ফেব্রুয়ারি ০৪, ২০২০ ২০:২৭ Asia/Dhaka

আসলে সব সময় সত্য ও ন্যায়ের পথে থাকাই হলো সততা। আর সৎ পথে থেকে সত্য প্রকাশ করাই হলো সত্যবাদিতা।

মানুষের সুন্দর জীবনের অপরিহার্য উপাদান হচ্ছে সততা ও সত্যবাদিতা। এই সদগুণ ব্যক্তির মধ্যে যেমন প্রশান্তি সৃষ্টি করে তেমনি সমাজ ও রাষ্ট্রকেও কলুষতামুক্ত করতে সহযোগিতা করে। অবিশ্বাস ও অনাস্থার বেড়াজাল থেকে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রকে মুক্ত করতে সততা ও সত্যবাদিতা হচ্ছে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার। যে কোনো সম্পর্কের ক্ষেত্রে যদি সততার অভাব থাকে তাহলে তা শেষ পর্যন্ত বিচ্ছিন্ন হয়ে যায় অথবা অস্বস্তিকর পর্যায়ে পৌঁছায়। এছাড়া মিথ্যাচার মানুষকে ভুল-ভ্রান্তিতে ফেলে দেয় এবং বাস্তবতা থেকে দূরে সরিয়ে দেয়। অনেকেই সত্যবাদিতাকে কেবল একটি নৈতিক বিষয় হিসেবে গণ্য করে থাকে। এ কারণে তারা সামাজিক ক্ষেত্রে এটাকে খুব একটা গুরুত্ব দেয় না। কিন্তু মনে রাখতে হবে সত্যবাদিতা হচ্ছে অপর সব ভালো গুণের ভিত্তি এবং মিথ্যাচার হচ্ছে সব খারাপ বৈশিষ্ট্যের জননী।

পারস্পরিক সম্পর্ক যদি মিথ্যার ওপর ভিত্তি করে গড়ে উঠে তাহলে তা ব্যক্তি, সমাজ ও রাষ্ট্রকে নানা সমস্যা ও সংকটে ফেলে দেয়। আমরা যদি এমন একটি অফিসের কথা কল্পনা করি যেখানে অফিসের প্রধান থেকে শুরু করে সবাই মিথ্যা বলে এবং মিথ্যাচারকে এক ধরণের যোগ্যতা বলে মনে করে তাহলে কী ঘটতে পারে? ওই অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রথমেই তাদের মানসিক প্রশান্তি হারাবে, পারস্পরিক আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যাবে, সন্দেহপ্রবণতা বাড়বে। পরবর্তীতে কাজের উপযুক্ত পরিবেশ নষ্ট হবে, স্বজনপ্রীতি বাড়বে ও ঘুষ-দুর্নীতির ক্ষেত্র সৃষ্টি হবে। পরনিন্দা ও হিংসা-বিদ্বেষ প্রশ্রয় পাবে। এ ধরণের কর্মস্থলে তৎপর ব্যক্তিরা সহকর্মীদের অমঙ্গল দেখে কষ্ট পাওয়ার পরিবর্তে খুশি হয়। নিজেকে বাঁচাতে যেকোনো দায় অন্যের ঘাড়ে চাপিয়ে দেওয়ার চেষ্টা চালায়। এভাবে এক সময় এ ধরণের অফিস থেকে মানবিক ও চারিত্রিক সব গুণাবলী মুছে যায়।

অফিসের বড় কর্মকর্তা যদি মিথ্যাবাদী হন তাহলে মিথ্যাচার অধীনস্থদের মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে, মিথ্যাচারের মাধ্যমে পদোন্নতি পাওয়ার ঘটনাও ঘটতে থাকে। আর মিথ্যাবাদীদের উত্থান দেখে অন্যরাও উৎসাহিত হয় এবং একই কাজের মাধ্যমে অন্যরাও তা অর্জনের চেষ্টা চালায়। মস্তিষ্ক ও স্নায়ু বিশেষজ্ঞদের মতে, মানুষের মানসিক ও শারীরিক সুস্থতার ওপর সততা ও সত্যবাদিতার ব্যাপক প্রভাব রয়েছে। তাদের মতে, যে যত কম মিথ্যা কথা বলবে সে মানসিক দিক থেকে তত বেশি সুস্থ থাকবে। আর এই মানসিক সুস্থতা তার শারীরিক সুস্থতাও নিশ্চিত করবে। তাদের মতে, প্রতিটি মানুষের সুস্থতার জন্য যেমন ভালো খাবার ও ব্যায়াম প্রয়োজন তেমনি সত্যবাদিতাও জরুরি। যারা মিথ্যা বলেন না তাদের টেনশন ও মাথা ব্যথাসহ নানা ধরণের সমস্যা কম হয়। মিথ্যাবাদীকে যেহেতু একেক সময় একেক মিথ্যা গল্প বানাতে হয় সে কারণে তার মগজেও এক ধরণের অস্বস্তিকর অবস্থার সৃষ্টি হয় যা মানসিক দিক থেকে ক্ষতিকর।

যে কোনো প্রতিষ্ঠান, পরিবার ও সমাজে যেমন সততা ও সত্যবাদিতা জরুরি তেমনি রাষ্ট্রীয় ক্ষেত্রেও এটি অপরিহার্য। একটি রাষ্ট্রের সরকার যদি জনগণের সামনে সত্য লুকিয়ে মিথ্যার আশ্রয় নেয় তাহলে জনগণ ওই সরকারের প্রতি আস্থা হারিয়ে ফেলে এবং সরকারের কোনো কথাই আর তখন বিশ্বাস করতে পারে না। এ ধরণের রাষ্ট্রে যেকোনো ছোট সংকটও বড় হয়ে দেখা দেয়। গণমাধ্যমের ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটে। গণমাধ্যমে একবার মিথ্যা খবর প্রকাশ হলে ওই গণমাধ্যমের ওপর থেকে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস উঠে যায়। এ ধরণের পরিবেশে সমাজ ও রাষ্ট্রে ধ্বংসাত্মক গুজব রটে যায় এবং দেশ ও জাতি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আসলে সততা ও সত্যবাদিতা মানুষকে সুন্দর, সঠিক ও কল্যাণের পথে পরিচালিত করে। আর যদি এ মহৎ গুণটি না থাকে তবে মানুষ হিংস্র হয়ে উঠে, তার ভেতরে পাপবোধ কাজ করে না। যখন-তখন, যেখানে-সেখানে এ সব মানুষ অন্যায় কাজ করতে দ্বিধাবোধ করে না। মানবতা লোপ পায়।

সততা ও সত্যবাদিতা না থাকলে মানুষের অন্যান্য গুণও বিকশিত হতে পারে না। সততা ও সত্যবাদিতার অভাবে বিশ্বের অনেক দেশ ও সমাজ নিজের স্বাধীনতা ও স্বকীয়তা হারাচ্ছে, কোনো কোনো সমাজ স্বাভাবিক জীবনযাপনের অযোগ্য হয়ে পড়ছে। মিথ্যাকে আশ্রয় দেওয়ায় ঘুষ-দুর্নীতি সমাজ ও রাষ্ট্রের সব ক্ষেত্রে প্রবেশ করছে। অসৎ পথে উপার্জনকে মানুষ আর অন্যায় বলে মনে করছে না। অন্যায়-অপকর্ম করাকে অধিকার বলে ভাবতে শুরু করছে। এ কারণে কোনো কোনো ক্ষেত্রে অবৈধ উপায়ে অর্থ উপার্জনের প্রতিযোগিতা লক্ষ্য করা যায়। আসলে প্রতিটি মানুষই সুন্দরভাবে বাঁচতে চায়। তবে সুন্দরভাবে বাঁচতে যেসব গুণকে অবশ্যই ধারণ করতে হবে তাহলো সততা ও সত্যবাদিতা। শিশুকালে সততা ও সত্যবাদিতার শিক্ষা পেলে তা বেশি স্থায়ী হয়। এ কারণে  পরিবার ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে এ গুণটি ধারণ করতে অনুপ্রাণিত করতে হবে। আর আমাদের জীবনের প্রাত্যহিক কাজকর্মে এর প্রতিফলন ঘটাতে হবে। এর পাশাপাশি মনে রাখতে হবে ইহকালে কোনোভাবে মিথ্যা বলে স্বার্থ উদ্ধার করা সম্ভব হলেও পরকালে তা প্রকাশ পাবেই এবং মিথ্যাচারের বিচার হবেই। সেখানে সত্য চাপা থাকবে না। সত্য প্রকাশিত হবেই।#

পার্সটুডে/সোহেল আহম্মেদ/মো: আবুসাঈদ/ ০৪

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।