূল্যায়নটা ভবন সজ্জার পাথরের দিক থেকে। বিল্ডিং নির্মাণের জন্য ব্যবহৃত পাথরের দিক থেকেও বিশ্বের সমৃদ্ধ দেশগুলোর মধ্যে ইরানের অবস্থান বেশ সম্মানজনক। বলাবাহুল্য, ইউরোপসহ এশিয়ারও কোনো কোনো দেশ পাথরের বাজারে বেশ সক্রিয় রয়েছে। তারপরও ইরানি পাথরের বৈচিত্র্য, গুণগত মানের সঙ্গে অন্যদের পাথরের তুলনাই চলে না। এ কারণেই ইরানে উৎপন্ন পাথর বিশ্বের পাথরের ভুবনে প্রথম আসন লাভ করতে সক্ষম হয়েছে।

ইরানের পাথরের শ্রেষ্ঠত্বের কথা বলছিলাম আমরা। ইরানের খনিগুলোতে এক শ'রও বেশি রকমের পাথরের মজুদ রয়েছে। এগুলোর কিছু কিছু সাজানোর পাথর কিছু রয়েছে বিল্ডিং নির্মাণের পাথর। এক হাজার তিন শ টি পাথরের খনি রয়েছে ইরানে। পাঁচ হাজারেরও বেশি পাথর কাটার ফ্যাক্টরি রয়েছে। এগুলোর পাশাপাশি পাথর কেন্দ্রিক অপর ছয় শ'টি শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এসবের বিচারে ভবন সজ্জার পাথরের দিক থেকে  বিশ্বের প্রথম সারির সাতটি দেশের তালিকায় রয়েছে ইরান। ইরানের বেশ কিছু প্রদেশে বেশ উন্নত মানের পাথর পাওয়া যায়। বিল্ডিং নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত পাথর এবং বিল্ডিং-য়ের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত পাথর। প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্ফাহান, ইয়াজদ, কেরমান, খোরাসানে রাজাভি এবং দক্ষিণ খোরাসান, ফার্স, কুর্দিস্তান, পূর্ব আজারবাইজান, পশ্চিম আজারবাইজান ও লোরেস্তান প্রদেশ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ