ইরানি পণ্য সামগ্রী: মেলামাইন সামগ্রী
আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী।
এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম ইরানের তেল-বহির্ভুত বাদামজাতীয় রপ্তানি পণ্য আখরোট নিয়ে। আখরোটের পুষ্টিকর গুণাগুণসহ ইরানের বিভিন্ন এলাকায় আখরোটের চাষ নিয়েও কথা বলেছি।
ইরানের উত্তরাঞ্চলীয় দাররে গাজ এবং মুগান থেকে শুরু করে দক্ষিণাঞ্চলীয় একলিদ ফার্স পর্যন্ত এলাকায় আখরোট গাছের বাগান রয়েছে। আবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় উরুমিয়ের উচ্চভূমি থেকে শুরু করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলীয় তাফতন পাহাড় পর্যন্ত এলাকায়ও আখরোট চাষ হয়ে আসছে। এসব এলাকার মাটি আখরোট চাষের জন্য খুবই উপযোগী। কেরমান প্রদেশ, কেরমানশাহ প্রদেশ, হামেদান, লোরেস্তান, কোহগিলুয়ে ভা বুয়ের আহমাদ, দক্ষিণ খোরাসান, পূর্ব ও পশ্চিম আজারবাইজান প্রদেশ,চহর মাহলে বাখতিয়রি এবং কেন্দ্রিয় প্রদেশেও আখরোট উৎপাদন হয়। যাই হোক আজকের আসরে আমরা প্লাস্টিক এবং মেলামাইন সামগ্রী নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।
উনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধে প্লাস্টিক সামগ্রী মানব জীবনে নিয়ে আসে বৈপ্লবিক পরিবর্তন। ইরানে এই শিল্পের উপযুক্ত পরিবেশ রয়েছে। মানুষের আবিষ্কার ও উদ্ভাবনীর ইতিহাসে পলিমার উৎপাদন একটা বিস্ময়কর ঘটনা। মানবীয় সৃজনশীলতা এবং উদ্ভাবন চিন্তা ও গবেষণার দীর্ঘদিনের ফসল এই পলিমার। বহুকাল আগে থেকেই বিজ্ঞানীরা চেষ্টা করেছেন রাসায়নিক বিক্রিয়ার মাধ্যমে কোনো উপাদানকে বিশুদ্ধিকরণ করে কাঙ্ক্ষিত বৈশিষ্ট্যপূর্ণ বিচিত্র পণ্য তৈরি করতে। পলিমার আবিষ্কারের মধ্য দিয়ে বিজ্ঞানীদের দীর্ঘদিনের সেই আকাঙ্ক্ষার বাস্তবায়ন হয়েছে। প্লাস্টিক তৈরির মূলে রয়েছে এই পলিমার। মানুষ সিন্থেটিক পলিমার তৈরির আগে সেলুলয়েড, প্রোটিন, রাবার, বিটুমেন এবং টারের মতো পলিমারের বৈশিষ্ট্যময় উপাদানগুলো তৈরি করেছে।

ইতিহাসের পরিক্রমায় মানব জাতি বহুকাল ধরে প্রাকৃতিক পলিমার ব্যবহার করে নিজেদের জীবন উপকরণ ও অস্ত্র তৈরি করেছে। কিন্তু উনবিংশ শতকের দ্বিতীয়ার্ধে প্লাস্টিক তৈরির মধ্য দিয়ে মানব জীবনে ঘটে গেছে অপূর্ব এক পরিবর্তন। প্রকৃতিতে বিদ্যমান বিভিন্ন রাসায়নিক উপাদান থেকে প্লাস্টিক তৈরির কাঁচামাল তৈরি করেছে মানুষ। এইসব রাসায়নিক উপাদানের মধ্যে রয়েছে কার্বন, হাইড্রোজেন, অক্সিজেন, নাইট্রোজেন, ক্লোরিন এবং সালফার। এগুলোই প্লাস্টিক তৈরির মূল উপাদান। তবে তেল এবং গ্যাসের ফসিল জ্বালানি, বাতাস, পানি এমনকি জীবন্ত উদ্ভিদেও প্লাস্টিকের উপাদান রয়েছে। এইসব উপাদানকে বহুবার পরিবর্তিত রূপ দিতে দিতে বিচিত্র বৈশিষ্ট্যপূর্ণ প্লাস্টিক উৎপাদনের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। এইসব পণ্য নরম যেমন হতে পারে তেমনি শক্তও হতে পারে। কাঁচের মতো পরিস্কার যেমন হতে পারে তেমনি ঘোলাটে কিংবা বিচিত্র রঙেরও হতে পারে। এ নিয়ে আমরা আরও কথা বলবো খানিক মিউজিক বিরতির পর। সঙ্গেই থাকুন
বলছিলাম প্লাস্টিকের রকমফের বিচিত্র। মোবাইল ফোন, হেলমেট, স্যালাইনের ব্যাগ, ওয়ান টাইম তৈজস যেমন গ্লাস, প্লেট, চামুচ, বাটি ইত্যাদি, ইলেক্ট্রিক যন্ত্রপাতি তৈরি বিশেষ করে বিচিত্র জিনিসপত্র বহন করার জন্য তৈরি ব্যাগসহ আরও বহু রকমের জিনিসপত্র তৈরি হয় এই প্লাস্টিক দিয়ে। সবচেয়ে বেশি প্লাস্টিক ব্যবহৃত হয় প্যাকেজিং সেক্টরে। এই বর্ণনা থেকেই অনুমান করা যেতে পারে প্লাস্টিক আমাদের জীবনের কতোটা বিশাল অংশ জুড়ে বিরাজ করছে। মজার ব্যাপার হলো আমরা এখন যত বিচিত্র প্লাস্টিক সামগ্রী ব্যবহার করছি দেড় শ বছর আগে পৃথিবীতে এসবের কোনো অস্তিত্বই ছিল না। প্লাস্টিক শিল্পের সূচনা নিয়ে ইতিহাস ঘাঁটলে দেখা যাবে ১৮৬৮ সালের আগে এই শিল্পের উপস্থিতি ছিল না।
উনবিংশ শতাব্দির দ্বিতীয়ার্ধেই কাপুরের সঙ্গে নাইট্রিক এসিড এবং কটনের সংমিশ্রনে তৈরি পাইরোক্সিলিন থেকে সম্পূর্ণ নতুন এক ধরনের সেলুলয়েড তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে বিজ্ঞানীরা। এই সেলুলয়েড থেকেই প্লাস্টিক উৎপাদনে সফল হয়েছে মানব জাতি। সর্বপ্রথম এই সেলুলয়েড দিয়ে ক্যামেরার ফিল্ম তৈরি করা হয়েছিল। ১৮৬৮ সালে সেলুলয়েড প্লাস্টিক ব্যবহারের প্রচলন শুরু হয়। এই সেলুলয়েড প্রথম সিনথেটিক প্লাস্টিক। এই প্লাস্টিক হাতির দাঁত, অ্যাম্বার, শিং ও কচ্ছপের ত্বকের মতো দামি বস্তুর পরিবর্তে ব্যবহার শুরু হয়। ১৯০৭ সালে কঠিন প্লাস্টিক বিশেষত ব্যাকেলাইট উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। ইলেকট্রনিক অন্তরক হিসেবে যে শেলাক ব্যবহার করা হতো তার পরিবর্তে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের আরও উন্নয়ন সাধিত হয় এবং তা এখনও থেমে নেই।
সঙ্গে থাকার জন্য অনেক অনেক ধন্যবাদ। সেলুলয়েড নিয়ে কথা বলছিলাম আমরা। গবেষকরা পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পেট্রোলিয়ামজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে যে প্লাস্টিক তৈরি করা হয় সেই প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রধান কারণ হলো এ ধরনের প্লাস্টিক পঁচে না কিংবা প্রকৃতির সঙ্গেও মিশে যায় না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। পরিবেশবান্ধব এই প্লাস্টিক তৈরিতে অর্গানিক ক্যাটালিস্ট নামের বিশেষ এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় যার সহায়তায় বারবার রিসাইকেলও করা যাবে এই প্লাস্টিক। দ্বিথীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাইলন এবং পলিথিনের মতো এক ধরনের পণ্য বাজারে আসে। এরপর ১৯৭০ এর দশকে আরেক ধরনের পলিমার আসে বাজারে। এগুলো কম্পিউটার শিল্পে বিপ্লব নিয়ে আসে।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ১৪
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।