ইরানি পণ্য সামগ্রী: গৃহ সামগ্রী
বিশ্বব্যাপী প্লাস্টিক সামগ্রীর উপস্থিতি মানব জীবনকে একদিকে সহজতর করেছে। আবার তার পাশাপাশি কিছু সমস্যাও সৃষ্টি করেছে। এই সমস্যাগুলোর অন্যতম হলো পরিবেশ দূষণ।
পানির বোতল কিংবা পলিথিনের মতো বর্জ্যগুলো সহজে নষ্ট হয় না। সেজন্য সহজেই পরিবেশ নষ্ট হয়, দূষিত হয়। তবে সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতার ব্যাপারে আন্তরিক হলে এ সমস্যাও কাটিয়ে ওঠা সম্ভব। যেখানে সেখানে বর্জ্য না ফেলে সুনির্দিষ্ট জায়গায় আবর্জনা ফেলার অভ্যাস গড়ে তুললে আর এ সমস্যা থাকবে না। সুখের বিষয় যে পরিবেশ বান্ধব চিন্তাও এখন করা হচ্ছে। যাই হোক আজ আমরা কথা বলবো ইলেক্ট্রিক সামগ্রী এবং গৃহ সামগ্রী নিয়ে। গৃহ সামগ্রী নির্মাণ এখন বিশ্বজনীন একটি শিল্প ধারা। ইরানও এ ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রসর।
গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্প এমন একটি শিল্প যে বিশ্বব্যাপী তার ব্যাপক বিস্তার ওই শিল্প উৎপাদনকারী দেশগুলোর অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলতে সক্ষম হয়েছে। পৃথিবীতে এমন কোনো ঘর খুঁজে পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ যে ঘরে গৃহ সামগ্রী শিল্পপণ্য দেখা যায় না। গৃহ সামগ্রী শিল্পপণ্য বলতে আমরা বোঝাচ্ছি টেলিভিশন, ফ্রিজ, ফ্রিজার, ওয়াশিং মেশিন, ভ্যাকুয়াম ক্লিনার, আয়রন, জুসার মেশিন এমনকি তেফলন রান্নাবান্নার নন স্টিক পণ্য, স্টিল সামগ্রী ইত্যাদি। এইসব সামগ্রীকে তিনটি ভাগে ভাগ করা যেতে পারে। একটা হলো ছোট সরঞ্জামাদি, অপরটি তাপ পরিবাহী বড় সামগ্রী আর তৃতীয়টি হলো তাপ অপরিবাহী ছোট বড় সামগ্রী। গৃহের প্রয়োজনীয় শিল্পসামগ্রী খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এসব সামগ্রী তৈরিতে খুব উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন পড়ে না। তাই ছোট বা মাঝারি কল-কারখানাই এসব তৈরির জন্য যথেষ্ট।
গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্প শিল্পের বৃহৎ শাখাগুলোর অন্যতম। ইরানসহ বিশ্বের প্রায় সকল দেশেই শিল্প ও অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রভাব বিস্তারকারী একটি শিল্প এই গৃহ সামগ্রী শিল্প। ইরানে গৃহের প্রয়োজনীয় শিল্প সামগ্রীর চাহিদার ব্যাপকতার কারণে বাজারগুলিও আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে। গৃহ সামগ্রীর ডিজাইনেও এসেছে ব্যাপক বৈচিত্র্য। ইরানে এই শিল্প এখন বেশ সমৃদ্ধ। প্রায় আশি বছর ধরে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পে কাজ করে যাচ্ছে ইরান। সর্বপ্রথম গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের যে কারখানাটি ইরানে গড়ে উঠেছিল তা মাত্র আটজন কর্মচারী দিয়ে শুরু হয়েছিল। ১৯৩৭ সালে তেহরানেই গড়ে উঠেছিল আর্জ্ নামের এই শিল্প কারখানাটি। ধীরে ধীরে এই শিল্পের বিস্তার ঘটতে থাকে। প্রায় দুই দশক মানে বছর বিশেকের মধ্যে বেশ কয়েকটি কারখানা গড়ে ওঠায় গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের ভিত দৃঢ় ও মজবুত হয় ইরানে।
পঞ্চাশের দশক থেকে এ পর্যন্ত ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পে ব্যাপক পরিবর্তন এসেছে। অবশ্য অনেক চড়াই উৎরাইও পার করতে হয়েছে এজন্য। অভ্যন্তরীণ এবং বিদেশি প্রযুক্তির সহযোগিতা নিয়ে ইরানে এই শিল্পের উন্নয়নে ব্যাপক কাজ করা হয়েছে। বলাবাহুল্য এই শিল্পের ভুবনে যেসব কল-কারখানা সক্রিয় সেগুলোর মাধ্যমে গৃহসামগ্রী তৈরির পাশাপাশি কম্প্রেসার এবং ইলেক্ট্রোমোটরের পার্টসও বানিয়েছে ইরান। আর গৃহসামগ্রী পণ্য তো ব্র্যান্ডে পরিণত হয়েছে। ইরানি এসব ব্র্যান্ডের গৃহসামগ্রী অভ্যন্তরীণ বাজারের পাশাপাশি বিদেশের বাজারেও রপ্তানি হচ্ছে।
বলেছি যে আর্জ্ কারখানাই ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের সর্বপ্রথম কারখানা। খলিল আরজ্মান্দ নামের ভদ্রলোক ১৯৩৭ সালে তেহরানের কাজভিন গেইট স্কোয়ারের কাছে গড়ে উঠেছিল এই কারখানাটি। বর্তমানে এই শিল্পে চার শতাধিক কারখানা এখন সক্রিয় রয়েছে। এক লক্ষাধিক জনবল এই শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে। কর্মচারী, বিশেষজ্ঞ এবং বিক্রয়োত্তর সেবাসহ বিভিন্ন কাজে এরা নিয়োজিত। ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন তামা, অ্যালুমিনিয়াম, পেট্রোকেমিক্যাল উপাদান ইত্যাদি দেশের ভেতরেই রয়েছে। সুতরাং এই শিল্প যে কতোটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা অনুমান করা যেতে পারে। আর যেহেতু কাঁচামাল স্থানীয় সেহেতু এই পণ্যের গুণগত মানও যে অনেক উন্নত হবে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না।
গৃহ সামগ্রী নির্মাণে প্রয়োজনীয় কাঁচামালের কথা বলছিলাম। এর পাশাপাশি প্রয়োজনীয় জনশক্তিও গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। সেই জনশক্তিও রয়েছে ইরানের। শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এই ক্ষেত্রে নিজ নিজ মেধা ও শ্রম দিয়ে শিল্পটিকে ইরানসহ ইরানের পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও জনপ্রিয় করে তুলেছে। যার ফলে এই শিল্পে বিনিয়োগের জন্যও আকর্ষণ বোধ করে বিনিয়োগকারীরা। মনে করা হচ্ছে যে আগামি দশ বছরে এই গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পে অর্থ লগ্নির পরিমাণ আট শ কোটি ডলার ছেড়ে যাবে। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তাই এই শিল্পের গুরুত্ব উপলব্ধি করতে পেরে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ ক্ষেত্রে আরও তৎপর হয়ে উঠেছে বিশেষজ্ঞ মহল থেকে শুরু করে পুঁজি বিনিয়োগকারীরাও। গুণগত মান উন্নয়ন এবং ডিজাইনের আধুনিকায়নের পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তৎপরতা লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে।
যাই হোক বন্ধুরা! হাতে আজ আর সময় নেই। যারা দীর্ঘ সময় ধরে আমাদের সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পসহ বৈদ্যুতিক সামগ্রী নিয়ে আমরা আরও কথা বলার চেষ্টা করবো পরবর্তী আসরে। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ২৮