ইরানি পণ্য সামগ্রী: প্লাস্টিক এবং মেলামাইনের কাঁচামাল
আর্জ্ কারখানাই ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের সর্বপ্রথম কারখানা। খলিল আরজ্মান্দ নামের ভদ্রলোক ১৯৩৭ সালে তেহরানের কাজভিন গেইট স্কোয়ারের কাছে গড়ে উঠেছিল এই কারখানাটি।
বর্তমানে এই শিল্পে চার শতাধিক কারখানা এখন সক্রিয় রয়েছে। এক লক্ষাধিক জনবল এই শিল্পে নিয়োজিত রয়েছে। কর্মচারী, বিশেষজ্ঞ এবং বিক্রয়োত্তর সেবাসহ বিভিন্ন কাজে এরা নিয়োজিত। ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল যেমন তামা, অ্যালুমিনিয়াম, পেট্রোকেমিক্যাল উপাদান ইত্যাদি দেশের ভেতরেই রয়েছে। সুতরাং এই শিল্প যে কতোটা শক্তিশালী হয়ে উঠেছে তা অনুমান করা যেতে পারে। আর যেহেতু কাঁচামাল স্থানীয় সেহেতু এই পণ্যের গুণগত মানও যে অনেক উন্নত হবে তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। শ্রমিক থেকে শুরু করে বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষজ্ঞ এই ক্ষেত্রে নিজ নিজ মেধা ও শ্রম দিয়ে শিল্পটিকে ইরানসহ ইরানের পাশ্ববর্তী দেশগুলোতেও জনপ্রিয় করে তুলেছে। গুণগত মান উন্নয়ন এবং ডিজাইনের আধুনিকায়নের পাশাপাশি রপ্তানি উন্নয়নের ক্ষেত্রেও তৎপরতা লক্ষনীয় হয়ে উঠেছে। মনে করা হচ্ছে যে আগামি দশ বছরে এই গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পে অর্থ লগ্নির পরিমাণ আট শ কোটি ডলার ছেড়ে যাবে।
এখন পর্যন্ত গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের যথাযথ উন্নয়ন ও পরিপূর্ণতার জন্য, এই শিল্পের জন্য উন্নত প্রযুক্তিসহ সার্বিক আধুনিকায়নের স্বার্থে উল্লেখযোগ্য মাত্রার বিনিয়োগ করা হয়েছে। কারখানার মালিক পক্ষ উৎপাদনের মাত্রা ও সক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়েছেন। যার ফলে খুব অল্প সময়ের মধ্যেই বাজারের চাহিদা মেটাতে সক্ষম তারা। গৃহ নির্মাণ সামগ্রী শিল্পের একজন সক্রিয় শিল্পপতি ডক্টর হাবিুল্লাহ আনসারি বলেন, ইরাক, আফগানিস্তান, মধ্য এশিয়া এবং আফ্রিকার বহু দেশে বর্তমানে আমাদের গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের ভালো বাজার রয়েছে। ইরানি ওয়াটার হিটার প্যাকেজ ইউরোপের বাজারেও ব্যাপকভাবে রপ্তানি করা হচ্ছে। মনে করা হচ্ছে খুব দ্রুতই দেশের গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্প অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ও অগ্রগামী একটি শিল্প হিসেবে পরিগণিত হবে।"
ডক্টর হাবিুল্লাহ আনসারি আরও বলেন-"বর্তমানে আমাদের বিশেষ কিছু প্রোডাক্ট এমন অনেক দেশে রপ্তানি হচ্ছে যেসব দেশ এই গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের সূতিকাগার হিসেবে পরিচিত। উদাহরণ হিসেবে সেলাই মেশিনের কথা বলা যেতে পারে। ইরানে তৈরি এই সেলাই মেশিন এখন ইউরোপের বাজারে ব্যাপকহারে যাচ্ছে। আর ব্যবহারকারীরাও ইরানি প্রোডাক্টের গুণগত মানে সন্তুষ্ট।"
যারা এই শিল্পে বিনিয়োগ করেছেন তারা চাচ্ছেন আঞ্চলিক পর্যায়ে শ্রেষ্ঠত্বের শিরোপা অর্জন করে দক্ষতা বৃদ্ধি করার পাশাপাশি পণ্যমূল্য কমিয়ে আনতে। সেইসাথে প্রোডাক্টে বৈচিত্র্য এনে সবচেয়ে কম দামে পণ্য সরবরাহ করতে। আঞ্চলিক দেশগুলোতে রপ্তানি পরিকল্পনার পাশাপাশি বিদ্যুৎ সাশ্রয় এবং বিক্রয়োত্তর কাস্টমার সার্ভিস আরও বৃদ্ধি করার মাধ্যমে তাদের সন্তুষ্টি যতদূর সম্ভব সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার চিন্তা-ভাবনাও রয়েছে।
সারা বিশ্বে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পে যেসব বৃহৎ কোম্পানি সক্রিয় রয়েছে এবং এরইমাঝে খ্যাতি কুড়িয়েছেন তাদের সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার মধ্য দিয়ে এই শিল্পকে আরও উন্নতির দিকে নিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনাও রয়েছে। সহযোগিতার ক্ষেত্রগুলো হচ্ছে কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তির আদান প্রদান, খুচরা যন্ত্রাংশ তৈরি ইত্যাদি। ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ কারখানার উন্নয়ন নিয়ে বহুমুখি চিন্তাভাবনা চলছে। চলছে গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলোকে শক্তিশালী করে তোলার প্রয়াসও। বিশেষ করে জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো এ ক্ষেত্রে ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। এই জ্ঞানভিত্তিক কোম্পানিগুলো এরইমধ্যে চমৎকার একটি পণ্য আবিষ্কার করেছেন। তারা এয়ার জেট সিস্টেমে ডিশ ওয়াশিং মেশিন তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন। এই ওয়াশিং মেশিন যেমন দ্রুত তৈজসপত্র ধুয়ে পরিষ্কার করে তেমনি কম বিদ্যুৎ খরচ করে। ব্যাকটেরিয়াও জমতে দেয় না।
স্টিমড প্রেশার কুকার সেরকমই আরেকটি আবিষ্কার। জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনায় রেখে এই কোম্পানিগুলো নিত্যনতুন প্রোডাক্ট উপহার দিয়ে যাচ্ছে। এই স্টিমড প্রেশার কুকার ব্যবহার করা খুবই সহজ। গ্যাসের চুলার উপর বসিয়ে দিলেই চলে। ইরানের তরুণ বিজ্ঞানীরা আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ জিনিস আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন। সেটা হলো বাসায় এবং মরুভূমিতে ব্যবহারযোগ্য ফ্রিজার। এই ফ্রিজারগুলো গ্যাসের মাধ্যমে যেমন চলে তেমনি বিদ্যুৎ এমনকি সৌর বিদ্যুতের মাধ্যমেও চলে। এই প্রোডাক্টটির মেয়াদ পণর থেকে বিশ বছরের মতো। এই ফ্রিজারের প্রয়োজনীয় সকল যন্ত্রাংশ ইরানেই পাওয়া যায়। সে কারণে নিশ্চিন্তে এই পণ্যটি ব্যবহার করতে পারেন ইরানিরা।
ইরানের কৌশলগত যতগুলো শিল্পপণ্য নির্মাণ খাত রয়েছে তাদের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ সাতটি শিল্পপণ্য সামগ্রীর একটি হলো গৃহ সামগ্রী নির্মাণশিল্প। এই শিল্পটি ইরানের অন্যতম পণ্য যা দেশের বাজারের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানি করা হয়ে থাকে। সে কারণে এক্ষেত্রে ব্যাপক গবেষণা কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি চর্চার চমৎকার পরিবেশও সৃষ্টি করা হয়েছে এজন্য। সৃজনশীলতা এবং মেধা ও প্রতিভা লালনেরও ক্ষেত্র তৈরি করা হয়েছে। সুতরাং ইরানে গৃহ সামগ্রী নির্মাণ শিল্পের ভবিষ্যৎ যে ব্যাপক উজ্জ্বল তা মনে হয় জোর দিয়েই বলা যায়।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৫