ইরানের পণ্যসামগ্রী: পোশাক শিল্পেও রয়েছে বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস
গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্প নিয়ে। টেক্সটাইল শিল্পে ন্যানো বিজ্ঞান উৎপাদনে বিশ্বে শতকরা প্রায় তিন ভাগের অধিকারী ইরান।
জ্ঞান-বিজ্ঞান উৎপাদনে ইরানের শতকরা এই হার ফ্রান্সের সম পর্যায়ের এবং স্পেন ও জাপানের মতো দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে।
আজকের আসরে আমরা যাবো টেক্সটাইল শিল্পের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট আরেকটি শিল্পের ভুবনে। এই শিল্পটি হলো গার্মেন্টস বা পোশাক তৈরি শিল্প। পৃথিবীব্যাপী এখন এই শিল্পটির ব্যাপক সমাদর রয়েছে। ইরান বিষয়ক গবেষক ও বিশেষজ্ঞদের লেখাজোখা অনুযায়ী এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়েছে যে ইরানে টেক্সটাইল শিল্প তথা বুনন ও সূতা তৈরি শিল্পের সূত্রপাত হয়েছিল খ্রিষ্টপূর্ব দশ হাজার বছর আগে। কাশানের সিয়ালক এলাকায় বুনন শিল্প ও সূতা তৈরি শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রাচীন যেসব নিদর্শন পাওয়া গেছে সেসব থেকে বিশেষজ্ঞরা এই মত দিয়েছেন। ফেব্রিকস এবং সূতা তৈরির পরপরই আসে পোশাক তৈরির প্রসঙ্গ। সুতরাং ইরানে পোশাক তৈরির ইতিহাস যে প্রাচীন তা তো বলারই অপেক্ষা রাখে না। যাই হোক পোশাক শিল্প উৎপাদন প্রসঙ্গে আমরা আজকের আলোচনা শুরু করার চেষ্টা করবো।

আধুনিক এই জীবনে পোশাক শিল্প পণ্যের ভূমিকা বেশ গুরুত্বপূর্ণ ও জমকালো। পোশাক শিল্পটি মানুষের জন্য একটি নিত্য প্রয়োজনীয় পণ্য। পোশাক ছাড়া এক মুহূর্তও চলে না। নিজেকে ঢেকে রাখতে এই পোশাকের কোনো বিকল্প নেই। এই পোশাক আবার একটি সমাজ এবং সংস্কৃতিকে ধারণ করে। পোশাক শিল্প একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নেও ব্যাপক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে গার্মেন্টস শিল্প ও কারখানা গড়ে ওঠাকে কেন্দ্র করে একদিকে যেমন কর্মসংস্থানের একটি বিশাল ক্ষেত্র তৈরি হয়েছে অপরদিকে বিদেশি বিনিয়োগও আকৃষ্ট করতে সক্ষম হয়েছে এই শিল্পখাত। পোশাক শিল্প পণ্যে প্রচুর ভাটও রয়েছে। এই শিল্পখাতটি এমন যে মাত্র দুই ডলার সমপরিমাণের তুলার সূতা দিয়ে একটি টি-শার্ট তৈরি করা যায়। আর ওই টি-শার্টটিই বিখ্যাত কোনো ব্র্যান্ডের লেবেল লাগিয়ে আশি ডলার সমমূল্যে বিক্রি করা সম্ভব। এই শিল্পের আরেকটি শক্তিশালী দিক হলো রপ্তানি বাণিজ্য এবং বিদেশি মুদ্রা আহরণ করা।
বর্তমান বিশ্বে বহু দেশ পোশাক শিল্প উৎপাদন করে দেশের অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও রপ্তানি করছে। স্পেন, ইতালি, তুরস্ক, চীন, বাংলাদেশ, তাইওয়ান, থাইল্যান্ড, ভিয়েতনাম এবং শ্রীলঙ্কার মতো দেশগুলো পোশাক শিল্প রপ্তানির সঙ্গে জড়িত। এসব দেশের রপ্তানি পণ্যের প্রায় অর্ধেকই দখল করেছে এই পোশাক শিল্প। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী ২০১৩ সালে পোশাক শিল্প রপ্তানির পরিমাণ ছিল চল্লিশ হাজার কোটি ডলারের মতো। বর্তমানে এই পোশাক শিল্প রপ্তানির পরিমাণ দাঁড়িয়েছে এক লাখ দশ হাজার কোটি ডলারে। বিশ্বের যেসব দেশ এইসব পণ্য ব্যবহারের সঙ্গে বেশিরভাগ সংশ্লিষ্ট সেগুলো হলো: ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশসমূহ, আমেরিকা, চীন এবং জাপান। এইসব দেশে বিশ্বের এক তৃতীয়াংশ জনসংখ্যার বসবাস রয়েছে অথচ শতকরা পঁচাত্তর ভাগ তৈরি পোশাক এরাই ব্যবহার করছে। বিশ্বের বাকি পঁয়ষট্টি শতাংশ মানুষ উৎপন্ন পোশাকের শতকরা মাত্র পঁচিশ ভাগ ব্যবহার করে।
মনে করা হচ্ছে যে বিশ্বের পোশাক ও ফ্রেব্রিক শিল্প ২০২৫ সালে চোখে পড়ার মতো উন্নতি করবে। বর্তমানে বিশ্বে জনপ্রতি আনুমানিক ১৫৩ ডলার ব্যয় করছে পোশাক খাতে। এই শতকরা হার ৮৩ ভাগ বেড়ে ২৮০ ডলারে উন্নীত হতে পারে। ২০২৫ সালে বিশ্বে পোশাকের বাজারমূল্য দুই ট্রিলিয়ন বা দুই লক্ষ কোটি ডলার ছেড়ে যেতে পারে। তার মানে হলো বর্তমান বিশ্ব বাজারের পোশাকের মূল্যের তুলনায় আরও এক লাখ কোটি ডলার বেড়ে যাবে। সেইসঙ্গে এই শিল্পে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানের সুযোগও বেড়ে যাবে। ২০২৫ সালে বিশ্ব পোশাক বাজারের উন্নয়নে মূল ভূমিকা রাখবে চীন, বাংলাদেশ ও ভারত। উৎপাদন খরচ বৃদ্ধিসহ আরও বহু কারণে চীনের পোশাক শিল্পের উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে বেশ ধীর গতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এই সমস্যাটার কারণে পোশাকের বিশ্ব বাণিজ্যে চীনের কোটা কমে যাবার আশঙ্কা রয়েছে। আর চীনের অংশ কমে গেলে বিশ্বের অন্যান্য দেশের জন্য সেই স্থান পূরণের সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বর্তমানে বিশ্বে তৈরি পোশাক সরবরাহ করছে মূলত এশিয় দেশগুলো। ইরানি পোশাক শিল্পেরও রয়েছে বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস। এখানে রয়েছে পোশাক তৈরির হাজার হাজার কারখানা। রয়েছে দক্ষ পোশাক শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞ। সেজন্য ইরানও এই পোশাক শিল্পে মোটামুটি সফল। ইরানে যতগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসবের মধ্যে শতকরা এগারো ভাগের বেশি হলো পোশাক শিল্প কারখানা। দুই লাখ আশি হাজারের বেশি জনশক্তি সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এই শিল্পখাতে তৎপরতার অর্থমূল্য চৌদ্দ থেকে পণর শ কোটি ডলারের মতো। মনে করা হচ্ছে যে ২০২৫ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণ মানে তিন হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।#
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০২