মার্চ ০৫, ২০২০ ১৬:১৭ Asia/Dhaka

আশা করি যে যেখানেই আছেন ভালো ও সুস্থ আছেন। আপনারা জানেন যে, ইরানের জলে-স্থলে, ক্ষেত-খামারে, বাগ-বাগিচায়, কল-কারখানায় উৎপাদিত হয় বিচিত্র সামগ্রী।

এর পাশাপাশি খনি থেকে উৎপন্ন  বিভিন্ন সামগ্রী এবং ইরানি নরনারীদের মেধা ও মনন খাটিয়ে তৈরি করা হয় বিভিন্ন শিল্পপণ্য। গত আসরে আমরা আলোচনা করেছিলাম টেক্সটাইল ও পোশাক শিল্পে ইরানের অগ্রগতি নিয়ে। টেক্সটাইল শিল্পে ন্যানো বিজ্ঞান উৎপাদনে বিশ্বে শতকরা প্রায় তিন ভাগের অধিকারী ইরান। জ্ঞান-বিজ্ঞান উৎপাদনে ইরানের শতকরা এই হার ফ্রান্সের সম পর্যায়ের এবং স্পেন ও জাপানের মতো দেশগুলোর চেয়ে অনেক এগিয়ে রয়েছে।

আমরা আরও বলেছিলাম যে, ইরানি পোশাক শিল্পের রয়েছে বেশ সমৃদ্ধ ইতিহাস। এখানে রয়েছে পোশাক তৈরির হাজার হাজার কারখানা। রয়েছে দক্ষ পোশাক শ্রমিক ও বিশেষজ্ঞ। সেজন্য ইরানও এই পোশাক শিল্পে মোটামুটি সফল। ইরানে যতগুলো শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে সেসবের মধ্যে শতকরা এগারো ভাগের বেশি হলো পোশাক শিল্প কারখানা। দুই লাখ আশি হাজারের বেশি জনশক্তি সরাসরি এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত রয়েছে। এই শিল্পখাতে তৎপরতার অর্থমূল্য চৌদ্দ থেকে পণর শ কোটি ডলারের মতো। মনে করা হচ্ছে যে ২০২৫ সালে এর পরিমাণ দ্বিগুণ মানে তিন হাজার কোটি ডলারে দাঁড়াতে পারে।

একটি দেশের পোশাকের মান ও উন্নয়নের বিষয়টি বোঝা যায় পোশাকের মূল্য, গুনগত মান বা কোয়ালিটি এবং ব্র্যান্ডের ওপর। এই তিনটি বৈশিষ্ট্য যে-কোনো দেশের পোশাকের উন্নয়নের ওপর প্রভাব ফেলে। বিশ্বের নামকরা ব্র্যান্ড ক্রেতা বিক্রেতাসহ পোশাক প্রস্তুতকারীকেও বিভিন্নভাবে সহযোগিতা করে। ক্রেতা ব্র্যান্ড দেখেই বুঝতে পারে এর কোয়ালিটি ভালো। ক্রেতা ব্র্যান্ডের একটি পণ্য কিনে নিশ্চিন্ত থাকে যে যে টাকাটা দিয়ে সে পোশাকটি কিনেছে সেটা সত্যিই গুনমান বিচারে উন্নত এবং ভালো জিনিসটাই সে কিনেছে। ব্র্যান্ড পোশাক শিল্পে বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগের ক্ষেত্রে অনুকূল পরিস্থিতি সৃষ্টি করে। অস্বীকার করার কোনো উপায় নেই যে তৈরি পোশাক শিল্পে একটি ব্র্যান্ড ভ্যালু পৃথিবীর বুকে সংশ্লিষ্ট দেশকে সহজেই পরিচিত করে তোলে। ব্র্যান্ড পরিচিতি পেয়ে গেলে তার গ্রহণযোগ্যতা যেমন বেড়ে যায় তেমনি ওই পোশাকের মূল্যও বেড়ে যায়।

ইরানে পোশাক শিল্পে এরকম বেশ কিছু ব্র্যান্ড তৈরি হয়ে গেছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যেতে হাকুপিয়নের কথা, বারাক, জামে, গেরাদ, পতান জামে, ডেনিস তেরিকো, তিন পুশ, মক্সিম ইত্যাদির কথা। এইসব ব্র্যান্ডের কোনো কোনোটির বয়স অর্ধ শতাব্দিরও বেশি। বিশেষ করে হাকুপিয়নের মতো আরও কয়েকটি ব্র্যান্ড দেশের চাহিদা মেটানোর পাশাপাশি বিদেশেও উপযুক্ত বাজার তৈরি করতে সক্ষম হয়েছে। হাকুপিয়ন মূলত জেন্টস আইটেমই তৈরি করে। তাদের তৈরি পোশাক বিশ্বব্যাপী ব্যাপক সুনাম কুড়িয়েছে। এমনকি বেশ কয়েকটি আন্তর্জাতিক পুরস্কারও তারা লাভ করেছে। ইরানে পোশাক তৈরি শিল্পে যেসব প্রতিষ্ঠান আর্থিক সহযোগিতা দিয়ে থাকে তারা ইতোমধ্যে প্রাকৃতিক তুলা দিয়ে তৈরি বিভিন্ন ডিজাইন ও নকশার পোশাক বিশ্ব বাজারে প্রবেশ করাতে সক্ষম হয়েছে। এদেরই একটি প্রতিষ্ঠানের নাম হলো 'তানে দোরোস্ত'।

সাম্প্রতিক একটি খবর আমাদের আলোচনার সঙ্গে প্রাসঙ্গিক হবে বলে মনে করি। সেটি হলো: ২০১৮ সালের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসে ইরান থেকে ৭১৫ মিলিয়ন মার্কিন ডলারের পোশাক রপ্তানি হয়েছে। এই আয় আগের অর্থবছরের প্রথম সাত মাসের রপ্তানি পোশাকের তুলনায় ২৮ শতাংশ বেশি। ইরানের শিল্প,খনি ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয় অধিভুক্ত প্রতিষ্ঠান টেক্সটাইল,অ্যাপারেল ও লেদার ইন্ডাস্ট্রি অরগানাইজেশনের মহাপরিচালক  গোলনার নাসরোল্লাহি এই তথ্য জানিয়েছেন। ৬ষ্ঠ আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনী ‘ইরান মোড ২০১৮’ র অবকাশে এক আলোচনায় তিনি এসব তথ্য জানান। বিগত মাসগুলোতে বৈদেশিক মুদ্রার আকাশচুম্বি দরের কথা উল্লেখ করে এই খাতে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধির অঙ্গীকার ব্যক্ত করেন তিনি। একইসাথে কাপড় ও পোশাক রপ্তানি প্রবৃদ্ধির পেছনে দুটি মূল কারণের কথাও উল্লেখ করেছেন নাসরোল্লাহি।

শিল্প মন্ত্রণালয়ে পোশাক শিল্পের কাঁচামাল সরবরাহের প্রতি সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দেয়া হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন,দেশের বর্তমান অর্থনৈতিক অবস্থা পোশাক উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোর অনুকূলে রয়েছে। তাদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল পুরোপুরিভাবে সরবরাহ করা হচ্ছে বলে জানান তিনি। এই কর্মকর্তা আরও বলেন,আঁশের মতো মৌলিক কাঁচামালের আমদানি গত বছরের একই সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য ভাবে বাড়তে দেখা গেছে। এতে প্রমাণিত হয়,পোশাক শিল্প ও এর উৎপাদন ইউনিটগুলোর কার্যক্রমে উন্নতি হয়েছে। তেহরানের পারমানেন্ট ইন্টারন্যাশনাল ফেয়ারগ্রাউন্ডসে নিয়মিতই আন্তর্জাতিক পোশাক প্রদর্শনী শুরু হয়। যা ইরানটেক্সট নামেও পরিচিত। এই মেলাই প্রমাণ করে ইরানে পোশাক শিল্পের অগ্রগতি কোন পর্যায়ে রয়েছে। ইরান থেকে এখন নারী-পুরুষ এবং শিশুদের পোশাকও রপ্তানি হচ্ছে। ডিজাইন এবং মানসহ রঙের বৈচিত্র্যের কারণে ইরানি পোশাকের গ্রহণযোগ্যতা বেশি। সাম্প্রতিক বছর গুলোতে তেল বহির্ভুত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে ইরানের পোশাক শিল্প তৃতীয় স্থান অধিকার করতে সক্ষম হয়েছে।       

 ইরানের পোশাকের বাজারের মধ্যে রয়েছে ইরাক, আফগানিস্তান, সেন্ট্রাল এশিয়া এবং পূর্ব এশিয়ার কোনো কোনো দেশ। ইরানের এই পোশাক শিল্প খাতটি পুঁজি বিনিয়োগের জন্য যথেষ্ট উপযোগী। একদিকে ভৌগোলিক অবস্থানগত কারণে বিশ্ব বাজারে ইরানের পোশাক রপ্তানি করা সহজ অপরদিকে অর্থনৈতিক কৌশলগত দিক থেকেও ইরানের অবস্থান যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সুতরাং কেউ যদি ইরানের পোশাক শিল্প খাতে বিনিয়োগ করার চিন্তা করে তাহলে অতি দ্রুতই ফলাফল আশা করতে পারে। পোশাক শিল্পে ইরানের নীতিমালা বেশ আশাব্যঞ্জক। তাছাড়া গার্মেন্টসের ক্ষেত্রে বিশেষ অর্থনৈতিক উপশহর প্রতিষ্ঠা করার কথা ভাবছে ইরান। এক শ পঞ্চাশ হেক্টর পরিমাণ জায়গার ওপর নির্মিতব্য এই উপশহরে তিন শ সাতটি রপ্তানি প্রতিষ্ঠান থাকবে। বিভিন্ন রকমের পোশাক তৈরি, ডাইরেক্ট আউটলেট সেন্টার তৈরি, সেলাই বিষয়ক ডিজাইন অ্যান্ড টেকনোলজির ওপর আন্তর্জাতিক প্রশিক্ষণ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করা ইত্যাদি এই উপশহরের পরিকল্পনার অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

ইরান এভাবেই গার্মেন্টস শিল্পের দিকে পা পা করে এগিয়ে যাচ্ছে। সুষ্ঠু পরিকল্পনার সঙ্গে গবেষণামূলক তৎপরতার সাহায্যে এগিয়ে গেলে ইরান যে অচিরেই পোশাক শিল্পে বিশ্বব্যাপী পরিচিত একটি দেশে পরিণত হবে-তাতে আর সন্দেহ কী! যারা সঙ্গ দিলেন সবাইকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৫

ট্যাগ