নভেম্বর ৩০, ২০১৯ ১৯:২৯ Asia/Dhaka

সুরা লাইল পবিত্র কুরআনের ৯২ তম সুরা। হিজরতের আগে পবিত্র মক্কায় নাজিল-হওয়া এ সুরায় রয়েছে ২১ আয়াত।

সুরা লাইলের প্রথমেই রাত ও দিনের শপথ নিয়েছেন মহান আল্লাহ এবং এরপর শপথ নিয়েছেন পুরুষ ও স্ত্রী জাতির স্রস্টা হিসেবে নিজের। এরপর এ সুরায় খোদাভীরু ও দানশীল এবং কৃপণ লোকদের পরিণতি সম্পর্কে বক্তব্য এসেছে। এতে বলা হয়েছে, কৃপণদের জন্য অপেক্ষা করছে দুর্ভাগ্য ও কষ্ট এবং অভাব। অন্যদিকে দানশীলদের জন্য অপেক্ষা করছে সুদিন, সৌভাগ্য ও স্বাচ্ছন্দ্য। আল্লাহই যে মানুষকে সুপথ দেখান ও অস্তিত্ব জগতের সব কিছুর ওপরই যে রয়েছে মহান আল্লাহর কর্তৃত্ব ও মালিকানা তাও উল্লেখ করা হয়েছে সুরা লাইলে। এ ছাড়াও পাপী ও মহান আল্লাহর নিদর্শনগুলোকে অস্বীকারকারী এবং দোযখের প্রজ্জ্বলিত আগুন ও তা থেকে মুক্তিপ্রাপ্তদের সম্পর্কেও বক্তব্য রয়েছে সুরা আল লাইলে।

মহান আল্লাহ এ সুরায় বদান্যতার প্রশংসা ও  কৃপণতার নিন্দা করে বলেছেন, মৃত্যুর পর ধন-সম্পদ কোন কাজে আসবে না। এ সুরায় মহান আল্লাহ আরও বলেছেন, ধর্ম তথা শরীয়তের কর্তব্য কেবল পথ প্রদর্শন করা, আর পরহেজগার ব্যক্তি এবং দানশীল ও উদার ব্যক্তিকে জাহান্নাম হতে রক্ষা করা হবে।

সুরা আল লাইলের চতুর্থ আয়াতে বলা হয়েছে: নিশ্চয় তোমাদের কর্ম প্রচেষ্টা বিভিন্ন ধরনের। এ আয়াতের শানে নুযূল হল, এক ধনী আনসারীর তথা মদীনাবাসী মুসলমানের একটি খেজুর গাছের কিছু শাখা এক প্রতিবেশীর ঘরে ঝুঁকে পড়েছিল। আর সেই প্রতিবেশী স্ত্রী-সন্তানদের নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে জীবন কাটাত। যখন সেই আনসারী ধনী ব্যক্তি ওই গাছের খেজুর সংগ্রহ করত তখন এক-আধটা খেজুর পড়ে গেলে প্রতিবেশীর সন্তানরা সেগুলো কুড়িয়ে নিত। কিন্তু এই হতভাগা তাদের কাছ থেকে সেসব খেজুর কেড়ে নিত, এমনকি কখন কখনও শিশুদের মুখ থেকেও বের করে নিত। ওই প্রতিবেশী একদিন মহানবী (সা.)-কে এ ব্যাপারে নালিশ করেন। তিনি সেই কৃপণকে ডেকে বললেন, ‘তুমি যদি এই বৃক্ষকে জান্নাতের খেজুর গাছের বিনিময়ে বিক্রি কর তাহলে আমি তা কিনব।’সে তার খেজুর গাছগুলোর মধ্যে ওই গাছের খেজুরই সর্বোত্তকৃষ্ট বলে অজুহাত দেখিয়ে রাজি হল না। আবু বিজদাহ নামের এক সাহাবি বললেন, ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ! (সা) আমি যদি এই গাছ কিনে দেই তবে কি এর বিনিময়ে আমাকে জান্নাতের খেজুর গাছ দেয়া হবে?’ তিনি বললেন, ‘অবশ্যই।’

এ অবস্থায় আবু বিজদাহ বহু অনুরোধ করে চল্লিশটি খেজুর গাছের বিনিময়ে আনসারীর সেই বিশেষ খেজুর গাছটি কিনে নিয়ে লোকদের তার সাক্ষী করেন এবং গাছটি মহানবীকে (সা) উপহার দেন। এরপর মহানবী (সা.) আবু বিজদাহকে জান্নাতের বৃক্ষের প্রতিশ্রুতি দানের বিনিময়ে ওই খেজুর গাছটি আনসারীর সেই দরিদ্র প্রতিবেশীকে দিয়ে দেন ও সেই হয়ে পড়ে ওই গাছটির মালিক। এ অবস্থায় আবু বিজদার প্রশংসায় ও সেই আনসারীর নিন্দায় নাজিল হয় সুরা লাইলের চতুর্থ আয়াত এবং দানশীলতার সুফল ও কৃপণতার কুফলও তুলে ধরা হয় এ সুরায়।

সুরা লাইলের তৃতীয় আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, শপথ তাঁর, যিনি নর ও নারী সৃষ্টি করেছেন। নর ও নারী মহান আল্লাহর অনন্য সৃষ্টি-কৌশলের সাক্ষ্য। নর-নারীর যুগল প্রজাতি রয়েছে মানুষ, উদ্ভিদ ও অন্যান্য জীবের মধ্যেও। নর-নারীর প্রকৃতি ও কর্ম তৎপরতার মধ্য রয়েছে ভিন্নতা।

এরপর মানুষের প্রচেষ্টাগুলোর ভিন্নতার কথা এসেছে সুরা লাইলে। মানুষের স্বভাব, সখ ও প্রকৃতির আলোকে তাদের তৎপরতাও হয় ভিন্ন। আল্লাহর দেয়া জীবন বা আয়ু নামক পুঁজিটি যেন পণ্ডশ্রমের শিকার না হয় বা খুব কম মূল্যে বিসর্জন না দেয়া হয় সে সতর্কবাণীই দেয়া হয়েছে এখানে। জীবন যদি কাটে ভালো কাজে ও আল্লাহর পছন্দনীয় পথে তাহলেই তা হবে স্বার্থক ও তা বয়ে আনবে সৌভাগ্য।

সুরা লাইলের পঞ্চম আয়াত অনুযায়ী মানুষ দুই ভাগে বিভক্ত: একদল খোদাভীরু ও সৎকর্মশীল এবং দানশীল আর অন্য দল কৃপণ ও খোদায়ি পুরস্কারকে মিথ্যা বলে মনে করে। অন্য দলটি বেছে নিয়েছে যন্ত্রণা ও জাহান্নামের পথ। পরকালে তাদের পার্থিব সম্পদ কোনো কাজে আসবে না। ওইসব সম্পদ তারা যেমন সঙ্গে করে পরকালে আনতে পারবে না তেমনি যদি আনতেও পারত তবুও তা জাহান্নামের আগুন থেকে তাদের রক্ষা করতে পারত না।

কার্পণ্য আল্লাহর প্রতি অবিশ্বাস থেকে উৎসারিত হয়। এই অবিশ্বাসের কারণেই তাদের জন্য সৎ কাজ করা ও বিশেষ করে দান করা হয় খুবই কষ্টকর বা অপছন্দনীয় কাজ। অন্যদিকে খোদাভীরুদের জন্য সৎ কাজ ও দান-খয়রাত করা আনন্দদায়ক ও প্রাণ-সঞ্জীবক। সুরা লাইলের ১২ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলছেন, সুপথে পরিচালনা তাঁরই কাজ। বিশ্বের প্রতিটি বস্তু এবং অনু-পরমাণু খোদায়ী বিধান মেনে চলে ও নিখুঁতভাবে বিশেষ নিয়ম মেনে চলেই তারা এগিয়ে যায় নির্ধারিত পূর্ণতায়। একইভাবে আল্লাহ মানুষকেও দেখান সুপথ এবং আল্লাহ নিজের জন্য এ কাজ অপরিহার্য করে নিয়েছেন। কিন্তু সুপথ পেতে চাইলে মানুষকেও তা চাইতে হবে ও এ পথে সচেষ্ট হতে হবে যাতে তারা পায় কল্যাণ ও সৌভাগ্য।#

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/৩০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।