ডিসেম্বর ০৯, ২০১৯ ১৭:৫৭ Asia/Dhaka

ইরানের জলে-স্থলে,ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী। এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য।

গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম ইরানের তেল-বহির্ভুত রপ্তানি পণ্য বাদাম নিয়ে।  বলেছিলাম যে, শুষ্ক ফলের মধ্যে অন্যতম রপ্তানি পণ্য হলো বাদাম। বাদামকে বিভিন্ন প্রক্রিয়ায় বাজারজাত করার জন্য অথবা বাদাম দিয়ে তৈরি বিচিত্র দ্রব্য তৈরি করার জন্য এই শিল্পে বিনিয়োগের ব্যাপক সুযোগ রয়েছে।  আমন্ড বা অ্যালমন্ড বাদামে রয়েছে প্রচুর খাদ্য ও পুষ্টিগুণ।

এতে রয়েছে ক্যালসিয়াম, ফাইবার, পটাসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ফসফরাস, ফলিক এসিড ও ভিটামিন-ই। এটি শ্বাসকষ্ট, কোষ্ঠকাঠিন্য ও ত্বকের নানা সমস্যায় খুব ভালো। সকল বাদামের মধ্যে আমন্ডেই বেশি পরিমাণে ক্যালসিয়াম আছে। নিয়মিত চার-পাঁচটি আমন্ড খেলে এলডিএল কোলেস্টেরল বা ব্যাড কোলেস্টেরলের মাত্রা কমে যায়। ফলে হৃদরোগ কিংবা উচ্চ রক্তচাপের আশঙ্কা থাকে না। কোলন ক্যান্সারের আশঙ্কা কমে। আলজেইমারের আশঙ্কাও কমে বাদাম খেলে। কেমোথেরাপি চলাকালে আমন্ড মিল্ক খেলে ইমিউনিটি সিস্টেমের উন্নতি ঘটে। আমন্ডের ফাইবার শরীরে কার্বোহাইড্রেট শোষণের গতি কমায়। ডায়াবেটিসের জন্য ও বাদাম বেশ উপকারী। আমন্ড বাদামের গাছও বেশ উপকারী। এই গাছের কাণ্ড, ফুল, শাখা, পাতা, শেকড় এবং ফল সবই কাজে লাগে। গত আসরে এ নিয়ে আমরা কিছু কথা বলেছি।

বাদামের পুষ্টিগুণ নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। শিশুদের গায়ের চামড়া লাল হয়ে যাওয়া রোগ যাকে হাম বলা হয় ওই রোগ নিরাময়েও তিতা বাদাম ভালো কাজ করে। তিতা বাদামের তেল চামড়ায় কিংবা সারা শরীরে মালিশ করলে শরীরের ব্যথা বেদনা দূর হয়ে যায়। ইরানের প্রাচীন চিকিৎসা ব্যবস্থায় বহু রোগের ক্ষেত্রে বাদাম ব্যবহার করা হতো। যেমন বাদাম গুড়ো করে সিরকার সঙ্গে মেশালে চমৎকার একটি মলম তৈরি হয়। ওই মলম মাথাব্যথার চিকিৎসায় এমনকি চেহারার দাগ তুলতে ভালো কাজ করে। কিডনির চিকিৎসায়ও বাদামের ব্যবহার খুবই উপকারী। বাদামের সঙ্গে পুদিনা এবং নেশাস্তা মিশিয়ে খেলে কিডনির ব্যথা কমে। একইভাবে বাদামের পাউডার মানে গুঁড়ো আঙুরের শিরার সঙ্গে মিশিয়ে খেলে কিডনির পাথর অপসারিত হয় এবং কিডনির সকল প্রকার সমস্যা দূর হয়।

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বব্যাপী বাদামের ব্যবহার ব্যাপক বেড়েছে। বিশ্বে বাদামের উৎপাদনও ২০০৫ সাল থেকে ২০১৫ সালের মধ্যে অর্থাৎ এক দশকে প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে ত্রিশ লক্ষ টনে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের যেসব দেশের মানুষের আয় বেশি তারাই উৎপাদিত বাদামের প্রায় অর্ধেক নিজেরা ব্যবহার করে। বলা হয়ে থাকে যে বিশ্ব বাজারের বাদাম জাতীয় পণ্য সামগ্রীর মূল্য তিন হাজার কোটি ডলার। বিশাল এই পরিমাণের বৃহৎ অংশই বাদামের দখলে। বাদাম কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে। রাবি, অজার, সাহান্দ এবং শুকুফে-এই কয়েক প্রকার বাদাম ইরানে উৎপন্ন হয়। ইরান এমন একটা দেশ যে দেশের বিভিন্ন প্রান্তেই বাদাম গাছের চাষ করা যায়।

ইরানের বিভিন্ন এলাকায় শুকনো এবং জলীয়-উভয় ধরনের এলাকাতেই বাদাম গাছের চাষ হয়। বর্তমানে দেড় লাখ হেক্টরের বেশি এলাকায় বাদামের চাষ হচ্ছে। প্রতি বছরই এর পরিমাণ বাড়ছে। হেক্টর প্রতি এক টনের বেশি বাদাম উৎপন্ন হয় ইরানে। সর্বসাকুল্যে প্রতি বছর যে পরিমাণ বাদাম উৎপাদন হয় তার আনুমানিক মূল্য এক শ কোটি ডলারের বেশি। ইরানের বাদাম বিশ্বের বিশটির বেশি দেশে রপ্তানি করা হয়। ইরানের যেসব এলাকায় বেশি উৎপন্ন হয় বাদাম সেসব এলাকার মধ্যে রয়েছে পূর্ব আজারবাইজান, ফার্স, খোরাসান, ইয়াজদ, হামেদান, মারকাজি, যানজন, তেহরান, কাজভিন, সেমনান এবং চহর মাহলে বাখতিয়রি প্রদেশ। চহর মাহলে বাখতিয়রি প্রদেশের বাদাম একটু আলাদা বৈশিষ্ট্যের। এখানকার বাদামগুলো 'মময়ি বাদাম' হিসেবে ভারতসহ অন্যান্য দেশে রপ্তানি হয়।

বাদাম থেকে বিচিত্র ওষুধি পণ্যও তৈরি হয় যেমন মার্গারিন ভেজিটেবল বাটার, খাবার উপযোগী তেল, ওষুধি পণ্য, প্রসাধনী সামগ্রী ইত্যাদি। বাদাম নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চলছে। এরইমধ্যে এক্সিমার চিকিৎসাসহ সান-স্ক্রিন ক্রিম তৈরিতে, ত্বকের শুষ্কতা নিরাময়ে, খোশ-পাঁচড়া দূর করতেও বাদাম দিয়ে তৈরি ওষুধ সামগ্রী ব্যবহার করা হচ্ছে। সব বয়সের মানুষের জন্যই বাদাম দিয়ে তৈরি সামগ্রী নির্মাণের জন্য গবেষণা চলছে। ইতোমধ্যে অনেক সাফল্যও এসেছে এক্ষেত্রে। ইতোপূর্বেও আমরা বলেছি যে বাদাম ছিল প্রাচীনকালে বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান।

বলছিলাম আগেকার দিনের কবিরাজ বা হেকিমরা প্লীহা বা কিডনি সমস্যায় বাদাম গাছের শেকড় সেদ্ধ করে খাওয়ানোর পরামর্শ দিতেন। বাদাম কাশি, স্বরযন্ত্রের সমস্যা, শ্বাসকষ্ট, মূত্রথলি, অন্ত্রের জখমের চিকিৎসা এমনকি নিদ্রাহীনতার চিকিৎসাতেও কাজে লাগে। মূত্রথলির পাথর চিকিৎসায়, চামড়ার প্রদাহের চিকিৎসায়, পোড়া কিংবা এক্সিমার চিকিৎসাতেও বাদামের তেলের গুণাগুণ অপরিসীম। এককথায় বাদাম গাছের সবকিছুই চিকিৎসার কাজে ব্যবহৃত হয়।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/  ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।