ইরানের পণ্যসামগ্রী: সেল থেরাপি
গত আসরে আমরা বলেছিলাম স্টেমসেল বা মৌলিক কোষ নিয়ে। বলেছিলাম যে, কোষকেন্দ্রের ভেতরে ডিএনএ নামক রাসায়নিক পদার্থের অণু নিয়ে গঠিত সুতার মত দেখতে কিছু উপাদান থাকে,যাদেরকে বর্ণসূত্র বা বংশসূত্র বলে অভিহিত করা হয়। ইংরেজিতে বলা হয় ক্রোমোজোম।
স্টেম সেলগুলোকে সমস্ত কোষের মা হিসাবে বিবেচনা করা যেতে পারে যা রক্ত, হৃৎপিণ্ড, স্নায়ু এবং ত্বকের কোষের মতো বিভিন্ন কোষের মধ্যে নিজে নিজে পুনর্জাগরণ ঘটানো এবং কখনও কখনও আলাদা করারও ক্ষমতা রাখে। কিছু শারীরবৃত্তীয় বৈশিষ্ট্যের কারণে এগুলো হৃৎপিণ্ডের পেশী, কোষ বা অগ্ন্যাশয়ে ইনসুলিন উত্পাদনকারী কোষেও পরিণত হয়ে যেতে পারে। গবেষণার বিভিন্ন পর্যায় পেরিয়ে সেল থেরাপি এখন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসার একটি পদ্ধতি হিসেবে গৃহীত হয়েছে। গত আসরেই আমরা বলেছিলাম যে গুরুত্বপূর্ণ এই চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়ে আমরা আরও কথা বলার চেষ্টা করবো।
সেল থেরাপি শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ মেরামতের জন্য ব্যবহৃত ওষুধের একটি শাখা। এই থেরাপিতে রোগীর দেহের টিস্যু বা অঙ্গগুলো মেরামত করার জন্য শরীরের বাইরে প্রক্রিয়াজাত কোষ ইঞ্জেকশনের মাধ্যমে ব্যবহার করা হয়। বেশ কিছু রোগের চিকিত্সার ক্ষেত্রে সেল বা কোষ থেরাপির ওপর চিকিত্সা বিজ্ঞানীরা ব্যাপক গবেষণা চালিয়েছেন। চিকিৎসা গবেষণা থেকে ওইসব রোগের চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য সাফল্য ও ফলাফল অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ট্রান্সপ্লান্টেশান বা প্রতিস্থাপন বিজ্ঞানে স্টেম সেল ব্যবহার করে বিস্ময়কর উপকার পাওয়া গেছে। জিনগত দিক থেকে স্টেম সেলকে পরিবর্তন করে দেওয়া যেতে পারে যাতে প্রতিস্থাপন করার পর সেগুলো ছুটে না যায়। উদাহরণস্বরূপ হার্টের পেশী কোষগুলোর প্রতি ইঙ্গিত করা যেতে পারে। হার্টের কোষ গঠনের ক্ষেত্রে যেখানেই সমস্যা হয় বা ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেখানে নিষ্ক্রিয় টিস্যুগুলো হার্ট বা হৃদয়ের সক্রিয় পেশী কোষগুলোর স্থলাভিষিক্ত হয়ে যায়।
জিন বা ভ্রূণগত স্টেমসেল কার্ডিয়াক পেশী কোষে পরিণত হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এগুলোকে তাই বিভিন্ন রোগের চিকিৎসায় কাজে লাগানো যেতে পারে। যেমন: হার্ট অ্যাটাকের চিকিৎসায় কেননা হার্ট অ্যাটাকের মূল কারণই হলো হৃদয়ের পেশিগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া। জন্মগত হার্ট ডিজিজ বা হৃদরোগসহ অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনের মতো গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা নিরসনের জন্যও এগুলোকে ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়াও কিছু রক্তরোগ যেমন থ্যালাসেমিয়া কিংবা প্রাপ্তবয়স্কদের ক্যান্সার এবং অল্প বয়স্কদের হেমাটোপয়েটিক স্টেম সেল তৈরি করতে ভ্রূণগত স্টেমসেল ব্যবহার করা যেতে পারে। এইসব সূক্ষ্ম চিকিৎসাগুলো ইরানের বিভিন্ন মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে সুচারুভাবে করা হয়। তেহরান মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ের শারিয়াতি হাসপাতালের বোন ম্যারো ট্রান্সপ্ল্যান্টেশন, হেমাটোলজি এবং অ্যানকোলজি সেন্টারে যেমন করা হয় তেমনি শিরাজ মেডিকেল সায়েন্সেস বিশ্ববিদ্যালয়ে এ ধরনের চিকিৎসা সফলভাবে করা হয়।

স্বাস্থ্য ও সুস্থতার ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল সঠিকভাবে রোগব্যাধি এবং শরীরের সমস্যাগুলো বা জটিলতাগুলোকে নির্ণয় করার পাশাপাশি কী করে সেই সমস্যার পরিণতি থেকে দেহকে সুরক্ষা দেয়া যায়, শারীরিক উন্নতি ঘটানো যায় তার উপায় সন্ধান করা। কেননা অনেক রোগেরই যথাযথ ট্রিটমেন্ট করা না হলে মানব দেহের ত্বকের ওপর তা ধ্বংসাত্মক প্রভাব ফেলে। দাগ এবং ভিটিলিগো সেরকমই কিছু স্কিন ডিজিজ বা ত্বকের রোগ যা মেলানোসাইটস বা রঙ উত্পাদক কোষের কার্যক্রমকে ব্যাহত করে। এই রোগটির কারণ এখনও জানা যায়নি। কুষ্ঠ রোগের মতো ত্বকের রোগ, ত্বকের শ্বেতি রোগ ইত্যাদি ত্বকের ওই সমস্যাগুলোর কারণেই দেখা দেয়। কুষ্ঠ রোগ আক্রান্ত এলাকায় যে পশম বা চুল ওঠে সেই চুলগুলি সাধারণত সাদা রঙের হয়। বিশ্বের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক থেকে দুই শতাংশ এই কুষ্ঠ রোগে আক্রান্ত। এই রোগের লক্ষ্মণ শতকরা পঁচানব্বুই ভাগ মানুষের ক্ষেত্রে চল্লিশ বছর বয়সের আগে দেখা দেয়। এই কুষ্ঠ রোগটি সকল বর্ণ ও লিঙ্গের মানুষের মধ্যেই হতে দেখা যায়।
আরও বহু কারণে বিশেষ করে অটো-ইমিউন ডিজিজের কারণেও ত্বকের এই রোগ দেখা দেয়। এ বিষয়ে আমরা আর বেশি কিছু না বলি। ইরানে 'রুয়ন সেল থেরাপি সেন্টার' নামে এমন একটি কেন্দ্র যেখানে ক্যান্সারের মতো রোগ,ব্যোন ম্যারোর রোগ, চোখ এবং ত্বকের ভিটিলিগো রোগসহ এ জাতীয় জটিল রোগগুলোর চিকিত্সা করা হয়। ভিটিলিগো চিকিত্সার জন্য ড্রাগ থেরাপি,রেডিয়েশন থেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপিসহ বিভিন্ন রকমের চিকিত্সার ব্যবস্থা রয়েছে এই সেন্টারে। ইরানের এই চিকিত্সা পদ্ধতিতে, ভিটিলিগো রোগীর বিশ্রামের প্রয়োজন হয় না। এমনকি ত্বকে ক্ষত বা ফোস্কা না দিয়ে আক্রান্ত অঞ্চলে স্বাস্থ্যকর কোষ ইনজেকশনের মাধ্যমে নিরাময় করা হয়।
ইরানি পণ্য সামগ্রি অনুষ্ঠানে আবারও স্বাগত আপনাদের। বলছিলাম সেল থেরাপিতে ইরানের অগ্রগতির কথা। ইরানের রুয়ন সেল থেরাপি সেন্টার এখন বিশ্বের উন্নত দশটি প্রথম সারির সেল থেরাপি সেন্টারের মধ্যে একটি।ইরানের এরকম আরেকটি সেল থেরাপি সেন্টার হলো হেলাল ক্লিনিক। ইরানের রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অর্থায়নে নির্মিত এই সেল থেরাপি সেন্টরটি প্রতিষ্ঠিত হয়েছে ১৯৯৯ খ্রিষ্টাব্দে। এখানে চিকিৎসার আরও অনেক শাখা বা বিভাগ রয়েছে। যেমন দন্ত্য চিকিৎসা, নিউরোলোজি বিভাগ, ত্বক-চুল ও প্রসাধনী বিভাগ, লেইজার বিভাগ, নাক-কান-গলা বিভাগ,নারী ও প্রসূতি বিভাগ, অর্থোপেডি বিভাগ,ইউরোলজি বিভাগসহ আরও বহু বিভাগ। এইসব বিভাগে চমৎকার চিকিৎসা দেওয়া হয়। এশিয়া ও আফ্রিকার বহু দেশ যেমন ইরাক, সৌদিআরব, লিবিয়া, আজারবাইজান, তাজিকিস্তান, আফগানিস্তান এবং তানজানিয়াসহ আরও বহু দেশ থেকে রোগীরা এখানে আসেন চিকিৎসা নিতে। #
পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/ মো:আবু সাঈদ/ ০৮
বিশ্বসংবাদসহ গুরুত্বপূর্ণ সব লেখা পেতে আমাদের ফেসবুক পেইজে লাইক দিয়ে অ্যাকটিভ থাকুন।