সেপ্টেম্বর ০৮, ২০২০ ১৮:৩০ Asia/Dhaka

আমরা গত আসরে সত্যবাদিতা নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করেছি। পবিত্র কুরআনের সূরা তাওবার ১১৯ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে:'হে ঈমানদারগণ! আল্লাহকে ভয় করো এবং সত্যবাদীদের সহযোগী হও'। সুতরাং সত্যবাদী হবার পাশাপাশি সত্যবাদীদের সহযোগী হওয়াটাও গুরুত্বপূর্ণ একটি দায়িত্ব। আজকের আসরে আমরা কথা রাখা বা অঙ্গীকার রক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি মানবিক গুণ নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো।

আল্লাহ রাব্বুল আলামিন সূরা আলে-ইমরানের ছিয়াত্তর নম্বর আয়াতে অঙ্গীকার রক্ষা করাকে মোত্তাকিনদের পর্যায়ে পৌঁছার উপায় বলে উল্লেখ করেছেন। যারা অঙ্গীকার রক্ষা করার মাধ্যমে ঐশি তাকওয়ার অধিকারী হয়েছে তাদের প্রতি আল্লাহর বিশেষ অনুগ্রহ ও ভালোবাসার কথাও ঘোষণা করা হয়েছে। আমরা আমাদের জীবনে কথা না রাখার বহু ঘটনার মুখোমুখি হয়েছি। আমাদের কেউ কেউ হয়তো কথা ভঙ্গকারী আবার কেউ কেউ অঙ্গীকার ভঙ্গের ঘটনা সহ্য করতে বাধ্য। যেমন বলা যায় আপনাকে অনেকেই হয়তো বলেছে যে কল দেবো বা যোগাযোগ করবো কিন্তু ফোন করে নি, কথাও বলে নি। কেউ কেউ হয়তো আপনাকে কোনো গুরুত্বপূর্ণ একটা প্রকল্পের খোজখবর নিতে একটা নির্দিষ্ট সময় মানে এক ঘণ্টার কথা বলেছে কিন্তু কয়েক ঘণ্টা পেরিয়ে যাবার পরও অপেক্ষা ছাড়া আর কোনো ফল আসে না।

কেউ আবার এমনও বলে থাকেন যে একটা নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে কাজ করে দেবে। কিন্তু দু:খজনকভাবে কাজ করা হয় না। তো এ ধরনের আচরণ যে বা যারা করে তাদের ব্যাপারে আপনার অনুভূতি কীরকম? বিশেষ করে যারা বলে কাজ করে দেবে কিন্তু প্রকৃতপক্ষে কথা রাখে না, অঙ্গীকার ভঙ্গ করে-তাদের কেমন লাগে আপনার? এবার একটু চিন্তা করুন! ভাবুন তো আপনি নিজেই নিজের সঙ্গে করা সর্বশেষ যে অঙ্গীকারটি করেছিলেন, সেটা কী ছিল? আরও ভাবুন, আপনি নিজেই কি সেই অঙ্গীকার রক্ষা করেছিলেন? যদি করে না থাকেন তাহলে ভেবে দেখুন ঠিক কোন কারণে আপনি অঙ্গীকার ভঙ্গ করতে বাধ্য হয়েছিলেন? এ প্রশ্নের জবাব শুনবো খানিক মিউজিক বিরতির পর।

বলছিলাম অঙ্গীকার ভঙ্গ করার নেপথ্য কারণ নিয়ে।স্বাস্থ্য ও সুস্থতা বিষয়ক বিশেষজ্ঞদের দৃষ্টিতে অঙ্গীকার ভঙ্গের প্রধানতম কারণ হলো কেউ যখন আমাদের কাছে কোনো কাজের সাহায্য প্রার্থনা করে, তখন আমাদের কর্মপরিধির আওতায় না থাকার পরও আমাদের সম্পর্কে সাহায্যপ্রার্থীর নেতিবাচক কোনো ধারণা যেন জন্মাতে না পারে সেজন্য আমরা তাকে ইতিবাচক জবাব দিয়ে বসি।বলি: হ্যাঁ! হ্যাঁ! কোনো ব্যাপার না, হয়ে যাবে, চিন্তার কোনো কারণ নেই। অথচ ওই লোকের কাজটি করে দেওয়ার কোনো চিন্তা কিংবা চেষ্টাও আমাদের থাকে না।এখানে 'না' বলতে না পারাটাই সমস্যার কারণ।বিশেষজ্ঞদের মতে 'না' বলতে পারার গুণটি আমাদের আয়ত্ত্ব করা উচিত এবং তা থেকে উপকৃত হবার চেষ্টা করা উচিত।

এর কারণ হলো বিশ্বাস এবং আস্থা হলো সম্পর্কের প্রধান পিলার। সুতরাং এই পিলার যদি ক্ষতিগ্রস্ত হয় সেই ক্ষতি পূরণ করা বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়ায়। আর অবিশ্বাস এবং অনাস্থা মানুষকে নি:সঙ্গ ও কোনঠাসা করে ফেলে। যারা কথা দিয়ে কথা রাখে না সময়ের ব্যবধান তারা তাদের আশেপাশের লোকজনের কাছে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা হারায়। সে যা-ই বলুক না কেন একটা সময় কারও কাছেই তার কোনো মূল্য থাকে না। কবি হাফিজের ভাষায়: বায়ু প্রবাহের মতোই তোমার দেয়া অঙ্গীকারের ওপরও ভরসা করা যায় না।অবশ্য অঙ্গীকার ও প্রত্যয়ের ব্যাপারটা কেবল অন্যদের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কের মধ্যেই সীমাবদ্ধ নয়, কখনো কখনো এই সম্পর্ক আমাদের নিজেদের সঙ্গেও সম্পর্কযুক্ত।যেমন অনেকেই ধূমপান ছেড়ে দেওয়ার অঙ্গীকার করেও তা রক্ষা করতে পারে না বা করে না।

বলছিলাম অঙ্গীকার অনেকে নিজের সঙ্গেও রক্ষা করে না বা করতে পারে না। একইভাবে স্বামি-স্ত্রী ও পরিবারের ক্ষেত্রেও বহু অঙ্গীকার রক্ষা করা হয়ে ওঠে না। সমাজের প্রতি একজন নাগরিক হিসেবে যেসব অঙ্গীকার বা দায়-দায়িত্ব রয়েছে সেসবও রক্ষা করা দুরূহ হয়ে দাঁড়ায়। সেইসঙ্গে বন্ধুবান্ধবের সাথেও অনেক অঙ্গীকার মানে কথা রাখা হয়ে ওঠে না। এইসবই অঙ্গীকারের পর্যায়ভুক্ত।নীতি-নৈতিকতা বিশেষজ্ঞগণ মনে করেন অঙ্গীকার রক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ মানবীয় গুণ। এই নৈতিক গুণ মানুষের ওপর ব্যাপক প্রভাব ফেলে এবং অপরাধ সংঘটনের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করে। সমাজ বিজ্ঞানীরাও বিশ্বাস করেন আধ্যাত্মিক এই গুণটির শক্তি এতো বেশি যে তারা চাইলে পুরো একটা সমাজকেই জাগিয়ে তুলতে পারে।এমনকি সমাজে বিদ্যমান সকল স্তর ও শ্রেণী পর্যায়ের মানুষকে কাছাকাছি নিয়ে আসতে পারে।

প্রশিক্ষক এবং মনোবিজ্ঞানীদের মতেও পরিবারকেই প্রাথমিক শিক্ষাকেন্দ্র বলে অভিহিত করেছেন। এই শিক্ষা কেন্দ্রের শিক্ষকগণ হলেন বাবা এবং মা। তার মানে শিশুকাল থেকেই পরিবারে শিশুদের জন্য সুস্থ সুন্দর ‌এবং বেড়ে ওঠার একটি অনুকূল পরিবেশ তোলা বাবা মায়ের দায়িত্ব ও কর্তব্য।অঙ্গীকার কী জিনিস-একথা বোঝার মতো বয়স যখন শিশুদের হবে তখন থেকেই তাদেরকে সেই অঙ্গীকার রক্ষার প্রশিক্ষণ দিতে হবে। এটা কেবল মৌখিকভাবে শিক্ষা দিলেই চলবে না তাদেরকে বাস্তবেও এমনভাবে শিক্ষা দিতে হবে যাতে ওই অঙ্গীকারের বোধ ও চেতনা তাদের অন্তরাত্মায় গেঁথে যায়।

পার্সটুডে/নাসির মাহমুদ/মো:আবুসাঈদ/ ০৮

খবরসহ আমাদের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত সব লেখা ফেসবুকে পেতে এখানে ক্লিক করুন এবং নোটিফিকেশনের জন্য লাইক দিন

ট্যাগ