জুলাই ০৬, ২০২০ ১৪:৩৭ Asia/Dhaka

গত আসরে আমরা বলেছিলাম ইরানের ওষুধ এবং ওষুধের কাঁচামাল বর্তমানে আফগানিস্তান,ইরাকসহ মধ্য এশিয়ার কয়েকটি দেশে রফতানি করা হচ্ছে।

ওষুধ উৎপাদন এবং চিকিৎসা সেবার দিক থেকে ইরানের এই অগ্রসরতার কারণে হেল্থ ট্যুরিজমের মতো একটি চমৎকার যোগাযোগ ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে ইরানের সঙ্গে অন্যান্য অনেক দেশের।

হেল্থ ট্যুরিজমটা অনেকটা ভ্রমণ বা পর্যটনের মতোই- স্বাস্থ্য পর্যটন। তবে এই পর্যটন স্বাস্থ্যোন্নয়ন কিংবা মনোদৈহিক সুস্থতা নবায়নের জন্য হয়ে থাকে। হেলথ ট্যুরিজমের ক্ষেত্রে পর্যটকদের যে কয়টি বিষয় মনে রাখতে হবে তা হলো যে দেশে চিকিৎসা নিতে যাচ্ছেন সে দেশে চিকিত্সা বিজ্ঞানের ইতিহাস, দক্ষ ও অভিজ্ঞ চিকিত্সক রয়েছেন কিনা,পর্যাপ্ত চিকিত্সা ও নার্সিংয়ের ব্যবস্থা আছে কিনা,স্ট্যান্ডার্ড হাসপাতাল এবং ক্লিনিক,আধুনিক চিকিত্সা সরঞ্জামে পরিপূর্ণতার পাশাপাশি চিকিত্সা বিষয়ক কার্যকর আইন ও বিধিবিধানগুলো রয়েছে কিনা ইত্যাদি। এইসব বৈশিষ্ট্য একটি দেশের চিকিত্সা পর্যটনের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে পরিগণিত। এই বৈশিষ্ট্যগুলো থাকলেই স্বাস্থ্য পর্যটন ক্ষেত্রে একটি দেশ সক্রিয় হয়ে উঠতে পারে।

স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রে ইরান যথেষ্ট সক্রিয় এবং উচ্চ সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন একটি দেশ। ইরানের রয়েছে সেরা বিশেষজ্ঞ এবং চিকিৎসক,আধুনিক সুযোগ সুবিধা সম্পন্ন ও উন্নত সরঞ্জামাদিতে সুসজ্জিত হাসপাতাল এবং যোগ্য চিকিত্সা কর্মী। সুতরাং চিকিৎসা ক্ষেত্রে প্রতিযোগীদের তুলনায় সাশ্রয়ী মূল্যে সেরা পরিষেবা দেওয়ার সুযোগ রয়েছে ইরানের। স্বাস্থ্যসেবা গ্রহণের জন্য তাই হাজার হাজার চিকিত্সা পর্যটক প্রতি বছর ইরান ভ্রমণ করে।

ইরানে প্রাকৃতিক ঝরনা, উষ্ণ প্রস্রবন বা স্পা'ময় এলাকার পাশাপাশি হেলথ ভিলেজ মানে স্বাস্থ্য গ্রাম থাকার কারণে স্বাস্থ্য পর্যটনের ক্ষেত্রে ইরানের সম্ভাবনা কয়েক গুণ বেড়ে গেছে। বলা যায় এইসব সুযোগ সুবিধা ইরানকে স্বাস্থ্য পর্যটন শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে একটি সংবেদনশীল দেশে পরিণত করেছে।

ইরানে এখন কার্ডিওভাসকুলার থেরাপি,জটিল হার্ট সার্জারি,বন্ধ্যাত্ব এবং বন্ধ্যাত্বের চিকিত্সা, স্পেশালাইজড ডেন্টাল চিকিৎসা,মেরুদণ্ডের  জটিল শল্য চিকিত্সা,নিউরো সার্জারি, ক্যান্সার সংক্রান্ত বিভিন্ন রোগের পাশাপাশি প্লাস্টিক সার্জারি এবং কসমেটিক সার্জারির ক্ষেত্রে এ অঞ্চলে তুলনামূলকভাবে উন্নতমানের পরিষেবা দেওয়ার সুব্যবস্থা রয়েছে। আধুনিক ল্যাপারোস্কোপিক চিকিত্সার মতো কিছু স্বাস্থ্যসেবা সরবরাহ করার ক্ষেত্রেও এ অঞ্চলে ইরানের অবস্থান অনন্য ও নজিরবিহীন। ল্যাপারোস্কোপির সাহায্যে কিডনি প্রতিস্থাপনে ইরান এশিয়ার মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে আর সমগ্র বিশ্বের মধ্যে তৃতীয় অবস্থানে রয়েছে ইরান। চিকিৎসা পর্যটনে ইরান চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রেও ব্যাপক পরিষেবা সরবরাহ করেছে। ইরানের চক্ষু চিকিৎসা বিভাগ উচ্চ স্তরের শিক্ষা এবং জনশক্তির দিক থেকে বিশ্বে একটি বিশেষ স্থানে উন্নীত হয়েছে। ইরানি বিশেষজ্ঞরা চোখের সমস্যা নির্ণয় করা এবং তার চিকিত্সার ক্ষেত্রে অত্যন্ত দক্ষতা দেখাতে পেরেছে।

বিরতির আগে বলছিলাম যে  ইরানি বিশেষজ্ঞরা চোখের সমস্যা নির্ণয় করা এবং তার চিকিত্সার ক্ষেত্রে ব্যাপক দক্ষতার পরিচয় দিয়েছে। চক্ষু চিকিৎসার ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে উন্নত যে পরীক্ষাটি প্রতি বছর অনুষ্ঠিত হয় ইরানের তরুণ গ্র্যাজুয়েটরা সেই উন্নত চক্ষুবিজ্ঞান পরীক্ষায় মানে আইসিও-তে উচ্চ নম্বর অর্জন করেন। ইরানে চক্ষুবিজ্ঞান বিষয়ক প্রযুক্তি ও কারিগরী সুবিধাগুলো বেশ উন্নত এবং আধুনিক মানের। ইরানের কোনো কোনো চক্ষু চিকিত্সা কেন্দ্রে এতো বিরল ও উন্নত মানের প্রযুক্তি এবং সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় যে বিশ্বের হাতে গোণা কয়েকটি দেশে মাত্র এ ধরনের প্রযুক্তি দেখতে পাওয়া যায়। ইরানে চক্ষু চিকিৎসার গুরুত্বপূর্ণ এবং গ্রহণযোগ্য যে কয়েকটি হাসপাতাল রয়েছে সেগুলোর মধ্যে একটি হলো ফারাবী স্পেশালাইজড চক্ষু হাসপাতাল। ১৯৪২ খ্রিষ্টাব্দে তেহরানের প্রাচীন শহরে এই হাসপাতালটি গড়ে উঠেছিল। বিশিষ্ট অধ্যাপক,অভিজ্ঞ চিকিত্সক এবং দক্ষ কর্মীদের সমন্বয়ে সমৃদ্ধ ইরানের এই বিশেষ চক্ষু হাসপাতালটি চক্ষু চিকিৎসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি কেন্দ্রে পরিণত হয়েছে।

ইরানের ফারাবী স্পেশালাইজড চক্ষু হাসপাতালটি পশ্চিম এশিয় অঞ্চলের জন্য একটি উন্নত চক্ষু চিকিত্সা কেন্দ্র। এ কথা একটু আগেই আমরা বলেছি। এ কারণেই ফারাবী হাসপাতালের অধ্যাপক এবং বিশেষজ্ঞ চিকিত্সকদের বিশেষ পরামর্শ নেওয়ার জন্য এবং ডায়াগনস্টিক ও থেরাপিউটিক পরিষেবার জন্যও সমগ্র পশ্চিম এশিয়া থেকে এই হাসপাতালে রোগী আসে। অনেক বড় বড় চিকিৎসকও ফারাবী হাসপাতালে তাদের রোগীদের পাঠান উন্নত চিকিৎসা নেওয়ার জন্য। মধ্য প্রাচ্যের অন্যতম এই চক্ষু হাসপাতালে বছরে চল্লিশ হাজারেরও বেশি ইরানি ও নন-ইরানী রোগী ভর্তি হন। সাতান্ন হাজারেরও বেশি রোগী সার্জারি মানে শল্যচিকিত্সা নেন। ফারাবী হাসপাতালের আইপিডি বিভাগে রোগীদের পরিপূর্ণ যত্ন নেওয়া এবং সার্বক্ষণিক তত্ত্বাবধানের স্বার্থে রয়েছে অত্যাধুনিক সুযোগসুবিধাসহ পরিপূর্ণ পর্যবেক্ষণ কক্ষ। এই বিভাগের সমস্ত স্টাফ আরবি ও ইংরেজি ভাষায় পারদর্শী। আইপিডির উদ্দেশ্য হল রোগীদের দ্রুত ও নির্ভুল চিকিৎসা দেওয়া এবং সেরা মানের পরিষেবা দেওয়া।

ফারাবী চক্ষু হাসপাতালের কথা বলছিলাম আমরা। এই চিকিৎসা কেন্দ্রটি চক্ষু চিকিৎসায় বিশ্বব্যাপী যেসব সুযোগ সুবিধা রয়েছে তার প্রায় সকল সেবাই দিয়ে থাকে সাধ্য ও সামর্থ অনুযায়ী। এই চক্ষু হাসপাতালটির পাশাপাশি ইরানে আরও বহু হাসপাতালও রয়েছে যেখানে উন্নত মানের চক্ষু চিকিৎসা দেওয়া হয়।'নূর' চক্ষু হাসপাতালের নাম এ ক্ষেত্রে উল্লেখ করা যেতে পারে। এই হাসপাতালেও ডায়াগনস্টিক,থেরাপিউটিক এবং প্রসাধনীসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্বের সেরা মানের চক্ষু সংক্রান্ত পরিষেবা দেওয়া হয়। 'নেগাহ' স্বেপশালাইজড আই হসপিটালের নামটিও উল্লেখ করা যেতে পারে। সমগ্র মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চলের জন্য অন্যতম প্রধান চক্ষু চিকিত্সা কেন্দ্র এটি। বুঝতেই পারা যায় যে এই হাসপাতালে কেবল ইরানি রোগীই নয় বরং ইরানের আশেপাশের বিভিন্ন দেশের রোগীও উন্নত চিকিৎসার জন্য আসেন।ইরানের বিশেষজ্ঞ চক্ষু চিকিৎসকরাও যত্নের সঙ্গে তাদের সেবা দিয়ে থাকেন।#

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৬

বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।

ট্যাগ