ফেব্রুয়ারি ১২, ২০২০ ১৬:৪৩ Asia/Dhaka

সুরা কাফিরুন পবিত্র কুরআনের ১০৯তম সুরা। এতে রয়েছে ৬ বাক্য বা আয়াত।

পবিত্র মক্কায় এমন সময় এই সুরা নাজিল হয় যখন মুসলমানরা ছিল সংখ্যায় খুবই কম ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং মহানবী (সা) সংখ্যাগুরু কাফের-মুশরিকদের পক্ষ থেকে তীব্র চাপের মুখে ছিলেন। মুশরিকরা মহানবীর ওপর চাপ দিচ্ছিল যাতে তিনি শির্ক বা অংশীবাদিতার সঙ্গে আপোষ করেন! কিন্তু মহানবী তাদের প্রস্তাব দৃঢ়তার সঙ্গে নাকচ করে দেন এবং তাদের পুরোপুরি হতাশ করে দেন।

মক্কার কুরাইশ কাফির-মুশরিকরা যখন দেখল যে, ইসলাম দিনের পর দিন ছড়িয়ে পড়ছে এবং তাদের প্রতারণা-প্রবঞ্চনা কোন কাজে আসছে না, তখন তাদের শীর্ষস্থানীয় কয়েক ব্যক্তি রাসূল (সা.)-কে বলল, ‘এস, আমরা মিলেমিশে পালাক্রমে উপাসনা করি। এক বছর তোমার উপাস্যের এবং এক বছর আমাদের উপাস্যগুলোর উপাসনা করি। তাদের এই হাস্যকার প্রস্তাবের জবাবে এই সুরা নাজিল হয়।

সুরা কাফিরুন নাজিলের পটভূমি সংক্রান্ত ঘটনার বিস্তারিত বিবরণে দেখা যায় আস বিন ওয়ায়েলসহ কয়েকজন শীর্ষস্থানীয় কুরাইশ মুশরিক মহানবীর (সা) কাছে এসে বলে : হে মুহাম্মাদ তুমি আমাদের ধর্ম মেনে চললে আমরাও তোমার ধর্ম মেনে চলব এবং আমাদের সব সুযোগ-সুবিধায় তোমাকেও শরিক করব; এক বছর তুমি আমাদের খোদাগুলোর ইবাদত কর, অন্য বছর আমরা তোমার খোদার ইবাদত করব।

মহানবী (সা) বললেন, কোনো কিছুকে মহান আল্লাহর সমকক্ষ করা থেকে আমি তাঁর আশ্রয় চাচ্ছি। তখন তারা বলল: অন্তত তুমি আমাদের কোনো কোনো খোদাকে হাত দিয়ে স্পর্শ কর ও তাদের কাছ থেকে বরকত চাও এবং এর বিনিময়ে আমরা তোমাকেও স্বীকৃতি দেব ও তোমার খোদার ইবাদত করব। আর এ অবস্থায় নাজিল হয় সুরা কাফিরুন। এ সুরা নাজিল হওয়ার পর মহানবী (সা) মসজিদুল হারামে আসেন। এ সময় একদল কুরাইশ সর্দার সেখানে জড় হয়েছিল। মহানবী (সা) এই সুরার প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত তাদের পড়ে শোনান। এই সুরার বক্তব্য মক্কার কাফির-মুশরিক নেতাদের পুরোপুরি হতাশ করে। তারা মহানবী (সা) ও তাঁর সঙ্গীদের ওপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে।

সুরা কাফিরুনে মহান আল্লাহ বলছেন:  (১) হে নবী! আপনি বলে দিন, ‘হে অবিশ্বাসীরা! (২) আমি তাদের ইবাদত বা উপাসনা করি না যাদের উপাসনা তোমরা করতে এবং তোমরাও তাঁর উপাসনাকারী নও যাঁর উপাসনা আমি করি। (৪) আর না আমি তোমাদের উপাস্যের উপাসক (৫) আর না তোমরা আমার উপাস্যের উপাসক। (৬) এ অবস্থায় তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম এবং আমার জন্য আমার ধর্ম।’- সুরা কাফিরুন  এক আল্লাহর ইবাদত ও বহু খোদার উপাসনা তথা শির্ক আর একত্ববাদের মধ্যে পার্থক্যের সীমারেখা টানতে বার বার মুশরিকদের মূর্তিপূজা বা বহু খোদার উপাসনার প্রতি ঘৃণা ও এ ধরনের নিকৃষ্ট  অপবিত্র কাজ থেকে দূরত্ব রাখার ঘোষণা দিয়েছে। ফলে মুসলমানরা ইবাদতের ব্যাপারে আপোষ করবে-মুশরিকদের এ আশা পুরোপুরি উধাও হয়। মহানবী (সা) স্পষ্ট করেন যে মুসলমানরা কখনও শির্ক ও মূর্তি পূজায় লিপ্ত হবে না। অন্যদিকে পূর্বপুরুষদের রীতির অন্ধ-অনুসারী মুশরিকদের পক্ষে গোঁড়ামি ও একগুয়েমি এবং অবৈধ স্বার্থের টান ছাড়াটা ছিল অসম্ভব। তাই তারা মূর্তি পূজার পরিবর্তে এক আল্লাহর ইবাদত মেনে নিতে পারেনি।

মোটকথা মহানবী (সা) স্পষ্ট করে দেন যে তাওহিদ ও শির্কের মধ্যে তথা একত্ববাদ ও অংশিবাদিতার মধ্যে আপোষ অসম্ভব। শির্ক অর্থ মহান আল্লাহর সমকক্ষ বা তাঁরই সমতুল্য কিছু থাকার অস্তিত্বে বিশ্বাস করা। অন্যদিকে একত্ববাদের অর্থ হল ঠিক এর বিপরীত। একত্ববাদের দৃষ্টিতে শির্ক অত্যন্ত বড় বিভ্রান্তি ও জুলুম যা ক্ষমার অযোগ্য পাপ। তাই ইসলাম ও কাফিরদের পথ সম্পূর্ণ ভিন্ন ও বিপরীতমুখী। এই সুরার শেষ বাক্য 'এ অবস্থায় তোমাদের জন্য তোমাদের ধর্ম এবং আমার জন্য আমার ধর্ম'-এই আয়াতকে রহিত ভাবার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ কাফেরদের জোর করে মুসলমান বানানো যাবে না, তবে জিহাদও নিষিদ্ধ নয়; অন্য কথায়, কাফেরদের বলা হচ্ছে, যদি তোমরা আল্লাহর উপাসনা করতে ইচ্ছুক না হও, তবে তোমাদের যা ইচ্ছা কর, আর যেমন করবে তেমন ফলই পাবে। কিংবা বলা যায় আমাদের জন্য আমাদের কর্ম, আর তোমাদের জন্য তোমাদের কর্ম।

শির্ক ও কুফরির মোকাবেলায় মহানবীর (সা) এই যে দৃঢ় প্রতিরোধ ও আপোষহীনতা তা থেকে বোঝা যায় ইসলামের মূল নীতিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয় এমন কোনো লেন-দেন বা আপোষ করা যাবে না। এ ধরনের অন্যায্য আবদারের ব্যাপারে যতই চাপ আসুক বা যত বারই যত লোভ দেখিয়েই বলা হোক না কেন বিন্দুমাত্র নমনীয়তাও দেখানো যাবে না, বরং এমন কঠোর ও স্পষ্ট ভাষায় প্রত্যাখ্যান করতে হবে যে ইসলামের শত্রুরা যেন আপোষের ব্যাপারে পুরোপুরি নিরাশ হয়ে যায় এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের প্রস্তাব দেয়ার কথা কল্পনায়ও না আনে। প্রত্যেক মুসলমানকে মনে রাখতে হবে মহান আল্লাহ হচ্ছেন এক ও অদ্বিতীয় এবং অতুলনীয়। একমাত্র তিনিই ইবাদত বা উপাসনার যোগ্য। একমাত্র এ পথেই রয়েছে মানুষের সৌভাগ্য।#

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/১২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ