আগস্ট ১৮, ২০২০ ১৭:২৭ Asia/Dhaka

প্রিয় পাঠক/শ্রোতা! ১৮ আগস্ট মঙ্গলবারের কথাবার্তার আসরে আপনাদের সবাইকে স্বাগত জানাচ্ছি আমি মুজাহিদুল। আশা করছি আপনারা প্রত্যেকে ভালো আছেন। আসরের শুরুতেই ঢাকা ও কোলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রধান প্রধান বাংলা দৈনিকের গুরুত্বপূর্ণ কিছু শিরোনাম তুলে ধরছি।

প্রথমে বাংলাদেশের শিরোনাম:

  • পারস্পরিক সম্পর্ক জোরদারের লক্ষ্যে ঢাকায় শ্রিংলা-দৈনিক ইত্তেফাক
  • মাদক নির্মূলে লক্ষ্যহীন বিশেষ অভিযান-প্রথম আলো
  • চীনের বিরুদ্ধে অর্থনৈতিক ব্যবস্থা নিতে পারে ভারত-মানবজমিন
  • রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম ইস্যুতে ষড়যন্ত্র হলে জনগণ জবাব দেবে: বাবুনগরী-দৈনিক যুগান্তর
  • ক্যামেরা দেখেই শুয়ে পড়লেন সাহেদ-বাংলাদেশ প্রতিদিন
  • ময়মনসিংহে মাইক্রোবাস পুকুরে, একই পরিবারের ৮ জন নিহত-দৈনিক সমকাল
  • গ্যাং কালচারে এখন অভিজাত কিশোররা, ভিড়ছে কিশোরীরাও-কালের কণ্ঠ

ভারতের শিরোনাম:

  • পিএম কেয়ার্স’এর অর্থ জাতীয় ত্রাণ তহবিলে হস্তান্তর করা যাবে না-সুপ্রিম কোর্ট-দৈনিক আনন্দবাজার পত্রিকা
  • করোনা সংক্রমণ রুখতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার উদ্যোগ, ঢাকা সফরে ভারতের বিদেশসচিব-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন
  • রাজভবন এখন বিজেপির পার্টি অফিস হয়ে গেছে-পার্থের দাবি-দৈনিক আজকাল

শ্রোতাবন্ধুরা! এবারে চলুন বাছাইকৃত কয়েকটি খবরের বিস্তারিত জেনে নেয়া যাক।

সিনহা হত্যা: রিমান্ডে নেয়া হলো  সাবেক ওসি প্রদীপ, এস আই লিয়াকত ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে

সিনহা হত্যাকাণ্ডের ফলোআপ খবরে যুগান্তরসহ প্রায় সব দৈনিকে লেখা হযেছে, সিনহা হত্যা মামলায় অবশেষে রিমান্ডে নেয়া হলো টেকনাফ থানার সাবেক ওসি প্রদীপ, এস আই লিয়াকত ও নন্দদুলাল রক্ষিতকে। আজ মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১ টার দিকে তাদের রিমান্ডে নেয় র‍্যাব। তাছাড়া গ্রেফতার আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়নের (এপিবিএন) তিন সদস্যের প্রত্যেককে ৭ দিন করে রিমান্ড দিয়েছেন আদালত। নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না বলেছেন, মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যকাণ্ডের বিচার হবে, বিচার হতে হবে। বিচার যদি তারা (সরকার) না করে তাহলে আমরা বিচার করব। দরকার লাগলে প্রেস ক্লাবের সামনে গণআদালত বসবে। অন্যদিকে করোনার ভুয়া সনদ দেয়ার মামলায় রিজেন্ট সাহেদ সম্পর্কিত খবরে দৈনিক ইত্তেফাকে লেখা হয়েছে,প্রথম দিনের রিমান্ডের পর অসুস্থতার কথা বলায় রিজেন্ট হাসপাতালের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাহেদকে হাসপাতালে নেওয়া হয়। তবে তার শারীরিক কোনও সমস্যা না পাওয়ায় চিকিৎসকরা তাকে ছেড়ে দেন। পরে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আবার দুর্নীতি দমন কমিশন কার্যালয়ে নিয়ে যাওয়া হয়।

সংক্ষিপ্ত  ঢাকা সফরে ভারতের  বিদেশ সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা

শ্রিংলার ঢাকা সফর নিয়ে দৈনিকগুলোতে ভিন্ন ভিন্নভাবে শিরোনাম করা হয়েছে। দ্যা হিন্দুর বরাত দিয়ে মানবজমিনের শিরোনাম- তিস্তায় চীনা বিনিয়োগ ও দ্বিপক্ষীয় চ্যালেঞ্জকে সামনে রেখে শ্রিংলার ঢাকা সফর! তাছাড়া দ্য প্রিন্ট এর রিপোর্ট বাংলাদেশকে চীনের আরও 'তীব্র' সমর্থন, মোদী কর্তৃক শ্রিংলাকে ঢাকা প্রেরণ। তবে ভারতের দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন শিরোনাম করেছে- করোনার সংক্রমণ রুখতে বাংলাদেশকে সহযোগিতার উদ্যোগ তাই ঢাকা সফরে ভারতের বিদেশ সচিব। এ সম্পর্কে মানবজমিনের সর্বশেষ খবরে বলা হয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে বৈঠক করছেন সফররত ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষ বর্ধন শ্রিংলা। প্রধানমন্ত্রীর বাসভবন গণভবনে এ বৈঠক হয়। কূটনৈতিক সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে। বাংলাদেশের পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন জানিয়েছেন,শ্রিংলার এই সফরে করোনা ভ্যাকসিন, রোহিঙ্গা ইস্যুসহ বিভিন্ন দ্বিপাক্ষীক বিষয়ে আলোচনা হবে।

 মাদক নির্মূলে লক্ষ্যহীন বিশেষ অভিযান-দৈনিক প্রথম আলোর প্রতিবেদন 

মাদকবিরোধী অভিযান চলছে কি?

বিস্তারিত প্রতিবেদনে লেখা হয়েছে, মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযানে দুই বছরে ৫৮৬ জন সন্দেহভাজন মাদক কারবারি বিচারবহির্ভূত হত্যার শিকার হয়েছেন। কিন্তু সেই অভিযান এখনো চলছে কি না, অভিযানের উদ্দেশ্য বা অর্জন কী, সে সম্পর্কে স্পষ্ট কোনো ধারণা দিতে পারছে না সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো।

‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগান নিয়ে মাদকবিরোধী বিশেষ অভিযান শুরু হয় ২০১৮ সালের ৪ মে। প্রধানমন্ত্রী মাদকের বিরুদ্ধে শূন্য সহিষ্ণুতা (জিরো টলারেন্স) ঘোষণার পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগের তত্ত্বাবধানে মাদক নিয়ন্ত্রণে যুক্ত সংস্থা ও বাহিনীগুলো অভিযান শুরু করে। র‌্যাবের তৎকালীন মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ ২০১৮ সালের ১৪ মে কারওয়ান বাজারে র‌্যাবের মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলন করে বলেছিলেন, ‘আমরা চাইব, যাঁরা মাদক সেবন করেন, তাঁরা আর মাদক নেবেন না। যাঁরা ব্যবসা করেন তাঁরা মাদক বিক্রি বন্ধ করবেন। কারও কাছে মাদক থাকলে তা র‍্যাব ক্যাম্পের পাশে ফেলে যান।’এ ঘোষণার পরদিন বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডে নিহত হন দুই মাদক কারবারি। পরবর্তী ১৫ দিনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর অভিযানে নিহত হন ১৩২ জন। এর মধ্যে এক দিনে দেশের বিভিন্ন জায়গায় ১৫ জন পর্যন্ত নিহত হন।

এ বিষয়ে জানতে সুরক্ষা সেবা বিভাগের সচিব মো. শহিদুজ্জামানকে তিনবার ফোন করে এবং খুদে বার্তায় প্রশ্ন পাঠিয়েও কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি। তবে এই বিভাগের যুগ্ম সচিব (মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অনুবিভাগ) হামিদুর রহমান খান প্রথম আলোকে বলেন, তিনি মাস দুয়েক আগে এই পদে যোগ দিয়েছেন। বিশেষ অভিযান চলছে, এমন কোনো খবর তাঁর কাছে নেই। নিয়মিত যে অভিযান চলত, তা–ই চলছে।

 অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট, বাংলাদেশে ঝুঁকি কতটা?-দৈনিক ইত্তেফাক

অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের কারণে বৈরুতে বিস্ফোরণ: বাংলাদেশ কতোটা ঝুঁকিতে

বিস্তারিত খবরে লেখা হয়েছে, লেবাননের বৈরুতে বিস্ফোরিত হওয়া অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট বাংলাদেশেও আমদানি হয়। সদ্য শেষ হওয়া অর্থবছরে ৯০০ টন আমদানি হয়েছে। বর্তমানে ৩০০ টনের মতো মজুতও আছে। তবে বাংলাদেশে এ ধরনের বিস্ফোরণের সম্ভাবনা কম বলেই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ জঙ্গলের মধ্যে বিশেষ গুদামে এগুলো মজুত রাখা হয়।

বাংলাদেশে মূলত দিনাজপুরের কয়লাখনিতে বিস্ফোরণে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ব্যবহার বেশি। গত বছর দেশে অ্যামোনিয়াম নাইট্রেট ব্যবহারে নতুন আইন হয়েছে, যেটা লেবাননে নেই। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতেও এ ধরনের আইন আছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটা মূলত সার। কিন্তু বাংলাদেশে এই সার ব্যবহার হয় না। কিছু ওষুধ তৈরি আর কয়লাখনি ছাড়া অন্য কোথাও এর তেমন ব্যবহার নেই।

ফায়ার সার্ভিসের সাবেক মহাপরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আলী আহম্মেদ খান ইত্তেফাককে বলেন, ‘২০১৭ সালে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় বিসিআইসির ফ্যাক্টরি ডাই অ্যামোনিয়াম ফসফেট (ডিএপি) কারখানায় অ্যামোনিয়া প্ল্যান্টে বিস্ফোরণ হয়েছিল। এটা চাইনিজ প্ল্যান্ট ছিল। এ বিস্ফোরণে ৪৫ জনের মতো অসুস্থ হন। মরে যায় পাশের পুকুরের সব মাছ। নিমতলী অগ্নিকাণ্ডের পর আমরা কিন্তু এটা নিষিদ্ধ করতে পরামর্শ দিয়েছিলাম।

লেবাননের ঘটনার পর আমি সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন পর্যায়ে এটা নিয়ে কথা বলেছি। অ্যামোনিয়াম নাইট্রেটের ক্ষেত্রে আপাতদৃষ্টিতে তেমন ঝুঁকি নেই বলে মনে হলেও এটা ব্যবহারে আমাদের আরো বেশি সতর্ক হওয়া প্রয়োজন।’ তিনি বলেন, বাংলাদেশে কোনো কিছু ঘটলে ব্যাপক আলোচনা হয়। কিছুদিন পর সেই আলোচনা থেমে গেলে সব প্রক্রিয়াও থেমে যায়। এ কারণে আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে শক্ত হতে হবে। বিষয়টি বিশেষ নজরদারিতে রাখতে হবে।

মহামারি করোনা সর্বশেষ পরিস্থিতি: ওয়ার্ল্ডওমিটারের পরিসংখ্যান অনুযায়ী এখন পর্যন্ত বিশ্বে করোনায় মৃত্যু ৭ লাখ ৭৭ হাজার ছাড়াল। আর আক্রান্ত হয়েছেন প্রায় ২ কোটি ২০ লাখের বেশি মানুষ। ভারতে ২৪ ঘন্টায় মৃত্যু ৮৭৬জন। এ সময় আক্রান্ত ৫৫ম০৭৯ এবং মোট আক্রান্ত ২৭ লাখ ২ হাজার ছাড়াল। এদিকে ফের হাসপাতালে অমিত শাহ। বাংলাদেশে গত ২৪ ঘন্টায় মারা গেছেন ৪৬ জন। এ সময় শনাক্ত হয়েছেন ৩ হাজার ২০০ জন। 

ভারতের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি খবরের বিস্তারিত:

রাজভবন এখন বিজেপি–র পার্টি অফিস হয়ে গেছে: পার্থ-দৈনিক আজকালের এ শিরোনামের খবরে লেখা হয়েছে,তৃণমূলের মহাসচিব পার্থ চ্যাটার্জি আজ রাজ্যপাল জগদীপ ধনকড়কে আক্রমণ করে বললেন,‘আমি আজ সরাসরি বলে দিচ্ছি, রাজভবন বিজেপি–‌র পার্টি অফিস হয়ে গেছে। রাজ্যপাল এখন থেকে অন্নপ্রাশন নিয়েও প্রতিক্রিয়া দেবেন। তাঁকে টুইট করতে নিষেধ করা হচ্ছে, তা সত্ত্বেও তিনি টুইট করে চলেছেন। সংবিধানে টুইট করার কথা কোথাও বলা নেই।’‌ পার্থ বলেন,‘তিনি রাজনীতি করছেন। বিজেপি রাজ্য সভাপতির মতো কথা বলছেন রাজ্যপাল। পদের মর্যাদা তিনি রাখতে পারছেন না। ওঁর সম্পর্কে আমার আর বলার কিছু নেই।’‌এদিকে এদিন বিজেপি–‌র প্রাক্তন মুখপাত্র কৃশানু মিত্র দল ছেড়ে তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন।

ভারতের করোনা পরিস্থিতি আসলে কী!

সারা দেশে কি সত্যিই কমছে করোনা সংক্রমণ? নিম্নমুখী সংখ্যার নেপথ্যে অন্য কারণ নেই তো?-দৈনিক সংবাদ প্রতিদিনের সম্পাদকীয়ের শিরোনাম।এতে লেখা হয়েছে, কিছুটা নিশ্চিন্ত বোধ করছেন? করবেন নাই বা কেন। রাতারাতি গত দু-তিন দিনে সারা দেশে করোনা সংক্রমিতের সংখ্যা কমেছে দৈনিক প্রায় ১২,০০০। বাংলাতেও কি তাহলে দ্রুত নামবে সংক্রমণের সংখ্যা। আপেক্ষিকভাবে বিষয়টা ইতিবাচক মনে হলেও, এত সহজও কিন্তু নয়। বঙ্গে করোনা নিয়ে দুশ্চিন্তায় মানুষের কপালের ভাঁজ স্পষ্ট হচ্ছে। আবার অন্যান্য রাজ্য তথা সারা দেশে সংক্রমণ একলাফে অনেকটা কমা খানিকটা বিস্মিতই করছে। এক্ষেত্রে তাই মনে রাখতে হবে বেঞ্জামিন ডিসরায়েলির উক্তি “There are three types of lies- lies, damn lies, and statistics”। সুতরাং পরিসংখ্যান খতিয়ে না দেখে দেশের কোথায়, কেন করোনা আক্রান্তের সংখ্যা কমছে বা বাড়ছে কিংবা প্রায় একই থাকছে- এসব শুধুমাত্র কয়েকটা সংখ্যা দেখে বলে ফেলা সম্ভব নয়।#

পার্সটুডে/গাজী আবদুর রশীদ/১৮
 

ট্যাগ