নভেম্বর ০৯, ২০১৯ ১৯:৩৬ Asia/Dhaka

খোরমা গাছকে এশিয়ার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল কিংবা মেসোপটেমিয় এলাকার বলে মত দিয়েছেন। আবার অনেকেই বলেছেন আফ্রিকার উত্তরাঞ্চলেই প্রথম খোরমা গাছ বেড়ে উঠেছিল এবং এই খোরমাকে খুবই মূল্যবান এবং ওষুধি গুণ সম্পন্ন বলে মনে করা হতো।

শুকনো কিংবা গরম আবহাওয়ায় যেখানে পানির তেমন সংকুলান নেই সেরকম অনুর্বর পরিবেশেও খোরমা গাছ বেড়ে ওঠে সহজেই। খোরমা গাছ সাধারণত ১০ থেকে বিশ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়। খোরমা বাগানের ছায়ায় মানব বসতিও গড়ে উঠেছিল বাসোপযোগী পরিবেশের কারণে। খোরমার পুষ্টিগুণ নিয়েও বলেছিলাম আমরা। খোরমায় ম্যাগনেসিয়াম থাকার কারণে এবং অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট থাকার কারণে এর মধ্যে রয়েছে উন্নত মানের ক্যানসার প্রতিরোধক। শরীরের রোগ প্রতিরোধ শক্তি বৃদ্ধিতেও খোরমা তুলনাহীন একটি ফল। সব মিলিয়ে শরীরের ইমিউন সিস্টেমকে শক্তিশালী করে খোরমা। ইমিউন সিস্টেম আমাদের শরীরকে বিভিন্ন ধরনের ইনফেকশন ও টক্সিন যেমন ভাইরাস,ব্যাকটেরিয়া,ছত্রাক ও পরজীবী যা চারপাশের পরিবেশ থেকে আসে তা থেকে সুরক্ষা দেয়।

হার্টের বিভিন্ন সমস্যা নিরাময়ে খোরমার রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা। রক্ত তৈরিতে খুবই ইতিবাচক ভূমিকা রাখে খোরমা। বেশি বেশি খোরমা খেলে স্মৃতিশক্তি বাড়ে। খোরমার মধ্যে রয়েছে প্রচুর ভিটামিন-বি। এ কারণে খোরমা একটি প্রশান্তিদায়ক ফল। বিষন্নতা কিংবা মানসিক চাপ নিরসনেও খোরমা বেশ উপকারী। একইভাবে কানে শোনা মানে শ্রুতি ও স্মৃতি শক্তিসহ দৃষ্টিশক্তি, কোমর ব্যথা, বুকের ব্যথা, ফুসফুসের রোগ ব্যাধির ক্ষেত্রে খোরমা যথেষ্ট নিরাময়কারী ও উপকারী একটি ফল। তবে উপকারী বলে বেশি বেশি খাওয়া আবার যৌক্তিক নয়। খোরমা খাওয়ার ব্যাপারে ভারসাম্যপূর্ণ হতে হবে। তবে খোরমা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন পণ্য থেকেও উপকৃত হতে হবে। খোরমার বিচি দিয়ে তৈরি হয় এক ধরনের তেল। ওই তেল নৌকা বা জাহাজ তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। ওই তেলের বর্জ্য থেকে আবার তৈরি হয় ইথানল নামে এক প্রকার প্রাকৃতিক জ্বালানি।

এমনকি খোরমার ডালপালা পর্যন্ত শিল্পের কাজে লাগে। যারা শিল্পী তাদের হাতে পড়ে এই ডাল বা পাতা দিয়ে তৈরি হয় চমৎকার সব শিল্পপণ্য। ম্যাট থেকে শুরু করে চমৎকার সাজিসহ বিচিত্র হস্তশিল্প সামগ্রীও তৈরি হয় এই খেজুর পাতা দিয়ে। দস্তরখান, মাথার হ্যাট, বাক্স ইত্যাদিও বানানো হয় এই খোরমা পাতা দিয়ে। দেয়ালের জন্য ম্যাটও করা হয়। এই পাতাগুলোকে শুকিয়ে রঙ লাগানো হয় তারপর বিচিত্র বুনন কৌশলে সেগুলো দিয়ে সুন্দর সুন্দর জিনিস বানানো হয়। এ কারণেই খোরমা বৃক্ষের সবকিছুই মানুষের কাজে লাগে। খোরমা গাছ, তার পাতা, শাখা, ফল এবং ফলের বীচি সবকিছুই কাজে লাগে। 

বিশ্বে খোরমা চাষের অন্যতম প্রধান একটি অঞ্চল হচ্ছে ইরান। ইরানের অর্থনীতির কৃষি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ একটি পণ্য হলো খোরমা। ইরানে দুই শ হেক্টরের বেশি ভূমিতে খোরমা বাগান রয়েছে। ফাও-য়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী ২০১৩ সালে খোরমার উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে চতুর্থ স্থানে রয়েছে ইরান। বলা হয়ে থাকে যে ইরানে চার শ'রও বেশি প্রকারের খোরমা রয়েছে। রঙ, স্বাদ, আকার এবং প্রকারের দিক থেকে ইরানের খোরমায় ব্যাপক বৈচিত্র রয়েছে। এই চার শ প্রকারের খোরমাকে তিনটি ভাগে ভাগ করা হয়ে থাকে। একটি হলো নরম, অপরটি আধা শুষ্ক এবং তৃতীয় প্রকারের খোরমা হলো শুকনো খোরমা। এই নরম, শুকনো আর রঙের বিচারে খোরমার আলাদা আলাদা নাম রয়েছে। যেমন মোজাফাতি খোরমা, শাহানি খোরমা, কাবকাব খোরমা, বারহি খোরমা, জাহেদি, পিয়ারম, রাব্বি ইত্যাদি।

পিয়ারম খোরমা সবচেয়ে দামী খোরমা। এই খোরমা তার স্বাভাবিক রং ধারন করে এবং এই খোরমার পাতলা আবরণটিকে আলাদা করা যায় না। মাজাফাতি খোরমার আবরণটি নিজ থেকেই আলাদা হয়ে যায়। পিয়ারম খোরমা বেশিরভাগ উৎপাদিত হয় ইরানের দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশ হরমুজগানে। পার্বত্য উপত্যকায় এগুলোর চাষ হয় বেশি। এ জাতীয় খোরমাকে চকোলেট খোরমা নামেও অভিহিত করা হয়। এ জাতীয় খোরমার পাশাপাশি মোরদাসাঙ নামের আরেক জাতের খোরমা রয়েছে ইরানে। এগুলোর রঙ কিছু হলদেটে। তবে গুনমানের দিক থেকে এগুলো বেশ উন্নত। এ জাতীয় খোরমা পেতে হলে যেতে হবে ইরানের কেরমান প্রদেশে। কারণ এ জাতের খোরমাগুলো বিক্রি করার জন্য অন্য কোথাও পাঠানো হয় না।

গরমের সময় আপনি যদি ইরানের দক্ষিণাঞ্চলের দিকে যান বিশেষ করে, খুজিস্তান, হরমুজগান, ফার্স, বু-শেহর, কেরমান এবং সিস্তান বেলুচিস্তানের দিকে যান তাহলে দেখতে পাবেন এমন কিছু দক্ষ লোককে যারা খুরমার পাতা দিয়ে বানানো মোটা শক্ত দড়ি কোমরে পেঁচিয়ে খোরমা গাছের মাথায় উঠে খোরমার ছড়া কেটে দড়িতে ঝুলিয়ে নীচে নামাচ্ছে। খোরমার একেকটি ছড়ার ওজন ছয় তেকে বারো কিলোগ্রামের মতো। বলার অপেক্ষা রাখে না যে ইরান বিশ্বব্যাপী খোরমা রপ্তানির জন্য অন্যতম একটি দেশ। বিশ্বের পাঁচটি মহাদেশে যত খোরমা রপ্তানি হয় তার চার ভাগের এক ভাগ হলো ইরানি খোরমা। ইরানের পার্শ্ববতী অনেক দেশেই খোরমা যায় এবং তাদের কেউ কেউ আবার নিজস্ব ব্র্যান্ডের নামে অন্যত্র রপ্তানি করে। এ কারণে ইরান এখন প্যাকিং করে খোরমা রপ্তানি করার চেষ্টা করছে। এ লক্ষে প্যাকেজিং ইন্ডাস্ট্রিও গড়ে উঠেছে প্রচুর। খোরমা দিয়ে তৈরি অন্যান্য পণ্যও প্যাকেটে করে রপ্তানি করা হয়। #

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।