চিরভাস্বর কারবালার মহাবিপ্লব -১০ (শামে গারিবান)
হযরত ইমাম হুসাইন (আ) ছিলেন সর্বোচ্চ পর্যায়ের মহান আত্মার অধিকারী। তাঁকে বলা হয় শহীদদের নেতা। যার আত্মা মহান সে আল্লাহর পথে ও নিজ মহান লক্ষ্যে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চায়। আর এ পথে যখন সফলকাম হয় তখন আল্লাহকে শোকর করে।
আত্মা মহান হলে আশুরার দিনে, এক শরীরে তিনশ’ ক্ষত সহ্য করতে হয়। যে শরীর ঘোড়ার পায়ে পদপিষ্ট হয় সে একটি মহান আত্মারই মূল্য দেয়, বীরত্ব ও সত্য-প্রেম এবং শহীদি আত্মার মূল্য দেয়। শহীদ কাকে বলে? প্রতিদিন কত মানুষ নিহত হচ্ছে । কিন্তু তাদেরকে কেন শহীদ বলা হয় না? শহীদ শব্দটি কেন এতো পবিত্র? কারণ শহীদ নিজ ঈমান ও আকীদা রক্ষায় প্রাণ বিসর্জন দেয়, যে নিজের জন্যে তো নয়ই বরং মনুষ্যত্ব ও মানবতার স্বার্থে, সত্য ও ন্যায়ের স্বার্থে চরম দুঃখ-দুর্দশা এমন কি মৃত্যুকেও সাদরে বরণ করে নেয়।
শহীদ তাঁর বুকের রক্ত দিতে চায় যেমনভাবে একজন ধনী তার ধনকে ব্যাংক বন্দী না করে তা সৎপথে দান-খয়রাত করে নিজ ধনের মূল্য দিতে চায়। সৎপথে ব্যয়িত প্রতিটি পয়সা যেমন লক্ষ -কোটি পয়সার মতো মূল্য লাভ করে তেমনি শহীদের প্রতি ফোটা রক্ত লক্ষ-কোটি ফোটায় পরিণত হয়। একজন লেখক বা একজন ধনী কিংবা একজন শিল্পীর সেবা যত বড়ই হোক না শহীদদের মতো কেউই মানুষের ওমানবতার সেবা করতে পারে না। শহীদরাই সমস্ত কন্টকময় পথ পেরিয়ে মানবতার মুক্তি ও স্বাধীনতাকে বয়ে আনেন। তারাই ন্যায়-নীতিবান ও শান্ত সমাজ গড়ে দিয়ে যায় যাতে জ্ঞানীর জ্ঞান, লেখকের কলম, ধনীর ধন,শিল্পীর শিল্প সুস্থ পরিবেশে বিনা বাধায় বিকাশ লাভ করে এবং মানবতা নিশ্চিন্তে পূর্ণতার দিকে এগিয়ে যায়।
পবিত্র কুরআন রাসূলুল্লাহ (সা.)-কে একটি প্রদীপের সাথে তুলনা করেছে। একটি কবিতায় একজন দক্ষ শিল্পী ও একটি প্রদীপকে বলছেন, ‘ তুমি জান না,আমি সারা রাত জেগে কত সুন্দর সুন্দর ফুল তুলে আমার জামাটিকে ফুলবাগিচা বানিয়েছি। তুমি কখনোই আমার মতো অপরূপ সুন্দর ফুল তুলতে পারবে না।’ শিল্পীর একথা শুনে প্রদীপ একটু মুচকি হেসে বলল: তুমি যে দাবি করছো সারা রাত জেগে তোমার রুচি ও দক্ষতাকে ফুটিয়ে তুলেছো-এসবই ছিল আমার আত্ম -নিঃশেষ করার ফল। ‘ তাই তুমি সারা রাত ধরে যা করেছ বলে দাবি করছো-এসবই আমি করেছি।’ আজকে ইবনে সিনা, শেখ সাদী, জাকারিয়া রাজী- এরা এত বড় জ্ঞানী হতে পারতো না যদি শহীদরা তাজা রক্ত খরচ করে ইসলামের চারাগাছকে সজীব না করতেন। শহীদদের সমস্ত অস্তিত্বে একত্ববাদ, খোদাভীতি, ন্যায়পরায়ণতা, সৎসাহস আর বীরত্বে ভরপুর। তাই মুসলমানরা সবাই এ শহীদদের প্রতি ঋণী। ইমাম হুসাইনের (আ.) রক্তের প্রতি নবীজীর (সা.) উম্মত ঋণী।
দুরদর্শিতা বা ভবিষ্যত জ্ঞান ইমাম হোসাইনের (আ.) বিপ্লবের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ইমাম হুসাইন (আ.) খড়কুটোর মধ্যে ও ভবিষ্যতের যে আভাস প্রত্যক্ষ করতেন, অন্যরা আয়নায়ও তা দেখতে পেত না। আশুরার দিনেও তিনি নির্দ্বিধায় ঘোষণা দিলেন,ওরা আমাকে হত্যা করবেই। তবে আমি আজ তোমাদেরকে বলে যাচ্ছি,আমার হত্যার পর ওদের পতন অনিবার্য হবে। বনি উমাইয়ারা বেশী দিন ক্ষমতার মসনদ আকড়ে ধরে রাখতে পারেনি। তাদেরকে ক্ষমতাচ্যুত করলো বিন আব্বাসীয়রা। এ ঘটনা ইমাম হোসাইনের (আ.) আধ্যাত্মিক শক্তির অনন্য ক্ষমতার পরিচয় বহন করে।
কাপুরুষ ইবনে যিয়াদের উসমান নামের এক ভাই ছিল। একিদন উসমান বলল, হে ভাই, যিয়াদের সব সন্তান যদি দারিদ্র,অপমান আর দুঃখের সাথে বেঁচে থাকতো তাতেও আমি অসন্তুষ্ট হতাম না, যত না অসন্তুষ্ট হয়েছি তোমার হাতে আমাদের খান্দানে কারবালার মাটিতে এ অপরাধ দেখে। ইবনে যিয়াদের মা ছিল পরকীয়া-ব্যাভিচারিণী। সেও ইবনে যিয়াদকে তিরস্কার করে বলল: জেনে রেখো তুমি যে অপরাধ করেছ তাতে তোমার বেহেশতের কোনো আশা নেই। এমন কি মারওয়ান ইবনে হাকামের মতো জঘন্য কাপুরুষও ইয়াযিদের দরবারে প্রতিবাদী হয়ে বলল: যিয়াদের মা'র সন্তানেরা সম্মানিত হোক কিন্তু নবীর বংশকে এ অবস্থায় তুমি দরবারে আনতে পারলে? এভাবেই সেদিন ইমাম হুসাইনের (আ.) ভবিষ্যত বার্তা ফলতে শুরু করে। স্বয়ং ইয়াযিদের স্ত্রী হিন্দও ইয়াযিদের ক্রিয়াকর্মের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়ে ইয়াযিদের কাছে এসবের ব্যাখ্যা দাবি করে। শেষ পর্যন্ত উপায়ান্তর না দেখে সে এ ঘটনার সাথে জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করে বসে। উবাইদুল্লাহ ইবনে যিয়াদের ঘাড়ে সমস্ত দায় চাপিয়ে দিয়ে সে আত্মরক্ষার চেষ্টা করে।
ইমাম হুসাইনের (আ.) সর্বশেষ ভবিষ্যদ্বাণী ছিল অনতিবিলম্বে ইয়াযিদের পতন হবে। কারবালা ঘটনার পর মাত্র দু’ তিন বছর চরম দুর্দশা ও হতাশার মাধ্যমে ইয়াযিদী শাসন অব্যাহত থাকে তারপর তার জীবনাবসান ঘটে। পিতার মৃত্যুর পর ইয়াযিদ-পুত্র মুয়াবিয়া চেপে বসলো মসনদে। কিন্তু মাত্র চল্লিশ দিন পার না হতেই একদিন সে ঘোষণা দিল, হে লোকসকল! আমার পিতামহ মুয়াবিয়া আলী ইবনে আবু তালিবের (আ.)-সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। অথচ হক ছিল আলীর (আ.) সাথে। আবার,আমার পিতা ইয়াযিদ দাঁড়ায় হুসাইন ইবনে আলীর (আ.) বিরুদ্ধে। এখানেও হুসাইন (আ.) ছিল সত্যের উপরে,আমার পিতা নয়। আর আমি আমার পিতার ওপর অসন্তুষ্ট । নিজেকেও খেলাফতের যোগ্য বলে মনে করি না। তাই আমার পিতামহ কিংবা পিতার অপরাধের পুনরাবৃত্তি এড়ানোর লক্ষে এখানেই আমার পদত্যাগের ঘোষণা দিলাম। আর এভাবে জয় হল সত্যের। ইমাম হুসাইন (আ.) অনন্য আধ্যাত্মিক শক্তিবলে শত্রু-মিত্র উভয়কেই ন্যায়ের পথে উদ্দীপ্ত করে দিলেন। সূচিত হল তরবারির উপর রক্তের বিজয়।
কারবালার ইতিহাস হচ্ছে নারী-পুরুষের ইতিহাস। এ হচ্ছে এমন একটি ঘটনা যাতে নারী ও পুরুষ উভয়েরই ভূমিকা ছিল কিন্তু পুরুষরা নিজ অক্ষের চারদিকে এবং নারীরাও নিজ অক্ষের চারদিকে আবর্তিত হয়েছেন। এগুলো হচ্ছে ইসলামের মু’জিযা। হযরত ইমাম হুসাইন (আ.) নিজ পরিবার-পরিজনকে সাথে নিয়ে যান। কারণ,তিনি চাচ্ছিলেন যে,তারা কাফেলার নেত্রী হযরত যায়নাব (আ.)-এর নেতৃত্বে স্বীয় অক্ষের সীমারেখা থেকে বাইরে না এসেও এ বিরাট ইতিহাসে একটি বড় ধরনের দায়িত্ব পালন করবেন-এ ইতিহাস সৃষ্টিতে প্রত্যক্ষ ভূমিকা পালন করবেন।
আশুরার দিন বিকালে হযরত যায়নাব এক অনন্য মহিমায় সমুদ্ভাসিত হলেন। তিনি হলেন কাফেলার নেত্রী। কারণ, এ কাফেলার একমাত্র পুরুষ সদস্য ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) এ সময় গুরুতর অসুস্থ ছিলেন এবং এ কারণে তার নিজেরই সেবা-শুশ্রূষার প্রয়োজন ছিল।
অবশ্য ইবনে যিয়াদের সাধারণ নির্দেশ ছিল এই যে, ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পরিবারের কোনো পুরুষ সদস্যই যেন জীবিত না থাকেন। তদনুযায়ী ইমাম যায়নুল আবেদীনকে হত্যা করতে শত্রুরা বেশ কয়েকবার হামলা চালিয়েছিল। কিন্তু তারা তার অবস্থা দেখে নিজেদের মধ্যে বলাবলি করে: ‘‘নিঃসন্দেহে সে নিজেই সেদিকে এগিয়ে যাচ্ছে।’’ অর্থাৎ তিনি তো এমনিতেই মারা যাচ্ছেন। বস্তুতঃ এ ছিল মহান আল্লাহর কল্যাণ-ইচ্ছারই বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহ চাচ্ছিলেন যে,এভাবে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) বেঁচে থাকুন এবং তার মাধ্যমে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর পবিত্র বংশধারা টিকে থাকুক।
১১ মহররম বিকালে বন্দীদেরকে বাহনে সওয়ার করানো হলো। এগুলোর জিন ছিল কাঠের তৈরি। বন্দীদেরকে মানসিক কষ্ট দেয়ার উদ্দেশ্যে জিনের ওপরে কাপড় বিছাতে বাধা দেয়া হয়। রওয়ানা হওয়ার আগে আহলে বাইতের পক্ষ থেকে একটি অনুরোধ জানানো হয় এবং সে অনুরোধ রক্ষা করা হয়। নবী পরিবারের বন্দী নারীরা বললেনঃ আল্লাহর দোহাই,আমাদেরকে হুসাইনের শাহাদাতস্থল ছাড়া অন্য কোনো জায়গা দিয়ে নিয়ে যেয়ো না।’’ শেষ বারের মতো শহীদগণকে খোদা হাফেযী করার উদ্দেশ্যেই তারা তাদেরকে ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতস্থল হয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। বন্দীদের মধ্যে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) খুবই অসুস্থ ছিলেন বিধায় বাহনের ওপর ঠিকভাবে বসে থাকা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছিলো না। বন্দিরা যখন শাহাদাতস্থলে পৌঁছিলেন তখন সকলেই নিজেদের ওপর নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললেন এবং বাহন থেকে নীচে পড়ে গেলেন।
হযরত যায়নাব যখন ইমাম হুসাইনের পবিত্র লাশের কাছে পৌঁছে গেলেন তখন তিনি তাকে এমন এক অবস্থায় দেখলেন যেরূপ ইতিপূর্বে কখনো কাউকে দেখেন নি। ইমাম হুসাইন (আ.)-এর লাশ মাথা বিহীন অবস্থায় পড়ে ছিল। তিনি তার ভাইয়ের সাথে কথা বলতে থাকেন,তাদের পারস্পরিক স্নেহ-মমতা ও ভালোবাসার কথা বলতে থাকেন। অন্তরে যত বেদনা ছিল তার সবই ঢেলে দেন। আর তিনি এতই বিলাপ করেন যে,বর্ণনাকারী বলেন, ‘‘আল্লাহর শপথ,তিনি দুশমন ও বন্ধু নির্বিশেষে প্রত্যেককেই কাঁদালেন।’’
সর্বপ্রথম যিনি ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদাতে শোকানুষ্ঠান করেন তিনি হলেন হযরত যায়নাব (আ.)। কিন্তু এ সময়ও তিনি তার মূল দায়িত্ব ভুলে যান নি। ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর সেবা-শুশ্রূষার দায়িত্ব ছিল তাঁরই। তিনি ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর দিকে তাকালেন। তিনি দেখলেন যে,ভাতিজা তাঁর বাবার লাশ দেখে সহ্য করতে পারছেন না, মনে হচ্ছিলো যেন তাঁর প্রাণ দেহের খাঁচা ছেড়ে বেরিয়ে যাবে। হযরত যায়নাব (আ.) সাথে সাথে হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর লাশ রেখে ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.)-এর কাছে চলে এলেন। তিনি বললেনঃ ‘‘ভাতিজা! তোমার এ অবস্থা কেন যে,মনে হচ্ছে তোমার দেহ থেকে প্রাণ বেরিয়ে যেতে চাচ্ছে ?’’ জবাবে তিনি বললেনঃ ‘‘ফুফুজান! এটা কী করে সম্ভব যে,প্রিয়জনদের লাশ দেখে কষ্ট না পাবো?’’ তখন হযরত যায়নাব (আ.) তাকে সান্তনা দিতে শুরু করেন।
কারবালার ঐ পরিস্থিতিতে হযরত যায়নাব ভাতিজা ইমাম যায়নুল আবেদীন (আ.) কে বললেন: ‘‘ভাতিজা! আমাদের নানা তথা রাসূলুল্লাহ –সা. থেকে বর্ণিত হয়েছে যে,এখন যেখানে হুসাইনের লাশ দেখতে পাচ্ছো সেখানে কাফন পরানো ছাড়াই তার লাশ দাফন করা হবে এবং এখানে হুসাইনের কবর যিয়ারতগাহে পরিণত হবে।’’ অর্থাৎ একদিন হযরত ইমাম হুসাইন (আ.)-এর শাহাদতগাহ ইখলাছের অধিকারী মুসলমানদের যিয়ারতগাহে পরিণত হবে।
১১ মহররম বিকালে বন্দীদের কাফেলাকে পুনরায় রওয়ানা করানো হয়। ইমাম হুসাইন (আ.) ও তার সঙ্গীসাথী শহীদদের লাশ রণাঙ্গনেই পড়ে থাকে। হযরত যায়নাব (আ.) সম্ভবতঃ ৯ই মহহরম থেকে মোটেই ঘুমাননি। এমনই অবস্থায় নবী পরিবারের বন্দীদেরকে কুফার দিকে নিয়ে যাওয়া হয়। আদেশ দেওয়া হলো যে, নবী পরিবারের বন্দীদেরকে মানসিক কষ্ট দিতে শহীদদের পবিত্র কর্তিত শিরগুলোকে যেন প্রদর্শন করা হয়। তখন এমন এক বিস্ময়কর মর্মান্তিক পরিস্থিতির উদ্ভব হয় যার বর্ণনা প্রদান বর্ণনাশক্তির উর্ধ্বে। কুফা নগরীর প্রবেশদ্বারে পৌঁছার পর ইমাম হুসাইন (আ.)-এর কন্যা ফাতেমা ও হযরত জায়নাব নারীসুলভ মর্যাদা বজায় রেখে সেখানে এক সংক্ষিপ্ত ভাষণ দিলেন। হযরত যায়নাবের ওই ভাষণ সম্পর্কে এক বর্ণনাকারী বলেন,
''আল্লাহর শপথ, এমন আর কোনো লজ্জাশীলা নারীকে কখনো এমন ভাষণ দিতে দেখিনি।’’ তার ভাষণে হযরত আলী (আ.)-এর বীরত্ব আর নারীসুলভ লজ্জাশীলতা সংমিশ্রি ত হয়েছিল। বর্ণনাকারী বলেন, মনে হচ্ছিলে যেন হযরত যায়নাবের কণ্ঠ থেকে হযরত আলী (আ.)-এর ভাষণ বেরিয়ে আসছে। এ সময় হযরত যায়নাব (আ.) মাত্র দশ-বারো বাক্যে তাঁর ভাষণ শেষ করেন। বর্ণনাকারী বলেন, ‘‘দেখলাম যে, লোকেরা সকলেই প্রবল দুঃখ ও অনুতাপে তাদের আঙ্গুল মুখে ঢুকিয়ে কামড়াচ্ছিলো।’’
ইমাম হুসাইনের জন্য সর্বপ্রথম শোকগাঁথা রচনা করেছিলেন হযরত জাইনাব (সা.)। ইমামের শাহাদত ও নবী-পরিবারের সদস্যদের তাবুতে আগুন দেয়া এবং শহীদদের লাশের ওপর ঘোড়া দাবড়ানোর ঘটনার পর তিনি বলেছিলেন: “ হে মুহাম্মাদ (সা.)! হে আল্লাহ ও তাঁর ফেরেশতারা তোমার ওপর দরুদ ও সালাম পাঠায়। আর এই তোমার আদরের হুসাইন, কী ভীষণভাবে লাঞ্ছিত, অবহেলিত, রক্তাপ্লুত খণ্ডিত লাশ হয়ে আছে! আল্লাহর কাছে নালিশ জানাচ্ছি। হে মুহাম্মাদ (সা.)! তোমার কন্যারা আজ বন্দিনী, তোমার জবাই করা পরিবার আজ অপেক্ষা করছে পূবের হাওয়ার জন্য, কখন ধুলো এসে তাঁদের ঢেকে দেবে!” হযরত জাইনাবের মর্মভেদী বিলাপ শত্রু-মিত্র সবাইকে অশ্রু-সজল করে তুলেছিল। তাঁর বিলাপ ও বাগ্মীতাপূর্ণ ভাষণ কাঁপিয়ে তুলেছিল কুফায় ইবনে জিয়াদের এবং দামেস্কে ইয়াজিদের দরবার। ফলে জনগণের ঘুমিয়ে পড়া চেতনায় বিদ্যুতের প্রবাহ ছড়িয়ে পড়ে। তাই ভীত-সন্ত্রস্ত ইয়াজিদ নবী-(সা.)’র পরিবারের বন্দিদের মুক্তির দেয়ার নির্দেশ দেয়।#
পার্সটুডে/মু. আমির হুসাইন/আশরাফুর রহমান/৩১
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।