ফেব্রুয়ারি ২০, ২০২০ ১৮:০৮ Asia/Dhaka

সুরা ফালাক্ব পবিত্র কুরআনের ১১৩তম সুরা তথা সর্বশেষ সুরার আগের সুরা। মক্কায় নাজিল হওয়া এ সুরায় রয়েছে ৫টি বাক্য বা আয়াত।

এ সুরা প্রত্যেক মুমিন মুসলমানকে সব অবস্থায় মহান আল্লাহর কাছে আশ্রয় নেয়ার ও নিজেকে আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়ার শিক্ষা দেয় । মহান আল্লাহর আশ্রয়ে থাকা ব্যক্তি সব ধরনের অনিষ্ট থেকে নিরাপদ ও নিশ্চিন্ত থাকতে পারেন। ফালাক্ব শব্দের অর্থ প্রভাত।

সুরা ফালাক্বে মহান আল্লাহ বলেছেন:

১) হে নবী আপনি বলুন, ‘আমি প্রভাতের প্রভুর আশ্রয় কামনা করছি, (২) তিনি যা সৃষ্টি করেছেন তার অনিষ্ট হতে। (৩) এবং রাতের অনিষ্ট হতে, যখন তা গভীর অন্ধকারে আচ্ছন্ন হয় (৪) এবং সেইসব প্রতারক বা সম্মোহনকারী নারীর অনিষ্ট হতে যারা গ্রন্থিতে ফুৎকার দিয়ে থাকে, (৫) এবং হিংসুকের অনিষ্ট হতে যখন সে হিংসা করে।’-

মানুষ যে কোনো সময়ই বিপদের শিকার হতে পারে। কিন্তু কখন, কোথায় ও কিভাবে বা কার মাধ্যমে বিপদ আসবে তা মানুষ জানে না।  তাই মহান আল্লাহর আশ্রয় নেয়া হচ্ছে এমন এক আত্মিক ও মানসিক অবস্থা যে অবস্থায় মানুষ নিজেকে সর্বশক্তিমান ও সর্ব-প্রজ্ঞাবান আল্লাহর কাছে সঁপে দেয়। মহান আল্লাহ সবই জানেন, দেখেন ও শোনেন। মহান আল্লাহর সৃষ্ট নানা সৃষ্টির অনিষ্ট থেকেও আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা করতে বলা হয়েছে সুরা ফালাক্বে। আল্লাহর সৃষ্টির অনিষ্ট বলতে দূরাচারি মানুষের, শয়তানের, নিজের কুপ্রবৃত্তির এবং মন্দ কাজ ও ঘটনাগুলোর অনিষ্ট এসব কিছুকেই বোঝায়। তাই এ-সব থেকেই আল্লাহর আশ্রয় চাইতে হবে। মানুষ যদি সুদৃঢ় আত্মিক-বিশ্বাস নিয়ে আল্লাহর আশ্রয়ে থাকে তাহলে ধূর্ত শত্রুরা তার যত ক্ষতিরই চেষ্টা করুক না কেন তাতে তারা সফল হবে না। মহান আল্লাহ দুর্বৃত্তদের অনিষ্টকে বান্দাদের ঈমানের মাধ্যমে আগেই প্রতিহত করতে অথবা দুর্বৃত্তদের অনিষ্ট-তৎপরতা চলমান অবস্থায়ও বানচাল করতে পারেন।

দুর্বৃত্ত বা শয়তান প্রকৃতির কারো কাছ থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া প্রসঙ্গে মনে রাখা দরকার আল্লাহর কোনো সৃষ্টিই প্রকৃতিগতভাবে বা সত্তাগতভাবেই অনিষ্টকারী নয়। বরং আল্লাহর সব সৃষ্টিই কল্যাণকর। সুরা সাজদার সাত নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, তিনি তাঁর প্রত্যেকটি সৃষ্টিকে সুন্দর করেছেন বা সুন্দর প্রকৃতি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি যখন সৃষ্টির বিধান লঙ্ঘন করে বা তার সঠিক পথ থেকে বিচ্যুত হয় তখনই দেখা দেয় অনিষ্ট। যেমন, লোহা কল্যাণকর ধাতু। কিন্তু লোহার তৈরি চাকুকে অপব্যবহারও করা যায়। যা মানুষের সঙ্গে খাপ খায় বা মানুষের জন্য শোভনীয় তাই কল্যাণকর এবং তা মানুষের উন্নতি ও পূর্ণতার মাধ্যম। আর যা কিছু মানুষের প্রকৃতির সঙ্গে মিল খায় না ও যা শোভনীয় নয় সেসবই মানুষের অনুন্নতি ও বিচ্যুতির মাধ্যম।

সুরা ফালাক্বের দ্বিতীয় আয়াতে যদিও সব ধরনের মন্দ বা অনিষ্ট থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে তবুও এ সুরা বিশেষ গুরুত্বের কারণে কয়েকটি অনিষ্টের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করেছে: এইসব অনিষ্ট হল রাতের, গিঁটে ফুকদানকারী সম্মোহনকারী নারীর ও হিংসুকের অনিষ্ট।

অশান্তি সৃষ্টিকারীরা ও দুর্বৃত্তরা বেশিরভাগ ক্ষেত্রে রাতের বেলায় ষড়যন্ত্র করে, রাতে অভিযান চালায় ও রাতের আঁধারকে ব্যবহার করে নানা অপতৎপরতা চালায় যাতে তাদেরকে সনাক্ত করা না যায়রাতে মানুষ নিদ্রামগ্ন থাকে বা ক্লান্ত ও অপ্রস্তুত থাকে। ফলে মানুষের ক্ষতি করা এ সময় সহজ হয়। রাতেই গোপন স্থান বা অদৃশ্য থেকে আসা তির ও গুলির শিকার হয়েছে অনেক মানুষ। আর এ জন্যই রাতের অনিষ্ট থেকে আল্লাহ'র আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে সুরা ফালাক্বে। মিথ্যা প্রচার, একের কথা অন্যের কাছে লাগানো, গুজব ছড়ানো- এসবও হচ্ছে দুর্বৃত্ত ও প্রতারকদের কাজ।

সুরা ফালাক্বের শেষ আয়াতে হিংসুকের অনিষ্টের কথা এসেছে। হিংসা সবচেয়ে কুৎসিত নৈতিক রোগ। কুরআনে পাশবিক আচরণ ও শয়তানের কুমন্ত্রণার সারিতে স্থান দেয়া হয়েছে হিংসাকে। হিংসুক অন্যদের অকল্যাণ চায় এবং চায় যে অন্যদের প্রাচুর্য হ্রাস পাক। দুর্বল ঈমান, সংকীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি, কার্পণ্য এসব হল হিংসার কয়েকটি উৎস। হিংসা বহু ধরনের ভুল এবং ব্যক্তিগত ও সামাজিক অপরাধের মূল উৎস।

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সা)'র পবিত্র আহলে বাইতের সদস্য ইমাম বাক্বির (আ) বলেছেন, 'হিংসা মানুষের ঈমানকে গ্রাস করে ঠিক যেভাবে আগুন শেষ করে দেয় কাঠ বা লাকড়িকে।' হিংসার আগুন থামাতে না পেরে হিংসুকরা যে কোনো অপরাধ করতে পারে। হিংসার কারণে মানুষ আত্মঘাতি তৎপরতাও চালায়। আর এ জন্যই সুরা ফালাক্বের শেষ আয়াতে হিংসুকের অনিষ্ট হতেও আল্লাহর আশ্রয় চাইতে বলা হয়েছে।

অল্পে তুষ্টি ও ধৈর্য ধরে আত্ম-উন্নয়ন ঘটানো হিংসা নামক রোগের অন্যতম ওষুধ। বস্তুগত ধন-সম্পদের ক্ষেত্রে মুমিনের উচিত নিজের চেয়েও বেশি অভাবগ্রস্ত বা দরিদ্রদের দিকে নজর রাখা।#

 

পার্সটুডে/আমির হুসাইন/আবু সাঈদ/২০

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ