মে ২৮, ২০১৯ ১৭:৫৫ Asia/Dhaka

ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা ভবন নির্মাণে ব্যবহৃত পাথর এবং ভবন সজ্জার পাথর নিয়ে কথা বলেছিলাম।

বলেছিলাম যে ইরানে উৎপন্ন পাথর সামগ্রী,এগুলোর ডিজাইন,গুণগত মান এবং রঙ বৈচিত্র্যের কারণে বিশ্বে প্রথম সারির মর্যাদা লাভ করেছে। ভবন সজ্জার পাথরের দিক থেকে বিশ্বের প্রথম সারির সাতটি দেশের তালিকায় রয়েছে ইরান। ইরানের বেশ কিছু প্রদেশে বেশ উন্নত মানের পাথর পাওয়া যায়। বিল্ডিং নির্মাণের কাজে ব্যবহৃত পাথর এবং বিল্ডিংয়ের সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য ব্যবহৃত পাথর। প্রদেশগুলোর মধ্যে রয়েছে ইস্পাহান, ইয়াজদ, কেরমান, খোরাসানে রাজাভি এবং দক্ষিণ খোরাসান, ফার্স, কুর্দিস্তান, পূর্ব আজারবাইজান, পশ্চিম আজারবাইজান ও লোরেস্তান প্রদেশ। পাথরের গুণ ও মানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপকরণ দেখার প্রয়োজন রয়েছে।

বলছিলাম পাথরের গুণ ও মান বিচার নিয়ে। বিশেষ করে কোনো একটি আবহাওয়ায় পাথর রাসায়নিক বা পদার্থগত দিক থেকে সহনীয় পর্যায়ের কিনা সেটা দেখাও খুবই গুরুত্বপূর্ণ। একইভাবে সূর্যতাপ সহ্য করা, বাতাস, বরফ, উষ্ণতার হেরফের থাকা সত্ত্বেও পাথর যেন নষ্ট না হয় সে বিষয়টি দেখতে হবে। পাথরের মান নির্ভর করবে এইসব বিচিত্র পরিবেশ ও পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতা রয়েছে কিনা তার ওপর। উন্নত মানের পাথর হলে তাতে কোনো খাঁজ থাকবে না,ফাটল কিংবা পাথরের কোনো স্তরে কোনোরকমের ক্ষয় থাকবে না। রঙ হবে একই রকম,পরিচ্ছন্ন এবং দূষণমুক্ত। কোনোরকম রাসায়নিক কিংবা প্রাকৃতিক পদার্থের সংস্পর্শে বিবর্ণ হয়ে যাবে না ভালো মানের পাথর।

পাথর উত্তোলন থেকে শুরু করে ব্যবহার করা পর্যন্ত অনেকগুলো পর্যায় অতিক্রম করতে হয়। প্রথমত পাথর কোথায় আছে তা খুঁজে বের করতে হয়। তারপর সেখান থেকে নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় পাথর উত্তোলন করতে হয়। উত্তোলন করার পর সেই পাথর অন্যত্র স্থানান্তর করতে হয়,কাটতে হয় ইত্যাদি। খনি থেকে যে বিশাল পাথর বের করে আনা হয়,সেগুলোর আঙ্গিক ও ধরন দেখে যথোপযুক্ত ক্ষেত্রে ব্যবহার করা হয়। যেমন নিম্নমানের পাথর হলে সেগুলো হয়তো শূন্যস্থান পূরণের কাজে ব্যবহার করা হয়। আবার আরেকটু ভালো হলে পাটাতন কিংবা সিঁড়ি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়। ম্যালন শিলা বা পাথরও এক ধরনের পাথর যার এক পিঠ মসৃণ আর অপর পিঠে বাটাল দিয়ে পিটিয়ে সুন্দর করা হয়-এ ধরনের পাথর টানেল নির্মাণ, সেতু নির্মাণ, সিঁড়ি নির্মাণ, রাস্তা প্লাস্টারিং ইত্যাদি কাজে ব্যবহার করা হয়।

বলেছিলাম যে ভবনের সৌন্দর্য বৃদ্ধির জন্যও রয়েছে সুন্দর পাথর। ভবনের অভ্যন্তর সজ্জা কিংবা বাইরের সজ্জার জন্য যেসব পাথর ব্যবহার করা হয় সেগুলোকে খনি থেকে তুলে আনা পাথর কেটে প্রয়োজনীয় আকার ও আঙ্গিক দেওয়া হয়। তারপর বিশেষ উপায়ে চকচকে করে তোলা হয়। সস্তা দামের সৌন্দর্য বৃদ্ধির পাথর সাধারণত ট্র্যাভারটাইন শ্রেণীর পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। আর মূল্যবান ও  ব্যয়বহুল পাথরগুলো গ্রানাইট এবং মার্বেল পাথর দিয়ে তৈরি করা হয়। এই ধরনের পাথর মোমদানি কিংবা  ফুলদানির মতো গৃহসজ্জার আইটেমগুলি তৈরির কাজে ব্যবহার করা হয়।

পাথরগুলোর কারিগরি বৈশিষ্ট্যও আলাদা আলাদা এবং বিচিত্র। তাই বিল্ডিং নির্মাণের কাজে যে-কোনো ধরনের পাথর ব্যবহার করা যায় না। উদাহরণ স্বরূপ বলা যেতে পারে গ্রানাইট পাথর খুবই শক্ত পাথর। সুতরাং এই পাথর যে খুবই টেকসই হবে তা বলাই বাহুল্য। তাই এই শ্রেণীর পাথর সড়কের পাটাতন নির্মাণ কিংবা রেললাইনে ব্যবহারের জন্য উপযোগী। একইভাবে বিল্ডিংয়ের ফাউন্ডেশন তৈরি করা, ভবনের ইন্টেরিয়র এবং এক্সটেরিয়রের কাজেও ব্যবহার করা হয় এই শ্রেণীর গ্রানাইট পাথর। বিল্ডিংয়ে ব্যবহৃত কালো রঙের গ্রানাইট বেশ নামকরা। ইরানের ইয়াজদ প্রদেশের খনিগুলোতে অন্তত ২৮ রকমের গ্রানাইট পাথর পাওয়া যায়। ট্র্যাভারটাইনও এক ধরনের সৌন্দর্য বর্ধনকারী পাথর।

ট্র্যাভারটাইন শ্রেণীর পাথরের কথা বলছিলাম। বেশ কয়েক রঙের ট্র্যাভারটাইন পাথর পাওয়া যায়। যেমন সাদা, ক্রিম কালার, ধূসর ইত্যাদি। বিল্ডিংয়ের ভেতরের সজ্জার কাজে এবং বহি:সজ্জার কাজে এই শ্রেণীর পাথর ব্যবহার করা হয়ে থাকে। ইরানের তেহরান, ইস্পাহান, পূর্ব আজারবাইজান, ফার্স প্রদেশসহ আরও বহু এলাকায় এই শ্রেণীর পাথরের খনি রয়েছে। লাল রঙের ট্র্যাভারটাইন পাথর সবচেয়ে দুর্লভ পাথর। এই দুষ্প্রাপ্য পাথরটির জন্য ইরানের পূর্ব আজারবাইজান প্রদেশের অজারশাহরের নাম পৃথিবী বিখ্যাত। এই শহরেরই সর্দারাবাদ খনি লাল রঙের  ট্র্যাভারটাইন পাথরের জন্য সুপরিচিত। এছাড়াও আরও বহু রকমের পাথর রয়েছে। মর্মর পাথরের কথা এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। বাসার ইন্টেরিয়র ডিজাইনের ক্ষেত্রে, ফ্লোর কিংবা দেয়াল সাজানোসহ শৈল্পিক কাজের ক্ষেত্রে এই পাথর ব্যবহার করা হয়।

মূল মর্মর পাথরের রঙ সাদা। সবচেয়ে উন্নত মানের মর্মর পাথর ইরান এবং ইতালিতে পাওয়া যায়। তবে রঙের বৈচিত্র্যের দিক থেকে ইরানি মর্মর পাথরই শ্রেষ্ঠ। বিচিত্র রঙের মাঝে কেরমান প্রদেশের সবুজ মর্মর পাথর ইরানের সকল পাথরের মধ্যে দৃঢ় ও সুন্দরতম। এই পাথর ঈমান, সুস্থতা, জীবন ও প্রশান্তির প্রতীক। সাধারণত পবিত্র স্থান ও স্থাপনায় এই পাথর ব্যবহার করা হয়। কেরমান প্রদেশের রুস্তম গ্রাম এবং কুর্দিস্তান প্রদেশের কোরভে শহরে এই পাথর পাওয়া যায়। মর্মর পাথর ইরানের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বাইরেও রপ্তানি করা হয়। ইতালি এবং তুরস্ক এই পাথরের সবচেয়ে বড় ক্রেতা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৮

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ