ইরানি পণ্য সামগ্রী: ইরানি চিংড়ি মাছ
ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য।
গত আসরে আমরা ইরানে ভেষজ উদ্ভিদ ও ঔষধি গাছ-গাছালির প্রাচুর্যের কল্যাণে এগুলো থেকে তৈরি হয় বিচিত্র প্রসাধনী সামগ্রী। বিভিন্ন রকমের ডিজারজেন্ট থেকে শুরু করে কসমেটিকস এবং ওয়াশিং পণ্য প্রচুর পরিমাণে তৈরি হয় ইরানে। সেসব নিয়ে আমরা কথা বলেছি।
আজকের আসরে আমরা একেবারে ভিন্ন ধরনের পণ্য নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। ইরান একটি বিশাল বিস্তৃত দেশ। মরু-পর্বত-সমুদ্রময় এই দেশটির দুই হাজার সাত শ কিলোমিটারের মতো শুধু পানিসীমাই রয়েছে। সুতরাং জলীয় সম্পদ বিশেষ করে মৎস্য জাতীয় খাদ্যপণ্যে দেশটি যে কতোটা সমৃদ্ধ তা বলাই বাহুল্য। বিশেষ করে বিচিত্র রকমের মাছ কিংবা মাছ জাতীয় বিভিন্ন খাদ্যপণ্যের জন্য ইরান যথেষ্ট উল্লেখযোগ্য একটি দেশ। আজকের আসরে আমরা ইরান জলীয় সম্পদ চিংড়ি নিয়ে কিছু কথা বলার চেষ্টা করবো।
পানিতে বসবাসকারী খাদ্যোপযোগী মাছ জাতীয় জীবিত যেসব প্রাণী মানুষের প্রয়োজনীয় খাদ্য চাহিদা নিশ্চিত করার জন্য বিশ্বব্যাপী গুরুত্বপূর্ণ এবং উল্লেখযোগ্য,সেরকম জলজ সম্পদের একটি সমৃদ্ধ ভাণ্ডার ইরানের নদ-নদী-সাগর-হ্রদ। বিগত কয়েক দশকে বিশ্বব্যাপী মানুষের প্রোটিন চাহিদা বেড়েছে। সুতরাং জলজ সম্পদ মানে মৎস্য সম্পদেরও চাহিদা বেড়ে গেছে। জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা ফাও'য়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী মাথাপিছু মৎস্যের প্রয়োজনীয়তার মাত্রা সঠিক পরিমাপে হিসেব করলে ২০৩০ সালে মানব সমাজের জন্য আরও চার কোটি টন বেশি জলজ প্রোটিন মানে মাছ জাতীয় খাদ্য পণ্যের প্রয়োজন পড়বে। আনুমানিক জনসংখ্যার হিসেব করে এই পরিমাণটি নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ গত কয়েক বছরে দেখা গেছে বিশ্বের সমুদ্র ও মহাসমুদ্রগুলোতে প্রাকৃতিক এই মৎস্য সম্পদের পরিমাণ ক্রমশ কমে যাচ্ছে।

আগেকার বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী যেসব সমুদ্র মহাসমুদ্র রয়েছে সেগুলোতে বছরে প্রাকৃতিক প্রোটিন সম্পদময় প্রায় এক শ কোটি টন মৎস্য সম্পদ শিকার করা হত। এখন সেই সমুদ্র মহাসমুদ্রে বার্ষিক মৎস্য সম্পদ শিকারের পরিমাণ কমে গিয়ে দাঁড়িয়েছে প্রায় অর্ধেকে। জলজ সম্পদ উৎপাদনের এই ক্রমহ্রাসের হার বৃদ্ধির বিভিন্ন কারণ গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন। এর মধ্যে রয়েছে বেহিসাবি মাত্রায় মাছ শিকার করা। নিষিদ্ধ সময়ে মানে যে সময় মাছেরা ডিম পাড়ে সে সময় নিয়ম বহির্ভূতভাবে মাছ শিকার করার ফলেও মৎস্য সম্পদের মজুদ কমে গেছে। এরকম অনিয়ম মাছ শিকারের নেতিবাচক প্রভাব পড়ে বিশেষ করে চিংড়ি জাতীয় মাছের ওপর। এই চিংড়ি প্রজাতির মাছ নোনা জলে যেমন হয় তেমনি মিষ্টি পানিতেও হয়। শ্রিম্প বা প্রন বলা হয় ইংরেজিতে। এই মাছ ক্রান্তীয় থেকে আর্কটিক অঞ্চলে বেশি দেখা যায়। অর্থনৈতিক দিক থেকে এই মাছের উচ্চ মূল্য রয়েছে।
সামুদ্রিক চিংড়ির বেশির ভাগ প্রজাতিই সাধারণত দলবদ্ধভাবে কম গভীরতাময় বা মধ্যম গভীরতাময় জলে বাস করে। সাধারণত সমতলেই বাস করে অভ্যস্ত চিংড়ি প্রজাতির মাছ। দিনের বেলায় চিংড়িরা পানির একেবারে তলদেশের গাদ বা তলানির নীচে লুকিয়ে থাকে। রাতের বেলা খাবারের অন্বেষণে তলানির নীচ থেকে বেরিয়ে আসে। এ কারণেই বিশ্বের প্রায় সকল এলাকারই মাছ শিকারিরা রাতের বেলা চিংড়ি শিকার করতে সমুদ্রে যায়। বেশিরভাগ চিংড়ির পোনাই বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে সাধারণত নোনা জলের প্রয়োজন পড়ে। সেজন্যই কোনো না কোনো ভাবে এমন জলে তারা বাস করতে শুরু করে যেখানে প্রত্যক্ষ কিংবা পরোক্ষভাবে সমুদ্রের নোনা জলের আসাযাওয়া রয়েছে। কোনো কোনো প্রজাতির চিংড়ি আবার নদীর পরিষ্কার পানিতে বাস করে। অন্য প্রজাতির চিংড়ি তার বিপরীত অর্থাৎ ঘোলাজলেই বেড়ে ওঠে।
চিংড়ির জীবনচক্রের চারটি ধাপ বা পর্যায় রয়েছে। চারটি পর্যায়ে চার রকমের আঙ্গিক গঠন রয়েছে তাদের। যেমন ডিম, রেণু, রেণুর গায়ে চামড়ার প্রলেপ পর্যায় এবং পরিপক্ক বা পূর্ণাঙ্গ চিংড়ি পর্যায়। চিংড়ির গায়ের রং কিন্তু একরকম নয়। বিভিন্ন রঙের চিংড়ি দেখতে পাওয়া যায়। এই রঙের ব্যাপারটি নির্ভর করে উষ্ণতার পরিমাণ, লবণাক্ততার পরিমাণ, কী ধরনের খাবার খায় তার ওপরও নির্ভর করে রং। খাদ্যমানের দিক থেকে চিংড়ি খুবই উন্নত পর্যায়ের একটি খাবার। চিংড়িতে যে কোলেস্টেরল রয়েছে তাতে উচ্চ মাত্রায় অসম্পৃক্ত ফ্যাটি অ্যাসিড রয়েছে। চিংড়িতে ওমেগা -3 এবং ওমেগা -6 রয়েছে প্রচুর। রক্তের কোলেস্টেরলের উপর এগুলো কোন প্রভাব ফেলে না। চিংড়ির মাংসে বিদ্যমান সেলিনিয়াম মানব দেহে ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধিকে হ্রাস করে।

বসবাসের স্থানের দিক থেকে বিবেচনা করলে বলা যায় বেশিরভাগ চিংড়িই নোনা জলেই সাধারণত বাস করে। কিছু কিছু প্রজাতির চিংড়ি আবার মিষ্টি জলে বসবাস করতে দেখা যায়। তবে বেশিরভাগ প্রজাতির চিংড়িই বসবাস করে ঠাণ্ডা পানি এবং লবণাক্ত পানিতে। সাধারণত এ ধরনের চিংড়ির প্রজাতিকে ইরানিরা উত্তরের চিংড়ি মানে 'নর্দার্ন প্রন' বলে অভিহিত করে থাকে। এই প্রজাতির চিংড়িগুলো আলাস্কা, কানাডা, জাপানের উত্তরাঞ্চল, আমেরিকা এবং উত্তরাঞ্চলীয় ইউরোপে শিকার করা হয়ে থাকে। আবার গরম এবং নোনা জলের চিংড়ি ইরানের পারস্য উপসাগরে, দক্ষিণ আমেরিকার একটা অংশে, আফ্রিকার পশ্চিম উপকূলে, সেন্ট্রাল আমেরিকায়, দক্ষিণ আমেরিকার পূর্ব ও পশ্চিম উপকূলীয় এলাকায় এমনকি দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়াতেও দেখতে পাওয়া যায়। বিশ্বব্যাপী এই প্রজাতির চিংড়িই আসলে বেশি। আর বিশ্ব বাণিজ্যের জন্য যেসব চিংড়ির আমদানি-রপ্তানি হতে দেখা যায় তার মধ্যে এই গরম ও নোনা জলের চিংড়িই বেশি।
তৃতীয় প্রজাতির চিংড়ি হলো মিষ্টি পানির চিংড়ি। এগুলো হ্রদে, নদীতে, জলপ্রবাহপূর্ণ বড় খালে, জলাশয়ে, বড় দিঘীতে পাওয়া যায়।এই প্রজাতির চিংড়ি অবশ্য বিশ্ব বাণিজ্যক্ষেত্রে খুব বেশি গুরুত্বপূর্ণ নয়। যাই হোক বন্ধুরা! হাতে আজ আর সময় নেই। আপনারা যারা দীর্ঘ সময় দিয়ে আমাদের সঙ্গে ছিলেন সবাইকে জানাচ্ছি আন্তরিক শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২২
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।