জীবনশৈলী (পর্ব-১৪): সুস্থতা রক্ষার উপায়
সালাম ও শুভেচ্ছা নিন। আশাকরি সবাই ভালো আছেন। গত আসরে আমরা বলেছি জীবনকে আরও সুন্দরভাবে সাজাতে সুস্থতা ধরে রাখা জরুরি, আর সুস্থতা ধরে রাখতে সুষম খাবার গ্রহণের বিকল্প নেই।
আমরা প্রতিদিন যে পরিমাণ খাবার খাই তাতে যদি কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা, প্রোটিন বা আমিষ, ফ্যাট বা চর্বি, ভিটামিন এবং খনিজ লবণ পরিমাণমতো থাকে তাহলে বলতে পারব যে, আমরা সুষম খাবার গ্রহণ করছি। গত আসরে আমরা খাদ্য গ্রহণের বিষয়ে কিছু সতর্কতা অবলম্বনের কথাও বলেছি। মিষ্টি বা কোমল পানীয় এড়িয়ে চললে সুস্থতা ধরে রাখা সহজ হয়।
সুস্থ ও সুন্দর জীবনের জন্য প্রয়োজনে আমাদের জীবন প্রণালী বদলাতে হবে, যেসব অভ্যাস স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর সেগুলো থেকে পুরোপুরি সরে আসতে হবে। এছাড়া আমরা সাধারণত সুস্বাস্থ্য রক্ষার উপায় নিয়ে খুব একটা ভাবি না। আমরা ভাবি এ বিষয়টি পুরোপুরি চিকিৎসকদের বিষয় এবং অসুস্থ হলে ডাক্তার যা বলবে সে অনুযায়ী চললেই যথেষ্ট। কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে আমরা সাধারণত অসুস্থ হওয়ার পর ডাক্তারের কাছে যাই এবং অসুস্থ হওয়ার অর্থ হলো এরইমধ্যে আমরা কিছুটা হলেও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছি। সর্বোপরি স্বাস্থ্য সম্পর্কে আমাদের আরও সচেতন হতে হবে। আমাদের জানতে হবে কোনটি স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ খাবার আর কোনটি অস্বাস্থ্যকর খাবার। জীবন প্রণালী বা লাইফস্টাইল পরিবর্তন করে বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই আমরা ওষুধ ছাড়াই সুস্থ ও সুন্দর জীবন যাপন করতে পারি।

স্বাস্থ্যকর পরিবেশে বসবাস, সঠিক ও পুষ্টিকর খাবার গ্রহণ, নিয়মিত ব্যায়াম করা, ধূমপান বর্জন করা, লবণ, চর্বি, ট্রান্সফ্যাট ও বিপুল ক্যালরিসমৃদ্ধ খাবার পরিহার, মদপান না করা, পর্যাপ্ত বিশুদ্ধ পানি পান করা, পর্যাপ্ত নিরুপদ্রব ঘুম এবং দুশ্চিন্তামুক্ত জীবনযাপন আমাদেরকে সুস্থতা ধরে রাখতে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে। সুস্থতা সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান ও সচেতনতা মানুষকে আত্মবিশ্বাসী করে তোলে এবং রোগকে সুষ্ঠুভাবে ও দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করার মতো শক্তি জোগায়। এই শক্তিতে বলীয়ান হয়ে দৃঢ় প্রত্যয় নিয়ে রোগ প্রতিহত ও প্রতিরোধ করতে হবে। আমরা অনেকেই সমাজের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে নিজেরাও ফাস্টফুড খাই এবং সন্তানদেরকেও ফাস্টফুড খাওয়াই। পিৎজা ও বার্গারসহ নানা ধরণের লোভনীয় খাবার রয়েছে যেগুলোর নাম শুনলেই অনেকের জিভে পানি চলে আসে। কিন্তু এসব খাবার যে আমাদেরকে মরণ ফাঁদের দিকে ঠেলে দিচ্ছে তা অনেক ক্ষেত্রেই আমরা বুঝতে পারি না।
চিকিৎসা বিজ্ঞানীদের মতে, যারা বেশি বেশি ফাস্ট ফুড খায় তাদের অতিরিক্ত মেদ, হার্টের নানা প্রকার সমস্যা, উচ্চরক্তচাপ, হাঁপানিসহ বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা দেখা দিতে পারে। তারা অবিলম্বে বাজারের চলতি ফাস্টফুড পরিহার করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। ফাস্ট ফুড পরিহারের পাশাপাশি যতটা সম্ভব খাবারে রাখতে হবে ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম, আয়রন জাতীয় পুষ্টিকর খাবার এবং পরিমানমতো পানি পান করতে হবে প্রতিনিয়ত। সুস্থ থাকার জন্য আমাদেরকে সব ক্ষেত্রেই সতর্ক থাকতে হবে। তবে সব সময় কিছু নিয়ম মেনে চলা জরুরি। সাধারণত দেখা যায়, যখন সামনে খাবার পাচ্ছি তখনি কিছু খেয়ে নিচ্ছি। এর ফলে অতিরিক্ত খাবার খাওয়া হয়ে যাচ্ছে যা কোনোভাবেই সুস্বাস্থ্যের জন্য অনুকূল নয়। কেউ যখন প্রচণ্ড চাপের মধ্যে থাকে বা রেগে থাকে অথবা অতিরিক্ত আনন্দে থাকে তখন খাবার খাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্কতা জরুরি। এ সময় অনিয়ন্ত্রিতভাবে খাবার খাওয়ার আশঙ্কা থেকে যায়। এছাড়া খাবার সময় টিভি দেখা বা মোবাইল ঘাঁটা বন্ধ করতে হবে। খাওয়ার সময় খাবারের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। কী খাচ্ছি তাতে মনোনিবেশ না করলে অতিরিক্ত খাবার খেয়ে ফেলার আশঙ্কা থেকে যায়।
ওজন কমানোর তাড়াহুড়োয় খাবার এড়িয়ে গেলে চলবে না। এতে শরীরের প্রয়োজনীয় পুষ্টি যেমন শরীরে যাবে না তেমনি নানা শারীরিক জটিলতার কারণও হয়ে উঠতে পারে। খাবার না খাওয়ার অভ্যাসের কারণে বড় ধরনের সমস্যায় পড়তে হতে পারে। সবজি আর নিয়ন্ত্রিত শর্করার মাত্রা বজায় রাখতে হবে।
অনেকে দুপুরে ও রাতে কোমল পানীয় ও জুস খেতে পছন্দ করেন। তবে সুস্থতার জন্য কোমল পানীয় ও জুসের পরিবর্তে পানি পানের চেষ্টা করতে হবে। পানির উপকারিতা অনেক। কোনও রকম ক্যালোরির অদলবদল না ঘটিয়ে পানি মানুষকে সতেজ রাখে। জিভে পানি আসার পরও কিছু খাবার পরিহারের অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। সুস্বাদু খাবারের প্রতি লোভ একটি সাধারণ বিষয়, কিন্তু এই লোভকে কখনো কখনো নিয়ন্ত্রণ করা জরুরি।
অনেকে বিশেষ উপলক্ষে ফাস্ট ফুড ও কোমল পানীয়সহ এমন কিছু খাবার খান যেগুলো স্বাস্থ্যের জন্য ভালো নয়। তারা বলেন, এমন খাবারতো সব সময় রান্না হয় না বা পাওয়া যায় না, তাই লোভ সামলাতে পারি না। সুস্থতার জন্য এ ধরণের চিন্তা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। এ ধরনের খাবার পরিহার করতে পারলে সুস্থ থাকার নিশ্চয়তা অনেক বাড়বে। এসবের পাশাপাশি নিয়মিত ব্যায়াম করতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম শুধু শরীরের জন্যই উপকারী নয়, মনের জন্যও উপকারী। ভালো থাকার হরমোনগুলোর প্রবাহ বাড়ায় নিয়মিত ব্যায়াম। যেমনিভাবে আমরা নিজের কাজ, মিটিং বা অন্যান্য প্রয়োজনের জন্য সময় ঠিক করি, তেমনি ব্যায়ামের জন্যও সময় বের করতে হবে। সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে পারলে শরীর ও মন উভয়ই সতেজ ও সুস্থ থাকবে। নিয়মিত ব্যায়ামের গুরুত্ব নিয়ে আমরা আগামী আসরে আরও বিস্তারিত আলোচনার চেষ্টা করব।#
পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ০৯
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।