জুন ০২, ২০২০ ১৬:৩০ Asia/Dhaka

রেডিও তেহরানের প্রাত্যহিক আয়োজন কথাবার্তার আসরে স্বাগত জানাচ্ছি। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আজ ২ জুন মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরের শুরুতে ঢাকা ও কোলকাতার গুরুত্বপূর্ণ বাংলা দৈনিকগুলোর বিশেষ বিশেষ খবরের শিরোনাম তুলে ধরছি।

বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে ৩৭ জনের মৃত্যু আক্রান্ত ২৯১১-দৈনিক ইত্তেফাক
  • করোনা এখনও হত্যাকারী-বলেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা-দৈনিক প্রথম আলো
  • করোনায় আক্রান্ত বাংলাদেশের সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মাদ নাসিম–যুগান্তর অনলাইন
  • উড়োজাহাজের চেয়ে বেশি ভাড়া বাসে-দৈনিক কালের কণ্ঠ
  • ঢাকা লাল পুরেপুরো লকডাউন করতে হবে-প্রফেসর ডা.মোজাহেরুল হক-দৈনিক মানবজমিন

ভারতের শিরোনাম:      

  • ভারতে করোনায় আক্রান্ত প্রায় দুই লক্ষ, মৃত্যু ৫৫৯৮ -দৈনিক আজকাল
  • আর্থিক বৃদ্ধি ফিরে আসবেই, মোদির আশ্বাস শিল্পমহলকে-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
  • ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসন নিয় চীনকে একহাত নিল আমেরিকা -দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন

পাঠক/শ্রোতা! এবারে চলুন, বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক। বিশ্ব মহামারি করোনাভাইরাসের সর্বশেষ আপডেট খবর বিশেষ গুরুত্বসহ পরিবেশিত হয়ছে বিশ্ব মিডিয়ায়। আর বাংলাদেশে গণপরিবহন খুলে দেয়া, অতিরিক্ত বাস ভাড়া এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা- না চলার খবরটি বেশ গুরুত্বসহ পরিবেশিত হয়েছে। তো একনজরে সেসব খবর দেখে নেয়া যাক।

বিশ্ব করোনা

বিশ্ব করোনা পরিস্থিতি: জনস হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিসংখ্যান অনুযায়ী করোনা মৃত্যুর মিছিলে ৩ লাখ ৭৫ হাজার ৫২৬, আক্রান্ত ৬২ লাখ ৬৫ হাজার ৪৯৬। করোনা সম্পর্কে যুগান্তরসহ অন্যান্য দৈনিকে লেখা হয়েছে, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে,করোনার শক্তিক্ষয়ের কোনও প্রমাণ এখনও মেলেনি। যদিও কোনো কোনো বিশেষজ্ঞ বলেছিলেন গরম পড়লে প্রকোপ কমতে পারে। কিন্তু তার কোনো লক্ষণ নেই; বরং বাড়ছে।

বাংলাদেশের করোনা পরিস্থিতি: 

বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় রেকর্ড ৩৭ জনের মৃত্যু হয়েছে। আক্রান্ত ২৯১১। ইত্তেফাকসহ প্রায় সব দৈনিকের এ খবরে লেখা হয়েছে, মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে বাংলাদেশে। প্রথম আলোর খবর- গণফোরাম বলেছে-সরকার করোনা নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ। এদিকে লকডাউন তুলে নেয়া হয়েছে, অফিস আদালত ও গণপরিবহন খুলে দেয়া হয়েছে। তবে বলা হয়েছে-করোনার বিধি বিধান মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি গণপরিবহনে ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়েছে ৬০ ভাগ। বিষয়টি নিয়েও চলছে আলোচনা সমালোচনা। এ সম্পর্কে দৈনিক মানবজমিন লিখেছে, ভাড়া বেড়েছে, অতিরিক্ত ভাড়া নেয়া হচ্ছে। যাত্রীরা প্রতিবাদ করছে। স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে আংশিক। এদিকে করোনার মধ্যেও প্রবাসীরা মে মাসে ১২ হাজার কোটি টাকা রেমিট্যান্স পাঠিয়েছে। তারমধ্যে লিবিয়ায় ২৬ বাংলাদেশির মর্মান্তিক হত্যার ঘটনা ঘটল। এ ঘটনায় যদিও দু একজন গ্রেফতার হয়েছে। জীবনের মায়া ত্যাগ করেই এভাবে মানুষ প্রবাসে যায়। এতকিছুর পরও প্রবাসীরা দেশে সুযোগ-সুবিধা ও সম্মান পান না বলে প্রায়ই মিডিয়ার খবরে উঠে আসে। 

করোনা রোগী সাহাবউদ্দিনের সঙ্গে নির্মমতা-মৃত্যুর আগে বাইরে থেকে দরজার ছিটকানি লাগিয়ে দেন স্ত্রী-সন্তান, পানি চেয়েও পান নি

দৈনিক মানবজমিনের এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ফেনীর সোনাগাজীতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের উপসর্গ জ্বর, কাশি ও শ্বাসকষ্ট নিয়ে বদ্ধ ঘরে মৃত্যু হওয়া সাহাব উদ্দিনের (৫৫) মৃত্যুর পূর্বে বীভৎস চিত্র প্রকাশ পেয়েছে। মৃত্যুর আগে পরিবারের লোকজন তাঁকে ঘরে একা রেখে বাইরে থেকে দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে রাখে। দেওয়া হয়নি দুপুরে খাবার। মৃত্যুর সময় পানি চেয়েও পায়নি। মৃত্যুর পরও কাছে আসেননি স্ত্রী, ছেলে–মেয়ে ও জামাতাসহ কোন স্বজন। মৃত্যুর পর পায়নি স্থানীয় মসজিদের খাটিয়া, কেউ দেয়নি কবর খোঁড়ার কোদালও।

 ৮৯ ভাগ নমুনা নেয়া হয় মৃত্যুর পর-দেশে উপসর্গ নিয়েই মৃত্যু বেশি

বাংলাদেশে করোনা উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু

দৈনিক যুগান্তরসহ বেশ কয়েকটি  দৈনিকের এ প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, ৮ মার্চ থেকে ১ জুন পর্যন্ত সরকারি হিসাবে করোনায় মারা গেছেন ৬৭২জন। তবে উপসর্গ নিয়ে প্রায় এক হাজার মানুষের মৃত্যু হয়েছে। যা সরকারি হিসাবের বাইরে। এদের উপসর্গ ছিল, কিন্তু পরীক্ষা করাতে না পারায় করোনা নিশ্চিত হয়নি। সংক্রমণ নিশ্চিত করতে, চিকিৎসাসেবা পেতে রোগীর স্বজনরা হাসপাতালের দ্বারে দ্বারে ঘুরেছেন। কিন্তু পরীক্ষাও করাতে পারেননি, পাননি চিকিৎসাও।

প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এ ধরনের রোগীর অধিকাংশই অশেষ কষ্ট ভোগ করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছেন। এরপর তাদের দেহে কোভিড-১৯’র সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া গেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর কথা বলা মানে এক প্রকার দায় এড়ানোর চেষ্টা করা। কারণ উপসর্গ নিয়ে যাদের মৃত্যু হয়েছে, তারা মূলত করোনায় মারা গেছেন। যখন একটি দেশে মহামারী বিরাজ করে, তখন উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু- এ কথা বলার কোনো যৌক্তিকতা থাকে না। এ প্রসঙ্গে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান-আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মুসতাক হোসেন যুগান্তরকে বলেন, উপসর্গ নিয়ে মৃত্যু প্রসঙ্গে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মন্তব্য হল- তারা মূলত এই রোগেই মারা গেছেন।

দেশে করোনায় পারিবারিক উপার্জন কমেছে ৭৪ শতাংশ'

দৈনিক সমকালে ব্রাকের একটি সমীক্ষা তুলে ধরে বলা হয়েছে, করোনাভাইরাসের প্রভাবে কর্মহীন হয়েছেন দেশের অধিকাংশ শ্রমজীবী মানুষ। কর্মহীন হয়ে পড়ায় পরিবার-পরিজন নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তারা। মানুষের আয় কমে গেছে।সমীক্ষার ফলাফল তুলে ধরে ড. অনন্য রায়হান বলেন, নিম্নআয়ের মানুষকে অস্বাভাবিকভাবে প্রভাবিত করা এই মহামারীর ফলে দেশের প্রায় ১০ কোটি ২২ লাখ মানুষ অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত দুর্বলতার ঝুঁকিতে রয়েছে। ১৪ লাখেরও বেশি প্রবাসী শ্রমিক চাকরি হারিয়ে দেশে ফিরে এসেছেন কিংবা ফিরে আসার অপেক্ষায় আছেন বলেও উল্লেখ করা হয় ওই গবেষণায়।

কোভিড-১৯ এবং জাতীয় বাজেট ২০২০-২০২১ 

নিম্ন আয়ের মানুষের জন্য কৌশল পুনর্বিবেচনা’ শীর্ষক ব্র্যাক, ডেটা সেন্স এবং উন্নয়ন সমন্বয়-এর এক যৌথ সমীক্ষায় ঐসব তথ্য উঠে এসেছে।গবেষণা ফলাফলে দেখা যায়, অর্থনৈতিক ও স্বাস্থ্যগত ঝুঁকিতে থাকা জনগোষ্ঠীর মধ্যে ৫ কোটি ৩৬ লাখ মানুষ চরম দরিদ্র। এদের মধ্যে নতুন করে চরম দরিদ্র হয়ে পড়া পরিবারগুলোও রয়েছে। উচ্চ অর্থনৈতিক ঝুঁকিতে থাকা চরম দরিদ্রের সংখ্যা ৪ কোটি ৭৩ লাখ এবং উচ্চ স্বাস্থ্যঝুঁকিতে রয়েছেন ৩ কোটি ৬৩ লাখ মানুষ।
এবার ভারতের করোনা পরিস্থিতিসহ কয়েকটি খবর তুলে ধরছি

দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনসহ প্রায় সব পত্রিকার খবরে লেখা হয়েছে,ভারতে করোনা আক্রান্ত প্রায় দু লাখের কাছাকাছি, মহারাষ্ট্রেই ৭০ হাজার। এদিকে ব্লুমবার্গের বরাত দিয়ে ভারতের করোনা পরিস্থিতি নিয়ে  কোনো কোনো দৈনিকে লেখা হয়েছে, মুম্বাইয়ের হাসপাতালে লাশের স্তূপ, ভীতিকর পরিস্থিতির সৃষ্টি করেছ।

আর্থিক বৃদ্ধি ফিরে আসবেই, মোদির আশ্বাস শিল্পমহলকে

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি

দৈনিক আনন্দবজার পত্রিকার খবর, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি শিল্পমহলকে আশ্বাস দিয়ে বলেছেন, করোনা পরিস্থিতি পেরিয়ে ভারতের অর্থনীতি ফের বৃদ্ধির মুখ দেখবে। সিআইআই এর বার্ষিক সম্মেলনে মোদি একথা বলেন। ভারতে প্রথম দফা আনলকডাউন শুরু হওয়ার পর মোদি দেশের অর্থনীতি নিয়ে আত্মনির্ভরতার কথা শোনালেন। তবে লকডাউনের জেরে এক প্রকার সেখানকার অর্থনীতি স্তব্ধ হয়ে গেছে। যখন তিনি আশ্বাসের কথা বললেন তখনও ভারতে প্রতিদিনই করোনায় মৃত্যুর সংখ্যা বাড়ছে লাফিয়ে লাফিয়ে।

ভারতের বিরুদ্ধে আগ্রাসন নিয় চীনকে একহাত নিল আমেরিকা

এদিকে চীন ভারত সীমান্ত উত্তেজনা নিয়ে আজকাল ও আনন্দবাজার পত্রিকা লিখেছে, চীনের সমালোচনা করে আমেরিকা বলেছে, ভারত সীমান্তে চীন আগ্রাসী হয়ে উঠেছে। এছাড়া দৈনিক আজকালের একটি কষ্টদায়ক খবরে বলা হয়েছে, আম্পানের পর ১২ দিন কেটে গেলেও পশ্চিমবঙ্গে ক্ষতিগ্রস্ত অনেকের ঠিকানা এখনও খোলা আকাশের নিচে। তাছাড়া প্রায় ৫ লক্ষ গ্রাহক এখনও বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় অন্ধকারে আছে। শ্রোতাবন্ধুরা! কথাবার্তার আজকের আসর এখানেই গুটিয়ে নিচ্ছি। আবারও কথা হবে আগামী আসরে। ততক্ষণ সবাই ভালো ও সুস্থ থাকুন।

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ /বাবুল আখতার/২

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

 

 

ট্যাগ