জানুয়ারি ০৯, ২০২০ ১৮:০৯ Asia/Dhaka

আলোচনা করেছিলাম ইরানের তেল-বহির্ভুত রপ্তানি পণ্য বাদাম নিয়ে। বলেছিলাম যে, শুষ্ক ফলের মধ্যে অন্যতম রপ্তানি পণ্য হলো বাদাম।

আখরোটও একপ্রকার বাদাম জাতীয় ফল। এই ফল অত্যন্ত পুষ্টিকর যাতে প্রচুর আমিষ এবং অত্যাবশ্যকীয় ফ্যাটি আসিড আছে।

আখরোট ফল দেখতে গোলাকার এবং ভেতরে একটি বীজ থাকে। পাকা ফলের বাইরের খোসা ফেলে দিলে ভেতরের শক্ত খোলসযুক্ত বীজটি পাওয়া যায়। এই খোলসের ভেতরে থাকে দুইভাগে বিভক্ত বাদাম যাতে বাদামি রঙের আবরণ থাকে। এটি এন্টি-অক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ। গত আসরে আমরা আখরোটের অর্থনৈতিক মূল্য এবং এর নিরাময়ের গুণ নিয়ে আলোচনা করার চেষ্টা করেছি। আখরোটকে ইংরেজিতে ওয়ালনাট বলে। গত আসরেও আখরোটের পরিচয় এবং তার বিচিত্র গুণাবলি বিশেষ এর ওষুধি গুণ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি।

আখরোটের মধ্যে জীবাণু বিরোধী উপাদান রয়েছে। আখরোটের চামড়ার মধ্যে রয়েছে রক্তস্বল্পতা রোধকারী শক্তি এবং আমাশয় নিরাময়কারী উপাদান। আখরোটে বেশ কয়েকটি নিউরোপ্রোটেকটিভ যৌগ যেমন- ভিটামিন-ই, ফোলেট, মেলাটোনিন,ওমেগা-৩ ফ্যাট এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকে। গবেষণায় দেখা গেছে যে আখরোট খাওয়া মস্তিস্কের স্বাস্থ্যের জন্য উপকারী। অন্য একটি গবেষণায় দেখা গেছে আখরোটের মত উচ্চমাত্রার অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট খাদ্য সাধারণত বয়স্ক ব্যক্তিদের অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণে সৃষ্ট দুর্বলতা কমাতে সাহায্য করে। সকল ধরনের বাদামই ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমানোর সাথে সম্পর্কিত। আখরোট ও এ ক্ষেত্রে ব্যতিক্রম নয়। গবেষণায় দেখা গেছে, যেসব নারী সপ্তাহে ২ দিন ২৮ গ্রাম আখরোট খেয়েছেন তাদের টাইপ ২ ডায়াবেটিস হওয়ার ঝুঁকি শতকরা চব্বিশ ভাগ কম। গবেষণাটি শুধু নারীদের উপর করা হয়েছিল। তবে বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরনের উপকারিতা ছেলেদের ক্ষেত্রেও একই রকম।

আখরোট ভিটামিন বি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ হবার কারণে ত্বককে ফ্রি র‍্যাডিকেলের ক্ষতি থেকে রক্ষা করে এবং বলিরেখা ও বয়সের ছাপ পড়া প্রতিরোধ করে। আখরোট ফ্রি র‍্যাডিকেলকে ধ্বংস করতে পারে বলে হৃদরোগ হতে বাধা দেয়। আখরোটে ওমেগা ৩ ফ্যাটি এসিড থাকে যা খারাপ কোলেস্টেরল কমাতে এবং ভালো কোলেস্টেরল বৃদ্ধি করতে সাহায্য করে। এ কারণেই আখরোট হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্য ভালো রাখার জন্য একটি চমৎকার স্ন্যাক্স। দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় মানসিক চাপ এড়াতে আখরোটের কার্যকারিতা অন্যতম। গবেষণা বলছে, দুঃচিন্তা কমাতে শরীরকে সাহায্য করে আখরোট। এতে থাকে পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট যা দুচিন্তাগ্রস্ত অবস্থায় রক্তচাপ কমাতে সহায়ক। আখরোট পাতা থেকেও পাওয়া যায় বিশেষ সুগন্ধিযুক্ত নির্যাস। এই নির্যাস জীবাণু ধ্বংসকারী। আখরোট গাছের মজবুত কাঠও বিশ্বের মূল্যবান কাঠগুলোর অন্তর্ভুক্ত। এই কাঠের ওপর চমৎকার নকশা তৈরি করা যায় সহজেই। মিউজিক্যাল ইনস্ট্রুমেন্ট তৈরিসহ বিচিত্র শো-পিস এবং আসবাবও তৈরি হয় এই কাঠ দিয়ে।                     

আখরোট গাছের কাঠের মূল্যের দিকটি বিবেচনায় নিয়ে বিশ্বব্যাপী এখন এই গাছের ব্যাপক চাষ হচ্ছে। বিশ্বে এখন দশ লাখ হেক্টরের বেশি জায়গায় আখরোট গাছের চাষ হচ্ছে। প্রতি হেক্টরে আনুমানিক তিন হাজার চার শ কিলোগ্রাম আখরোট উৎপন্ন হচ্ছে। ইরানের ইতিহাস এক্ষেত্রে ব্যাপক সমৃদ্ধ। অনেকে মনে করেন আখরোট গাছের উৎপত্তিস্থল ইরান। পরবর্তীকালে ইরান থেকেই আশেপাশের অঞ্চলে বিস্তৃতি লাভ করেছে আখরোট গাছ। ইরানে এখন দেড় লাখ হেক্টর ভূমিতে আখরোট বাগান রয়েছে। বছরে দুই লাখ টনের বেশি আখরোট উৎপন্ন হয় ইরানে। যার বাজার মূল্য দেড় শ কোটি ডলারের বেশি। উৎপাদনের দিক থেকে বিশ্বে ইরানের অবস্থান তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে বহির্বিশ্বেও রপ্তানি করা হয় ইরানের আখরোট। গুণগত মান বিচারে ইরানের আখরোট বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। ইরানের আখরোট ইরাক, তুরস্ক, জার্মানি, বৃটেনসহ বিশ্বের অন্তত ত্রিশটি দেশে রপ্তানি করা হয়।

আখরোট গাছ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় চাষ হয়। একেবারে ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় দাররে গাজ এবং মুগান থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলীয় একলিদ ফার্স পর্যন্ত এলাকায় আখরোট গাছের বাগান রয়েছে। আবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উরুমিয়ের উচ্চভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় তাফতন পাহাড় পর্যন্ত এলাকায়ও আখরোট চাষ হয়ে আসছে। এসব এলাকার মাটি আখরোট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কেরমান প্রদেশ, কেরমানশাহ প্রদেশ, হামেদান, লোরেস্তান, কোহগিলুয়ে ভা বুয়ের আহমাদ, দক্ষিণ খোরাসান, পূর্ব ও পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশ, চহর মাহলে বাখতিয়রি এবং কেন্দ্রিয় প্রদেশেও আখরোট উৎপাদন হয়।

এলাকার নামানুসারে ইরানি আখরোটের নামকরণ করা হয়েছে। যেমন তুইসেরকন আখরোট, শাহমিরজদ আখরোট, কাজভিন আখরোট, ত্বলেগন আখরোট, শাহরেকোর্দ আখরোট, অজারবাইজান ও দামাভান্দ আখরোট, মাকুয়ি এবং জিয়া আবাদি ইত্যাদি। আবার একটু ভিন্ন নামের আখরোটও রয়েছে ইরানে। যেমন কাগুজে আখরোট, পাথুরে আখরোট, সুঁইয়ের মতো আখরোট, কাকের নখ আখরোট ইত্যাদি। হামেদানের মাটি ও আবহাওয়া আখরোট গাছের জন্য খুবই উপযোগী। সে কারণে এই প্রদেশে প্রচুর আখরোট উৎপাদিত হয়। আরেকটি উপযোগী এলাকা হলো আলভান্দ পর্বতের পাদদেশীয় তুইসেরকান এলাকা।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/  ০৯

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।