জানুয়ারি ২৩, ২০২০ ১৭:৫১ Asia/Dhaka

১৯০৭ সালে কঠিন প্লাস্টিক বিশেষত ব্যাকেলাইট উদ্ভাবন করতে সক্ষম হন বিজ্ঞানীরা। ইলেকট্রনিক অন্তরক হিসেবে যে শেলাক ব্যবহার করা হতো তার পরিবর্তে এই ব্যাকেলাইট ব্যবহৃত হতে থাকে। পরবর্তী সময়ে প্লাস্টিকের আরও উন্নয়ন সাধিত হয় এবং তা এখনও থেমে নেই।

গবেষকরা পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। পেট্রোলিয়ামজাতীয় পদার্থ ব্যবহার করে যে প্লাস্টিক তৈরি করা হয় সেই প্লাস্টিক পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর বলে মনে করছেন বিজ্ঞানীরা। এর প্রধান কারণ হলো এ ধরনের প্লাস্টিক পঁচে না কিংবা প্রকৃতির সঙ্গেও মিশে যায় না। কিন্তু পরিবেশবান্ধব প্লাস্টিক ব্যবহারের পর মাটির সঙ্গে মিশে যাবে। পরিবেশবান্ধব এই প্লাস্টিক তৈরিতে অর্গানিক ক্যাটালিস্ট নামের বিশেষ এক ধরনের উপাদান ব্যবহার করা হয় যার সহায়তায় বারবার রিসাইকেলও করা যাবে এই প্লাস্টিক। দ্বিথীয় বিশ্বযুদ্ধের সময় নাইলন এবং পলিথিনের মতো এক ধরনের পণ্য বাজারে আসে। এরপর ১৯৭০ এর দশকে আরেক ধরনের পলিমার আসে বাজারে। এগুলো কম্পিউটার শিল্পে বিপ্লব নিয়ে আসে।

পৃথিবীর মূল প্রান্তিক শিল্পগুলির মধ্যে প্লাস্টিক শিল্পকে এখন অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় শিল্প হিসাবে নামকরণ করা যেতে পারে। প্লাস্টিক পণ্যের অনন্য বৈশিষ্ট্যর কারণেই এটি বিশ্বব্যাপী এতো বেশি গ্রহণযোগ্যতা পেয়েছে। ধাতব সামগ্রীর ওজনের তুলনায় প্লাস্টিক সামগ্রী বেশ পাতলা হবার কারণেও গৃহ সামগ্রী হিসেবে প্লাস্টিকের ব্যবহার বেশি জনপ্রিয়তা পেয়েছে। প্লাস্টিক বিদ্যুৎ পরিবাহী না হবার কারণে বৈদ্যুতিক পণ্য সামগ্রির ক্ষেত্রে প্লাস্টিকের ব্যাবহার ব্যাপক। ইলেক্ট্রিক এবং ইলেক্ট্রনিক উভয় শ্রেণীর পণ্য সামগ্রীতেই প্লাস্টিকের ব্যবহার ব্যাপক মাত্রায় হচ্ছে। তার বা ইলেক্ট্রিক ক্যাবলের আচ্ছাদন বা কভার তৈরি হয় এই প্লাস্টিক দিয়ে। যত রকমের প্লাগ-মাল্টিপ্লাগসহ অন্যান্য বৈদ্যুতিক সামগ্রী রয়েছে সবই তৈরি হয় এই প্লাস্টিক দিয়ে। চিকিৎসা সামগ্রীরও বিশাল একটি অংশ তৈরি হয় প্লাস্টিক দিয়ে।

প্লাস্টিকের ওপর ব্যাকটেরিয়া বা রোগ-জীবাণু বংশ বৃদ্ধি করতে পারে না। সে কারণে মেডিক্যাল পণ্য সামগ্রী তৈরি করা, অপারেশান বা অস্ত্রোপচারের জন্য ব্যবহৃত বিভিন্ন সরঞ্জাম, দন্ত্য চিকিৎসা সামগ্রী, ওষুধ তৈরির সরঞ্জামাদি ইত্যাদি তৈরিতেও প্লাস্টিকের ব্যবহার প্রচুর। বিভিন্ন সামগ্রী নির্মাণের উপযোগিতা ছাড়াও আরও যে বিষয়টি প্লাস্টিককে জনপ্রিয় করে তুলেছে তা হলো প্লাস্টিকের কাঁচামালের দামের স্বল্পতা। প্লাস্টিক তুলনামূলকভাবে একটু সস্তাই বলা যায়। তাছাড়া প্লাস্টিক সামগ্রী নির্মাণে সময় ব্যয় হয় কম। উভয় দিকের সুবিধা এই সামগ্রীর প্রতি মানুষের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছে।

ইরানে তেল এবং পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের জন্য বিশ্বের মধ্যে অন্যতম একটি সমৃদ্ধ দেশ। প্লাস্টিক হলো পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পপণ্য। সুতরাং ইরানে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্যের উৎপাদন ও উন্নয়ন যে খুবই স্বাভাবিক একটা ব্যাপার তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। আর পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পপণ্য যে-কোনো দেশের জন্যই অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির নেপথ্য চালিকাশক্তি। তেল গ্যাসের বাইরে ইরানে পুঁজি বিনিয়োগের অন্যতম অগ্রাধিকার পাওয়ার যোগ্য একটি খাত হলো পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্পের অন্যতম সহায়ক উপাদান হলো গ্যাস। আর গ্যাসের মজুদের দিক থেকে বিশ্বের মধ্যে ইরানের অবস্থান শীর্ষ পর্যায়ে রয়েছে। বিনিয়োগ বিশেষজ্ঞ অ্যালিস্টার হ্যানিম্যান বলেছেন: 'ইরানে বিনিয়োগের নজিরবিহীন সুযোগ রয়েছে।' ইরান অদূর ভবিষ্যতে অবশ্যই প্রচুর পরিমাণে পেট্রোকেমিক্যাল পণ্য সামগ্রী রপ্তানি করবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেছেন।

২০১৪ সালে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পণ্য উৎপাদনের ক্ষেত্রে মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে ইরানের কোটা ছিল পঁচিশ শতাংশ। বছরে ৫০ লাখ টনেরও বেশি পলিমার কাঁচামাল উৎপাদিত হয় ইরানে। যার মধ্য থেকে দশ লাখ টনেরও বেশি উৎপন্ন হয় বাণিজ্যিক প্লাস্টিক সামগ্রী। বর্তমানে এ খাতের ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। ইরানে পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প কমপ্লেক্স এবং পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পণ্য উৎপাদনের কারখানা রয়েছে ৫০ টিরও বেশি। এসব কারখানায় গৃহসামগ্রী, টেক্সটাইল সামগ্রী এমনকি গাড়ি তৈরির বিভিন্ন সামগ্রীও তৈরি হচ্ছে। পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পণ্য উৎপাদনের কারখানার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মহল চেষ্টা চালাচ্ছেন এই খাতে আরও বেশি বিনিয়োগ করে প্লাস্টিক সামগ্রীসহ পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পণ্য উৎপাদন খাতের বিচিত্রমুখি উন্নয়ন ঘটাতে।

আমরা এতোক্ষণ প্লাস্টিক ও পেট্রোকেমিক্যাল শিল্প পণ্য নিয়ে কথা বলেছি। এবারে আরেক ধরনের শিল্পপণ্য নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। এই খাতটি হলো মেলামাইন। মেলামাইন সামগ্রী উৎপাদনের দিক থেকে এবং এর গুণগত মানের দিক থেকে ইরানের অবস্থান বিশ্বের মধ্যে শীর্ষস্থানীয়। মেলামাইন সামগ্রী উৎপাদনে বিশ্বের তিনটি শীর্ষ দেশের মধ্যে ইরান একটি। বিগত কয়েক বছরে ইরান মেলামাইন উৎপাদনের ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি লাভ করেছে। নতুন নতুন ডিজাইন যেমন আবিষ্কার করেছে ইরান তেমনি এই শিল্প নিয়ে ব্যাপক গবেষণা চালিয়ে ইরানের পার্শ্ববর্তী দেশ যেমন পারস্য উপসাগরীয় অঞ্চলের দেশগুলোতে, পূর্ব ইউরোপীয় দেশগুলোতে, দক্ষিণ আফ্রিকায় এবং দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানী করতে সক্ষম হয়েছে। যাই হোক বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক সামগ্রীর উপস্থিতি মানব জীবনকে একদিকে সহজতর করেছে। আবার তার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও সৃষ্টি করেছে।

এই সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো পরিবেশ দূষণ। পানির বোতল কিংবা পলিথিনের মতো বর্জ্যগুলো সহজে নষ্ট হয় না। সেজন্য সহজেই পরিবেশ নষ্ট হয়, দূষিত হয়। এ নিয়ে আজ আর বিস্তারিত কথা বলতে পারছি না। পরবর্তী আসরে অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কথা বলার ইচ্ছে রইলো। আপনারা তখনও আশা করি আমাদের সঙ্গেই থাকবেন।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/  ২৩

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।